Monday 12 July 2021

e-কোরাস ৪৪ // লিপি সেনগুপ্ত এর কবিতা

 




১॥

আগুন

আগুনের ভেতর আগুন ছুঁয়ে থাকলে

তাপ লাগে না

অদ্ভুত শীতলতা কানে কানে বলে,

এভাবেই পুড়ে যেতে হয়

এভাবেই ঘুম আসে রাত চৌকাঠে 


জেগে থেকে আগুন নেভাতে নেই

পুড়ে যেতে হয়

বোবা অস্থিতে আগুন জ্বললে 


কমন্ডলু উপুড় করে দাও


২॥

ইচ্ছে

"এর চেয়ে স্থবিরতা ভালো"—

তারপর কেটে গেছে একযুগ

আকাশের চৌহদ্দি পেরিয়েছে পেটকাটা ঘুড়ি

টিমটিম আলোতে চোখের সংলাপ, নাটকীয় রূপান্তর 

স্মৃতিও অতীত 


একফালি উঠোনে

সব ফুল ঝরে গেলে বৃন্তের মুখে

মুখ রাখে সময়ের রেণু 

পড়ন্ত বিকেল জানে, ইচ্ছেরা চিরকাল নতজানু। 


৩॥

বুভুক্ষু


যে উঠোনে চাঁদ সব জেনে

উপুড় করেছে ভাতের হাঁড়ি 

সেখানে ঝাঁট  পড়েনি

বৃষ্টি নামেনি বহুদিন 


তবু ভেজা ভেজা মাটিতে 

নাম অজানা বনফুল

পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছে বাসা বেঁধেছে 

কাক আর কোকিল

পরস্পরকে দোষারোপ রোজ রোজ


মাঝরাতে পা চলতে থাকে

পেটের খিদে থেকেও বেশি চনচন করে

জ্যোৎস্না শুয়ে আছে যে উঠোনে 


৪॥

যত্নে রাখি

সে দূর থেকে আমাকে লক্ষ্য করেছে অনেকবার, জানি 

একদিন পাশে এসে বলেছিল,

তোমার রোদে কষ্ট হয় না?

—কেন?

আর বৃষ্টি পড়লে আনন্দ হয়?

—জানি না

যদি কষ্ট হয় তবে আমি ছায়া হতে পারি

আর বৃষ্টিতে আনন্দ পেলে,বৃষ্টি হব।


অবাক হয়ে বলেছিলাম,

কে তুমি?


—কেউ না।ছায়া বলতে পারো বা রোদ 

নয়তো পাখি বা কোন গাছ।যা খুশি …


সেদিনের মত পথ ফুরালো


কিছুদিন আবার একা…

যে ছায়া-রোদ-বৃষ্টি হতে চাইল

তাকে আমি কি দিতে পারি!


আমার টেবিলে একটা ডাইরি আর পেন

আমার কবিতা, তাকে যত্নে রাখি।।


৫॥

ঝিনুকবাড়ি


ওভাবে তাকিও না,ওভাবে তাকালে সমুদ্র ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে

হাতড়ায় মণিমুক্তো!

শ্যাওলা পড়া শামুকের খোলে  স্বপ্ন ভাসে,

ওভাবে তাকালে আমি বেহিসাবি হয়ে যাই


এমন অরণ্য সংসারে পাতার গায়ে পাতা আটকে থাকা প্রেম তো নয় আমাদের

শুকনো ডালপালা জোগাড় করি খালি পায়ে,

তারপর চওড়া উঠোনে আগুন জ্বেলে দু'মুঠো চাল ফুটাই।

হিসেব তো করিনি কখনও

তাই গুণে গেঁথে রাখিনি কটা চন্দ্রমল্লিকা চাঁদের আলোয় হাসছে


তাকিও না,আমাদের উঠোনেই সমুদ্র উঠে এলে কে কাকে জড়িয়ে ধরব বলতে পারো?

কাক পক্ষীর এই উঠোনেই আনাগোনা বাড়বে

তখন? 

সংসার ভাসিয়ে মাঝসমুদ্রে আমাদের যদি ঝিনুকবাড়ি  হয়,বলো, তুমি খুশি হবে?


৬॥

চিঠি


শুধু কথাদের কোন ডাকঘর নেই

বৃষ্টির কথা জমে নদী ও নক্ষত্রের বুকে

পাখির কথায় ঝুমুরের বোল,

গাছকোমর শাড়ি, বুকে মাদল যুবতীর

আদিগন্ত জুড়ে রোদ উৎসব 

লাল নীল ঘুড়ির কোলাজ


সেই রোদ,শিশির আর পাটভাঙা শাড়ির ভাঁজে

চিঠির গোপন গন্ধ 

লেটার বক্সে ধুলো পড়ে প্রতিদিন 

প্রতিদিন চিঠি আসে না

ধানবিলে পাখিদের আড্ডায় তবু হৈ চৈ

ঠোঁটে তুলে রাখা কথা

উড়ে যায় তোমার জানলায়


চোখ তুলে দেখবে না একবারটি?


৭॥

রূপকথা


এখন ভোরের পাখির ঠোঁটে

লেগে আছে রোদের চিঠি

চিঠিতে সবুজ অক্ষরস্নান 

আকাশের ডাকঘরে ওরা পড়ে থাক্


একদিন এই নিরিবিলি ঢেউ ভেঙে

এগিয়ে আসবে রাত

একদিন জোৎস্নার সাথে কথা হবে

অন্তরঙ্গ তারার

ছায়া ছায়া পথ থেকে দূরে 

আবছায়া কেউ 

দাঁড়িয়ে দিগন্ত পাড়ে 


রাত নেমেছে যেখানে 

সেখানে আকাশ

রূপকথার গল্প শুনাবে

আমাকে একলা পেয়ে।


৮॥

কথা বাড়ি


আনন্দ আর দুঃখ ভাগ করে নিতে নিতে

কখন যে একটা বাড়ি তৈরি হয়!

ঠিক জানা নেই


কয়েকটা দরজা জানলা

প্রয়োজনীয় আসবাব

সৌখিন টুকিটাকি ,গরম চাদর

পর্দার আড়াল

রাগ অভিমান এইসব ...


সব দৃশ্যমান নয়

তবু ছাদ দেখা যায় মাথা উঁচু করলে 

আর আকাশ  উঁকি দেয় খোলা জানলায় 

রোদ আলো বৃষ্টির মাদুরে বসে

নির্মাণের স্বপ্নেও তো কিছুক্ষণ কাটে!   

কথা হয় ...

ছোট্ট বাড়ি,একটু বাগান 

  

নাই বা থাকল ইঁট কাঠ পাথরের দেওয়াল

কথাদের ঘর বাড়ি 

ফিতে মেপে কবে আর হয়!


৯॥

চাকায় রঙিন ফুল


পশ্চিমের জলে সূর্য নারীর মত ডুব দিলেই

আর একটা নতুন দিন, নতুন করে বাঁচা 

শহরের রাস্তায় সাইকেল মিছিল

শক্ত মাটিতে কাচের মার্বেল

গড়গড় করে সরে যায়

দিন আনা দিন খাওয়ার গান 

শিশুর মুখ, ছাপা শাড়ি আর মায়ের লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে সুখের তন্ডুল তোলা থাকে

মাচার পুঁই লতায় স্বপ্নের লকলকে ডাল

একটা দালান, এ বি সি ডি একটু সোহাগ 


ভোরের আজানে চাকা ঘোরে 

চাকায় রঙিন ফুল 

মুঠি স্বপ্নের ক্রিং ক্রিং

শহরের রাস্তায় কর্পোরেশনের জলের ভুরভুর , 

ধুয়ে যায়  রাজপথ

উড়ন্ত প্রজাপতির গায়ে

সকালের মিঠে কুচিরোদ

বাঁচার লড়াইয়ের ডাক প্রতিদিন

প্যাডেল ঘোরে...বন্ বন্ বন্ বন্


জেগে উঠছে মহানগর 


১০॥

চরৈবেতী 


এক জন্মেই শিকড় ছড়ায় ভিতরে

নাড়া দিলে কিছু ফুল ,পাতা, ফল পড়ে


আমি কিছু নেব ভেবে নীচে এসে দাঁড়াতেই

মাটি কেঁপে উঠল


সরে দাঁড়ালাম তাই

 

আমি যদি মাটি হতাম

শিকড় আঁকড়ে ধরতাম ভীষণ রকম 


যদি রাস্তা হতাম

পথের ঠিকানা লিখে রাখতাম বুকে


তারপর , যেতে যেতে ঠিকানা খোঁজার ছলে

পথিকের সাথে ভাব

কত আলাপ, মন খারাপ 


এক জন্মেই শিকড় ছড়ায়

এক জন্মেই পথ সন্ধান 


চরৈবেতী ...চরৈবেতী ...চরৈবেতী

                ........................... 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - লিপি সেনগুপ্ত

ঠিকানা - সুরতপুর, হরিরামপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614








ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...