Tuesday 1 May 2018

"ওরা চিরকাল টানে দাঁড়,ধরে থাকে হাল,ওরা মাঠে বীজ বোনে,পাকা ধান কাটে।ওরা কাজ করে নগর প্রান্তরে" e-কোরাস ৭




                      "ওরা চিরকাল টানে দাঁড়,ধরে থাকে হাল,ওরা মাঠে বীজ বোনে,পাকা ধান কাটে।ওরা কাজ করে নগর প্রান্তরে" 


বিষাদ বাঁশি

সুকান্ত সিংহ


নুড়ি বালি ছিল, 
উপরে টাঙানো আকাশও ছিল,
এক টুকরো কাশের বনও ছিল,
শুধু একটা নৌকা আঁকতে পারলেই
ছলাৎছল করে উঠত আমার নিজস্ব নদীটি।
আমাকে দাহের পর কাঠকয়লাগুলো
ফেলে দিয়ো না শ্মশানবান্ধব।
ওইটুকু থাক।

বাকি সব রঙ-তুলি হারিয়ে ফেলেছি।
                  .................


রক্ত

ভবেশ বসু

            
  একটা মোটা দড়িতে আমার ফাঁসি
দম আটকে যাচ্ছে,বেরিয়ে পড়েছে জিভ
চোখে বারুদ থেকেও জ্বলল না
আমি কি আত্মহত্যা করছি
না কেউ গলা টিপে জানতে চাইছে ―
আমার শরীরের লোভ !

মহামান্য আদালত,লোভ কাকে বলে ?
যে পাখি গান গায়,গানই তার সম্বল
খনি হতে যে মুখ উঠে ,টাকা গুনে নতূন পাঁচশো ―
সে তো তারই কোন ক্ষুধার কাছে জমা হবে !
আমি তাদের পিতা ও মাতা বা অন্য কেউ
ফাঁসির দড়ি রাখার অর্থও আমার কাছে থাকে না ।
একটা মোটা দড়িতে আমার ফাঁস লেগে গেছে
তোমরা সব রক্ত ধুয়ে ফেলবে জানি
বিপুল বৃষ্টিতেও যে রক্ত রয়ে যাবে উঠানে
তারা যদি কোনদিন দল বেঁধে আসে ―
আপনার কাছে,কবির কাছে,পৃথিবীর সামনে ?
                      ....................


বসন্ত

সুনীল মাজি


কে কুহু?
সারারাত ধরে ডেকে চলেছে।
পাখিটি কি ক্ষেপে গিয়েছে?
আজ জ্যৈষ্ঠের ষোল তারিখ,তবে কি এই
ঋতুর শরীর ছেড়ে বসন্ত এখনও যায় নি?
পুড়ে যাওয়া রোদ নেই , দগদগে যন্ত্রণা নেই, ঘাস
পাতা মাঝে মাঝে বৃষ্টির স্পর্শে বেশ উজ্জ্বল সবুজ।
পাখিটি ঘুমায়নি সারারাত।আমাকেও ঘুমাতে
দিচ্ছে না।শুয়ে আছি।অন্ধকারে উজ্জ্বল
মুখগুলো ভেসে আসছে-- যারা আমাকে
ভিজিয়েছিল,দিনরাত কুহু ছিল যারা,ডালে
ডালে উড়ে গেছি,কারুর সাথেই বাসা বাঁধা হয়নি।
বিছানায় শুয়ে আছি শরীরে।পাখিটি আমাকে
ভাগিয়ে নিয়ে চলেছে সুরে,স্বরে।চিরায়ত
গন্ধের ভেতর আসি।
প্রেমিকের বসন্ত কখনও কি শেষ হয়,কুহু?
           .................


ঘুঘু

আশিস মিশ্র


সহজ নয় কঠিনতম কথা
নীরবতাই শ্রেষ্ঠতম প্রথা।
লুঠ চলছে লুঠ চলছে জানো
কান ধরলে মাথা আসবে মানো।
তোমার কিছু হয়নি বুঝি বাসু
বেশ তো আছি ভবঘুরের হাসু।
প্রতিবাদীর পাছায় লাথি দিলে
আটকে যাবে নিজের ছোঁড়া ঢিলে।
এভাবেই তো দিন চলছে ভাই
মনের কাছে মনই নিজে নাই।
তোমার বুঝি লাগছে ব্যথা খুব
ভেবেই দেখো কোথায় দিলে ডুব।
দেশের মাথা খারাপ মোটে নয়
জলের মতো লুঠেরা বরাভয়।
তবুও দেখি আঁধার চারিদিকে
আলোর রেখা পড়েছে ছিঁড়ে শিখে।
সহজ নয় সহজ নয় ফেরা
ঘুঘুও তার বেছে নিয়েছে ডেরা।
         ................


দিক চিহ্ন হীন

অর্থিতা মণ্ডল


এই দূরত্বটুকু থাক।যজ্ঞের আগুনের শুদ্ধ ভূমি
আজানু বিস্তৃত ঘেরাটোপে যে শস্যকথা লিখে রাখে, তার ঘ্রাণ আসছে।
মরা ধানক্ষেতে রাত নামে,শীতল

একসময় দূরত্ব ভুলে যায় দূরত্বের গন্ধ
প্রাচীন কথক জীর্ণ মন্দির থেকে বেরিয়ে আসেন।
জোকার মুহূর্ত ঠোঁটের ডগায় চুম্বন নিয়ে সমুদ্রে নৌকো ভাসিয়ে দিল 

শ্রীহীন অপূর্ব জমি। বীজপোঁতা আলো জ্বেলে কম্পাসটি ঘুরছে,ক্রমাগত
                  ..................


যাপন

নিবেদিতা মজুমদার


একটা পাঞ্জাবী কেনা হল
অথবা হাতেবোনা সুতী...

যেখানে মা মা গন্ধ লেগে থাকে,
যেখানে তপ্ত গ্রীষ্ম-চুমুক আমপানায় ,
যেখানে সন্ধের অবকাশে ঠান্ডা ঝড়ের স্রোত-
সারা মাসের ইঙ্গিত জুড়ে রবিঠাকুর
লেপ্টে থাকেন আকাশের চারদেয়ালে
আর তৃষ্ণার্ত বৈশাখ সেজে ওঠে
লাল সেই বাঁধানো খাতার আতরের গন্ধে,
সেখানেই -
ঠিক সেখানেই মা আমার
আমসত্ত্ব শুকোবে বলে
বেত ভরে রোদ ডেকে আনে পায়ের তলায়,
সেখানেই প্রবাসী গবেষক ছেলে,
বৈশাখী সবুজ রঙা নতুন পাঞ্জাবীর
মোড়ক খুলতে খুলতে
বাবার পা ছুঁয়ে নেয়,
ল্যাপটপ স্ক্রিনে!
বাংলায় লিখতে শেখেনি তাই,
যে মেয়েটিকে আজ সোশ্যাল মিডিয়ায়
করতে হয়েছে হাজারো জবাবাদিহি-
এক ঝাঁক প্রজাপতির রঙে মিশে
"এস হে বৈশাখ " বন্দনায়
সাজিয়ে নিয়েছে উত্তরীয়,
সেই নন্দিনী ;
যেখানে বুকের অলিন্দ, নিলয়
আজীবনের আবেগে বিদ্ধ
যেখানে ১লা বৈশাখ এই প্রজন্মে
মন থেকেই একলা হয় না কখনো,
সেখানেই বাঙলায় লেখা হয় -
জীবনযাপন ;
   .........

সমান্তরাল

সুলক্ষণা



কথা বলা হয় না আর
ভাগ হয় না দুঃখ সুখ,
খবর নেই বহুদিন...
টবের গাছে ফুল ধরলো কিনা!
শনিবারে ফিরতে রাত হবে কিনা!
সকালে চা খাওয়া হলো কিনা!
তাই চিন্তারা চুপ করে গেছে মাথায়…
হলুদ শার্টটা আজ রং চটে গেছে নিশ্চয়ই-
নীল শাড়িটা তবুও তোমার আলমারিতেই রাখা…
ছেড়ে যাওয়া সহজ নয় তাদের ,
যারা একসাথে গড়েছে সময়-
তবু
ঠিকানাটা ভুলতে চাওয়ার নেশায় মেতেও,
বিদায়ের চিঠিটা লিখে রেখে দিয়েছি বাক্সেই…
                   .............


ভাঙন অথবা দিন বদলের সূচি

সানি সরকার


যখন যেখানে যাই সেখানেই ঘাপটি মেরে থাকি
আমার চারদিক ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়
শীতের শহর কী নিষ্ঠুর, জল তরঙ্গের নিচে
ঘুমিয়ে থাকে আদ্যোপান্ত
রাতের স্তব্ধের ভেতর শুধু ঝিঁঝিঁ ডাক
আর কিছু নয়, একথা বলা যায়না
মার্জিন ভেঙে এ-মুহুর্তে একটি দাঁড় কাক
ডাকছে খুব রিপু করা জামার কাছটিতে-
কে-যে জন্মের খিদে টাঙিয়ে রেখেছে
সিলিঙে, কত চেনা মনে হয়, অথচ
অচেনা কত পরত...
যখন যেখানে দাঁড়াই কেবল ভাঙনের ঠান্ডা প্রবহ
দ্যাখো, নিজেকে খুঁড়তে-খুঁড়তে রোজ এভাবেই তো নেমে আসছি
এ-শহরের জেব্রাক্রসিং থেকে
এম.বি.রোডের মেসবাড়ির বিছানায়।
                     ................


নিশি

মিঠু রাজবৎসী


যখন ছোটো ছিলাম
নিশির কথা শুনেছি কতবার।
পাশের বাড়ির কাকুকে নাকি ধরেছিল নিশি।
ওই পাড়ার অমুককেও।
মাঝে মাঝেই মাকে দেখতাম
গভীর রাতে ঘুমের ঘোরে গোঙাচ্ছে।
ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দিতাম।
বাবাকেও কতবার।
দেখতাম শীতের রাতেও ঘেমে অস্থির।
দিদিমার কাছে শুনেছি,
তার বাবাকে কোন এক গভীর
রাতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল নিশি,
সে আর ফেরেনি ঘরে ।
এখন আর নিশিরা আসেনা।
ছোটোরা জানেনা ওদের গল্প। 
ওরা কোথায় থাকে এখন!
তবে কোন অভিমানে
নিঃশব্দে সরে গেল ওরা?
      ..............


যুদ্ধ

সঞ্জয় সোম



যুদ্ধ আমার কোনও দিন শেষ হবে না
এই পরিচয়টুকুই থাক
তুমি জানো না
শব্দহীন থেকে বেছে নিই
               সূর্যপ্রতিম শব্দ
হারিয়ে যেতে আসিনি
আমরা বেছে নিয়েছি নতুন সড়ক
বুঝতে পারি আমাদের
অনুভূতিতে আছে সংকীর্ণতা
আমরা সরাতে পারিনি অসহিষ্ণুতা
যুদ্ধ আমাদের চলছে চলবে।
           ...............

ছায়া-মা

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়


গাছেদের ছায়ার মায়ায় মা কুড়াই
আঁচলের কথা তাত ঢেকে
আদর জাগাচ্ছে
রোদ্দুর মিষ্টি হয়ে ডেকে
কাঠবিড়ালি
ধীর পায়ে পায়ে ঢুকে আসছে অধীর
আলো বিকেলের দিকে চলে গেলে
নিভে আসা ডানার শরীরে
চুপ ছায়া মা নীড় হয়ে ওম দিয়ে যায়।
              ................


হতচ্ছাড়া প্রেম

কৃপা বসু


আমরা যাদের হাসির খোরাক, বুঝিয়ে দেবো ওদের।
প্রেমের ছায়া বাড়তে থাকে, যায় না পুড়ে রোদে।
চিঠির পাতায় গড়তে হবে, যুদ্ধসাজের বেশে।
জিততে হলে, টুকরো হৃদয় কুড়োয় মানুষ শেষে।
ফারাক অনেক, তার ভেতরেও ফাটল লাখো লাখো।
ভুল দুটো চোখ শ্যাওলা জমায়, কেউ বাঁধে না সাঁকো।
পিছলে যদি হারাই ভয়ে, দুজন এতেই সুখী।
ব্যারিকেডের বাইরে, পরস্পরের মুখোমুখি।
মধ্যিখানের ঘুপচি সমাজ, বিঁধছে পরম্পরায়।
তবুও দেখি ভাঙলে সবাই, নীচের দিকেই গড়ায়
               ...................


স্বপ্নেরা

পারমিতা ঘোষ


স্বপ্ন দেখি হাঁটছি আবার পাশাপাশি
বেহিসাবি আঙুল জড়াক আলতো ছোঁয়া
পুরনো ব্রিজের ধারটা জুড়ে দারুণ সোহাগ
অল্প আলো অন্ধকারের নিবিড় হওয়া।
স্বপ্ন দেখি রাজ্যসীমায় বসন্তরাগ
পলাশ পাড়ায় এক্কাদোক্কা খেলার সাথি
রোদ ভেজানো আচমকা এক সুরের টানে
শুকনো স্মৃতি হিয়ার তারে বুনতে থাকি।
স্বপ্ন দেখি ঘর পেরিয়ে খানিকটা দূর
সমান্তরাল রেললাইনের বেশ চেনা দাগ
ব্যালকনি তে ম্যারান্টা আর মনস্টেরা
বারান্দাতে অর্কিডেরা খুব সুখে থাক।
স্বপ্ন দেখি হৃদয়পুরের একলা গালিব
রোমন্থনের সুখের ফসল হিসেবমাফিক
গুছিয়ে নিই উড়তে থাকা ডায়রি পাতা
একলা ঘরে মন খারাপি বৃষ্টি আঁকি।
              ................


গান

শ্রীজিৎ জানা


দুগ্গারা সব ব্যােমকাই বালুচরী
দুগ্গারা সব উডু উডু প্রজাপতি
ফুটপাতে ফুঁপিয়ে কাঁদে ন্যাংটো শরৎ
জঙ্গলে লাশ বাবলু সোরেন সরস্বতী!
দুগ্গরা সব রেস্টুরেন্টে ভীড়
দুগ্গরা সব জীনস্ টপে হট্লুক্
সামনে বন্যা পেছনে আছোলা বাজারদর
মিষ্টি সোনা ভাগ করে খাও হাওয়ার মিটাই সুখ!
দুগ্গরা সব মন্দারমণি
দুগ্গরা সব বকখানি চাঁদিপুর
পাঁচশ টাকায় পণ্য হচ্ছে ফর্সা দুগ্গা
বাইক চড়িয়ে নিয়ে পালাচ্ছে ম্যাচো মহিষাসুর!
                 ..............


সাঁঝবাতি আলো

দুঃখানন্দ মণ্ডল


আবদ্ধতা এঁকে নিচ্ছে অন্ধকারের ছবি
অন্ধকার ভেদ করে সৃষ্টি কথা বলে
সৃষ্টি উঁকি দেয় আলোর নদীর দিকে।
নির্মাণের শেষে ভাঙা গড়ার ইতিহাস
জানা হয়নি; শেষের পর কি বাকি থাকে
চাঁদের গায়ে লেখা হয় পিয়াসি মানুষের দিনযাপন।
অন্ধকার সব বাধা অজানার আহ্বানে হারিয়েছে
ক্লান্ত পথিক কুড়িয়ে নেয় সাঁঝবাতি আলো
আবদ্ধতার আঁকা ছবি দেওয়ালের ওপ্রান্তে।
সাঁঝবাতি আলো ডুব দেয়
দৃষ্টি কালো ছায়া পথের দিশারী
একটা নদী মনের গভীরতা মেপে নেয়।
       ................


সম্পাদক: দুঃখানন্দ মণ্ডল    

সহ-সম্পাদক: শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ ভাবনা: Web

ঠিকানা: সুরতপুর,দাসপুর,ঘাটাল,পশ্চিম মেদিনীপুর,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত।
যোগাযোগ: ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪


ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...