Sunday 27 November 2022

মহাশ্বেতা দাস এর গল্প// ই-কোরাস ৮৪


আর এক নাম নিষ্ঠা

মহাশ্বেতা দাস



"তিতলি ঘুম থেকে উঠে পড়। স্কুলে যেতে হবে।" বছর ছয়েকের তিতলি কে ঘুম থেকে তুলে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরী করে নিজে অফিস যাওয়ার জন্য তৈরী হতে থাকে সোমনাথ। রোজ অফিস যাওয়ার পথে তিতলি কে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে সোমনাথ অফিস যাওয়ার জন্য স্টেশনের দিকে পা বাড়ায়। "টিফিন বক্স গুলো টেবিলে রাখা থাকলো...." ও ঘর থেকে তিতলির মা স্নিগ্ধা বলতে থাকে। 


দক্ষিণ কলকাতার তিন কামরার ফ্ল্যাট বাড়িতে তিনজনের সংসার। ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ে তিতলি বড্ড বাবা ন্যাওটা। আর হবে নাই বা কেন! সোমনাথ তো অফিসের কাজ টুকু ছাড়া মেয়ের বাইরে আর কিছু ভাবতেই পারে না। সেই ছোট্ট বেলা থেকে তিতলির যাবতীয় ঝক্কি ঝামেলা একাই সামলায় সে। এমনকি তিন বছরের তিতলি যেদিন জ্বরে বেহুঁশ - সারারাত জেগে থেকে তিতলির মাথায় জলপট্টি দেওয়া, ন্যাপি বদলানো সব সোমনাথই করে। মা স্নিগ্ধার ভূমিকা এখানে নেহাতই নগন্য। স্নিগ্ধা বয়সের তুলনায় একটু বেশী মাত্রায় আত্মসমাহিতা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা তো দূর..  প্রয়োজনটাকেও ছোট করে নিয়েছে নিজের মতো করে। নিজের চারপাশে সর্বক্ষণ এমন এক অদৃশ্য দেওয়াল তুলে রেখেছে যে সহজে কেউ সেটা উপেক্ষা করে ওর কাছে পৌঁছাতে পারে না।

আজ সোমনাথ তিতলিকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গেটের সামনে দেখলো খবরের কাগজ টা পড়ে আছে। কাগজ টা তুলে নিয়ে স্নিগ্ধার হাতে দিতে গিয়েও একটা হেড লাইনে চোখ পড়তেই থমকে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে কাগজটা অফিসের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল। তিতলিকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে স্টেশনে এসে ট্রেনের কামরায় জানালার ধারে বসে চোখ আটকে গেল সেই হেড লাইনে। মনটা তোলপাড় করছে-যেন হিমালয় পর্বত শৃঙ্গ টুকরো টুকরো হয়ে আছড়ে পড়ছে ওর বুকের ভিতরে।


বহু বছর আগের কথা। স্কটিশ চার্চ কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়ে সোমনাথ, স্বরূপ, অভিরূপ, রোহিত, শ্রীজাতা আর স্নিগ্ধা। ক্যান্টিনে, গাছতলায়, করিডোরে এমন কি ছুটির দিনের বিকেল গুলোতেও ভিক্টোরিয়া বা বর্টানিক্যাল গার্ডেন... ওদের একসাথেই দেখা যেত। ওদের নির্ভেজাল বন্ধুত্ব অন্যদের ঈর্ষান্বিতও করত মাঝে মাঝে। ক্রমে ওরা গ্র্যাজুয়েশন পাশ করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার দিকে পা বাড়ালো। শ্রীজাতার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে বিদেশে চাকুরিরত এক সুপাত্রের সাথে। ছেলেরাও যে যার মতো করে কর্মসংস্থানের খোঁজে। এসবের মধ্যে কবে যেন রোহিত আর স্নিগ্ধার মধ্যে একটু একটু করে গড়ে ওঠে এক অন্যরকম সম্পর্ক যেটা নিছক বন্ধুত্বের মধ্যে আর আটকে নেই। একদিন ঠিক হল সামনের পূজার ছুটিতে ওরা ছয়জনে মিলে বেড়াতে যাবে সান্দাকফু। আলোচনার প্রথম পর্বে পাহাড় না সমুদ্র এই নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত হয় পাহাড়। সদলবলে বেরিয়ে পড়তে দেরী করে না কেউ।


পাঁচ দিন ধরে ওরা ঘুরে বেড়িয়েছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। বিশ্বভরা প্রাণের মাঝে নূতন করে যেন আবিষ্কার করলো নিজেদের অস্তিত্ব। ওদের বন্ধুত্বের সাক্ষী হয়ে রইলো গিরিশৃঙ্গ থেকে পাইন গাছের সারি, ঝর্ণা, আকাশ। সেদিন বিকেলে ওরা তিস্তা নদীর উপত্যকায় দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিল দূরের উদ্দাম ঝরনা, পাহাড়ি গাছ আর খরস্রোতা নদীর চঞ্চল রূপ। সূর্য তখন প্রায় অস্তাচলগামী। আবির রঙা লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছিল আকাশে। আচমকা একটা আওয়াজ.."আ - আ - আ...!" চুরমার করে দিল সব রকমের স্তব্ধতা। 


রোহিত পা হড়কে নিমেষের মধ্যে পুতুলের মতো ছিটকে পড়ে গেল খরস্রোতা তিস্তা নদীর জলে। তারপর আরও তিনদিন ধরে ওরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মৃত অথবা জীবিত কোন অবস্থাতেই রোহিতকে খুঁজে পেল না। একপ্রকার আত্মগ্লানি আর অপরাধ বোধ নিয়েই ওরা ফিরে এল কলকাতায়।


সন্ধ্যার অন্ধকার ক্রমে গাঢ় হতে শুরু করেছে। ঘর অন্ধকার করে নিজের রুমে নিজেকে আবদ্ধ করে বসে আছে স্নিগ্ধা। ছবির বইয়ের পাতার মতোই মনের মধ্যে উলোট পালট খাচ্ছে রোহিতের সাথে কাটানো একের পর এক দিনগুলি।

আর নিজের শরীরে অনুভূত হচ্ছে রোহিতের সাথে কাটানো কোন এক আবেগঘন মুহূর্তের ফল, নতুন প্রাণের স্পন্দন।

কী করবে স্নিগ্ধা!! কেমন করে মুখ দেখাবে সমাজে! মা-বাবাও কি মেনে নেবে তার এই অবস্থা!

অনেক ভেবে নিজেকে শেষ করে ফেলার সিদ্ধান্তই নিয়ে নিল স্নিগ্ধা। আচমকা ঘরে ঢুকে স্নিগ্ধার হাত থেকে বিষের বোতলটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে স্নিগ্ধার গালে এক চড় মারল সোমনাথ।

মহাবিশ্বের সংসার নামক কক্ষপথে সোমনাথ আর স্নিগ্ধার আবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু কেবলই তিতলি। এভাবেই চলছিল বেশ। আজ খবরের কাগজটা খুলে যেখানে সোমনাথের চোখ আটকে গেল..."রোহিত ফিরে এসেছে।"

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখল স্নিগ্ধা একই রকম অবিচল- কিছু বুঝতে পারলো না। কিন্তু রাতে খাবার টেবিলে বসে বুঝতে বাকি রইলো না যে স্নিগ্ধা জেনে গেছে রোহিতের ফিরে আসার খবর। অন্যান্য দিন রাতে খাবার পরে স্নিগ্ধা উত্তরের রুমে আর দক্ষিণ দিকের রুমে তিতলিকে নিয়ে ঘুমাতে যায় সোমনাথ। মাঝে ব্যবধান ডাইনিং হল। আজ তিতলি ঘুমিয়ে গেলে সোমনাথ নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না। সোজা চলে এল স্নিগ্ধার রুমে। স্নিগ্ধা জানত তাই দরজা খুলেই রেখেছিল। খবরটা স্নিগ্ধার কাছে আড়াল করতেই কাগজটা অফিসের ব্যাগে নিয়ে চলে এসেছে সোমনাথ। আজ অফিসেও সারাদিন কাজে সেভাবে মন দিতে পারলনা সোমনাথ। অনেকদিনের সাজানো সাম্রাজ্য কেউ কেড়ে নিতে এলে যেমন টা হয়!!

"ভালোই হয়েছে তুমি এসেছ। আগামীকাল রোহিতকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলেছি।" 


 সোমনাথ এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না।

"তুমি যা যা শর্ত দিয়েছিলে বিয়ের সময়, আমি এই ছয় বছরে তার একটাও অমান্য করিনি। তিতলি ছাড়া আমাদের মাঝে দ্বিতীয় কেউ আসা তো দূরের কথা একটি রাতও এই ডাইনিং হলের দূরত্ব পেরিয়ে তোমার কাছে আসার স্পর্ধা দেখাই নি। পিতৃস্নেহের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি তিতলির জন্যে। আজ তিতলি যেমন আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না.... আমিও তিতলিকে ছেড়ে বাঁচবো কি করে!" 


"যাও ঘরে যাও। অনেক রাত হয়েছে তিতলি ঘুম থেকে উঠে পড়বে।"-শান্ত অথচ বলিষ্ঠ ভাবে স্নিগ্ধা এই কয়টি কথা বলার পরে সোমনাথ আর কিছু বলতে পারে না, চলে আসে তিতলির কাছে। পরেরদিন শনিবার-সবারই হাফ ছুটি। তিতলি স্কুল থেকে চলে এসেছে কিন্তু সোমনাথ তখনও অফিস থেকে ফিরতে পারে নি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে-কলিং বেল বেজে উঠল। পরিচারিকা দরজা খুলে রোহিতকে ড্রইং রুমে এনে বসালো। স্নিগ্ধা এল কিছুক্ষণ পরে... রোহিতের চেহারায় অনেক বিকৃতি ঘটেছে। একটা পা খোঁড়া হয়ে গেছে তাই ক্রাচ নিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। কপাল ও থুতনির কাছে কয়েকটি স্পষ্ট কাটা দাগ বলে দেয়  রোহিতের জীবনে বড় সড় দুর্ঘটনার কথা। 

"আমার মেয়ে কোথায়! আমি দেখব তাকে।"

রোহিত তিতলির গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে -"মামনি বলতো আমি তোমার কে হই?" 

তিতলি হাতের পুতুল টা নিয়ে খেলতে খেলতেই উত্তর দেয় - "তুমি! ... আঙ্কেল। আচ্ছা তোমার পাশে ওটা কী?" "শান্ত হও। তিতলি বাবা (সোমনাথ) কে ছাড়া কিছু বোঝে না। তাই এমন কিছু করো না যাতে....." 

স্নিগ্ধার নির্দেশে পরিচারিকা তিতলি কে এই ঘরে নিয়ে আসে।"ওটা কে ক্রাচ বলে।" সোমনাথ ঘরে প্রবেশ করে।

"বাবা আমি কখন থেকে তোমার জন্য বসে আছি। চলো চলো আজ তো পার্কে বেড়াতে যাওয়ার দিন।" 

দৌড়ে এসে তিতলি সোমনাথের হাত ধরে প্রতি শনিবারের মতোই টানতে থাকে। তিতলির জেদাজেদিতে সোমনাথ ওকে নিয়ে পার্কের দিকে পা বাড়ায়। "জানো আমার এই অবস্থার জন্যে দায়ী কে?"

"জানি। আমি সব জানি।"

"সব জেনেও ঐ খুনি টার সাথে তুমি...!" 

স্নিগ্ধা রোহিতকে থামিয়ে দিয়ে.... 

"আমি জানি সেদিন সোমনাথ-ই তোমাকে ঠেলে খাদে ফেলে দিয়েছিল। ও যে আমাকে ভালোবাসে একথা বলার সুযোগ পায় নি। তাই হয়তো ওর মতো করে এই পথ বেছে নিয়েছিল। যদিও এটা কোন ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়, তবু বলছি আমি ওর নিষ্ঠার কাছে হার মেনেছি। তিতলি ওর ঔরসজাত সন্তান না হয়েও হৃদয়জাত সন্তান। হৃদয় দিয়ে তিলে তিলে তিতলির বাবা হয়ে উঠেছে। সোমনাথ আমাকে ভালোবেসেছে। কিন্তু কোন কামলোলুপতা নিয়ে নয়। সোমনাথের কাছে ভালোবাসার আর এক নাম নিষ্ঠা। আমি ওর নিষ্ঠা কে শ্রদ্ধা করি।" 


"এরপর তো আর কিছু বলাই চলে না। চলি.... ভালো থেকো। এ জীবনে না হয় তিতলির আঙ্কেল হয়েই রইলাম।" 

বাড়ির বাইরে পা বাড়ায় রোহিত।

              ৷৷।………………………।।।




সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614











Saturday 19 November 2022

মহাশ্বেতা দাস এর মুক্তগদ্য // ই-কোরাস ৮৩

 




হার মানি তাই বারে বারে 

মহাশ্বেতা দাস 

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ছোট থেকেই কিছু কথা মাথার ভেতর জাঁকিয়ে বসে তার মধ্যে অন্যতম একটি "জিততে হবে।" স্কুলের রেজাল্টে জিততে হবে, আবৃত্তি, অঙ্কনের মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জিততে হবে, খেলার মাঠেও জিততে হবে। সবসময় সবার বেলায় এই "জিততে হবে" টা যে ভালো ফল দেয় এমনটাও নয় অন্তত জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা তাই বলে। এরপর পাঠকেরা হয়তো মনে মনে ভাবতে শুরু করেছেন- "তবে কি এবার থেকে ছেলে মেয়ে কে হেরে যেতে শেখাবো!"  না, আজ সেই মনস্তাত্ত্বিক আলোচনায় যাবো না। বরং আজ হেরে যাওয়ার  সুখের স্মৃতির ঝুলি থেকে কিছু রেখে দেবো এখানে। 


তখন পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রামের একটি শতবর্ষ প্রাচীন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। বাস রাস্তা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভিতরে মোরাম রাস্তা হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। মাঝে মধ্যে একটা দুটো ভ্যান রিক্সা (টলি) থাকে বটে তবে সবসময় পাওয়া যায় না। একদিন স্কুল ছুটির পর বিকেলে লাল মাটির রাস্তা ধরে হাঁটছি… অনুভব করলাম আমার বাম হাতের একটা আঙ্গুল কে যেন মুঠো করে ধরেছে। তাকিয়ে দেখি স্কুলের পোশাক পরা পিঠে লাল রঙের একটা ব্যাগ নিয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র তন্ময়। 

       " কী রে তুই! বাড়ি যাবি?"

মুখটা ওপর দিকে তুলে... "ও ম্যাডাম তোমার ঘর কোথায় গো? তোমাকে রোজ এদিকে যেতে দেখি... তাই আজ তোমার সাথেই যাবো।" 

"আচ্ছা চল। কিন্তু আমি তো তাড়াতাড়ি হাঁটবো, তুই ছোট... এত তাড়াতাড়ি কি পারবি আমার সাথে?" 

"উঃ ম্যাডাম, তুমি কিচ্ছু জানো না। আমি মোরামের ওই গুলি গুলোর উপর এক পা চেপে আর একটা পা তুলে দিলেই এমনি চাকার মত অনেকটা চলে যাবো।"

"সে কি! পড়ে যাবি তো!!" 

না না পড়বো না। ঐ জন্যেই তো তোমার হাতটা ধরে আছি। এই দেখো.... কাল তুমি যখন রিশকাটায় উঠেছিলে, রিশকা চলতে শুরু করতেই আমি পিছনে ঝুলতে ঝুলতে চলে গেলাম। তুমি দেখতে পাও নি।"

"আর কখনও ঐ ভাবে যাবি না। যেদিন মনে হবে আমার সাথে সামনে এসে বসবি।" 

".... ঝুলতে ঝুলতে গেলে পয়সা লাগে না গো। বসে গেলে লাগবে। আমার কাছে বাস ভাড়া দু টাকা থাকে।"

"সে লাগুক পয়সা। আমি দিয়ে দেবো। তবু ওই ভাবে ঝুলবি না।"

"তুমি দেখছি ঠিক আমার মায়ের মতো কিছুই জানো না। আমি পড়বো না গো..."

কখন যে বাস রাস্তায় এসে গেছি...  বাস এসে গেল। দৌড়ে উঠে গেল তন্ময়। আমি বাসে উঠতেই... "ও ম্যাডাম এদিকে এসো। তোমার জন্য জায়গা রেখেছি গো।" 

দুটো স্টপেজ পরে নেমে গেল তন্ময়। ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ওর সরলতার কাছে হার মেনে বললাম," সত্যিই রে... তোর মায়ের মতো আমিও অনেক কিছুই জানি না!"


মেয়ে তিন বছরের, সবে নার্সারি স্কুলে যেতে শুরু করেছে। সেদিন আমি ছুটি নিয়েছি তাই ওর স্কুল ছুটির পরে বাড়ি নিয়ে আসবো বলে অন্যান্য মায়ের মতোই গেটের সামনে অপেক্ষা করছি। ছুটির ঘন্টা বাজতেই একে একে পুতুল গুলো ছোটো ছোটো পায়ে এগিয়ে আসছে আর ওদের চোখ গুলো খুঁজে বেড়াচ্ছে আমাদের মুখ।

"মা ঐ রাস্তাটা দিয়ে চলো।" 

"এই রাস্তা টা কী করলো!! তাছাড়া আইস্ক্রীম দোকান তো ঐদিকে নয়!"


"আজ জীবন থানদা খাবো। তুমি তো জানোই না... তাই তোমাকেও দেব।" চাকা লাগানো একটি দোকান গাড়ি তে করে বরফ কুচি গ্লাসে দিয়ে তার ওপর লাল, সবুজ রঙের সিরাপ দিয়ে বিক্রি করছে। 

    "আমার ম্যাঙ্গো তাই গ্রীন। তোমার জন্য ব্ল্যাক।" 

    "কেন আমি ও সবুজ টা খাই না!" 

   " ওটা কালা কাততা.… তুমি তো জানোই না। " 

      বললাম "সত্যিই! জানতাম না তো।"  মনে মনে বললাম তোদের সাথে থাকলে এমনিই জীবন ঠান্ডা থাকে।


ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা ক্লাসে সেদিন। পাঠ্য কবিতার কয়েক লাইন -

   "...বলে এলাম আমি

         আবার আসব,

আমার ঘরের দরজা এখন 

        সবুজে সবুজ।" 

তৃতীয় বেঞ্চে বসে থাকা সুশোভন - " ম্যাডাম, জানেন কেন গাছের পাতার রঙ সবুজ হয়! কারণ পাতায় ক্লোরোফিল থাকে। বিজ্ঞানের স্যার বলেছে।" 

 বললাম, "তাই নাকি! না রে জানতাম না তো!!" 

এতক্ষণ চুপ করে বসে থাকা রীতেশ এবার ভাবছে  ....আমি কম যাই কি! তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে -- " গাছ তার পাতাতেই খাবার তৈরী করে। তাই পাতাকেই গাছের রান্নাঘর বলে। এটাও তো জানোনা তুমি!" মুখ টা এমন... যদি একবার ম্যাডাম বলে দেয় যে এটা জানতাম। তাহলে সুশোভনের কাছে ওর প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যাবে। 

আমি বললাম, " তাই! গাছ পাতাতেই রান্না করে নেয়! হাঁড়ি, কড়া, খুন্তি... কিচ্ছু লাগে না!?" 

গোটা ক্লাস হো হো করে উঠলো... "ম্যাডাম আমাদের বিজ্ঞান বই টা তোমাকে একদিন দেবো।" দেখতে দেখতে ওরা বড়ো হয়ে গেল। আমার আঙ্গুল ধরে হাঁটা তন্ময় যখন নবম শ্রেণী....  দেখি আমি ওর কাঁধের নীচে! একদিন বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে যে যার মতো উচ্চ শিক্ষার জন্যে পা বাড়ালো। তখনও এসে গেছে আরও কচিকাঁচার দল।


একদিন ট্রেনের কামরায় জানালার পাশে বসে বাইরের প্রকৃতি দেখছি।  "ম্যাডাম কোথায় যাবেন? আমাকে চিনতে পারছেন! আমি সুদীপ্ত আপনার ছাত্র।" 

"ও.... হ্যাঁ মনে আছে। তুমি কোথায় যাবে? বসো।"  মুখোমুখি সিট নিয়ে বসলো। ট্রেন চলেছে পাল্লা দিয়ে চলেছে ছাত্র - শিক্ষক কথাবার্তা। 

"ম্যাডাম শীতকালে আগের মতোই আপনার গলার সমস্যা হয়! আমি কয়েকটা ওষুধ লিখে দিচ্ছি, সঙ্গে আমার ফোন নম্বর। অসুবিধে হলেই আমার সাথে যোগাযোগ করবেন, বলে দেবো কী করণীয়।"

একাদশ শ্রেণীতে সুদীপ্ত যখন পড়ে তখন বাংলা ক্লাসে ওদের পড়িয়েছিলাম ডক্টর আবিরলাল মুখোপাধ্যায়ের  লেখা "শব্দের আশীর্বাদ, শব্দের অভিশাপ" প্রবন্ধ। 

 তারপর মাঝে অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে আজ সেই সুদীপ্ত একজন নাক- কান- গলা বিশেষজ্ঞ। 

আজ সত্যিই তো সুদীপ্তদের কাছ থেকে অনেক কিছু জেনে নেওয়ার আছে।


পুজোর ছুটিতে হোস্টেল থেকে মেয়ে বাড়ি এলে জিজ্ঞেস করলাম -- 

"জিনিসপত্র ঠিক করে রেখেছিস তো। কঙ্কাল টা! ওটা কোথায় রাখলি?"  

"উঃ..... মা,তোমাকে কতবার বলেছি যে ওটাকে skeleton বলে।"

কী করে জানবো বল্... তোর মতো ডাক্তারি পড়িনি তো!" 

 "মা জানো.... আগামী বিশ্বকাপে প্রথম কারা মাঠে নামবে? মেসি মোট কত গুলো ম্যাচ খেলেছেন.... মা তুমি জানো?" 

      

 না রে!... এত কিছু তো জানিই না। শুধু জানি শীতের দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে বড্ড মন কেমন করে তোর, তোদের জন্যে। কবে তোরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে জয় করে বাড়ি ফিরবি... আমরা অপেক্ষায় থাকি। তোদের কাছে এই হেরে যাওয়ার ছোটো ছোটো এই স্মৃতির টুকরো গুলো গুছিয়ে রাখি সযত্নে। অপেক্ষায় থাকি আবার কবে কোন অছিলায় হার মানবো তোর কাছে!

        .......……………………. 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614



Saturday 12 November 2022

মহাশ্বেতা দাস এর গল্প // ই-কোরাস ৮২

 


মেঘ তুমি বন্ধু হলে

মহাশ্বেতা দাস

উত্তর কলকাতার তেতলা বাড়ির জানালার ধারে বসে আকাশ দেখছে শিলাদিত্য। শরতের নীল আকাশে পেঁজা পেঁজা মেঘের দল কেমন ভেসে ভেসে চলে যায়। "কোথায় যায়...?!"  বড্ড জানতে ইচ্ছে করে শিলাদিত্যর। ক্লাস সেভেনের ভূগোল বই এ মেঘ-বৃষ্টি- মহাকাশ নিয়ে যেসব কথা পড়ে সে.... তাতে ঠিক মন ভরে না। গাড়ীতে করে স্কুলে যাওয়ার সময়, ছুটির দুপুরে জানালার ধারে... এভাবেই আকাশ দেখে, গল্পের বই পড়ে, কখনও ছবি এঁকে কাটায় সে। ড্রইং খাতার পাতা গুলোতেও বেশীর ভাগই মেঘের ছবি এঁকে রাখে। অলস দুপুরে মেঘের ডানায় ভর করে শিলাদিত্যর মন চলে যায় অনেকে অনেক দূরে অজানা কোন্ মেঘেদের রাজ্যে.... সেখানে শুধু মেঘ আর মেঘ!! মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যেও মেঘ ভেসে আসে শিমুল তুলোর মত, আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েই আবার চলে যায়।


এক সময়ের জাঁদরেল মিলিটারি অফিসার ছিলেন বিক্রমাদিত্য রায়। বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত। মাঝে মধ্যে দেশের বাড়ি বিষ্ণুপুরে যান বটে... তবে বেশির ভাগই থাকেন কলকাতায়। সহধর্মিণী দীপশিখা দেবী বাগবাজারের বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তখন থেকেই একমাত্র সন্তান উদয়াদিত্য কে মানুষ করা থেকে সংসারের যাবতীয় কাজ সামলেছেন একা হাতে। বিক্রমাদিত্য কর্মসূত্রে প্রবাসী থাকতেন।  অধ্যাপক ছেলে উদয়াদিত্য, পুত্রবধূ পূরবী, ভূগোল অনার্স প্রথবর্ষে পাঠরতা নাতনি দিয়া আর নাতি শিলাদিত্য কে নিয়ে উত্তর কলকাতার এই তেতলা বাড়িতে বর্তমানে ভরা সংসার। দুঃস্থ মহিলাদের সাহায্য করা থেকে বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন দীপশিখা দেবী। মাঝে মাঝে সঙ্গী হয় পুত্রবধূ পূরবী।




সেদিন রাতে খাওয়ার টেবিলে ঘটলো এক মজার ঘটনা। বিক্রমাদিত্য ঘোষণা করলেন... সামনেই পূজার ছুটিতে তাঁর এক সহকর্মী বন্ধু প্রনবেন্দু পাল বিদেশ ভ্রমণ করে কলকাতায় আসছেন। কিছু কাজও আছে কলকাতায়,তাই এখানে এই বাড়িতে থাকবেন কয়েকটা দিন। তারপর মেঘালয়ের মাওলিনং গ্রামে তাঁর বাড়ি আছে .. সেখানে নিয়ে যেতে চান এঁদের সবাইকে। কথাটা পাতে ফেলতে না ফেলতেই যার পর নাই আনন্দে উচ্ছল হয়ে উঠলো সবাই। দিয়াও আজ আর খাবার নিয়ে খুঁত খুঁত করলো না! শিলাদিত্যও বিনা বাক্য ব্যয়ে ঘট ঘট করে শেষ করে দিল দুধের গ্লাস!!


"দিদি পূজার ছুটি পড়তে আর বেশী দেরী নেই। তাইনা! আচ্ছা, মেঘালয় মানে সেখানে অনেক অনেক মেঘ থাকবে?"  "হ্যাঁ থাকবে। শীতের দেশ তো তাই অনেক অনেক ফুলের বাগান থাকবে, ঝর্না থাকবে.... এখন ঘুমিয়ে পড়, কাল আবার স্কুলে যেতে হবে।"  এভাবেই গল্প করতে করতে সেদিন রাতে ঘুম জড়িয়ে আসে ভাই -বোনের চোখে। 


পূরবী, দীপশিখা দেবী যে যার মতো গোছগাছ শুরু করতে করতেই এসে হাজির পূজার ছুটি। বেড়াতে যাওয়ার জন্যে এই ছুটি টুকুই সম্বল। একসাথে সবাই ছুটি পায় কটা দিন। তাই দশমীর পরের দিনই হাওড়া স্টেশনে সরাইঘাট এক্সপ্রেসে চড়ে বসলো সবাই। দিয়া আর শিলাদিত্য আগে ভাগেই দখল করে নিয়েছে জানালার ধারে সিট গুলো। ট্রেন যখন স্টেশন ছাড়ল তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। পরের দিন ভোরবেলা নিউ কোচবিহার পেরোনোর পর থেকেই পথের দুধারে দেখা মিললো ছোট বড়ো পাহাড়ের। দিয়ার মন চলে যায় পাহাড়ের গায়ে সবুজ শ্যামলিমায়। ট্রেনের দুলুনিতে টের পাওয়া যায় সমভূমি ছেড়ে পার্বত্য অঞ্চলের দিকে এগিয়ে যাওয়া। কেউ তাস খেলে, কেউ গল্পের বই পড়ে, কেউ বা প্রকৃতি দেখে সময় অতিবাহিত করছে। হকার ওঠা নামা করছে, যাত্রীদের কোলাহল সব মিলিয়ে দূরপাল্লার ট্রেনের চেনা চিত্র।

"এটা নরনারায়ণ সেতু দিদিভাই..."   ট্রেন চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর দিয়ে। বিক্রমবাবু ব্রহ্মপুত্রের অসাধারণ সৌন্দর্যের বর্ণনা দিচ্ছেন দিয়াকে।  "দাদু ঐ দেখো বাস, ট্যাক্সি ও যাচ্ছে গো!!!"  কখন ঘুম থেকে উঠে ওদের সঙ্গী হয়েছে শিলাদিত্য... টের পায় নি।  "ভাই, এটা কে বলে ডাবল- ডেক- ব্রীজ।"  সকাল ন' টা নাগাদ ট্রেন পৌঁছালো গুয়াহাটি স্টেশন। ওখানে আগে থেকেই গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছিল অমলেন্দু' র ড্রাইভার। অমলেন্দু প্রনবেন্দু বাবুর সন্তান। ডাক্তার হিসেবে এ অঞ্চলে ভালোই খ্যাতি তার। অমলেন্দুর দশ বছরের ছেলে সোমেন্দু আর স্ত্রী রত্না। অমলেন্দুর মা চন্দ্রানী দেবী বছর তিনেক হল ইহ জগতের মায়া ত্যাগ করেছেন। গুয়াহাটি থেকে গাড়ী চলেছে পাহাড়ি পথ ধরে .... যত যায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। "মা দেখো রাস্তার পাশে কী লম্বা লম্বা ঘাসের বন!" "এই ঘাস গুলো দিয়েই ফুল ঝাড়ু তৈরী হয়, আমরা যেগুলো ব্যবহার করি।"  "ওই দূরে কী সুন্দর ঝর্ণা উদ্দাম গতিতে ধেয়ে আসছে - মা দেখো!" এভাবেই কৌতূহল প্রকাশ করে পূরবীর ছেলে - মেয়ে। যেতে যেতে চোখে পড়ে কমলা লেবুর বাগান, সুপারি গাছের সারি, ফুলের সমারোহ আর পাহাড়ের সাথে মেঘের বন্ধুত্ব। দুপুর নাগাদ গাড়ী প্রবেশ করলো সুন্দর লতানে ফুল গাছে মোড়া একটি দরজা দিয়ে।"দাদু এসেছে, দাদু এসেছে....!" দৌড়ে এসে হাজির সোমেন্দু। সবাই কে আপ্যায়ন করে বাড়ীর ভেতর নিয়ে গেল রত্না। অমলেন্দু তখনও চেম্বার সেরে ফিরতে পারে নি।


মধ্যাহ্ন ভোজের পর সবাই বিশ্রাম নিল, ...ক্রমে বিকেল গড়িয়ে এল। এখানকার আবহাওয়া শীতল তাই পথের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় সহজেই। বিকেলে পায়ে হেঁটে গ্রাম দেখতে বেরিয়ে পড়েছে। গ্রামের প্রতিটি বাড়ী পরিপাটি করে সাজানো.... সামনে ফুলের বাগান, গেট গুলি লতা পাতা দিয়ে মোড়া। রাস্তাঘাট খুবই পরিচ্ছন্ন... মাঝে মাঝেই আছে বেতের তৈরি ডাস্টবিন। গারো, খাসিয়া, জয়ন্তিয়া আদিবাসীদের বাস এখানে। রাস্তায় রয়েছে সৌরবাতি... সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয় এই গ্রাম। ঠিক যেন গল্পের বইতে পড়া রূপকথার দেশ।! পরের দিন সকালে গাড়ী ছুটছে পাহাড়ী পথ ধরে। আজ রত্না ও সোমেন্দু ওদের সঙ্গ নিয়েছে। মেঘে আচ্ছাদিত আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথে হঠাৎ করে ছুটে আসা মেঘ কখন যে জড়িয়ে ধরে টেরই পাওয়া যায় না, ঠিক যেন সোমেন্দু বা শিলাদিত্য' র সহপাঠী কোন বন্ধু। আবার একটু পরেই মেঘের লেশ মাত্র নেই... এ যেন ছোট বেলার আড়ি-ভাব খেলার খুনসুটি!! রিওয়াই গ্রামে গিয়ে দেখা মিলল থাইলং নদীর। পাহাড়ী নদীর উচ্ছল প্রাণবন্ত সৌন্দর্য তো আছেই ... তাছাড়াও এখানে বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় রবার গাছের শেকড়ের সহযোগে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা "লিভিং রুট ব্রীজ"! মেঘালয়ের প্রত্যেকটি পাহাড় যেন ঝর্ণার খনি! আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে ছোট বড়ো ঝর্ণা..... এভাবেই পথে পড়লো "বরহিল ঝর্ণা"। 




চিত্রানুগ এই শৈল শহরের অপরূপ সৌন্দর্য.... প্রকৃতির অকৃপণ দানে মুগ্ধ হয়ে কখন যে দীপশিখা দেবীর দুহাত জড়ো হয়ে আপনা আপনি কপাল ছুঁয়ে যায়! ... মনে মনে বলে "ভূবন মোহিনী মা, তোমার রূপের কতটুকুই বা দর্শন করতে পারলাম! বাকি রয়ে গেল যে অনেক। তবু যা দেখলাম, সেটুকুই এজীবনের সঞ্চয়।


একটাদিন মাঝে বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লো সদলবলে। মনোরম পরিবেশ, পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, দিয়া, শিলাদিত্য আর সোমেন্দুর একরাশ উচ্ছল প্রাণবন্ত কৌতূহলী চোখ মুখ.... সব মিলিয়ে বয়স্ক মানুষ গুলোও যেন নূতন করে ফিরে পেয়েছে হারানো প্রাণশক্তি। উদয়াদিত্য, পূরবী, রত্না তো আছেই... আজ আবার দল ভারি করেছেন ডাক্তার বাবু অমলেন্দুও। ডাউকির অসম্ভব সুন্দর গ্রাম সোনাংপেডেং। উমাংগট এবং কেশর নদীর তীরে অবস্থিত স্বচ্ছ জলের দেশ বলেই পরিচিতি মেলে এর। জলের রঙ প্রাকৃতিক ভাবে সবুজ। জল এতটাই স্বচ্ছ যে নদী তীরের গাছ গাছালি থেকে শুরু করে নদীতে চলমান নৌকার ও ছায়া পড়ে.... ঠিক যেন কোন কবিতার বই এর প্রচ্ছদ অথবা জল রঙে আঁকা কোন শিল্পীর হাতের তুলির টান। প্রকৃতির অকৃপণ দানে ভরা সুন্দরী মেঘালয়কে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে মনুষ্য তৎপরতারও অভাব নেই। শুধুমাত্র বাঁশ আর দড়ি দিয়ে প্রায় ৮৫ফিট লম্বা স্কাই ভিউ এ অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ। একদম উপরে উঠে গেলে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল সহ আরও অনেক কিছু দৃষ্টি সার্থক করে। এখানকার সুপারি, আদা আর কমলালেবুর চাষ প্রধান ফসল গুলোর অন্যতম।


"জেঠুমনি ঐ যে দূরে... ওটা কী গো?" কৌতূহলী দিয়া আজ গাড়ীতে অমলেন্দুর পাশে বসেছে। 

অমলেন্দুও অনেকদিন পরে ছুরি, কাঁচি, রোগী দেখা এসবের বাইরে বেরিয়ে বেশ মজা পাচ্ছে। অমলেন্দুর মেয়ে নেই একটি মাত্র ছেলে সোমেন্দু.... তাই বোধয় কন্যাসম দিয়া'র সঙ্গ তার আরও ভালো লাগছে। অমলেন্দু বলে চলে.... " ওটা ক্রেমপুরি গুহা। বিশ্বের দীর্ঘতম বেলেপাথর গুহা। আমরা খাসি পাহাড়ের মওসিনরাম এলাকায় এসেছি। এখানে ছোট বড়ো অনেক গুহা দেখতে পাবে।" মেঘালয়ের আনাচে কানাচে যেমন ঝর্ণা আছে তেমনি আছে অনেক গুহা.... এটা দিয়া পড়েছে ভূগোল বই তে। কিন্তু সামনে থেকে দেখে বেশ রোমাঞ্চ লাগছে। বিভূতিভূষণের  "চাঁদের পাহাড়" বইটা আগেই পড়েছে এখন যেন নিজেকে শঙ্করের সহযাত্রী বলে মনে হচ্ছে দিয়ার।


সেদিন রাতে স্বপ্নে ওরা এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছে। শিলাদিত্য আকাশ ছুঁয়েছে হাত দিয়ে, সোমেন্দু নদীর স্বচ্ছ জলে অনেক... অনেকক্ষণ ধরে স্নান করেছে, দিয়া পাহাড়ের আনাচে কানাচে, গুহার ভেতরে বিভিন্ন রকমের পাথরের অনুসন্ধান করেছে। 

      সকাল হতেই মংলু চলে এসেছে। মংলু এবাড়ির মালীর ছেলে। সোমেন্দু' র সমবয়সী। তাই প্রায়ই আসে, এই কদিন একটু বেশীই আসছে ওদের সাথে খেলতে। 

বিকেলবেলা মংলুর সাথে সোমেন্দু আর শিলাদিত্য যাচ্ছে ওদের পাড়ায়। পাহাড়ী ঢাল বেয়ে কিছুটা বামদিকে নেমে গেলে ছোট ছোট যে ঝুপড়ি গুলো দেখা যায়... ওখানেই মংলুরা থাকে। অমলেন্দুর এখানে একটা দাতব্য চিকিৎসালয় আছে। সপ্তাহে একদিন করে আসে এখানে। ওরা যেতেই সমবয়সী বেশ কতক ছেলে মেয়ে এগিয়ে এলো ওদের কাছে। সামনের খোলা জায়গাটাতে খেলা করলো ওরা। শিলাদিত্যর হাতের দূরবীনটা ওদের খুব পছন্দ। ওদের কাছে ছিলো ছোট বড়ো করে তিনটে দূরবীন, দুটো বল, চারটে প্লাস্টিক ব্যাট। সোমেন্দু আর শিলাদিত্য ওগুলো দিয়ে দিল ওদের কিন্তু সবাইকে দিতে গেলে আরও লাগবে.... কী করা যায়!

"সোমু.... এই নাও, এগুলো ওদের দাও।" ... পিছন ফিরে দেখে ব্যাগ ভর্তি জিনিস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীপশিখা দেবী, দিয়া, রত্না আর পূরবী। কখন ওদের পিছু নিয়েছিল জানতেই পারেনি! দৌড়ে গিয়ে পূরবীর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে অনেক বল, ব্যাট, পোশাক বিলিয়ে দিল বাচ্চা গুলোর মধ্যে। উচ্ছ্বাসে, খুশীতে উপচে পড়লো ওরা ফুলের বাগান খেলার মাঠ ছাপিয়ে আরও আরও...! দীপশিখা দেবী যে সমাজসেবা মূলক কাজের সাথে যুক্ত সেকথা তো শুরুতেই বলেছি। তাই অন্য দুটো ব্যাগে করে এনেছে এখানকার মেয়েদের জন্য শাড়ী। প্রথমে মংলুর মায়ের হাতে... তারপর একে একে অন্যদের দিয়ে... কাল এগুলো তোমরা পরবে কেমন। কাল ওদের " ওয়ান গলা" উৎসব। "আমাদের যেমন নবান্ন উৎসব, ওদেরও তেমনই ওয়ান গলা। দেবতা মিসি আর সালজং এর উদ্দেশ্যে উৎপাদিত ফসল উৎসর্গ করে তবে ওরা সেই ফসল গ্রহণ করে। এটাই ওদের প্রধান উৎসব।" ....কথা গুলো শিলাদিত্য, দিয়া আর সোমেন্দু কে বলতে বলতে বাড়ির দিকে রওনা দেয় দীপশিখা দেবী। পরের দিন উৎসবে ওদের সাথে খুব করে আনন্দ করে সবাই, যেন ওরাও উৎসবেরই একটা অংশ। মেঘের দেশে মেঘ পাহাড়ের লুকোচুরি খেলার মতোই জমে ওঠে ওদের বন্ধুত্ব। 




পরের দিন সকালে গোছগাছ শুরু। এবার ফেরার পালা.... শুরু হবে সেই চেনা রুটিন। বিকেলের ফ্লাইট তাই একটু খাওয়া দাওয়া সেরেই বেরিয়ে পড়লো ওরা। অমলেন্দুর গাড়ি এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ছেড়ে আসবে। গাড়ির সামনে ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে মংলু আর বাচ্চা গুলো.… বিক্রমাদিত্য বন্ধু প্রণবেন্দুকে বিদায় জানিয়ে গাড়ীতে উঠলেন। তারপর একে একে.... সব শেষে শিলাদিত্য। গাড়ী চলতে শুরু করল.... জানালা দিয়ে হাত নাড়ছে শিলাদিত্য,  গাড়ির আয়নায় দেখা যাচ্ছে বাচ্চা গুলো গাড়ির পিছনে দৌড়াচ্ছে.... বাঁক ঘুরতেই আর দেখা গেল না ওদের। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো শিলাদিত্যর। পাহাড়ি পথে গাড়ি ছুটছে গন্তব্যের দিকে। দূরে মেঘ গুলো সরে সরে যাচ্ছে। একসময় উদয়াদিত্য গাড়ির কাঁচটা একটু নামাতেই এক টুকরো মেঘ ঢুকে পড়লো গাড়ির ভেতর, ঝিরঝিরে বৃষ্টি ঝরিয়ে দিল শিলাদিত্যর মুখে, যেন কানে কানে বলল.... বন্ধু ভাবনা কী! আমিও আছি তোমার সাথে। আরও একবার মেঘের বন্ধুত্ব অনুভব করলো শিলাদিত্য। 

                    …………………..




বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614





Saturday 5 November 2022

মহাশ্বেতা দাস এর গল্প // ই-কোরাস ৮১

 



মহাশ্বেতা দাস এর গল্প

ভুবন মনমোহিনী

 

          

"ক্রিং ক্রিং...."  দম দেওয়া টাইমপিস ঘড়িটাতে এলার্ম বেজে উঠলো। 

"উঃ আওয়াজ টা এতো জোরে...."  কোন রকমে মশারির বাইরে হাত বের করে এলার্ম টা বন্ধ করে দিল রমিতা। শান্তি শান্তি! 


ঠাকুমার মুখে শুনেছে বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের সময়ে যে শান্তি জল ছিটানো হয়, সেই বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটায় ভর করেই নাকি শীত উঁকি দিয়ে যায়। তারপর কালীপুজো যেতে না যেতেই বাক্স থেকে বেরিয়ে আসে গুচ্ছের সোয়েটার, টুপি, মোজা আর বিছানায় বেশ খানিকটা জায়গা দখল করে লেপ, কম্বল। শীত ভোরে ঘুমটা বড্ড মায়া জড়ানো! চোখ থেকে যেতেই চায় না!! এলার্ম বন্ধ করে পাশ ফিরে সবে শুয়েছে... মা এসে - " রমি, উঠে পড় মা। এক্ষুনি কাকু ডাক দেবে। মর্নিং ওয়াকে যাবি তো!"  

প্রতিবছর শীত পড়লেই সৌমেন বাবু কয়েকজন কচিকাচাদের নিয়ে মর্নিং ওয়াকে যান। সঙ্গে যায় আট বছরের রমিতা আর কাছে পিঠের জনা কয়েক। 


রমিতার মা প্রমিলাদেবী ঘুম জড়ানো রমিতাকে তুলে সোয়েটার, টুপি, মোজা পরিয়ে তৈরী করে দেন। ভোর চারটার সময় বাড়ির বাইরে পা দিয়ে, চারিদিক কুয়াশায় ঢাকা.... গলির মোড়ে দেবদারু গাছটার পাতা থেকে টপ টপ করে শিশির পড়ছে। কুয়াশা ঠেলে রাস্তা দিয়ে হেঁটে  যেতে যেতে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল রমিতা... একটা দুটো তারা উঁকি দিচ্ছে। যেন রমিতা কে বলছে - "আমরাও জেগে আছি তোমার জন্য।" শীতলা মন্দির পেরিয়ে গেলেই মল্লিকদের বাড়ি। জানালার সামনে ডাক দিতেই বেরিয়ে এলো নীপা, ঋজু আর টুসি..... ওরাও যাবে। দশ বারো পা গেলেই শিলাবতি নদীর উপর ভাসাপুলের সিঁড়িতে ঘুমোচ্ছে তিন চারটে কুকুর। পায়ের শব্দ পেয়েই ওরই মধ্যে একটা..... "ভুক্" করে উঠতে না উঠতেই সবাই জড়াজড়ি করে দৌড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো কাকুর পিছনে। সৌমেনবাবুর হাতে কুকুর তাড়ানোর জন্য একটি করে গাছের ভাঙা ডাল থাকে.... " নে চল চল, আর কিছু করবে না। পুলের এপারের সিঁড়ি থেকে ওপরের সিঁড়ি দেখা যাচ্ছে না.... মাঝখানে দৃষ্টি শক্তি কে রুদ্ধ করে আছে সাদা অন্ধকার। নৌকার দু একটা আলো যেন ধ্রুব তারার মতো পথ দেখাচ্ছে.... "এসো ভয় নেই! আমরা আছি।"  শিশির পড়ে পুলের কাঠের তক্তা গুলো ভিজে গেছে, তাই সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। শিলাবতী নদীর উপর এই ভাসাপুল সেই ব্রিটিশ আমলের। মোটা মোটা কাছি দিয়ে বাঁধা নৌকার উপর কাঠের পাটাতন বিছিয়ে এই পুন্টুন (ভাসমান) ব্রিজ ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। ভাসাপুল দেখাশোনার জন্য সবসময় লোক নিযুক্ত থাকে, তারা তখনও নৌকায় ঘুমোচ্ছে। ওপারের সিঁড়িতে ছেঁড়া কম্বল গায়ে গুটিসুটি দিয়ে শুয়ে আছে পুতু ক্ষেপি... ওর বাড়ি কোথায় কেউ জানে না। এই সিঁড়িতেই শীত, গ্রীষ্ম প্রায় সারা বছরই ভিক্ষে করে কাটায়।সম্বল বলতেএকটি লাঠি আর পুরানো একটা বাটি। বাম দিকে একটু এগিয়ে গেলেই পোষ্ট অফিস চক্। তিনমাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে হুইসেল বাজাতেই সামনের দোতলা বাড়ির বারান্দা থেকে...." যাচ্ছি কাকু.....!" বেরিয়ে এলো সুজাতা আর ওর ভাই গৌতম। সুমনার বাড়িটা রাস্তা থেকে একটু ভেতরে। বাঁশির শব্দে চুইংগাম চিবাতে চিবাতে বেরিয়ে এলো। 


গৌতম গোল গোল চোখ করে.... "কী রে সুমনা একা এলি যে! বোন কোথায়?" "ওকে আজ ঘুম থেকে তোলাই গেল না।"  চোখ ঘষতে ঘষতে সুমনা উত্তর দিল। 


টাউন লাইব্রেরী পেরিয়ে হাই স্কুলের কাছ দিয়ে শিলাবতির পাড় ধরে ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়ক পেরিয়ে যখন কুশপাতার বাঁধে পা পড়লো... পূব আকাশ কুয়াশা ঠেলে একটু যেন হাসছে। একটা দুটো শিউলি ফুল তখনও টুপ টাপ করে পড়ছে। ওদের সাথে সঙ্গী হয়ে শিলাবতি নদী ও কী যেন একটা বলতে চাইছে! যেটা শুধু রমিতাই বোঝে। রমিতার সাথে শিলাবতির বন্ধুত্ব বোধ হয় এভাবেই শুরু। শীতের ভোরে নদীর তীরে কুয়াশা ঠেলে যতই এগিয়ে যায় - কত কী যে চোখে পড়ে রমিতার! নদীর জলে দড়ি দিয়ে বাঁধা লম্বা লম্বা বাঁশ গুলো ভেলার মত ভাসছে। নদীঘাট গুলো তখনও জনহীন।তাই ঘাটের সামনের জল খুব স্বচ্ছ। তির তির করে বইছে। শীত বেশী লাগলে গৌতম একটা উপায় বের করেছে। হাতে হাতে ঘষা আর হাততালি দেওয়া। তবে হাততালি টা সব সময় হাতে হাতে না হয়ে মাঝে মাঝে সমবয়সী সুমনার পিঠে পড়ে যায়! কী করা যাবে.... হাত টা বড্ড চুলকায় যে! আর ছিঁচ কাঁদুনে সুমনা অমনি-"ভ্যাঁ!" 

      

ছুটতে ছুটতে নিমতলার মাঠ। একটা পোড়া গির্জা। রমিতার ইতিহাস বইয়ে থাকা ছবির মতো। মাঠে কয়েক পাক ঘুরেই এবার ফেরার পালা। কুয়াশাও নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে নীপা, ঋজু বা টুসির মাফলার - চাদরের মতো। পূব আকাশে লাল আভা। পুকুর গুলোতে কচুরিপানার নীল ফুল গুলো খিল খিলিয়ে হাসছে আর বলছে..." তোমাদের এখনও শীত লাগছে! বাঁধের দু'পাশে ধুতরা ফুল শিশির সিক্ত হয়ে আছে। আকন্দ ফুলও নেহাৎ কম নয়। কালবৈশাখীর ঝড়ে যেমন আম কুড়ানোর ধুম লাগে আম খাওয়ার জন্য নয় বরং অনেক বেশী কুড়ানোর আনন্দে... শীতের ভোরে শিশির সিক্ত ধুতরা ফুল, আকন্দ ফুলও নেহাৎ তোলার আনন্দেই তুলতে ইচ্ছে করে। সুজাতা ঘাসের আগা থেকে তুলে নেয় ছোট্ট হলুদ রঙের ফুল.... কে যেন বলছিল এটা নাকছাবি ফুল!


ধোঁয়া উঠছে নদী তীরের ইট ভাটা থেকে। সারি সারি কাচা পাকা ইট। জল আনছে, ইট বইছে, মাটি গুলছে পাশের ঝুপড়ি গুলোতে থাকা কিছু উদবাস্তু মানুষ। ওদের ছোট বাচ্চা গুলো ছেঁড়া জামা পরে ধুলো মেখে খেলছে। পাশে একটা চায়ের গুমটিতে আঁচের উনুন জ্বলছে। সামনে বাঁশের বেঞ্চ পাতা। ফেরার সময় এখানেই একটু বসে চা খায় সৌমেনবাবু। কাঁচের জারে থাকা খাস্তা বিস্কুট,কেক।  বিশেষ করে ওই গোল কেক গুলো, মাঝে একটু মোরব্বা টুকরো। সুমনা চারদিক থেকে খেয়ে খেয়ে শেষে ওই টুকরো টা খাবে, এটা আবার গৌতমের ঠিক সহ্য হয় না। সুমনার ভাগে কি বড়ো কেকটা পড়েছে তবে? নাহ্.... পাশাপাশি রেখে মেপেছিল... একই তো!


নীপা আর সুজাতা গল্পে মশগুল। ঋজু টুসিকে নিয়ে পাশের কলে জল খাচ্ছে। রমিতা এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে ধুলো মাখা বাচ্চা গুলোর দিকে। একটা বাচ্চা এগিয়ে এল, আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে বিস্কুটের জারটা। 

"এদিকে আয়। বিস্কুট খাবি?" - রমিতা হাত নেড়ে ডাকলো। "তোর মা কোথায়?"

ছোট্ট হাতটা তুলে দূরে ইটভাটার কাজেরত এক মহিলা কে দেখালো বাচ্চাটা। প্রথমে একটা বিস্কুট তারপর আরও একটা - "একটা তোর আর একটা ভাইকে দিবি। মনে থাকবে?"  রমিতার প্রশ্নে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো আঁচের উনুনের ধোঁয়ায় মাঝে মাঝে ঢাকা পড়ে যাওয়া ছোট্ট মানুষটা। 

: তোর মায়ের নাম কী?

 ধোঁয়ার আড়াল থেকেই লাজুক হাসি মুখটা দেখা গেল!

: মায়ের নাম-মা।

…………………........


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614


ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...