Thursday 7 May 2020

e-কোরাস ৩১// আমার ২৫ শে বৈশাখ







আমার চোখে পঁচিশে বৈশাখ
 রেহানা বীথি
   

কিছু অনুভব প্রকাশ করা যায় না কোনভাবেই। হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া ভালোলাগা রয়ে যায় হৃদয়ের গভীরেই। যদি প্রকাশের প্রয়োজন পড়ে কখনও,শব্দেরা খেই হারিয়ে ফেলে। তেমনই খেই হারিয়ে ফেলা ভালোলাগা আমার রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। আর পঁচিশে বৈশাখ নিয়ে নিজের অনুভূতি,সে-ও অপ্রকাশ্য কথাদের অজস্র বুদবুদ। এই নির্দিষ্ট দিনটিতেই তিনি ধরায় এসেছিলেন বলেই আমার খেই হারিয়ে ফেলা ভালোলাগা আজও একইভাবে অনুভব করি।                              

খুব যখন ছোট আমি, বাড়িতে একটা ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল।  ছিল বিখ্যাত সব শিল্পীদের গান। মান্না দে, মোঃ রফি, তালাত মাহমুদ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শচিন দেব বর্মণসহ অন্যান্যদের। অন্যান্য গানের চেয়ে রবীন্দ্রসংগীতই বেশি বাজানো হতো। তাই গান বলতে মূলত রবীন্দ্রসংগীতকেই বুঝতাম তখন থেকেই। খেলাধূলা করছি, স্কুল করছি, করছি একটু আধটু লেখাপড়াও। আর শুনছি ধীরে ধীরে বেজে যাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান। খুব যে মনোযোগ দিয়ে শুনতাম তখন তা নয়, তবে ভালো লাগতো। কেন ভালো লাগতো, সেই ছোট্ট আমি বুঝতাম কি তা? না। তবে কেন জানি না, কেমন যেন একটা মায়া মায়া ভাব, খুব মৃদু… খুব শান্ত….. খুব কোমল একটা অনুভূতি হতো।

তারপর যত দিন গেছে, বড় হয়েছি,  কিন্তু আমার ভালোলাগাটা ওই জায়গাতেই থেকে গেছে। আমি রবীন্দ্রসংগীত থেকে বের করে এনে অন্যকোথাও বসাতে পারিনি আমার ভালোলাগাটাকে। সেই খুব মৃদু, খুব শান্ত, খুব কোমল অনুভূতিটা ধীরে ধীরে রূপ নিয়েছে এমন একটা ভালোলাগায়, যেটা শুধু অনুভব করা যায় চোখ বুঁজে। চোখ বুঁজে শুনতে শুনতে কখন যে চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল, বুঝতেই পারি না! এই জল, এ কী শূন্যতার অনুভব, নাকি আনন্দের, নাকি বেদনার, নাকি কোনও এক অলৌকিক প্রেমের? আমার কাছে সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়! মনে হয়…কেবলই মনে হয় 

দেখাতে পারিনে কেন প্রাণ 
খুলে গো তারে…
                   .....…………….. 

চিঠি
সুনীল মাজি



( কোনও এক জন্মদিনের আগের রাতে রবি ঠাকুরের লেখা এই পত্র বা নিশিপদ্মকথা মনে মনে) সারাদিন সূর্য ছিল সারারাত চাঁদ ছিল বুকে। সারাদিন এতো কাজ। কাজের ভেতর কেবল অহংকারের পুতুল নাচ। যে যখনই টেনেছে সুতো, ছুটে গেছি তার সুখে অসুখে। জানো, বিকেলে সেই নদীটির কাছে বসতেই অনেকগুলো ঢেউ সাঁতার দিচ্ছিল বেশ। তোমাকে কতটা জড়িয়েছিলাম শরীরে মনে জানবে না কেউ। যাইহোক বাপু, সকালে আর বিকেলে যেন ঝড় না হয়। আমি চোখ মিলে ধরতে চাই দিনের প্রথম আর শেষ রবি। আমার আকাশ আমি নিজেই যদি না দেখি তাই কত ছবি অভিমানে চলে যায়--অসম্পূর্ণ কত রঙের অভাবে কত ছবি, ছোট বৌ তুমি, তুমি তো জানো প্রতিটি রাতে অন্ধকারের বুকে কেবল এঁকে গেছি আলো। অন্ধকার আমাকে ভরালো। অন্ধকার ছিল বলেই কত সব জন্মের সঙ্গে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গীত হলো। 'যমকে বলেছি, ইচ্ছে যখন নিয়ে যাও আমার প্রিয় যত সব তবে রেখে যাও রাতের নিঃশব্দ, নৈশব্দের নিশ্বাস আর প্রেমের গৌরব ।' দেখেছ নিশ্চয়ই, আমি আজকাল ছবি আঁকছি, ছবিতে তেমন কলরব নেই; ঠিক ধরেছ, ঢেউ নেই স্রোত আছে--- অই জলের গভীরে যত থাকে নিঃসঙ্গতা--- সেই সেই চোখের জলের যত কথা গানে শব্দে যারা আসতে চায় না, তাদের জন্য মধ্যরাত্রি এই --, জলের ভেতরে নেমে এলে, ঠিকই বলেছ ঠিকই, তৈলচিত্রে আমার নেই পুরনো আবেগ। কেবল অভিব্যক্তি আছে। বৃক্ষ থেকে নক্ষত্রলোক, যারা যত ভেতরের ছবি দেখিয়েছে তৃষ্ণার--- তুমি জানো গানকে আমি কখনো মরুভূমির বুকে একা রাখেনি। তাকে একটা দুটো মরূদ্যান দিয়েছি। সবাই আশ্রয় চায়। এতোদিন গানের বুকে মাথা ছিল। আমি কিন্তু বুকের তৃষ্ণা বুকেই রেখেছি। প্রতিরাতে আলোর স্পর্শে অন্ধকার যে কী ভীষণ নাচে আমি দেখেছি ছোটো বৌ, চলে গিয়েও তো তুমি যাওনি এতটুকু,--- তাই তো জাগিয়ে রেখেছ জানবে না কেউ .... বিদ্র: আমরা পরস্পরকে জড়িয়ে যত মরুভূমি, পথ, সে আমার গান। আমরা তলিয়ে গেলে যখন আমাদের আর কথা নেই, নৈব্যক্ত, সে আমার ছবি। রচনা 07.05.2020 কত রাত সে তো নক্ষত্রপুঞ্জ জানে।
                         .................

..তাঁর গান থেকে যাবে
আশিস মিশ্র



তাঁর বইয়ের সম্ভার শুধু আলমারিতে সাজিয়ে রাখাতেই যে আনন্দ পান বাঙালি, তাঁকে পাঠের গভীরে গেলে আরও কতো কী মণি-মুক্তো পেতেন। এই আনন্দ-যজ্ঞে তাঁকে আমরা আমন্ত্রণ কী করবো, তিনিই তো আমাদের বারে বারে টেনে নিয়ে যান। তাঁর অমোঘ টান উপেক্ষা করবো কেমন করে?
সেদিনও ছিলো পূর্ণিমা।  ভাষাউদ্যানে তাঁর ভাস্কর্যদেহের পেছনে বসে কতো কিছু ভাবছিলাম। মনে হচ্ছিল তাঁর কাছে বসে থাকাও একটা কাজ। যেমন করে রবীন্দ্র সদন চত্বরে ২৫ শে বৈশাখের সেই সকালে কতো কবি শিল্পী সাহিত্যিক সম্পাদকদের প্রাণমন ঢালা সমারোহের মধ্যেও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন। সারাদিন জমজমাট কবিপ্রণাম।
আমরা অনেকেই সেখানে ছুটে যেতাম। যেন আমাদেরই প্রাণের অনুষ্ঠান। সব বদলে গেছে এখন। যাঁরা একদিন কবিকে বুর্জোয়ার তকমা দিয়েছিলেন,তাঁরা আজ মৃত। এখন যাঁরা তাঁর গান শুনিয়েছিলেন পথে, তা আর বাজে না!

আমার কাছে সব দিনই ২৫ শে বৈশাখ। আলাদা করে দিনটি ভাবি না। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেছিলেন হলদিয়ার এক আলোচনা সভায় --এক বিশাল প্রাসাদের যেমন অনেক দরজা থাকে, তেমনি রবীন্দ্র সাহিত্যেরও অনেক দরজা। তার ভেতরে ঢুকে তাকে জানতে হয়। --এখনো তাঁর কতোটুকু জানি। তিনি তো এক বিশ্বভুবন। এক মহাপুরুষ বলেছিলেন,  কবিগুরু শাপভ্রষ্ট ঋষি। সত্যিই তো। পরম করুণাময় এই মানবকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন এমনি এক দিনে। "এমন দিনে তারে বলা যায়.. "। তিনিই একদিন এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সব সৃষ্টি না থাকলেও তাঁর গান থেকে যাবে..।
                  ………………… 

আর একটা পঁচিশে বৈশাখ আসুক
তুলসীদাস মাইতি



       'তুমি কি কেবলই ছবি
       শুধু পটে আঁকা।'
 যখনই তাকে ঘিরে কিছু প্রসঙ্গ আসে  তখনি এই কথাগুলিই মনে ভিড় করে।পঁচিশে বৈশাখে বিশ্বকবিকে স্মরণ মানেই তার ছবি, তাঁর গান,তাঁর কবিতা এসব। বছর বছর তাঁর জন্মদিন উৎসব। বাকি দিন গুলি কি তাঁকে ভুলে যাওয়া? তিনি যখন বেঁচে ছিলেন তখন থেকেই এই পঁচিশে বৈশাখের নানান আয়োজন। প্রকৃত অর্থে তাঁর জন্মদিন একটা মহাপ্রতীক। 'পঁচিশে বৈশাখ' শব্দটির অর্থ বিস্তার লাভ করেছে। তা কোনো একটি তারিখ নয়। শুধু এক বিশেষ দিনও নয়। পঁচিশে বৈশাখ মহামানবের এক নিবিড় অনুষঙ্গ। এই অনুষঙ্গ স্রোতে তাঁর উত্তরকালের  প্রায় সকল কবি তাঁকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। তাঁর চরণে আত্মসমর্পণের মধ্যেই নিজেদের ভিন্ন মতামত বিন্যস্ত করেছেন। এই ক্রমধারা আজও চলছে।

এক মহাদুর্যোগের দিনে আবার আমরা এসে পড়েছি অন্য এক পঁচিশের ভোরে। অসুখের দিনলিপি লেখার দিন, মৃত্যুর পদধ্বনি শোনারও দিন। দুঃখ-শোকের আবহে তাঁকেই স্মরণ নিচ্ছি।

     'এই দুর্গমে, এই বিরোধক্ষোভের মধ্যে
     পঁচিশে বৈশাখের প্রৌঢ় প্রহরে 
      তোমরা এসেছ আমার কাছে।'
                      (পঁচিশে বৈশাখ।শেষ সপ্তক)
হ্যাঁ,আজও এসেছি সংশয়তিমিরে হোঁচট খাওয়ার দিনে। বলতে ইচ্ছে করছে আর একজন তাঁর উত্তরসূরী কবির মতোই।
    ' আমার প্রার্থনা শোনো পঁচিশে বৈশাখ
      আরেকবার জন্ম দাও তুমি রবীন্দ্রনাথের।'
                                        (সুকান্ত ভট্টাচার্য)  
দুঃখ শোক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে আমরা পঁচিশে বৈশাখের কাছেই হাত পাতছি। মুক্তির পথ খুঁজি আজ তাঁর লেখা সংগীত,কবিতা,চিঠিপত্র ইত্যাদিতে। দুঃখনাশ করার প্রার্থনা নয় দুঃখের সাথে লড়ে তাকে জয় করার অনুভব সুখ পেতে চাই। উপনিষদের ঋষিদের মতো করে জীবনে পাওয়া দুঃখকে আনন্দের বৃত্তে এনে বাঁচার পথ খুঁজে ছিলেন কবি। দুঃখ,শোক মৃত্যুর অনেক উর্দ্ধে ছিলেন তিনি। স্ত্রীর মৃত্যু শোক ভুলতে তিনিই লিখেছিলেন-
   আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু,বিরহদহন লাগে
   তবুও শান্তি,তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে।।
সারাজীবন ধরেই তিনি এক গভীর আনন্দবোধের সাধনা করেছেন। আমাদেরও অমৃতপথের সন্ধান দিতে চেয়েছেন। আমরা তা ভুলে হলাহলের স্রোতে ভেসে গেছি । পঁচিশে বৈশাখ এলে আমরা তাঁর ছবি আঁকি। আর কবিতা গান নাটক স্মরণ করি। তাঁর অজস্র সৃষ্টির ভেতর রবীন্দ্রনাথ নামক যে মানুষটি আছেন তাঁকে ছুঁয়ে দেখেছি কম। 
পঁচিশে বৈশাখ তো মনে করিয়ে দেয় দুঃখ ও মৃত্যুকে আনন্দে উত্তরণ করে জীবনের তাৎপর্যকে বৃহৎ করতে হয়।,'অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো 'কে খুঁজে পেতে শক্তি যোগায়। তাঁরই উত্তরকালের আর এক কবির সাথে এই মুহূর্তে বলি--
     "তোমার আকাশ দাও,কবি,দাও
      দীর্ঘ আশি বছরের
      আমাদের ক্ষীয়মান মানসে ছড়াও
     সূর্যোদয় সূর্যাস্তের আশি বছরের আলো।
                         (তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ?।বিষ্ণু দে)
                    ……………………. 

দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে...
শ্রীজিৎ জানা



বাঙালির নিয়তির সঙ্গে ওতোপ্রতো বেঁধে আছে বাঙলা ক্যালেন্ডারে বৈশাখের একখানা তারিখ। পঁচিশে বৈশাখ। বাঙালি তার অভ্যাসমত গদগদ চিত্তে তাঁর জন্মদিনে মাতোয়ারা হয়। তাঁর চরণে প্রণত হয়। রেকাবি বাটিতে সাজে শ্বেতচন্দন,সাজিতে ফুলের মালা,ধূপদানিতে সুগন্ধি ধূপ। পরণে সহজপাঠের পদ্দ লেখা কুর্তা-পাঞ্জাবী। গীতবিতান লেখা বাসন্তী শাড়ি। খোঁপায় বেল ফুলের মালা।এদিন গলায় শান্তিনিকেতনী টোন। মুখ গহ্বরের বিশেষ প্রসার ভঙ্গিমায় কথা বিনিময়। শব্দোচ্চারণে আম্রকুঞ্জের নির্দিষ্ট মুখব্যাদান। রবিপক্ষ,রবিমাস,রবিসকাল,রবিসন্ধ্যা কত কতভাবে বেতারে,দুরদর্শনে,পাড়ায়,ক্লাবে,স্কুলে কলেজে,বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিপ্রণাম। কবি প্রণাম। এসরাজ, শ্রীখোল সঙ্গতে প্রার্থনার আবহে বড্ড আবেগঘন থাকে উপাসনাগৃহ।

রবীন্দ্র গবেষকেরর বই বেরোয়।রবীন্দ্র বোদ্ধা  বিশেষ বক্তৃতা প্রদানে আমন্ত্রিত হন।গায়ক গায়িকার রবীন্দ্র সঙ্গীতেরর অ্যালবাম বেরোয়। দৈনিকে বিস্তর লেখা ছাপা হয়। সম্পাদক তাঁর লিটিল ম্যাগাজিনেরর রবীন্দ্র বিষয়ক বিশেষ সংখ্যা বের করেন। বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীগণ আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। মোবাইলের রিঙটোনে চটুল হিন্দিগানের জায়গায় বাজে " আমার খোলা হাওয়া..."।ফেসবুক, ট্যুইটারে রবীন্দ্র উদ্ধৃতি। রবীন্দ্রনৃত্য। অত:পর "তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি"।

অতিকথন শোনালেও,আমার অতিকিঞ্চিত অনুভবে একথা দৃঢ়ভাবে প্রতীত হয়,রবীন্দ্রনাথকে বাঙালি গ্রহন করেছে গানে-- প্রাণে নয়।উচ্চারণে-- আচরণে নয়। উৎসবে-- উপাসনায় নয়। উদযাপনে--- উদ্বোধনে নয়। বাঙালির পঁচিশে বৈশাখ আত্মবীক্ষার নয়। চেতনার সম্প্রসারণ নয়। মানবিকতাবোধের জাগরন নয়।শুধু ভঙ্গি দিয়ে চোখ ভোলাবার প্রাণপন চেষ্টা।

সমাজে সভ্যতায় কোথায় রবীন্দ্র ভাবনার অনুসরণ?  আত্তিকরণ? ব্যক্তিজীবনে কতখানি রবীন্দ্র আদর্শের প্রয়োগ? সভ্যতার বুকে রঘুপতির প্রভুত্বের ইচ্ছা আজও সমান আগ্রাসী।সেখানে গোবিন্দমাণিক্যের প্রেম ভাবনা কতখানি জয়যুক্ত হয়! রথের রশিতে টান দেবার অধিকার কি বর্তমান সমাজ খোলামনে দিয়েছে হারু বাগ্দী,ভজা রুইদাস,টুনা মান্ডিকে! ভাঙতে পেরেছি কুসংস্কারের নিকষ কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত অচলায়তনের দীর্ঘ পাঁচিলকে! পঞ্চকের মতো মুক্ত মন নিয়ে পেরেছি কি যূনক,দর্ভকদের মতো নীচু জাতির মানুষদের বুকে টেনে নিতে? যন্ত্রসভ্যতার মর্মমূলে আঘাত হেনে একদিন মুক্তপ্রাণের মুক্তধারা বইয়ে দিয়েছিল অভিজিৎ। অথচ সেই যন্ত্রসভ্যতার দানবীয় উল্লাস,অর্থনৈতিক উন্নতি আর কর্মসংস্থানের দোহাই দিয়ে প্রাণময় সবুজ পৃথিবীর প্রাণরস শুষে নিতে দ্বিধা করিনি। সভ্যতার পিলসুজ চাষি কুমোর কামার জেলে তাঁতি শ্রমিক কতখানি আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়েছে? বাসুকি নাগের মতো অথচ সভ্যতাকে মাথায় করে রাখতে আজও" ওরা কাজ করে"।
অমলদের ঠিকানা আজকের ভারতে ইটভাটায়,রাজমিস্ত্রির জোগানদারের কাজে,চা দোকানে,হোটেলে,স্টেশনে ফুটপাতে! প্রতিদিন ফুলের মতো কত সুধাদের যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে! নন্দিনী নামের প্রেমের মুখে প্রায়শই ছুঁড়ে মারছে সভ্যতার কামুক প্রবৃত্তি গনগনে অ্যাসিড! ব্যাক্তি জীবনেও তো যক্ষেরর মতো সুজনের থেকে দুরের নির্বাসিত জীবন! "মুখে মুখে কথা বলি চোখে লাগে অটল প্রাচীর "।শুধু আয়োজন। শুধু দেখানেপনা। বাড়ির বুকসেল্ফে সাজানো রবীন্দ্রসমগ্র।" সোনার জলে দাগ পড়েনা"।প্রতিদিন মনুষ্যত্বের মৃত্যু। মানবিকতার স্খলন। ক্রমে সভ্যতা সঙ্কটের দিকে ধাবমান।তাঁর কথামতো আমাদের শিক্ষা তো তোতাপাখির বুলি আউড়ানো,পেল্লাই ডিগ্রী ধারণ।কিন্তু অন্তরের প্রসারতার পথে ফেলে রেখেছি কাঁটা।

বাঙালির কাছে রবীন্দ্রনাথ ভাগ্যবলে পাওয়া একজন অতিআপনজন। যাঁকে সামনে রেখে বাঙালি কায়দা মেরে বেড়ায়। তিনি বাঙালির অর্থকরী প্রতিষ্ঠান। তাঁকে মন্থন করে যতনা অমৃত পেতে চেয়েছে,তার দ্বিগুন চেয়েছে মণিমাণিক্যরুপ টাকাকড়ি। একদা তাঁকে "বুর্জোয়া কবি","পায়রাকবি" কবি বলতে বাঙালির মুখে বাধেনি। আবার আজকের প্রজন্মের কাছে তিনি " গুর্দেব"। তাঁকে বাঁচিয়ে রাখছে স্ট্যান্ডের মিউজিক সিস্টেমে,বাজনাসর্বস্ব গানের ভিতর গুঁজে দেওয়া পঙক্তিতে,নেতানেত্রীদের ভুলভাল উচ্চারণে,কখনো তাদের সৌম্যমূর্তির পদতলে,আম্রকুঞ্জের কুটিল রাজনৈতিক বিষ আবহে,ভ্রষ্ট সাংস্কৃতিক আয়োজনে,কলেজ চত্বরের অসভ্য রুচি প্রদর্শনে।

কিন্তু নাহ্, এর পরেও আরো একটা বিস্তৃত আকাশ আছে,যেখেনে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারো আবার বড় ভরসার,একমাত্র আশ্রয়ের রবি ঠাকুর। তাঁর মহিমা,তাঁর সৃষ্টি,তাঁর গৌরব,তাঁর দর্শন যাপনের প্রতিমুহূর্তের সঙ্গী। হৃদয়তন্ত্রীর প্রতি স্পন্দনে তাঁরই অনুরণন। অনুভূতির সকল স্থানে তাঁর নিত্য যাতায়াত। ক্যালেন্ডারের একটা তারিখ ঘিরে একদিন,একপক্ষ বা একমাসের উদযাপনে নয়,আমাদেন কর্মে কথায় মননে চিন্তনে সমাজভাবনায়,রাষ্ট্রীয় পরিচালনায়,ধর্মবোধে রবীন্দ্রনাথ প্রতিনিয়ত অনুসৃত হোক।
                     ……………….. 


এই পঁচিশে বৈশাখে আমার রবীন্দ্রনাথ 
অসীম ভুঁইয়া 



তপ্তদিনে পিতৃহারা বৈশাখী তুই ভাগ
দাহপত্রে  জন্ম লিখি পঁচিশে বৈশাখ।

 "শয়ন শিয়রে প্রদীপ নিভেছে সবে"- মুখ তুলে তাকিয়েছি নির্মল আকাশের নীল শুভ্রতায়। কত আলো, কত গান, কত বাঁচার রসদ নিংড়ে নিয়ে নির্যাস ভরেছি দু'চোখে, "বুক পকেটের ঠিক নিচে"। 

রবীন্দ্রনাথ: চিরভাস্বর স্বপ্নময়তার বিচিত্র এক জানালা যেন।
 অনেক মৃত্যুর পথ পেরিয়ে এক চিলতে জীবন উঁকি মারে, যাকে আধ-ভাঙ্গা চাঁদের মতো হাতের তালুতে লুফে নিই। 
রবীন্দ্র সৃষ্টি পরিক্রমায় উঠে আসে আশারই  সুখময় আশ্বাস। জীবনে যন্ত্রণা থাকে, কষ্ট থাকে, সব যন্ত্রণা প্রতিবন্ধকতার পথ পেরিয়ে উঠে আসে আনন্দধারা ... 

এবারের পঁচিশে বৈশাখ এক গভীর সংকটের মধ্যে দাঁড়িয়ে । বিশ্বমহামারীর  রঙিন তাণ্ডবে এখন তো সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত। এই সংকটের মধ্যে দাঁড়িয়ে দু'লাইন লিখেছিলাম,'রাতদিন বসে আছি/ মৃত্যুর কাছাকাছি'। তবু এ অন্ধকার-রেখার মাঝেই মনে পড়ে খুব করে-
       "সন্ধ্যাবেলায় এ কোন খেলায় করলে নিমন্ত্রণ
        ওগো খেলার সাথী?
        হঠাৎ কেন চমকে তোলে শূন্য এ প্রাঙ্গণ
        রঙিন শিখার বাতি? " 
এটুকু আলোই তো জীবনের উৎস  রেখা...  
এক আলোর ফুলকি বিশ্বকে যেমন মুহূর্তেই অন্ধকার-ছাই  করে দিতে পারে তেমনি একটি আলোর ফুলকি লক্ষ লক্ষ তারার আলো হয়ে বিশ্বকে রাঙ্গিয়ে দিতে পারে নব জন্মধারায়। রবীন্দ্রনাথ তো সে কথাই বলেছেন বারংবার,  
    "হে সুন্দরী বসুন্ধরে, তোমা পানে চেয়ে 
    কতবার প্রাণ মোর উঠিয়াছে গেয়ে
    প্রকাণ্ড উল্লাসভরে"।  
প্রাণের বার্তাবাহী এই সৃষ্টি প্রবাহে আমরা তো রবি কবিকে নিয়েই পথ চলি; পথের শেষ নেই লক্ষ্যও তো নেই, পথ হাঁটতে হাঁটতেই জীবনের মাধুরী ভরে নেব সময়ের প্রতিটি অনুময়তায়, প্রতিটি অনুভাবনায়, প্রতিটি অণুবাসনায়…
                    ………………. 

আমার চোখে পঁচিশে বৈশাখ
 কাকলি ভট্টাচার্য



আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে একজন রবীন্দ্রনাথ বসে আছেন, তিনি আমাদের নিজস্ব রবীন্দ্রনাথ, যাঁর সঙ্গে আমরা একা সময় কাটাই, যিনি সুখেদুঃখে আনন্দে বিষাদে মিশে থাকেন। আমরা প্রতিদিন তাঁকে শ্বাসপ্রশ্বাসের মতন গ্রহণ করি, একেকজনের কাছে এক একেকরকম ভাবে ধরা দেন।

 একটি আকাশকে অন্য একটি আকাশের সাথে তুলনা করা যায়, একটি সাগরের উপমা হতে পারে অন্য একটি সাগর, কিন্তু একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কার তুলনা করব, এই সংকট আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে।

 সমাধান কবির তাঁর প্রসাদ কাব্যগ্রন্থে--

" শিশির কহিল কাঁদিয়া 
  তোমারে রাখিব বাঁধিয়া 
 হে রবি, আমার নাহি তো এমন বল,
তোমা ছাড়া মোর ক্ষুদ্র জীবন কেবলই অশ্রুজল"।

কবি কী বলছেন?

" আমি বিপুল কিরণে ভুবন করি যে আলো,
তবু শিশির কণারে ধরা দিতে পারি, বাসিতে পারি যে ভালো"।  

বন্ধুরা ভালোবাসা এমনই এক চাবি, পৃথিবীর সব দরজা খুলে যায়।

 তাঁর রচনায় জীবনের জয়গান।
তাঁর সকল গান বিশ্বপ্রকৃতি, বিশ্বপতি ও বিশ্বমানবের উদ্দেশে রচিত, তাই তিনি বিশ্বকবি। 

জীবন-স্মৃতিতে-'
"গাছের বীজের মধ্যে যে অঙ্কুর প্রচ্ছন্ন ও মাটির নিচে যে রহস্য আবিষ্কার হয় নাই ,তাহার প্রতি একান্ত কৌতুহল"

মহাভারতের বেদব্যাসকে আমরা দেখিনি! একালের বেদব্যাস  কবি। পৃথার পুত্র পৃথিবী।

 জীবনপথের পথিক তিনি। পথের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশবিশেষ তাঁর রচনায় চিরকাল।কঠিন বাস্তব মেনেছেন সহজভাবে। কলম সচল। প্রকৃতি তাঁর কাছে মা আবার প্রেয়সী! প্রতিটি ঋতুর বিন্যাস অনায়াসেই। আমার রবীন্দ্রনাথ কেবলই আমার। আমার অক্ষমতা ভাগ করতে পারিনে।  

শেষ করি কবির কথায় তাঁর ৬০ বছরের জন্মদিনে--
 "শেষ সপ্তক"

২৫ শে বৈশাখ চলেছে জন্মদিনের ধারাকে বহন করে মৃত্যুদিনের দিকে। সেই চলতি আসনের উপরে বসে কোন্ কারিগর গাঁথছে ছোটো ছোটো জন্মমৃত্যুর সীমানায় নানা রবীন্দ্রনাথের একখানি মালা! ২৫ শে বৈশাখের প্রৌঢ় প্রহরে তোমরা এসেছ আমার কাছে। জেনেছ কী? আমার প্রকাশে অনেক আছে অসমাপ্ত, অনেক ছিন্নভিন্ন, অনেক উপেক্ষিত।
অন্তরে-বাহিরে সেই ভালোমন্দ স্পষ্ট-অস্পষ্ট খ্যাত অখ্যাত চরিতার্থের জটিল সংমিশ্রণের মধ্য থেকে যে আমার মূর্তি-- তোমাদের শ্রদ্ধায় তোমাদের ভালোবাসায় তোমাদের ক্ষমায় আজ প্রতিফলিত।

আজ যারা সামনে এনেছ তোমাদের মালা, তাকেই আমার ২৫ শে বৈশাখের শেষ বেলাকার পরিচয় বলে স্বীকার করে নিলেম, আর রেখে গেলেম তোমাদের জন্য আমার আশীর্বাদ।
                     ………………….

আমার রবি ঠাকুর
অভিষেক রায়চৌধুরী



২৫শে বৈশাখ এলেই আমরা মেতে উঠি রবীন্দ্রউৎসবে। টিভিতে, ক্লাবগুলোতে বেশ একটা উৎসব উৎসব ব্যাপার। জোড়াসাঁকোয় ভিড়। শান্তিনিকেতনে ভিড়। চ্যানেলে চ্যানেলে কবিপক্ষ, কবিপ্রণাম, রবিপ্রণাম, শিল্পীর ছড়াছড়ি। বিভিন্ন জায়গায় রবীন্দ্র সন্ধ্যা। জুঁই ফুলের মালা, শান্তিনিকেতনী ঝোলা, পাঞ্জাবি, সেল্ফির ধূম। কোন প্রোগ্রামে ডাক না পেলেও পরোয়া নেই। ফেসবুক লাইভ আছে। নিজেরাই কবিতা আবৃত্তি করছি, গান করছি, গল্প পড়ছি।এখন সব লাইভ। ২৫শে বৈশাখ এখন ফ্যাশন। অনেকটাই দেখনদারি। বছরের বাকি দিনগুলোতে রবীন্দ্রচর্চা কতখানি হয় তা বড়ই সন্দেহজনক।রবীন্দ্রনাথের সমগ্র উপন্যাসগুলো নিষ্ঠাভরে পড়েছেন এমন মানুষ কম। রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ কাব্যগ্রন্থ পড়েছেন এমন মানুষও কম। কয়েকটা মাত্র বহুল প্রচলিত গান আমাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করে। কমপ্রচলিত বা অপ্রচলিত গানগুলি আমরা অনেকেই শুনিই না। রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে রজনীগন্ধার মালা। ধূপের ধোঁয়া। বেশ একটা পবিত্র পবিত্র ভাব। একটি দিনের জন্য। মালা শুকিয়ে গেলে সেটি খোলার কথা মনে থাকেনা। আবার পরের বছর ২৫শে বৈশাখ আসার আগে মূর্তিটাকে জল ঢেলে ধোয়া-টোয়া হয়। মাঝে মাঝে নেতারা বক্তৃতা দেওয়ার সময় রবীন্দ্রনাথের কোটেশন ব্যবহার করে ফেলেন। কোটেশনগুলো ভুল না ঠিক, সঠিক প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে কিনা তা নিয়ে বুদ্ধিজীবীরা বিতর্কের ঝড় তোলেন। এভাবেই মাঝে মাঝে তিনি বাঙালীদের প্রাণে জেগে ওঠেন। "নিভৃত প্রাণের দেবতা" টাইপ। বাঙালি তাকে ফেলতেও পারে না। আইকন। আইডেন্টিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক গর্ব করে বলেন, "আমি ফুটবল খেলতে জানিনা, কিন্তু সঞ্চয়িতার প্রতিটি কবিতাই আমার মুখস্থ।" এরকম দৃঢ় স্বরে রবীন্দ্র অনুধ্যানের কথা বলতে পারার লোক খুবই কম। রবীন্দ্রনাথের ওপর আজ পর্যন্ত যত বই লেখা হয়েছে তা নিয়ে অনায়াসে একটি পিএইচডি হয়ে যাবে। তাও আমরা তাঁকে গোটাটা ধরতে পারিনি। তাঁকে ঠাকুর বানিয়ে রেখেছি। তাঁকে নিয়ে উৎসব করি। তাঁকে বুঝতে পারলাম কই? তিনি আমাদের গানের ওপারেই দাঁড়িয়ে রইলেন।
                     ……………… 

রবীন্দ্রজয়ন্তী ও আমরা
অঙ্কিতা সেনাপতি 


"রবি প্রতিভা সেই জাতের যার বৈশিষ্ট্য অবিরল বেড়ে ওঠায়, অবিরল হয়ে ওঠায়, যার তার বাঁধতে কিছু দেরি হয়, কিন্তু বাঁধা হয়ে গেলে গান আর থামে না" লিখেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। আজ ২৫ শে বৈশাখ। আরও একটা ২৫ শে বৈশাখ। ১৫৯ তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী। বিশ্বজুড়ে এই কঠিনতম মহামারীর সময়ও আমরা ঘরে বসেই মেতে উঠবো কবিবন্দনায়, কবিস্মরণে। সাহিত্য মানুষের অন্ন,ওষুধ কিছুই হয়ে উঠতে পারেনা ঠিকই,তবে সাহিত্যই পারে মনের অন্ধকার ঘুচিয়ে,বিষন্নতা মুছিয়ে আলো ফোটাতে, সচেতন করতে,একাকীত্বের সঙ্গী হতে। ছোটোবেলা থেকে একটা গাছ আমাদের মধ্যে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠেছে ,সেই গাছের নাম-সাহিত্য। আর গাছের কাণ্ডের বেশিরভাগটাই বোধহয় রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ তো শুধু একটা নাম নয়,একটা চেতনা,একটা আবেগ। সেই ছোট্টবেলার "সহজপাঠ", "আমাদের ছোটো নদী" থেকে শুরু করে "অচলায়তন", "ডাকঘর" ,"সোনার তরী","পোস্টমাস্টার" বা "শেষের কবিতা",রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। কিন্তু এত কবিতা,গান,নাটক পড়ে বা শুনেও ঠিক কতটা আত্মস্থ করতে পেরেছি আমরা? ঠিক কতটা বাস্তবায়িত করেছি? রবীন্দ্র চেতনাকে আমরা ঠিক কতটা সততার সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি সেটাই ভাবনার বিষয়।

আমরা রবীন্দ্রনাথকে উপলব্ধি করলে ঠিকই বুঝতে পারবো তার লেখা ঠিক কতটা বাস্তবধর্মী এবং সময়োপযোগী। উনিশ শতকে নারী স্বাধীনতা অধিকার যখন এক কথায় অকল্পনীয় তখন কবি নারীকে তুলে এনেছেন তাঁর রচনায় কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে। নারীকে উপস্থাপন করেছেন স্বাধীনচেতা ও সাহসী হিসেবে। বর্তমানে এই মহামারীর সময়ে আমরা উপলব্ধি করেছি জাত ধর্ম নির্বিশেষে একসাথে লড়াই করা ঠিক কতটা জরুরী বাঁচার তাগিদে। আর এই একতার কথা,এই ভ্রাতৃত্বের কথা কবি উপলব্ধি করেছেন অনেক আগেই এবং তিনিই প্রচলন করেন রাখিবন্ধন। এছাড়াও অচলায়তনের প্রাচীর ভাঙ্গা হোক বা বৃক্ষ ছেদন ও পরিবেশের ওপর তার প্রভাব,রবীন্দ্রনাথ বিচরণ করেছেন সর্বত্র,তার দার্শনিক চিন্তাধারার প্রতিফলন পাই বহু লেখাতে। আর এই চিন্তাধারা, ভাবাদর্শ বহন করে নিয়ে যাওয়ার কান্ডারী তরুণ প্রজন্ম। আর সেই দায়িত্ব কবি নিজেই দিয়ে গিয়েছেন আমাদের। তাই তিনি তার ১৪০০ সাল কবিতায় লিখেছেন
    "আজি হতে শতবর্ষ পরে
     কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
    কৌতুহলভরে-"
 রবীন্দ্র চেতনাকে ঠিক কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি আমরা?

আজকের তরুণ সমাজের বেশির ভাগটাই সমাজমাধ্যমে যতটা সাবলীল,সাহিত্যে বা বইয়ের পাতা ওল্টানোয় ততটা নয়। আমারই কিছু পরিচিত, বন্ধুবান্ধব দেখলাম গতকাল স্ট্যাটাস দিয়েছিল রবীন্দ্র জয়ন্তীর। ট্রেন্ডে থাকার জন্য ইংরেজি বলা কিছু মানুষ জানেইনা যে আসলে রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপিত হয় বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী,২৫ শে বৈশাখ। আর রবীন্দ্রনাথ মানেই ওদের কাছে শুধু ক্লাস মেইনটেইন করার একটা রাস্তা,কোনো আবেগ নয়। আর এখানেই ঢুকে পড়ে অসাধুতা। কিছুদিন আগেই একটি জনৈক রবীন্দ্র সঙ্গীতকে বিকৃত করা হয়,যোগ করা হয় কিছু অশালীন শব্দ। তরুণ প্রজন্মকে অর্ধেক হয়ে যেতে দেখেছি তখন। কেউ কেউ ওই বিকৃত করা গানটির প্রচার চালায় নানাভাবে সমাজমাধ্যমের দৌলতে। আবার কেউ কেউ এর তীব্র প্রতিবাদও জানায়। ঠিক তখন গীতাঞ্জলির কিছু পঙক্তি ঘুরছিল মাথায়,"নিন্দা দুঃখে অপমানে যত আঘাত পাই/তবু জানি কিছুই সেথা হারাবার তো নাই।" সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি বিকৃত করার আগে বা রবীন্দ্রনাথ না পড়েই ওপর ওপর সমালোচনার আগে বহুবার ভাবা উচিত ঠিক কতটা যোগ্য আমরা!

সবমিলিয়ে রবীন্দ্রনাথ আজও প্রাসঙ্গিক ও অবিচ্ছেদ্য। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিসম্ভার বর্তমান প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং সেই সমস্ত কিছুর গ্রহণ যোগ্যতাকে নিশ্চিৎ করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। রবীন্দ্রনাথকে জানতে হবে বুঝতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে। উৎসব আনন্দ হোক বা মহা সংকট, রবীন্দ্রনাথই অনুপ্রেরণা,আশ্রয়,ভরসা। কিন্তু আমরা রবীন্দ্রনাথ বলতে কার্যত ২৫ শে বৈশাখ বা ২২শে শ্রাবণেই সীমাবদ্ধ।কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কোনো একদিনের নন,কোনো এক দেশের নন,রবীন্দ্রনাথ বিশ্বজনীন,রবীন্দ্রনাথ চিরকালীন।তাহলে নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথকে পৌঁছে দেওয়ার ,রবীন্দ্র চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কি ঠিকঠাক পালন করতে পারছি আমরা?!
                    ………………….. 

পঁচিশে বৈশাখ ও প্রেম 
তপনজ্যোতি মাজি
 


পঁচিশে বৈশাখ, সমস্ত দিনটাই রবীন্দ্রনাথ I রবীন্দ্রনাথের সমগ্র সত্তার মধ্যে ছড়িয়ে আছে প্রেম I এই প্রেম মানবীয় হয়েও আলোর মতো খেলা করে পূজা প্রকৃতি এবং অমর্ত্যলোকে I তাই পঁচিশে বৈশাখএবং প্রেম আমার কাছে হৃদয় প্রসারী অনুভব I এই অনুভব চিত্তের উত্তোরণ  ঘটায়, 
স্পর্শকে সম্মোহিত করে, সমগ্র সত্তায় বিরাজিত হয় সাংস্কৃতিক হিন্দোল I মনে গুন্ গুন্ করে অবিনশ্বর রবীন্দ্রগান, ওষ্ঠে রবীন্দ্র কবিতা, আবহ হয়ে যায় রবীন্দ্রনাথময় I এই চেতনাই,এই আবহ পরিবর্তনই তো প্রেমI যেন নির্ঝরের স্বপ্ন ,যেন সোনার তরীর বৃষ্টি অভিসারI পঁচিশে বৈশাখ, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন,এই সাধারণ সত্য কে অতিক্রম করে, উদ্বোধন ঘটায় আলোময়,সংগীতময়, 
কবিতাময়,মানবতাময় এক মানসিক সংগঠনের যা প্রাত্যহিক হয়েও  নান্দনিক, ব্যবহারিক হয়েও সংস্কৃতিময় I 
সময়ের প্রবাহে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর প্রেরণাময় দীর্ঘ জীবন নতুন নতুন দিগন্তের অভিমুখী করছে সর্বস্তর,বয়স ও  প্রজন্মের মানুষকে I শিশুর কাছে রবীন্দ্র প্রেম সহজপাঠ সঙ্গে বীরপুরুষ,লুকোচুরির মতো আরও সব কবিতার উজ্বল সংগ্রহ I সমসাময়িক সময়ে বাচিক শিল্পের প্রসার এবং 
বাচিক শিল্পীদের অনলস প্রশিক্ষণে শহর, মফঃস্বল,প্রত্যন্ত গ্রামেও উপস্থাপিত হচ্ছে বহু বর্ণ ও স্বাদের কালজয়ী রবীন্দ্র কবিতা,যা আমার দৃষ্টিতে প্রেম I মননশীল,সংষ্কৃতি মনস্ক যৌবন তো রবীন্দ্রনাথেই আবর্তিত I কবিতা,গান,প্রবন্ধ, ছোটগল্পে যৌবনের উচ্ছল অভিসার I শেষের কবিতা প্রণয় বা প্রেমের শিল্পিত সৃষ্টি I যৌবনের ধারাস্নান রবীন্দ্র আবহে, তাঁর গানে I প্রেমের এমন কোনো মুহূর্ত নেই যা তাঁর গানের কথা ও সুরে ধরা পড়েনি I বেলাশেষে রবীন্দ্রনাথ তো পান্থজনের সখা I আহা ! প্রেমের পরিণত দিনগুলিতে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া কে আছেন এমন মধুর ধ্বনিতে হৃদয়কে  ভরে রাখার। একাকীত্বকে জয় করার প্রেমই তো রবীন্দ্রনাথ I 
পঁচিশে বৈশাখ ও প্রেম আমার কাছে চির প্রবহমান ধারা যার শেষ নেই I সীমাবদ্ধতা নেই I অসীম ও অন্তহীন রবীন্দ্র সৃষ্টি  আমাদের কোনো না কোনো প্রেমে অভিষিক্ত রাখে চিরকালীন উজ্জ্বলতায়।         …………………. 

হে নূতন 
মিঠু রাজবংশী 



অবশেষে সেইদিন উপস্থিত। আমাদের রবি ঠাকুরের জন্মদিন, "পঁচিশে বৈশাখ "। প্রতি বছরের মতো এবছর জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠান পালন করতে না পারলেও মনের যত্নে লালনপালনে কোনো ত্রুটি হবে না। আসলে তাঁর জায়গা তো ভেতর-বাইর সবটুকু জুড়েই। বাইরেটা বাদ পড়ে যেন ভেতরটা আরো বেশি যত্নশীল হয়ে উঠেছে। তাঁর প্রতি ভালোবাসা তো আর আজকের নয়, সেই কোন্ শিশুকাল  থেকে। কী গভীর আবেগে জড়িয়ে পড়া! মনে পড়ে যাচ্ছে আমার প্রাইমারি ইস্কুল জীবনে রবিঠাকুর জন্মজয়ন্তী পালনের কথা। আমাদের সময় বেসরকারি স্কুল বলে কিছু ছিলনা। আমরা পাড়ার সকলেই সরকারি স্কুলে পড়তাম। স্কুলে যেতাম দলবেঁধে হেঁটে ধান ক্ষেতের আলপথ দিয়ে। শুরুর দিকের শান্তিনিকেতনের পাঠ ভবনে পড়া শিশুদের মতো আমরাও খালি পায়ে স্কুলে যেতাম। বসতাম খোলা আকাশের নীচে। আমাদের মাথার ওপর থাকতো কেবল অশ্বত্থ গাছ। তবে ছোটো ওয়ান আর বড় ওয়ান। দ্বিতীয় শ্রেণী বসতো করলা নদীর ধারে। তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণীর জন্য ছিল বেড়ার ঘর। তৃতীয় শ্রেণীর ছিল সবচেয়ে বড়  ঘরটা। সমস্ত অনুষ্ঠান সেখানেই অনুষ্ঠিত হতো। স্কুলের পাশ দিয়ে বয়ে চলা করলা নদীর মাঝখানে ছিল একটা ছোট্ট দ্বীপ। পুরো দ্বীপটায় ছিল শাল আর সেগুন গাছের বন। সেখানে সবচাইতে নজরকাড়া দৃশ্য ছিল হাজারে হাজারে বন টিয়ার বাস। সারাদিন ধরে ওরা নদীর এপার ওপার করতো। আমাদের স্কুলের অশ্বত্থ গাছের ফল খেতে আসতো ঝাঁকে ঝাঁকে। সে যে কী মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, বলে বোঝাতে পারবো না! সেই সময় রবি ঠাকুরকে আমাদের গ্রামের মানুষরা এমনকি আমরাও আর দশপাঁচটা ঠাকুরের মতো 'ঠাকুর' বলেই জানতাম। তখন যে এমন করে চেনা হয়ে ওঠেনি তাঁকে। 'পঁচিশে বৈশাখ' এর আগের দিনই মাঠ থেকে গোবর কুড়িয়ে সারা স্কুল লেপেপুছে ঝকঝকে করে রাখতাম আমরা। পরম্পরাগত ভাগে প্রমথ, দ্বিতীয় আর তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা গোবর কুড়িয়ে আনতো চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা লেপেপুছে দিত। পরের দিন খুব ভোরে উঠে ফুল তুলতে যেতাম। আমাদের সবার মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা হোতো, কার ফুলের মালা সবচেয়ে সুন্দর হবে। বৈশাখ মাসে আমাদের জলপাইগুড়িতে  প্রচুর পরিমাণে সাদা ধবধবে টগর ফুটে থাকে। আমরা চারফুলের মোটা মালা গাঁথতাম। একটা বড় লকেট দিতাম। তবে স্কুল সাজাতাম কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া ফুলে ভরা ডাল দিয়ে। আমাদের পাড়ার পচু ছিল গাছে চড়ার ওস্তাদ। ও ঝটপট ফুল ভর্তি ডাল ফেলতো ওপর থেকে আর আমরা নীচে লুফে নিতাম। কেউ কেউ আবার হাল্কা বেগুনি রঙের জারুল ফুলের বড় বড় ডাল কাঁধে করে নিয়ে আসতো পেড়ে। লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া ফুলে লালে লাল হয়ে উঠত আমাদের অনুষ্ঠান কক্ষ। বেড়ার ফাঁকফোকরে গুজে দিতাম গোলাপি রাধাচূড়া, জারুল। আহা! সে কী অপূর্ব ফুলময় রবিকক্ষ! ঘর সাজানো হয়ে গেলে ছুটতাম হেড মাস্টারমশাই এর বাড়িতে রবিঠাকুরের বাঁধানো বড় ছবিটা নিয়ে আসতে। হেড মাস্টারমশাই বলতেন, "তোরা সুন্দর করে সাজা আমাদের গুরুদেবকে। আমি আসছি।" আমরা হইহই করতে করতে খুব সাবধানে বুকের মধ্যে রবিঠাকুরের ছবিখানা চেপে ধরে স্কুলে নিয়ে আসতাম। তারপর আশেপাশের বাড়ি থেকে কেউ একজন চন্দন বাটা এনে ফুলের বৃন্ত দিয়ে কপাল জুড়ে সাজিয়ে দিতাম। তবে এই বরাত পেত চতুর্থ শ্রেণীর বড় দিদিরা। শিক্ষক-শিক্ষকাদের পড়ানোর টেবিলে বাড়ি থেকে আনা সুদৃশ্য কারুকার্য করা টেবিলক্লথ পেতে তাঁকে বসানো হতো স্বযত্নে। এরপর আমরা সবচেয়ে সুন্দর মালাটা নিজেরাই  নির্বাচন করে পড়িয়ে দিতাম। হেড মাস্টারমশাই, ফণি মাস্টারমশাই, কৃষ্ণা দিদিমণি, বাসনা দিদিমণি এসে পড়লে তারা মালা দেখে ভারী খুশি হতেন। সব্বাই একটা করে মালা কবিগুরুকে পড়িয়ে দিতেন। শুরু হোতো আমাদের অনুষ্ঠান। কৃষ্ণা দিদিমণি লিস্ট করতেন, কে কবিতা আবৃত্তি করবে, কে নাচ পরিবেশন করবে। কেউ আমাদের আগে থেকে রিহার্সাল করাতেন না ফলে আমরা যেমন মনে আসতো, তেমন অনুষ্ঠান করতাম। সকলেরই প্রায় এক আবৃত্তি, 
  "আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে"
   "কনকনে শীত তাই ..."
 কিংবা 
"নুটুবাবু খুব পেটুক"। আর নাচও দু-একটাই। দিদিমণিদের সঙ্গে  আমরাও সুর করে গাইতাম, 
   "হে নূতন দেখা দিক আর-বার 
     জন্মের প্রথম শুভক্ষণ
    তোমার প্রকাশ হোক
    কুহেলিকা করি উদঘাটন 
    সূর্যের মতন
    হে নূতন...."  
             ………………. 
                       

আলোকিত প্রাণ 
 সুব্রত মাইতি
 


"আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না... "

প্রাণের ঠাকুর প্রাণের স্পন্দন এ আজও উজ্জ্বল নক্ষত্র; ছোটো বেলায় সহজ পাঠ এর হাত ধরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠতা লাভ, সে এক অনাবিল খুশি আর চোখের সামনে বাস্তব দৃশ্য গুলো আজও ফুটে ওঠে, এমনি ভাবে বিদ্যালয় এর পাঠরত ছাত্রাবস্থা থেকে পঁচিশে বৈশাখ মানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান কবিতা নাটক-এ এক আবেগ রক্তের শিরা উপশিরায়।

 জীবনে চলার চড়াই উৎরাই পথে পথে বাংলা বিভাগ এ সামান্য কিছু পড়াশোনা, বিশ্ববিদ্যালয় এর আঙিনায় রবীন্দ্রনাথ ও তার জীবন দর্শন পাঠরত অবস্থায় মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে শুনতাম, সে এক সুখ স্মৃতি অন্য আবেগ আজও দোলা দেয়, এই মানুষটিকে নিয়ে বহু গুণী মানুষ জীবন চর্চা শুরু করেছিলেন তারা তাঁদের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন এখনও সমান ভাবে চর্চা চলছে যার শেষ নেই।

 নিজের সামান্য বোধ বুদ্ধি নিয়ে জীবন চর্চা করতে গিয়ে দেখি শুধু পঁচিশে বৈশাখ নয়, আমার কাছে বছরের প্রতিদিন পঁচিশে বৈশাখ, যে মানুষটির গান শুনে ঘুম ভাঙে যার চেতনার রঙে প্রতিদিন এর আকাশ বাতাস অনুভব করতে পারি তিনি তো প্রাণের ঠাকুর আমাদের সবার ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ, একজন যুক্তি নিষ্ঠ আধুনিক মানুষ যিনি রবীন্দ্রনাথ, সব শেষে বলি গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো - "আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধুলার তলে "।
                     ………………… 

রবি ঠাকুর আভা সরকার মন্ডল

আজ ২৫ শে বৈশাখ । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জন্মদিন। আজ আমি দুটো কথা বলব তাঁকে নিয়ে। আসলে রবি ঠাকুরকে নিয়ে তেমন কোন লেখা আমার নেই, বা লিখে উঠতে পারিনি। রবি ঠাকুর আমার কাছে এক বিরাট বিস্ময়। শুধু আমার কেন বিশ্বের বিস্ময় তিনি। তাঁকে নিয়ে লিখতে গেলে শুধু ভাবতেই থাকি, এত বড় প্রতিভাবান মানুষ এ দেশে জন্মেছেন। আমরা গর্বিত তিনি আমাদের দেশের সন্তান। সঠিকভাবে বলতে গেলে আমরা রবি ঠাকুরের দেশে জন্মে ধন্য। ছোটবেলায় পূজোর ঘরে অনেক ঠাকুর দেবতার ছবি দেখতাম। মাকে প্রশ্ন করতাম ঠাকুর আমাদের জন্য কি করেন? মা হাসতেন, কোন উত্তর দিতে পারতেন না। যখন রবি ঠাকুরকে নিয়ে জিজ্ঞেস করতাম, রবি ঠাকুর কি করেছেন আমাদের জন্য? তখন মায়ের মুখে ফুলঝুরি ছুটতো। মা বলতেন উনি কি করেন নি? সেটা জিজ্ঞেস কর। মা বুঝিয়ে দিতেন তার সমস্ত কর্মকাণ্ড একে একে।
আমি রবি ঠাকুরকেও ঠাকুর দেবতাদেরই একজন ভাবতাম। তাঁকে ছোটবেলা থেকে দেবতা ভেবে বড় হয়েছি। ঠাকুর হিসেবে রবি ঠাকুরকে চিরদিন আমার মনে গেঁথে রেখেছি। তাঁর জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও শতকোটি প্রণাম জানাচ্ছি। কোন ঠাকুর দেবতা মানুষের কথা ভাবেন না। আমরা ধন্য একজন ঠাকুর মানুষের কথা ভেবেছেন, তিনি রবি ঠাকুর।
তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম...
.....................

পৃথিবী আবার সুস্থ হবে


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - সুকান্ত সিংহ
ঠিকানা - সুরতপুর, হরিরামপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614


   

ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...