Sunday 31 December 2023

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা // ই-কোরাস ১২

 



পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা ১২

মতি সিনেমা--ঘাটাল  

শ্রীজিৎ জানা


শিলাবতী এখানে উত্তর বাহিনী। শাস্ত্র উবাচ উত্তরবাহী নদী নাকি পূণ্যতোয়া। পৌষ সংক্রান্তিতে এখানকাার বাঁধানো নদীঘাটে  মকরডুব দিতে আসতেই পারেন। তিন ডুবকিতে পূণ্যফল পেতেই পারেন। তার আগে আসুন,সীসানাটা স্পষ্ট করে দিই। এখানে বলতে রসিকগঞ্জ– নিমতলা থেকে পোস্তাবাজার অব্দি। রূপনারায়ন উজিয়ে আসা জোয়ারের জলে ভরা থাকে সারাবছর। শহরের ঘরবাড়ি ডিঙিয়ে ওই যে রোদ্দুর ফিরে যাচ্ছে তার বাড়ি, আর ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে শেষবেলার কুমড়োফুল রঙ। শিলাবতীর তিরতিরে ঢেউয়ে সেই রঙ মিশে যেন চোখে ঝিলমিল লাগিয়ে দেয়। আহারে শিলাবতী! তার পুব-পশ্চিবম দুই পাড়ে এখন ঘিঞ্জি দোকানপাট। মৃদু ঢেউ ভেঙে সারি সারি কাঁচা বাঁশের ভেলা ভেসে যাচ্ছে মহনগরের দিকে। বুকের উপরে বিদ্যাসগর সেতু আর শতবর্ষ প্রাচীন পোনটুন ব্রিজ যাকে ভাসাপোল নামেই চেনে সকলে। ছোট্ট শহরটার অনেক প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে ভাসাপুল অনন্য।

কিন্তু কথা তো সিনেমাহল নিয়ে। গৌরচন্দ্রিকা আরো কত লম্বা করিবে হে বাপু! আরে মশাই যেই সিনেমাহলের হালহকিকত জানাবো, তার অকুস্থলে যেতে হলে ভাসাপুল পেরিয়ে কুঠিবাজারে ঢুকতে হবে। পছন্দ না হলে বিদ্যাসাগর ব্রিজ পেরিয়ে, বর্তমান সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড ছুঁয়ে ডাইনে মোড় নিয়ে সোজা উত্তরে কদম কদম বাড়ায়ে যা..। তবে এপথে তখনি যাবেন যখন আপনি পুব কিংবা দক্ষিণের লোক হন। পশ্চিম দিক থেকে আসলে, উত্তর থেকে আসলে তার নির্দেশ আলাদা। কিন্তু কোথায় যাবেন? সিনেমাহল। কোন সিনেমাহল? কেন, মতি সিনেমা! রাগেন কেন মশাই! শান্ত হোন, বলছি। শিলাবতীর পশ্চিম পাড়েই দুটি সিনেমাহল। তার মধ্যে একটি মতি। বিষয়টাকে যদি আরেকটু গুবলেট করে দিই,তবে মতি নিয়ে মতিগতি অবাক হওয়ার জোগাড়। কুঠিবাজারে আজকের মতি সিনেমাহলের জায়গায় একদা গড়ে উঠেছিল 'ভারতী টকিজ'। তা নিয়ে আলোচনা পরের পর্বের জন্য আপাতত তোলা থাক। তবে একটা বিষয় একটু বলা দরকার কুঠিবাজার রামজি দাসসুরেখা ট্রাস্টি বোর্ডের জায়গা। সিনেমাহল মালিক সেই ট্রাস্টি বোর্ডের কাছ থেকে  প্রেক্ষাগৃহ করার জন্য জমি লিজে নেন।আনুমানিক ১৯৭৬-৭৭ সাল নাগাদ ভারতী টকিজের কাঠামো ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হয় ওইস্থান থেকে। আর ১৯৭৯ সালের ১৫ই এপ্রিল মাস থেকে মতি সিনেমার জয়যাত্রা শুরু হয়। মতি সিনেমাহলের মালিক হলেন শ্রী তপন কর্মকার মহাশয়। বাড়ি খড়ার, ঘাটাল মহকুমা। 

কর্মকার মহাশয়ের ঠাকুমা ছিলেন শ্রদ্ধেয়া মতিবালা কর্মকার। তাঁর নামে চন্দ্রকোণায় আগে থেকেই ছিল মতি কোল্ড স্টোর। প্রিয় ঠাকুমার নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে চাইলেন। প্রেক্ষাগৃহের নাম রাখলেন মতি সিনেমা। ঘাটালের বন্যার কথা মাথায় রেখে বেশ উঁচু করে স্ট্রাকচার নির্মাণ করা হল। বেশ সাজানো গোছানো সিনেমাহল। সিঁড়ি ভেঙে প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করতে হয়। সার দেওয়া কাঠের চেয়ারে সজ্জিত দর্শকাসন। ততোধিক ছিমছাম ব্যালকনি। আলো-আঁধারের ভুবনে ম্যাটিনি শোয়ে কত যে যুগল বাঁধা পড়েছে প্রেমের ফাঁদে তার হিসেব নেই কারুর কাছেই। কত মান অভিমান,কত নোনা জলের বৃষ্টিপাত,প্রথম স্পর্শ,আদুরে চুম্বন সবই হয়তো নির্বাক হয়ে দেখেছে প্রেক্ষাগৃহ। মতির যাত্রা শুরুর প্রথম দিনে পর্দায় ভেসে ওঠে যে ছবি তার নাম 'জয় মা তারা'। প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়ে ভীড়। তখন ফ্রন্ট স্টলের টিকিট মূল্য ছিল ১৯ পয়সা। মিডিল স্টলে ৭৫ পয়সা এবং আপার স্টলে ১.৫০ পয়সা। আর ব্যালকনির টিকিট মূল্য ২.৫০ টাকা। চিফ অপারেটর ছিলেন বিকাশ রঞ্জন ভূঞ্যা। প্রথম দিকে প্রোজেক্টেরের মাধ্যমে ছবি প্রদর্শিত হত। পরে স্যাটেলাইট সিস্টেম চালু হয়। ইয়োফো কোম্পানির ইন্টারনেট যন্ত্রের মাধ্যমে বই ডাউনলোড করা হত এবং ছবি পর্দায় ফুটে উঠত। মতি সিনেমায় ওই সিস্টেম চালু হয় ২০২১২ সাল থেকে। ওই সিস্টেমের প্রথম ছবি ছিল'খোকাবাবু'।



ঘাটাল শহরের মধ্যে মতি সিনেমাহল। দর্শক সংখ্যায় তেমন ভাটা পড়েনি কখনোই। স্কুল- কলেজপড়ুয়ারা ভরিয়ে রাখত ম্যাটিনি শো। তাছাড়াও শহরে আসা দূরদূরান্তের সিনেপ্রেমীরা সিনেমা দেখতে ভীড় জমাতো।  মতি সিনেমাহলের শো টাইম ছিল, ১২ টা,৩ টা এবং ৬ টা। শহরের অন্যতম কবি মহাশ্বেতা দাস মতি সিনেমাহল নিয়ে বললেন তাঁর কথা–" যতদূর মনে পড়ে,মতি হলে আমার দেখা প্রথম সিনেমা মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত 'পরিবার'। ছোটবেলায় বাড়ি থেকে সহজে সিনেমা দেখার অনুমতি মিলত না। পরীক্ষা শেষ হলে ছাড়পত্র মিলত। আর আত্মীয় এলে দলবেঁধে ভিড় জমাতাম। মতি হলে হিন্দি সিনেমা চলত বেশি। এই হলের ব্যালকনিতে বসে সিনেমা দেখার মজাই ছিল অন্যরকম। মতি  সিনেমাহল চত্বরে বেশকিছু দোকান ছিল। তার মধ্যে ফ্যাতনের মোগলাই ছিল বিখ্যাত। শহরের দুটো সিনেমাহল-ই এখন বন্ধ। খুব খারাপ লাগে।"  একথা সত্যি যে তখন মুখে মুখে কথটা ফিরত, মতি মানে হিন্দি বই,ভারতী মানে বাংলা। হিন্দি ছবি তোফা শোলে,দিবার ফাটাফাটি ভাবে চলে। 'শোলে' সিনেমা চলেছিল তিন মাস। হিন্দেতে ডাবিং করা ইংরেজি সিনেমা 'অ্যানাকোন্ডা', 'জুরাসিক পার্ক প্রভৃতিতেও ভিড় উপচে পড়ে।'লাল-সাদা আর নীল- সাদা রঙে ছাপা পোস্টারে প্রচার হত। নতুন হিট ছবি আসলেই মাইকেও প্রচার চলত। মতি সিনেমাহলের ব্লকবাস্টার ছবি 'বাবা তারকনাথ '।  টানা তিরিশ সপ্তাহ চলেছিল সগৌরবে। 'গুরুদক্ষিণা' সিনেমাও চলে চার মাস।তারপরেই আছে লাঠি–দু''মাস, অনুসন্ধান –তিন মাস, ফাইটার– ২ মাস। এছাড়াও ছোটবউ,বলিদান,অনুরাগের ছোঁয়া,খোকাবাু দীর্ঘদিন ধরে চলে। ঘাটাল শহরের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অশোক সামন্ত মহাশয় মতি সিনেমাহলের স্মৃতিচারণায় বলেন," স্কুল কলেজ লাইফে সিনেমাহলে প্রচুর বই দেখেছি। মতিতে হিট ছবিতে টিকিট প্রচুর ব্ল্যাক হত। পুলিশ মোতায়েন অব্দি করতে হয়েছে। আমদের একটা স্টুডেন্ট গ্যাং ছিল,যারা ব্ল্যাকারদের দাদাগিরি দমিয়ে দিয়েছিলাম বেশ কয়েকবার।আরও একটা বিষয়,স্কুল থেকে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বেশ কয়েকবার। তাছাড়া করমুক্ত ছবিও দেখানো হয়েছে একটাকা টিকিটের বিনিময়ে। সবুজ দ্বীপের রাজা,দ্বীপের নাম টিয়ারঙ,ছুট প্রভৃতি সিনেমাগুলো দেখতে গেছি স্কুল থেকে"।

সিনেমাহলের মালিক তপন কর্মকার মহাশয় জানাচ্ছেন, " কোভিড আসার মুখ অব্দি প্রোটোকল মেনে সিনেমাহল চালু রেখেছিলাস। লস হচ্ছিল। তবুও চালাচ্ছিলাম। কিন্তু শেষ অব্দি বন্ধ করকে বাধ্য হই"।

২০২০ সালের শুরুতেই মতি সিনেমাহল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেষ সিনেমা 'ইন্সপেক্টর দাউদ'। তিনি আরো বলেন," একসময় মতিতে টলিউডের সুপারস্টাররা আসতেন। যখনই তাঁদের সিনেমা কয়েকসপ্তাহ অথবা  মাস অতিক্ম করে চলত তাঁরা আসতেন। রঞ্জিত মল্লিক,প্রসেনজিৎ, জিৎ, তাপস পাল, অনামিকা সাহা প্রমুখরা এসেছেন আমার হলে"। ২০০০ সালের পর থেকে মতির টিকিট মূল্য বাড়ে। তখন ফ্রন্ট ২০ টাকা,মিডিল ২৫, রেয়ার ৩০ এবং ব্যালকনির মূল্য ছিল ৫০ টাকা। তবে আগে সিট চারটি স্টলে ভাগ থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তিনটি ও শেষে দুটি স্টলে ভাগ করা হয়। মতি হলের সিট সংখ্যা ছিল ব্যালকনির ১৮৬ সহ ৯১৫। স্টাফ ছিলেন ১০–১২ জন। তপন বাবুর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি মতি সিনেমাহল নিয়ে তাঁর ইচ্ছের কথা। এখনো আগ্রহ রয়েছে সিনেমাহল চালু করার। কিন্তু একদিকে বয়স অন্যদিকে আজকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতে দাঁড়িয়ে টিকিটের মূল্য কেমন করা যাবে, দর্শক ক্যামন ভিড় করবে ইত্যাদি বিষয়ে ভাবনা। বিকেলে সিনেমাহলটার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেও ফিরে যাচ্ছিলাম ডাউন মেমোরি লেনে। মতি সিনেমার ব্যালকনির কোনার সিটে বসেছি আমিও। পর্দায় তখন চলছে  হৃত্বিক রোশনের প্রথম ছবি 'কহোনা প্যায়ার হ্যায়'। পাশে ছিল আমিশা প্যাটেল। রসিক পাঠক যা বোঝার বুঝে নিন।


তথ্যসূত্র:—

প্রসাদ পাঠক ব্যানার্জী – বিশিষ্ট আইনজীবী, ঘাটাল

তপন কর্মকার— মালিক,মতি সিনেমা,মেছেদা

অশোক সামন্ত– বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, ঘাটাল

দীবাকর সী – বিশিষ্ট সাংবাদিক,ঘাটাল

মহাশ্বেতা দাস– বিশিষ্ট কবি ও গদ্যকার,ঘাটাল 

নিতাই ঘোড়ই- ম্যানেজার, ঘাটাল

            …………………… 

সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪


নিমাই জানা এর কবিতা // ই-কোরাস ১৬১

 





নিমাই জানার কবিতা 

 লাল মরীচি ঋষি ও মর্ডগেজ পাখিদের প্রাগৈতিহাসিক তত্ত্ব


থাইরক্স ফিফটি খাওয়া সবুজ কঙ্কাল গুলো শুকোচ্ছে রাত্রিকালীন অদ্ভুত ধান বীজের শেষ অঙ্কুরের মাথায় । এখানে ২πr সরযু নদীর ক্ষেত্রফলের থেকেও আরো নীল বর্ণালী ছটার রামধনুর ঘোড়াদের মাথায় লুকিয়ে থাকা মরীচি ঋষির মতো আদিম প্রাণায়ামগ্রস্ত কাটা কাটা জরায়ু বিক্রি হওয়ার আগেই সকলে ডার্ক চকলেট ফ্লেভার মেশানো কিউবিক মাংসের দোকানে ভিড় করে । 

লাল টমেটো ফলের মতো একটা নিরাময় যজ্ঞ নেমে আসুক । টংটং করে প্রেতেরা নাচবে । দানবেরা খুলবে তাদের উর্ধাঙ্গ । আর ফসফরাস মাখানো অদ্ভুত ভ্রুণেরা হাঁটা দেবে একটা সরু সুড়ঙ্গের নিতম্ব ওয়ালা জেলুশিল খাওয়া মর্ডগেজ পাখিদের সাথে।

আমরা কিনে নিয়ে যাব গলার ভেতরে জমে থাকা বিলিরুবিনের পাহাড় । আমি শুধু হাঁ করে থাকি প্রাগৈতিহাসিক কিছু প্রত্ন মানুষদের স্টেইনলেস ওভারকোটেড কাঁটা কম্পাসের দিকে । বীভৎস মানুষগুলো আগুনের যৌবনবতী গন্ধের চামড়া পোড়ানো নগ্ন দৃশ্যে কিছু অ্যাসিডের মোলকিউল খাচ্ছে হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়ানো অদৃশ্য সেবিকাদের অবৈধ ঘোষণা পত্র ,  হাসপাতালে তুলো চাষ হয় এখন । সেলুনের ছেলেটা আমার গলা কাটে

কালো কালো রোগগ্রস্ত মানুষের শৌচালয়ের পাশ থেকে উদ্ধার করি নিজেকে , জন্মের আগের বিন্দু বিন্দু প্রস্রাব মুছে ফেলি গোলাপি গজে  , স্টেরিলিন ইনজেকশন, লাইগেশন ছুরি , খুব সচ্চিদানন্দ মনে হচ্ছে ময়না তদন্তের আগের ঠান্ডা বাতাস খেতে । 

হি হি করে হাসি, সদ্য স্ট্রেচার থেকে ডোমের ঘরের দিকে যাওয়ার আগে,  একটা নগ্ন নর্তক দুহাতে মৃতপ্রায় কাঞ্চন ফুলের মালা নিয়ে এসেছিল অবৈধ পেপটিক আলসারের ঔষধ কিনবে বলে

এ পৃথিবীতে ছায়ার দাম বড় কম বলে প্রতিটি অসুখ সেরে যাওয়া মানুষ ঘুরতে থাকে আরো একটা গ্রহের কাছাকাছি , জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকে এ্যাবসোলিউট তাপমাত্রার সানফ্রাস্কিস্কোর সিলিকন প্যাডেড জেলি মাখানো সেক্সটয় বিক্রেতা । আমি তরল কাঁচ দিয়ে প্রাতঃরাশ সারি । ভাজা ডিমের ভেতর আর একটা ঈশ্বর জন্ম নিচ্ছে ।  আমি নিজের যৌনাঙ্গ পুড়িয়ে দিয়েছি কালো কয়লা দিয়ে। 

শিট! শিট! শিট! ডিসেম্বরের শেষ দিনে আবারো কেউ বিষ খেলো 


 তিন প্রত্যুষের দরজা ও ক্ষেত্রফলহীন বিছানার ব্যাসদেব


শরীরের মতো তিনি প্রত্যুষ । আসবাবপত্রে এক একটা খনিজ অসুখ পুঁতে রাখেন । এ দেহের অনেক নিচেই পৌত্তলিক । তিনি চাষাবাদ করেন নৈঋতে নিয়ে যান । প্রলয় নৃত্য করেন । খনিজ ভর্তি আসবাবপত্র নিয়ে দাঁড়াতে দিয়ে শবাসনে শুয়ে পড়েন অতীত প্রাচীরের মতো । দুই হাতে নেচে বেড়ান এক এক কর্কট ও শঙ্খ সাপের আত্ম নিনাদ নিয়ে , বহুমুখী জরায়ু তিনি সারা শরীরে যোনীচ্ছদের মতো প্রতিবিম্ব আছে ।  দেশালাই কাঠি আর একটা বিষধর সাপের কঙ্কাল ।  ঈশ্বরের গলায় ভূত শুয়ে থাকে । প্রেত শুয়ে থাকে । জরার জবা ফুল শুয়ে থাকে । আমি ব্যাসদেব দধীচির পায়াসান্ন মাখি অযুত সশব্দে 

তিনিই তো বিবিধ ছায়া রাশি । পড়ে থাকে কাঁচের জলজ অসুখ ।  এখানেই ভগাঙ্কুরের দোষ । ঈশ্বরী নেমে আসেন পাতালপুরীর দিকে। ডার্ক ক্যাভেনডিস বিছানা । বিছানা থেকে নেমে যায় এক একটা প্রাচীন দেবতা । অপ্সরা উলঙ্গ নৃত্য ।  ছায়াময় আমার দুই দিক ।‌ নারী ক্ষেত এক এক ক্ষেত্রফল ।‌ রমণ ও মুক্ত উষ্ণীশ ।  এখানেই সকলে রমন পুড়িয়ে খেত রমণীর ঈ কার দিয়ে


ঈ কার নীল রমন ও সুদেষ্ণা নারীদের অনন্ত মুদ্রার জ্ঞানযোগ


তিনি জগতের জগদম্বা । তিনি পুরুষ নন তিনি নারী নন তিনি উভয়লিঙ্গ নয় তিনি ক্লীবলিঙ্গ সুচতুর চতুর্ভুজ থেকে আরো বিভুজ তিনি সারথি শঙ্কর্ষণ ও নীল ত্র্যম্বক

দুই হাতে জলজ ঈশ্বরীর অবয়ব । আঙুলে নাচেন ঈশ্বরের মতো রক্তকরবী । উড়িয়ে দেন শরীরের অনন্ত মুদ্রা ও জ্ঞানযোগের ত্রিশূল , শিরদাঁড়ার ওপর ঈশ্বরী । ঋষি আদি নক্ষত্র আর সান্ধ্যকালীন তারা । একাকী যজ্ঞের চতুর্পাশে বসেন চতুর্ভুজ দানবের মতো। এ ধূসর পথে তিনি কর্দমাক্ত ।  বেজঙ্গম । পান্ডুরোগ । জাহান্নামের তিলক । জালিম স্রোত । আগুনের স্রোত । এ বরাভয় মুদ্রা আমার । এই পরিচ্ছদের এক এক কৌস্তভ সৌরভ দাগ । এখানে লোমকূপ নেই । আত্মীয় নেই । সব মৃতেরাই আত্মীয়

এ জগতের পাঞ্চজন্য বাজে । কৌমুদী ।  জিষ্ণু । রক্তকরবীর মতো লাল সাপের ঠোঁটের লিঙ্গান্তর চিহ্ন। সমকামী বিছানায় খনিজ দাঁত গলে যায় । এখানে কি আমারই মরনাস্ত্র লুকানো ছিল বৈকুণ্ঠের। 

নয়নে ক্ষত দাগ থাকে । ঈশ্বর নামেন ঋষির মতো সংক্রমিত।  প্রতিটা দাঁতে আঙ্গুলের গোড়ার ধনুক বাজায় কেউ ।  রাত্রের একটা মৃদু এস্রাজ বাজালে ফাঁসির আসামিটা লাল সাপের রজঃ তাপ মাপে। এসো ঞ বর্গীয় ঈশ্বরী ।  ছিঁড়ে যাই মায়াবন্দর ।  ঈশ্বরী তোমার হাতে লাল পদ্ম দিয়ে জয়ন্তীর সুদেষ্ণা গড়ে তুলি ।

পাপের মত লুকাই তাকে । সারারাত একটু একটু আণবিক দেহ খুলে রেখে আসি মাংসপিন্ডের কাছে । কালো আগ্নেয়গিরি নেমে আসে স্থূল ভঙ্গিমায় ।  এখানে শুধু মর্দনের অভাবটাই যত অসুখ । দীর্ঘ দাঁত মুদ্রা বরফের মতো উষ্ণ । এখন কোন স্বেদ ক্ষরণের উপসর্গ নেই। এখান কোন পৈশাচিক শ্বেতাঙ্গ নারীর উর্বশীবৃন্দ ।  আশ্রমিক শবরীমালা । কোন নিকুঞ্জ উপবনের রাসলীলা সমৃদ্ধ দুগ্ধ ক্ষরণ নেই। উন্মুক্ত করি পোশাকের জলজ প্রপাত।

পিতাই হলো ত্রিলোকের বসুধা । একটা ডিনামাইট বিস্ফোরণ করে দিচ্ছে মাইটোসিস রক্তাল্পতার অতি ক্ষুদ্র সান্দ্রতার নীল প্রতিবিম্ব গুলোকে ‌।  একটা রক্ত খেকো পিশাচ সারারাত ফাঁসির দড়িতে মোমের শুক্রাণু মাখাচ্ছে।

সত্যবালা বস্ত্রালয়, ইন্দোনেশিয়ার সাপ ,  এলাচ উপত্যকার ভিতরের শঙ্খিনী নারীরা লাল ছত্রাক গর্ভফুল নিয়ে বৈকন্ঠের পুর স্থানে বসে আছে , আমি ঈশ্বরীর পায়ের কাছে ধন্বন্তরি প্রসাদী ফুল রাখলাম , প্রলয় মার্কণ্ডেয় যজ্ঞ হোক মাথাটাকে ফরসেপে দুটো খণ্ড করে টেস্টিসের ব্রহ্ম কুণ্ডে ঢুকিয়ে রাখি , অনিকেত হাসছে যমলোকে .......


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - অভিরুদ্র জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Tuesday 26 December 2023

রবীন্দ্র পরম্পরা // ই-কোরাস ৫০

 



রবীন্দ্র পরম্পরা 

পর্ব - ৫০ (শেষ পর্ব) 

নতুন নামে ডাকবে মোরে বাঁধবে

মহাশ্বেতা দাস 

   

         

  "চেয়ে দেখি হোথা তব জানালায়

      স্তিমিত প্রদীপখানি

  নিবিড় রাতের নিভৃত বীণায়

     কী বাজায় কিবা জানি।।" 


        কবির শেষ ইচ্ছেপূরণ তো হলোই না। উন্মত্ত জনতার দরজা ভেঙে টানাহিজড়া করে "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি জয়, বিশ্ব কবির জয়" জয়ধ্বনি তুলে নিমতলা শ্মশানে কবির দেহ নিয়ে যাওয়া এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনার মাধ্যমে শেষ হল ২২শে শ্রাবণের শেষকৃত্য। 

           

       পরের দিন অর্থাৎ ২৩ শে শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ, কবির "মা-মণি" প্রতিমা দেবী এবং পুত্র রথীন্দ্রনাথ যাত্রা করেছেন অনেক আগেই। দুপুরের দিকে কবির দেহাবশেষ (চিতাভস্ম) নিয়ে শান্তিনিকেতনের উদ্যেশ্যে রওনা দিলেন শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রপরিকর স্থপতি সুরেন্দ্রনাথ কর, যাঁকে রবীন্দ্রনাথ "তুমি গুণী" বলে সম্বোধন করেছিলেন।  


"তোমার আলোয় নাই তো ছায়া,

    আমার মাঝে পায় সে কায়া,

   হয় সে আমার অশ্রুজলে সুন্দর বিধুর - " 

  

                    এতদিনের অনেক ঘটনার সাক্ষী, সহচর সুরেন্দ্রনাথ কর, যাঁকে এক বন্ধু শ্রীম্ভগবদ্গীতা পাঠ করতে বলায় তিনি বলেছিলেন "আমি গুরুদেব কে ছুঁয়েছি, তাঁর কবিতা পড়েছি, আমার অন্য কিছুর দরকার নেই।" সেই সুরেন্দ্রনাথ যখন কবির প্রিয় অজয় নদীর উপর দিয়ে শান্তিনিকেতনের পথে যাচ্ছেন তখন "সূর্য অস্তে পড়ে ঢুলি" পশ্চিমের আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে। বোলপুর স্টেশনে নেমে মাথায় নিলেন চিতাভস্মের কলস। "গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ" বেয়ে যখন শান্তিনিকেতন আশ্রমের দিকে যাচ্ছেন তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে, অনেক মানুষ অপেক্ষারত,..... গাছ গাছালির ফাঁক দিয়ে তারারা উঁকি দিচ্ছে, জোনাকিরা এগিয়ে এসেছে আলো দেখাতে। কবি আত্মা কি এখনো আসেনি! দূরে আছে! অন্য কোথা, অন্য কোন খানে!!  ....হতেই পারে না।  অনেক আগেই কবির প্রাণভ্রোমরা পাখা মেলে পৌঁছে গেছে তাঁর প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রী আর প্রানের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তির জায়গায়!

      

    "তোমার জ্যোতিষ্ক তারে

            যে পথ দেখায়

      সে যে তার অন্তরের পথ,

            সে যে চিরস্বচ্ছ,

       সহজ বিশ্বাসে সে যে

    করে তারে চিরসমুজ্জ্বল।"

                 ……………………


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪



Saturday 23 December 2023

নিমাই জানা র কবিতা // ই-কোরাস ১৬০

 




নিমাই জানা র কবিতা 

১.

তড়িদাহিত লৃট  ও জাহাজের অপরা দৃশ্যের দৃশ্য 


ঊর্ধ্বমুখী ৩৯ বছর । মহাজাগতিক ধ্যান । অপূর্ব স্নেহজ পদার্থ।  এই অয়নযোগে নেমে আসে ধুম রতি আর কাশ্যপের অবৈধ দেব । ধ্বংসলীলা এ প্রলয় বীজ । নাম ধাতু লৃট যোগ । সন্ন্যাস সবাই খাদক আমি মাংসাশী দানব । জানালাটি মরচে হতে হতে পাকস্থলী হয়ে যায় । রাতকে চরায় কেউ। পাতার ভেতরে অসংখ্য শিরায়। নাভি থেকে অদৃশ্য ঊর্ধ্বমুখী যাপন ‌। এই খেদ বড় সরীসৃপ ছায়া ও ভৌগোলিক ব দ্বীপ ঘিরে রাখি । এ শরীরের অদৃশ্য শরীর যোগের অপরা ক্ষেম । অশোক দাঁত রেখেছি মজা বস্ত্রের ভেতর । সব মরিচের মতো লোমকূপ ছেড়ে ব্রহ্মাণ্ড দাঁতে জল।

দাঁত দিয়ে কামড় বসাই আগুনের সম্ভোগ গিটারে। তড়িদাহিত জল নেমে আসে এই কম্বোজ খোলস থেকে। 

জাহাজটি আসল ধাতু । নাবিকটি বড় ছন্নছাড়া । গর্হিত গর্তের ভেতর দাঁতে দাঁতে লোমসের সাপ বাজে । 

কেমিস্ট্রিতে আগুন । আয়নায় প্রতিবিম্ব । সবই জুয়া খেলার প্রাচীন প্রণয় যোগ । গাঁজা খাচ্ছে চারটি ভূত । শিরদাঁড়া আছে অথচ নেই ধোঁয়া পঞ্চ শস্য । অঙ্কুর বিরোধী শ্মশান ও ব্যাঙ্গাচি মাঠে। ঈশ্বর কি ভুল কথা বলে গেছে আমাদের । 


২.

বিকৃত ক্যাফিন ও গোলার্ধের ব্রোমাইড ত্রিশূল সমগ্র


হোমো হাবিলিস ও মাংসাশী প্যান্থারের রমন দৃশ্য । দাঁত ও গন্ডদেশের রক্তক্ষরা । তামাতে রঙের ওষুধের ডোজ ৫০০ । ডিম ভর্তি তামাটে রক্তের বিদ্রোহ কাল। আ উ ম বিষ্ণু-মহেশ্বর ও ব্রহ্মা ।

দক্ষিণায়নযোগ । ধাতু পদ্ধতি সঞ্চিত আছে পুরদেশে । গর্ভটাই সংরক্ষিত উরু গর্ভে ।  উর্বশী বেরিয়ে আসে ঋষির পুরু উরু ছেদ করে।

দীর্ঘশ্বাসের শব্দ হচ্ছে রাতে । ভয় , আগুন , বন্ধ হৃদপিণ্ড , গলার কফ আর জামরুল ফুলের ঘ্রান । কেউ আমাকে চুরি করে খেয়ে নেয়।

চাবুকটি ঝুলে আছে রাতের কোহেলিও ব্রোমাইড কোমর জুড়ে। পুরুষটি রূপান্তরিত লিঙ্গ। বিকৃত যোনি ছিদ্রে ত্রিশূল সেলাই করছে কেউ।

খাপছাড়া উনুন । ডোম । এ দাহ ও জমাট কালো নদীর জল । রতির সেতু পালক ও ভৌম দশার অন্ধকার জনিত মেহরোগ। নারীটি গন্তব্য পাল্টে ফেলে হ্যান্ডলুম সেন্টারে , অন্নপূর্ণা বস্ত্রালয় ।

মৃত মানুষদের কফ থেকে তৈরি সুতো । সুতোটি চওড়া হচ্ছে উপস্থাপিকার নীল সমুদ্র রংয়ের অন্তর্বাস ফিতায় । কেউ এসে বরফ ভর্তি শুভরাত্রি জানিয়ে যায় অধাতব বক্ষের বিদীর্ণ বিলাবল দিয়ে । গান গায় নিপুন ইছামতি ঈশ্বরী । 

পুলস্ত্য তো নারী । ঈশ্বরী ও ভৌম । এখনই ক্যাফিন মেশানো মদ খেয়ে নিবিড় মাদকাসক্ত হই। গোলার্ধের ক্রান্তি জাহাজ পুড়ে অশ্লীল হয়ে উঠলো


৩.

তৃতীয় হত্যা ও মাদকাসক্ত উর্বশীর জ্যামিতিক দৃশ্য


হত্যার অস্ত্র তৈরি হচ্ছে কুয়াশা মাখা কংক্রিট স্ট্যাচুর অবতল ভূমির ভেতরে নিম্নাঙ্গ চাদরের মতো । হত্যা আসলে একটি গুণিতক সংখ্যার প্রাগৈতিহাসিক তৃতীয় ডানা , বায়ু কোণের শ্মশান ফিকফিক করে হাসছে,  ঘাস ভর্তি পায়ের নিচে তরল নৌকা , গোলাপি সোয়েটারের ভেতরে থেকে উঁকি দেয় অজস্র গৃহ প্রপাতের মতো এক এক লাল কৃষ্ণাঙ্গ উপত্যকার শিখি চূড়া , আমি আঙ্গুল ডুবিয়ে এ পৃথিবীর ধনুরাসন মাপি , মাদকাসক্ত চোখগুলো দরদামের আগেই ঈশ্বরকে বেঁধে রেখেছে পায়ে দড়ি দিয়ে , শালপাতায় ভাত ঢেলে খাচ্ছে কিছু উদ্বায়ী মানুষের দল। যাদের পেচ্ছাপে শর্করা বেরিয়ে যাওয়ার অসুখ ছিল।

আমরাই এ প্রজন্মের শেষ মুদ্রা রাক্ষসের একটি লতানো মুরগির বাচ্চা। আমাদের পায়ে বাঁকানো ছুরি গুলো তলপেট এফোঁড় ওফোঁড় করে নাড়িভুড়ির উপরে দুটো গাণিতিক মুদ্রার অবতল রতি ভাঙছে যম ও যমের দ্বাররক্ষী , বিস্তৃত হচ্ছে আমার পূর্বজন্মীদের সব জ্যামিতিক ফাটল

মেরু প্রদেশের সাপগুলো কাঠের ঈশ্বরের গায়ে জড়িয়ে ধরে প্রায়শ্চিত্ত করছে আগুনের অশ্বমেধ এসো উর্বশী মহাজাগতিক হই

                       ………………………. 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Tuesday 19 December 2023

রবীন্দ্র পরম্পরা // ই-কোরাস ৪৯

 



রবীন্দ্র পরম্পরা

পর্ব - ৪৯

সাগর বলে কূল মিলেছে আমি তো আর নাই

 মহাশ্বেতা দাস 


   

     অপারেশনের পর একটু একটু করে আরো অবনতি হতে লাগলো,.....জ্ঞান নেই। গিরিডি থেকে আনানো হল কবির বিশিষ্ট বন্ধু ও বিখ্যাত চিকিৎসক নীলরতন সরকার কে । কবির নাড়ি দেখে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের বুঝতে বাকি রইলো না!... আর যে কিছুই বলার মত নেই, সব বলা কওয়ার ঊর্ধ্বে ওঠার সোপানে যে পা রাখতে শুরু করে দিয়েছেন কবি। শুধু পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিলেন বন্ধু'র কপালে। কবি-কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সুহৃদ বন্ধু নীলরতন বাবুর দুচোখে নামলো বিচ্ছেদের শ্রাবণ ধারা।


           ২২শে শ্রাবণ, ১৯৪১ সাল… সকাল থেকে কবির রোগ শয্যার পাশে বসে অবিরাম ধারায় পড়া চলছে কবির জীবনের বীজমন্ত্র– 

       

           শান্তম্ ,শিবম্,অদ্বৈতম্।


 সকাল ন'টায় কবিকে অক্সিজেন দেওয়া হলো। বেলা বাড়তে লাগলো৬। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গণ তখন ভরে উঠছে কৌতূহলী মানুষের উপস্থিতিতে। হিক্কা উঠছে অনবরত। একসময় খুলে দেওয়া হল অক্সিজেনের নল। একটু একটু করে কমতে লাগল পায়ের উষ্ণতা। ঘড়িতে বেলা ১২টা বেজে১০ মিনিট, চিরতরে স্তব্ধ হল কবির হৃদয়ের স্পন্দন।


    জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে ১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখ প্রভাত পাখির গান জাগিয়ে পশিল যে রবির কর... তারপর "কত বর্ণে কত গন্ধে কত গানে কত ছন্দে" ভুবন আলোকিত করে সেই রবি ১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ সাঙ্গ করলেন ধরার পালা।

         

         কবির জীবন সায়াহ্নে (১৯৪১সালে) ত্রিপুরার রাজা শান্তিনিকেতনে এসে কবিকে "ভারত ভাস্কর" উপাধি দান করেছিলেন। সব ঠিকই ছিল, ২৫ শে জুলাই এর পর থেকে কবির জীবন সায়াহ্নকাল যেভাবে অতিবাহিত হল.... একজন বিশ্বখ্যাত মহামানবের এমন মর্মান্তিক পরিণতি মেনে নিতে কষ্ট হয়। অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়াই তো ছিল চিকিৎসকদের চরম ভুল.... তার ওপর সেই সময়ে কলকাতা নগরীর যথেষ্ট আধুনিকিকরণ হওয়া সত্ত্বেও কবির অপারেশন কেন কোন চিকিৎসালয়ে ব্যবস্থা না করে পুরানো দিনের ঠাকুর বাড়ির বারান্দায় করা হল এ প্রশ্ন আজও রবীন্দ্রপ্রেমীদের মন ভারাক্রান্ত করে!


       "সমুখে শান্তি পারাবার

     ভাসাও তরণী হে কর্ণধার।"

 

     তরণী ভাসিয়ে দেওয়ার সময় যে এসেগেছে।   নিজের শেষ যাত্রার গানটিও কবি লিখে গিয়েছিলেন। কবির ইচ্ছে ছিলো কলকাতায় জনকোলাহলের মধ্যে জয়ধ্বনি তুলে নয়, তাঁর শেষকৃত্য হবে শান্তিনিকেতনের শান্ত পরিবেশে খোলা আকাশের নীচে। কিন্তু সেদিন কবির এই কথার কেউ মর্যাদা রাখেনি, পূর্ণ করা হয়নি কবির অন্তিম ইচ্ছে কে।

    

    কবিকে বেনারসি জোড়ে রাজবেশ পরানো হল। গরদের পাঞ্জাবি, সুন্দর করে কোঁচানো ধুতি, চাদর। গলায় ফুলের মালা, কপালে চন্দন আর কবির বুকের উপর রাখা হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল পদ্ম কোরক।

       

   মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র। পরমাত্মীয় বিয়োগের বিচ্ছেদ বেদনায় সারা বিশ্ব সেদিন যে যার নিজের মতো করে শোক পালন করলো। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণে জড়ো হল আশ্রমের সবাই। ঠাকুর বাড়ির দক্ষিণের বারান্দায় অবন এঁকে চললেন রবিকা'র শেষ যাত্রার ছবি। ঠাকুর বাড়ির ফটক পেরিয়ে  বিশৃঙ্খল জনস্রোতের মাঝখান দিয়েই একটু একটু করে এগিয়ে নিমতলা মহাশ্মশানের দিকে নিয়ে যাওয়া হল কবির দেহ।  


    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন– 


 "আমার মৃত্যুর মিছিলে যেন উন্মাদনা না হয়। আমার নামে কোন জয়ধ্বনি যেন না দেওয়া হয়।" 


        কিন্তু….. রবি প্রয়াণের ইতিহাস বলে অন্য কথা!!!

   কবিকে যখন রাজবেশে অন্তিম সাজে সজ্জিত করা হচ্ছে তখন উন্মত্ত জনতা দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ল কবিকক্ষে, চিৎকার করে জয়ধ্বনি তুলল….      

         

         রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি জয়।


     এখানেই থামলো না.....  রবি-স্মৃতি নিজের কাছে রাখার উন্মাদনায় যে যেমন করে পারলো ছিঁড়ে নিল কবির চুল, দাড়ি, নখ।

      

     "স্তবের বাণীর আড়াল টানি তোমায় ঢাকি,

      দেখব ব'লে এই আয়োজন মিথ্যা রাখি।"




  কোলাহলের মধ্যে দিয়ে নিমতলা মহাশ্মশানে যখন রবি ঠাকুরের দেহ পৌঁছালো..... ততক্ষণে তাঁর অনিন্দ্য সুন্দর সৌম্যকান্তি বিকৃত হয়ে গেছে। এমন কি রবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবির মুখাগ্নি করার সুযোগ টুকুও পাননি। এভাবেই শেষ হল বিশ্ববরেণ্য কবির সমস্ত পার্থিব হিসেব নিকেশ।


   "যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,

    আমি    বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,

           চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,

          মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,

      বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে–"

                 ………………….. 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...