Thursday 29 February 2024

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা // ই-কোরাস ১৫

 



পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা ১৫

জ্যোতিশ্রী টকিজ এবং পূজা টকিজ– চন্দ্রকোণা 

শ্রীজিৎ জানা


বাহান্ন বাজার তিপান্ন গলির ঐতিহাসিক চন্দ্রকোণা। আজও শহরটা ঘুরলে ছবির মতো চোখে ভেসে উঠবে অতীত। জীর্ণ দেওয়ালের ভিতর থেকে অস্ফূট স্বরে শোনা যাবে রাজা রাজড়াদের গল্পগাথা। এমন শহরে বিনোদন কেন্দ্র থাকবে না, তা কখনো হয়! 'জ্যোতিশ্রী টকিজ' এর জন্ম এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে। সারটা ১৯৪৭। তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুরে প্রথম সিনেমাহলের লাইসেন্স পায় মেদিনীপুর শহরের 'আরোরা সিনেমা', দ্বিতীয় তমলুকের চলন্তিকা এবং তৃতীয় জ্যোতিশ্রী। প্রতিষ্ঠাতা হলেন জ্যোতিন্দ্র নাথ গোস্বামী। চন্দ্রকোণার বৈকুন্ঠপুর গ্রামের অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন গোস্বামী পরিবার। ছোটখাটো জমিদার বললেও ভুল হবে না। তবে শুরুর দিকে জ্যোতিন্দ্রনাথ অনেক কষ্ট করেছিলেন। কলকাতার যাজন বৃত্তি করতেন গোস্বামীরা। সেইসূত্রে জ্যোতিন্দ্রনাথ ছিলেন তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত অভিনেত্রী কানন দেবীর কুলপুরোহিত। সেই সুবাদে টালিগঞ্জের অনেক অভিনেরতা অভিনেরত্রীদের সঙ্গে তাঁদের ভালোমত যোগাযোগ হয়। এদিকে জ্যোতিন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে নিজস্ব অর্থ প্রতিপত্তি গড়ে তুলেন। একসময় কলকাতার বুকে তের খানা বাড়ির মালিক ছিলেন জ্যোতিন্দ্রনাথ। তাঁর পুত্র বিষ্ণুসাধন গোস্বামীর বন্ধু ছিলেন কলকাতার 'পূর্ণশ্রী টকিজ' এর মালিক। তিনি আসামে মিলিটারি ক্যাম্পে সিনেমা দেখাতে যেতেন।সেই দেখে বিষ্ণুসাধন গোস্বামী সহ পরিবারের সিনেমার প্রতি ঝোঁক বাড়ে। চন্দ্রকোণার গোঁসাইবাজার সংলগ্ন স্থানে গড়ে ওঠে জ্যোতিশ্রী টকিজ। টিনের ঝাউনি আর মাটির দেয়াল দেওয়া ঘর।পাটাতনের উপর দর্শকদের বসতে হত। টিকিট মূল্য ছিল দশ ওবং কুড়ি পয়সা। তিনমাসের বেশি লাইসেন্স মিলত না।  ফলে ওই তিনমাস করে হল চলেই বন্ধ থাকত। জ্যোতিশ্রীর সূচনা পর্বের স্মৃতিচারণ করনতে গিয়ে শ্রদ্ধেয় রূপকুমার গোস্বামী বলেন, " আমি তখন ছোট কিন্তু সেদিনগুলোর ছবি যেন চোখের সামনে ভাসে। তখন চন্দ্রকোণা এলাকায় সিনেমা দেখানো হবে, জেনারেটরের আলো জ্বলবে - এটাই এলাকাবাসী সহ দূরদূরান্তের মানুষের কাছে ছিল বিস্ময়। পায়ে হেঁটে,গরুর গাড়ি করে সিনেমা দেখতে আসত লোকজন'। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৬০ অব্দি অনিয়মিতভাবে চলেছে জ্যোতিশ্রী। আগে নির্বাক চলচিত্রও দেখানোে হয়েছে। তখন ওই সন্ধেবেলা একটা করেই শো চলত। ১৯৬১ সালে পুরানো জ্যোতিশ্রীর কাঠামো ভেঙে ফেলে নতুন রূপ দেওয়া হয়।গোস্বামী পরিবারের পিয়ারীমোহন গোস্বামী,বিষ্ণুসাধন গোস্বামী,রাধামোহন গোস্বামী এবং হরিসাধন গোস্বামীদের সম্মিলিত নবরূপে শুভ মহরৎ হয় জ্যোতিশ্রী টকিজের। কংক্রিটের দেয়াল আর টিনের ছাউনি পড়ে। কাঠের চেয়ার বসানোে হয়। সিট সংখ্যা ছিল পাঁচশ। তবে এই নতুন সিনেমাহলে ছবি চলাকালীন মাঝেমধ্যেই ফ্লিম কেটে যেত। সেক্ষেত্রে অনেকবার ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটেছে। জ্যোতিশ্রী বরবরই অনিয়মিত ভাবে চলেছে।

এরই মাঝে গোস্বামী পরিবারের অন্যতম রূপকুমার গোস্বামী বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স পাশ করে কলকাতা থেকে চলে আসেন। এদিকে তখন সিনেরমাহলকে ব্লাক লিস্ট করে দেওয়া হয়েছে। অনেক ছোটাছুটি করে রূপকুমার বাবু প্রেক্ষাগৃহের পুনরায় লাইসেন্স নবীকরন করেন। এদিকে পরিবারের অন্যরা সিনেরমাহল চালুর ব্যাপারে হাত তুলে নিয়েছেন। তখন কাকা রাধারমণ গোস্বামীর কাছ থেকে আড়াইশ টাকা এবং মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সাড়ে সাতশ টাকা,মোট হাজার টাকা সম্বল করে নেমে পড়লেন সিনেমাহল ব্যবসায়। টালিগঞ্জের চন্ডীমাতা পিকচার্সের ভবেশ কুন্ডু ছিলন আগে থেকেই পরিচিবত। প্রতি মাঘী পূর্ণিমায় আসতেন চন্দ্রকোণার বৈকুন্ঠপুরের বাড়িতে। তাঁর সহযোগিতায় রূপকুমার বাবু দু'শ টাকা মূল্যে এক সপ্তাহের জন্য আনলেন সিনেমা 'কুহক'। দ্বিতীয় ছবি আনলেন হিন্দি 'আলবেলা'। সেভাবে দর্শক টানতে পারল না দুটো ছবিই। এদিকে তিনি কপর্দকশূণ।  এমনসময়ে কলকাতায় যখন হন্যে হয়ে ঘুরছেন, ঠিক তখন দেখা হয় পূর্বপরিচিত প্রীতি মজুমদার নামের এক ব্যাক্তির সঙ্গে। যিনি ছিলেন কলকাতার পিয়ালী পিকচার্সের ম্যানেজার। তিনি সব শুনে সাহায্যের হাত বকড়ালেন। বিনা অর্থে দিলেন পরপর তিনটি ছবি – কায়াহীনের কাহিনী, বসন্ত বিলাপ এবং মর্জিনা আব্দাল্লা। সেই ছিল জ্যোতিশ্রীর টার্নিং মোমেন্ট। তখন টিকিট মূল্য ছিল ২৫ পয়সা,৫০ পয়সা এবং ৭৫ পয়সা। প্রতিদিন পাঁচশ টাকার টিকিট বিক্রি হতে লাগল। দু'বছর রূপকুমার গোস্বামীর হাতে লাভের শীর্ষে পৌঁছে গেল জ্যোতিশ্রী। ঠিক এই সময়ে সিনেমাহলের অংশীদারিত্ব নিয়ে শুরু হল বিবাদ। সিনেমাহলে তালা পড়ল। রূপকুমার গোস্বামী চালু করলেন মোমবাতি তৈরির কারখানা। সেখানেও অনেক কষ্ট সইতে হয় তাঁকে। তবে ধীরে ধীরে ব্যবসাকে বড় করেন। একে একে আরও অন্যান্য ব্যবসা ফাঁদলেন। কিন্তু রক্তে তাঁর সিনেমাহল ব্যবসার নেশা। থামলেন না কিছুতেই।


এবার রূপকুমার গোেস্বামী নিজস্ব পুঁজিতে,নিজস্ব মালিকানায় জন্ম দিলেন নতুন সিনেমাহল 'পূজা টকিজ'। জিগ্যেস করলুম কেন নাম রাখলেন পূজা? বললেন, "গোস্বামী পরিবারের আমরা,গোপীনাথ আমাদের আরাধ্য এবং পূজাঅর্চনাই আমাদের প্রধান কর্ম ছিল, সেই কারণে নাম রাখলাম পূজা"। ১৯৯৬ সালের ২৬ শে জানুয়ারী পূজা টকিজের শুভযাত্রা শুরু হয়। পূজার সিট সংখ্যা ছিল ব্যালকনির ১৬০ টি সিট সহ মোট৫৮০।রমরমিয়ে চলতে থাকে পূজার শো। কিন্তু একসময় দর্শকে ভাটা পড়তে থাকে। ২০১৪ সালে বিভিন্ন কারণে পূজা প্রেক্ষাগৃহে তালা ঝুলিয়ে দিতে বাধ্য হন মালিকপক্ষ। 

জ্যোতিশ্রীতে প্রথমে একটি এবং পরে দুটি শো টাইম ছিল। পূজাতে ছিল তিনটে শো চলত। তবে দুই সিনেমাহলেই রথ,শিবরাত্রি এবং মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে সারা দিনরাত ছবি দেখানো হত। অসামান্য স্মৃতিধর রূপকুমার বাবু সিনেমাহল ঘিরে তাঁর স্মৃতিকথা সোৎসাহে বলে যেতে থাকেন, "সিনেমাহল ব্যবসার প্রতি ছিল আমার তীব্র নেশা। কলেজ পাশের পর প্রথমে ঝাড়গ্রামে একটি হল করার জন্য জমি অব্দি কিনেছিলাম। শেষ অব্দি তা হয়নি। পরে গড়বেতার আমলাগোড়া অঞ্চলের গুঞ্জন টকিজ লিজে নিই।  কিন্তু সেখানেও সফল হতে পারি নি। শেষে পরিবারের জ্যোতিশ্রী খোলার উদ্দ্যোগ নিই"। আরও বলেন, " দুবছর জ্যোতিশ্রী টকিজ ফাটাফাটি চালিয়েছিলাম। তারপরে পূজা। কত মানুষ এসেছেন আমার বাড়িতে। সুরিন্রদর ফ্লিমসের সুরিন্দর সিংয়ের পরিবার সহ অন্যান্যরা। পূজা টকিজে সুপাস্টার দেবের ছবি চলত বেশি। একবার দেবের আত্মীয়রা একসাথে তেত্রিশ জন আসেন ছবি দেরখতে। কারণ দেবের মামাবাড়ি এই চন্রদ্রকোণা এলাকায। ভেঙ্কটেশ ফ্লিমস থেকে আমাকে তাঁদের আপ্যায়ন করতে বলা হয়। আমি যথাযথ ভাবে তা করেছিলাম"। পূজা টকিজে সবচেয়ে বেশিদিন চলা ছবি 'লাঠি',টানা ছ'মাস চলেছিল। 'সাথী' সিনেরমাও চলে ছ'মাস। এই প্রসঙ্গে রূপাুমার বাবু জানালেন, "একবার পূজা টকিজে একটি আদিবাসী সিনেমা চালাই। ছবির নাম মায়া তুকারে ময়না মোরে। ওই সিনেমা দতেখার জন্য আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষজন বাস, লরি ভাড়া করে আসে বই দেখতে এমন কি সিনেমার নায়ক- নায়িকা আসেন এবং আমার বাড়িতেও ছিলেন। আমাকে নিয়ে একটা পোস্টারও করেন তাঁরা। সিনেমাহল ব্যবসা আমার রক্তে। পূজা চলাকালীন সারেঙ্গাতে ( বাঁকুড়া) 'ইন্দ্রনারায়ণ' নামের একটা হল লিজে নিই। সাথে বর্ধমানের মেমারিতেও নিই 'স্টার সিনেমা'। কিন্তু বেশিদিন চালাতে পারিনি"।


ভদ্রলোকের মুখে সিনেমাহলের কথা শুনতে শুনতে কখন সময় ছুটে যাচ্ছিল,খেয়াল করিনি। রূপকুমার বাবু ইম্পার ডিস্ট্রিক্ট সেক্রেটারি ছিলেন। অবিভক্ত মেদিনীপুরের প্রায় সব প্রেক্ষাগৃহে ঘুরেছেন। টালিগঞ্জের অনেকের সঙ্গেই বেশ সখ্যতা তাঁর। তবে মানুষটি নিরহংকারী। রূপকুমার বাবুর ছেলে সুপ্রিয় বাবুরও সিনেমার বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যা বললেন, তা ভীষণরকম সত্যি। তাঁর মতে মানুষ চিরকাল বিনোদনমুখী। সিনেমাহলে এসেও সিনেমা দেখতে চায়। কিন্তু গ্রামগঞ্জের মানুষের মতো করে তৈরি করা ছবি আজকাল কোথায়। টিকিটের মূল্য, ও টি টি প্ল্যাটফর্মে যাই হোক হলে বসে সিনেমা দেখার মতো সিনে প্রেমী আজও আছে কিন্তু সিনেমা নেই। তবে শেষে এই আলোও দেখা গিয়েছে তাঁর কথায়," আবার সবকিছুতেই মানুষ পুরানো স্বাদ ফিরে পেতে চাইছে। হয়তোে সেই সূত্র ধরে হলমুখী হতেই পারে একদিন আবার"।


তথ্যঋণঃ–

শ্রী রূপকুমার গোস্বামী, চন্দ্রকোণা

শ্রী সুশান্ত সৎপতি, চন্দ্রকোণা

শ্রী সুপ্রিয় গোস্বামী, চন্দ্রকোণা



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Sunday 25 February 2024

মঞ্জির বাগ এর কবিতা // ই-কোরাস ১৬৯

 



মঞ্জির বাগ এর কবিতা 

১.

প্রিয়


তাল লয় ভেঙ্গে কি খেলায় মেতেছো, বসন্ত

এখন নৃত্য করে পাতায় পাতায় অসাম্য খেলা

যে বিন্দুতে  স্বপ্ন অবস্থান করে, সেই বিন্দুতে রাষ্ট্র গিলে খেতে চায় কৃষকের ধান জমি। স্বপ্ন দেখি ঘুম ভেঙ্গে যায় বিলকুল। ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে জ্বলন্ত লাভা স্রোত ছড়িয়ে পড়ে গৃহস্থ করিডরে।

তোমার আগ্রাসী ঠোঁট উড়িয়ে দেয় বকের ডানা

এমন হতে পারে জানা ছিল না, হৃদস্পন্দন লাবডুব। স্বপ্নে আমি জিয়ল মাছের মত লাফিয়ে উঠেছি।। আমার সমুদ্রে বসে তোমার নদীর গান আমার শাখায় বাসা বেধেছে। অনেকগুলি পাখির সাথে দু-একটা শকুন কখন যে ফোকরের খোঁজে


ভোরের আকাশে এখনো ঘুম লেগে আছে

ঘুম লেগে আছে আমার চোখে ‌। ঢেউ গোনার কাজে বসিয়ে দিয়ে কেউ কখন যে হারিয়ে যায় জানা থাকে না বলেই, আমরা স্বপ্ন দেখি

এ কথা জেনেছি দীর্ঘ পথভ্রমণে অধিকারহীন স্বপ্নের গন্তব্য অজানাই থাকে,

ভালোবাসার কোন গন্তব্য হয় না। কোন স্বপ্ন

 ভঙ্গের গল্প হয় না। ভালোবেসে চলতে থাকাই একমাত্র গন্তব্য….


২.

বন্য


বুনো ঘ্রাণ দখল করে নিতে চায় আমার শরীর । 

শরীরের ভিতর গান আছে। বাদ্য বাজনা আছে

ইদানিং আমাদের বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে।

হাজার বদ্ধ দুয়ার আমাদের দেখে  

হেসে উঠছে খিল খিল‌। হৃদস্পন্দনের ভেতর জলের শব্দ। আমি জল থেকে স্নান সেরে উঠে

নিজেই নিজেকে বলি, প্রিয় ; ভালোবাসি…


ভালোবাসার গল্প টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে  বেঁচে আছে যে সে এক বুনো ঘ্রাণ।

হয়তো বনের পথে যেতে যে  আগুন  জ্বালিয়ে নৃত্য করেছি। আগুন নিভে গেলে পড়ে থাকে ছাই

 

বসন্তের পলাশ , তোমার মুগ্ধতা রক্তিম লাল

এ পৃথিবীর পথে সবাই আসে ,সবাই চলেও যায়

থেকে যায় শুধু আমার হৃদয়ে তোমার হৃদস্পন্দন।

সেতারটা বাজছে অতি মৃদু স্বরে,

   

একটি বুনো-ঘ্রাণ ধীরে ধীরে ঢেকে দিচ্ছে আমায়

স্বপ্নের ভেতর আমি ঘুমিয়ে 

আমার বুকের উপর এক রাশ পলাশ ফুল


৩.

জল নামের উপাখ্যান


পলকের অবকাশে নিজেকে লুকিয়ে 

একান্ত আড়াল

অসময়ের বৃষ্টি এলে বলি ,থেমে যাও 

স্বপ্ন বপনের জমির খোঁজ পায়নি এখনো

অমরত্ব করায়ত্ব করার জন্যেই আমার জলের ভেতরে ডুব

আগুন জ্বলে না সহজে।   হারিয়ে যাওয়া

চাঁদ  স্রোতে ভেঙ্গে যায়

চাঁদ ভেঙ্গে গেলে ,নিভে যায় আকাশ

গানটিকে থামাবার মত নিষেধ আমার জানা নেই

গানটি আমার ভেতর বাজে

লবণাক্ত জলের কাছে বিলিয়ে দেওয়ার

 মন্ত্র শিখে  নেয়  রূদ্র বীণা


৪.

ড্রাকুলা


তোমাকে লুকিয়ে রাখি আড়াল 

মৃত্যু অবধারিত  জেনেও জলে ডুব দিয়ে

অপার্থিব পলাশ তুলে আনার কৃষ্ণচূড়া  সময়

আমাদের জানা ছিল না নিমগ্নতাও প্রাচীন বা এত কঠিন।নিষ্কাম প্রেমের উদাসীন গান গায় অপরাহ্ণের শালিক গন্ধ। সাইকেলের গলিভাঙা

শব্দে জেগে ওঠে যে তাকে রাত বলে ডাকাই যায়।

আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে যখন তখন।আমরাও রাক্ষস খোক্কস।বিছানায় একটা জোনাকি

জেগে দেখছে,আমাদের পড়ে থাকা জামারা উড়ছে

নতুন ডানায়। নতুন বের হওয়া শ্বাদন্তে তুমি চুষে নিচ্ছ রক্তিম স্রোত…


৫.

ঝুমুর 


মেঘের ভাষায় কথা বলে উন্মাদ আকাশ

বৃষ্টির গান ঝরে পড়ে। ঝরে পড়ে আশ্লেষ...

কম্পনাঙ্ক বাড়ায় চাঁদ, নদী দেখলে ভাসতে ইচ্ছে

দুরন্ত মাছজন্মের মতো যখন  সাঁতার

শ্রাবন আসছে বলে বৃষ্টির সব প্রেম বাতাসের সাথে

স্তব্দ চাঁদ,প্রিয় ঠোট  গোপন গুহা প্রিয় ক্ষেতফসল


কথার মাঝে অঝোর বৃষ্টি;এবার বন্যা হোক।সুনামী

সময় হলেই দেখ, আমার গানের শরীরে তোমার ভেঙে যাওয়া খাতা

কারো বুকে আকাশ থাকে,আলোর আকাশ.. আগুন সরণি আলো জ্বেলে হাঁটি পথ, তুমিই গন্তব্য

হৃদয়কে পথিক জেনে যে গান  গায় তার গানেই

বেজে ওঠে ঝুমুর…

                 ………………………. 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Sunday 18 February 2024

মঞ্জির বাগ এর কবিতা // ই-কোরাস ১৬৮

 



মঞ্জির বাগ এর কবিতা


বিবাগী অস্তিত্বের সন্ধান


ঠিকানা চেয়েছি নিজেকে গচ্ছিত রেখে!


মধ্যস্থতা বিষয়ের সমস্ত গল্পের দিশাহীন নাবিকের  চেনা বন্দরের আশ্চর্য রূপকথা দ্বীপ

পরিচিত পাঠে হারিয়ে যায় দুপুরে পাঠশালা।

শীতের সম্পর্ক উষ্ণতা খুঁজে লেপের ভেতরে

ঋণী থেকে যায় পরিচিত নির্বাক সম্পর্কের কাছে‌


স্বর্গমুখের ঠিক এক ইঞ্চি দূরে অনুভব হয়

এখানে ভালোবাসা নেই, কর্তব্যের কামড়

সুর যদি নদী হয়,তবে ভেসে যাই ভালো


ক্রিয়া বিক্রিয়ার অনুশাসনের নিহত বসন্তের দিন,

একটি কোকিলের মৃত্যু বসন্তের গান থামাতে পারেনা…

অবহেলাও আমাকে প্রতিদিন ঋদ্ধ করে

বিপন্নতার চিঠিরা আমার উঠোনেই পড়ে থাকে শুকনো পাতার মতো।।


এ সময়, এই রক্ত গান


বিপন্নতা আজ আমাদের রক্তের লালরঙে 

লিখে দেয় শীতলতা‌। প্রকৃত ভূগোল 

আমরা শিখে নিয়েছি চেতনাহীন সংরাগের গান। যারা সন্দেশখালীতে গিয়ে কবিতা পাঠের আহ্বান জানান, মুখবন্ধে জানি না তাদের গল্পের শূন্যতা

লুণ্ঠনের খেলায় অন্ধকার সাজাতে সাজাতে শাসক লিখে ফেলে গত জন্মের চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা। লুট হয়ে যাচ্ছে সবকিছু আমরা আকাশে দেখছি কেবলমাত্র কতগুলি পতাকা উড়ছে। একটি পতাকা নামিয়ে আরেকটি উড়িয়ে দেওয়ার আগে আমাদের বুক কাঁপছে। আমরা বহুবারই পতাকার নামা ওঠা দেখেছি। আশা রেখেছি হয়তো আকাশ পাখির ওড়ার যোগ্য হবে।

মাটির মেঠো ধানে কীটের দগ্ধ জীবনযাপন‌‌।

আমরা আকাশে উড়তে দেখছি আমাদের শিক্ষা, পেশা, আমাদের সম্ভ্রম….

মুখবইতে আমরা এখন ব্যস্ত  প্রবল বিক্ষোভে 



সত্য চিরন্তন


কৃষ্ণগহবরে প্রজ্ঞার আলোক নির্যাস

জ্যেৎস্নায় নিজেকে আহত করে

আলোর অশ্রু দিয়ে ছবি আঁকে ছায়ার পান্ডুলিপি

 কবিতার কোন লিঙ্গ ভেদ নেই

অন্তরে আমি কখনো পুরুষ, নারী কিংবা অর্ধনারীশ্বর।

ডলফিনের মত জলের তলায় ভেসে 

জীবন্ত পাণ্ডুলিপির বুকে সজীব অবস্থান

প্রেম এক অনন্য চেতনা। শূন্যতার বুকে অশূণ্যের

সমাধি। সমাধি কিন্তু শেষ নয়। অশেষ গান

আমার মধ্যে তোমার অবস্থান

নিজের মধ্যে নিজের অংশ হয়ে থাকি



জীবনানন্দ



ধূসর পান্ডুলিপির পথ চলতে চলতে

এক সংবেদী মন এসে দাঁড়ায় 

রূপসী বাংলায়, নাগরিক অন্ধকারের পথে 

হারিয়ে যায় অনুভাবী গান। হাজার বছর ধরে হাঁটতে থাকা গান খুঁজতে থাকে 

নিবিড় বিদিশায় একটি আশ্রয়।

কবি কে আশ্রয় দেয় যে, সেই তো কবিতা


জীবন তার বিষাক্ত ছুরি দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে কবির অন্তর‌। কবি নীরব হন। একান্ত হন

চিত্রকল্প গাঙুরের তীরে সংগোপনে লুকিয়ে আছে,

পৃথিবীর পথে চলতে থাকা কবি নিজেকে

খুঁজে পান 

লাশ কাটা ঘরের শীতল বিছানায়


আসলে কবির নেই কোন উজ্জ্বল মঞ্চ।

উজ্জ্বল আলো, মুখরিত করতালি.…


কবি একান্তে নিবিষ্ট না হলে হারিয়ে যায়

শঙ্খচিলের ডানায় তার একান্ত কলম


কবির জীবন এক বোধ। অনন্ত ঘোরের মতো বোধ.… 


একটি উদাসীন ট্রাম এসে 

 অন্তর ভেদ করে চলে যায় 

সামনের দিকে

কবি থাকেন মৃত্যুর বিছানায়।

কবির জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করেনি কেউ

সারা জীবনের জন্য কবির অপেক্ষা ছিল কল্পনার


মাঝে মাঝে মনে হয়

উড়ে যাওয়া লক্ষ্মীপেঁচার ডানায়

 কখনো কি ফিরে এসেছো এই বাংলায়?


ঠিক এই সময়ের বাংলায়

 তুমি কি আবার লিখতে পারবে

 রূপসী বাংলার শান্তির পট লেখা?


এ সময়ে কেউ শান্তিতে নেই শান্ত নেই

বাতাসে বারুদ ঘ্রাণ মাটিতে রক্ত

বিষাদ নিয়ে ধূসর পৃথিবীর পান্ডুলিপির পাতায়

জীবনের বিন্যাস লিখেছো

এ সময় স্তব্ধ করবে কি তোমার কলম?

ভয় হয়! তবুও মনে হয় অন্তর্দশী কবির কলমে

উঠে আসবে জীবনের আশা।

আমার চোখে ভাসে একটি নিভৃত ছবি

নিরালা ঘরে লেখায় মগ্ন কবি জীবনানন্দ।।



ছিন্নমস্তা


লালপথ চলে গেছে। নিচে নেমে গেছে সরু পথ

পাথরের ওপরে দাঁড়িয়ে মেয়েটির চোখে আগুন

আগুন থাকলে জল তাকে পোড়াতে পারবে না।

মেয়েটি নিজেই নিজের মাথা কেটেছে।

রক্ত গড়িয়েপড়ছে বলে অনেক মাছির ভনভন। 


মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে শাল মহুয়ার ছায়ায়। 

পাখির ডানায় নদীর প্লাবন। ভাতের হাঁড়ির শূন্যতা

বনমহলে সাপে না কাটলে,ডাইন না ধরলে বড়অভাব

বছর বছর পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মতো অভাব জানান দেয়

আমি আছি। তোমার ক্ষুধায়। আগুন চাঁইয়ের মতো

অভাব যদি খসে পড়ে তবে পুড়ে যাবে মাটি।


পলাশের রঙ ধরলে বন্দুকের গুলিতে পুড়ে গেল গান।

                   ………………….. 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...