Monday 2 April 2018

চৈত্রের ঝরা পাতা;e-কোরাস ৬

    









কবিতার এমন একটি রূপ,যার মানে বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করা যায়।যখন বিষয়কেন্দ্রিক                                                                         

কবিতা কবিরা লিখছেন তখন ভাষাকেন্দ্রিক ভাবে তার ভাবের পরিবর্তন হয়।সেই ভাব                                                                          কবিতাকে কবিতাময় করে তুলে।আসলে কবিতা হল স্বতন্ত্র, যেমন কবি।কবিরাই পারেন                                                                        কবিতাকে স্বতন্ত্র করতে।আসুন কবিতা পড়ি।
                                                                                                                                                 

                                                                                দুঃখানন্দ মণ্ডল

                                                                                  সম্পাদক - কোরাস




মনোতোষ আচার্যের তিনটি কবিতা

ছোঁয়া

শব্দকে ছুঁয়েছো কিংবা 
ছুঁতে চেয়ে অক্ষর বাউল
কালো মুখ সরণি ডিঙিয়ে
এই তো এলাম
শব্দব্রহ্মে আদুরে আভাস
উচ্চারণে তরঙ্গ তোলে
শরীরী বিধেয়...
     ..................

তামস

হিংসা প্রাগৈতিহাসিক
স্থলে জলে জীবন বিকার
লোভ অতীন্দ্রিয়
বাসনা জারিত উপকথা
অহং মোহোন্মত্ত
অন্ধ তামস আশ্রয়
উপাধি স্থূলতা মাত্র
পাঁচ লোকে বাগযন্ত্রে বয়।
         ..................

কুহক

মহার্ঘ আছে যা কিছু
চিতল শরীরী পটমায়া
তোমাকেই ছুঁয়ে আছে
নাগরিক পাঁক আর ধূলি
মেঘজালে ডোর কাটে
তুচ্ছতম জীবনের তিথি
অম্বুবাচী স্নান সেরে কুহকিনী
উপপাদ্য আঁকিবুঁকি
কেটে গেল
সেলফিমুখর রোদবেলা...
          ................. 

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল এর তিনটি কবিতা


তিতির

হৃদয়ের ভেতর যে সব সূর্যমুখী ফুটে আছে,
তার নিঃসঙ্গ দোলায় কয়েক জোড়া তিতির নিঃশব্দ
জমির পাড়ের গন্ধ জুড়ে পঞ্চশর,
বৈধতা নিয়ে কোন প্রশ্ন ওঠে না আর
এখনো সূর্যের আলো ছড়িয়ে আছে
কামুক ঢিবি থেকে প্রশান্ত বিল -
           ...................

রিক্ত

পত্রমর্মরের কাছে অভিমানী আগাছা,
দোষ কারও নয়, এটা বোঝাতে পারিনা কখনো,
বোবা পুরুষটির সারা গা'য়ে কর্কশ
রিক্তমুখ ঝোপের মাঝে হারিয়ে যেতে যেতে তুলে নেয়
এক গুচ্ছ ভাঁটফুল --
       ................

রিপু

প্রতিটি কালের মাঝে একটি পদ্মাবতী ;
পদ্মানদীর মতো অন্তর্লীন পঙ্ ক্তি
তার বিভঙ্গে কিছুটা মেঘ,
তবুও বাকল ছাড়ানো অর্জুনগাছ থেকে
ভাবনা সরতে চায় না কিছুতেই
প্রজাপতি উড়ে গিয়ে বসে বোরো ধানের
সবুজ রিপুর উজ্জ্বলে-
         ................. 

তাপস বৈদ্য এর তিনটি কবিতা--

হোয়াটসঅ্যাপ

কলেজ ফেরত মেয়ে না বুঝেই হোয়াটসঅ্যাপে জুড়ে দিল তার নতুন বন্ধু-কাকুর সাথে
আর অচিরেই টের পাওয়া গেল তার
নতুন বন্ধু-কাকু আসলে আর কেউ নয়
আমার কৈশোর ও প্রথম যৌবনের
একমাত্র ফ্রেন্ড-ফিলোজফার ও গাইড
মধ্য-যৌবনের বেলোয়াড়ি ঝড়ের তোড়
কখন যে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে গেল
দু-জনকে কতকাল কোন বিচ্ছন্নলোকে...
হে মহাবিশ্বব‍্যাপী অন্তর্জালিক প্রযুক্তি
মিলনের দেবতার মতো এক লহমায়
পৌঁছে দিলে আমার হারানো মেয়েবেলায়
ঈষৎ পাপবোধ হলেও মেয়ের কাছে এখন হোয়াটসঅ্যাপের পাঠ নিতে থাকি...
               ................... 

ম‍্যাসেঞ্জার

ডাকহরকরাকে হারিয়ে দিয়ে রানার
এসে মিশে গেছে ডাক-পিয়নের ব‍্যাগে
হে বার্তাবাহক দেবদূতের মতো
দাঁড়াতে এসে আমার প্রেমের আগে
বিকেলবেলার কত যে রং ছিল
বনশ্রীদির গানে মাতোয়ারা ভুবন
চোখের জলে ঘেঁটে যেত প্রমলিপি
সন্ধ‍্যে নামত বিরহ বিধুর সঘন
অনেকটা হলো দুপুর গড়িয়ে নামে
ঘরকন্নার কাজের ফাঁকের সই
খবর-শব্দ বেলা-অবেলায় বাজে
অনেক হাতড়েও ডাকের স্মৃতি কই
দু-একজন না-দেখা বন্ধু আজ
মনের ঘরে কড়া নাড়ছে জোর
ভার্চুয়াল জগতে নিয়েছি ঠাঁই
অ্যানড্রয়েডে মিশে আছি ঘনঘোর
            ........................ 

টুইটার

এখনও সেলিব্রেটিরাই করে টুইট
আমজনতা বন্ধু পায় না সেথায়
অ্যাকাউন্ট খুলেও অবধারিত কুইট
মনের আরাম পাবে বলো সে কোথায়
কথা চলে একান্ত ব‍্যক্তিগত
অন্তর্জালে জড়িয়ে থাকে হিয়া
স্মার্টফোনে আজ সকলেই অনুগত
একের পাশে দুয়ের পরকীয়া
যোগাযোগে ঘটে ঘোরতর বিপ্লব
মুখ গুঁজে আজ ছোটোবড়ো একাকার
শুধু কি অন‍্যায় ঝরে গেলে পল্লব
জনমতে কাঁপে ভুবনগ্রামের সংসার
প্রতিরোধ হোক উঠুক প্রতিবাদ
সামাজিক এই মুক্ত সভাঘরে
সবাই রাখুক নিজস্ব মতবাদ
বিশ্ব বাঁচুক স্নেহ-মায়া-আদরে
         ...................

বনশ্রী  রায়  দাস-এর তিনটি কবিতা---

ঝুলন্ত কার্নিস

খোলা জানালা একটি হলুদ পাখি।
একটাই  দিগন্ত ।
হেমন্তের সূর্য  উঠেছে
ছেঁড়া ফাটা পাতার আড়াল-----
আইসবেরি প্রেম রুক্ষ শীতলপাটি।
নিবিড় মধ্যাহ্ন
তোমার আঙুলের  স্পর্শ তাপে
                    খসে   পড়ছে
নবজাতক— উপাখ্যান ।
একটি জন্ম মুহূর্ত সমস্তটা সাদা পাতা,
মৃত্যু রেখে যায় বর্ণিল ক্যানভাস ।
চোখ তোলে ঝুলন্ত কার্নিস
আমি তার নাম রেখেছি ‘দুঃখ জাগানিয়া‘ ।
            ................

ঘাস ফুলের গন্ধ

আলো-অন্ধকারের আশ্চর্য খেলার  নাম মিলন
তোর সঙ্গে  আলো-ছায়া খেলা আমার আজন্ম
সে কথা জল রং কিংবা আহ্নিক  গতির মতো
স্পষ্ট হয়তো জানে ধ্যান গম্ভীর দিগন্ত ।
দাবার  চাল দেওয়া জন্য গুটি সাজাই
তোর শরীরময় ঘাস ফুলের  গন্ধ, অবগাহনের
ভাষা শেখায়। সেই ছোট্ট  বেলা আর
বিণাবাদিণীর  চরণে হাতে খড়ি দেওয়ার মতো।
              ....................

পতঙ্গভূক

রেণু মাখামাখি পতঙ্গভূক ডানা, 
নীড়ে ফেরা পাখিদের  রাত্রি-রমণ দাবি রাখে 
অনেক  কিছু আমার নিষ্কাম রাত্রির কাছে।
অন্ধকারের  করাল দাহ জাগিয়ে  রাখে তোকেও
খুলে যায় স্মৃতির লকার...
তোর গাওয়া দু-কলি গান তখন চাঁদফাটা তৃষ্ণা
জ্যোৎস্না ভেজা আঙুলে জড়ায় স্থলপদ্ম।
ঠোঁট-কথা সুর তোলে তোর কৃষ্ণকলি উঠোনে
কনসার্ট বাজে বৃষ্টির খসে-পড়া  ছন্দে।
হাইতোলে আমলকি ফুল, দুর্বাবনে শিশির-দানা
নীল সূর্য নামে টলমল পায় ঘুম ঘুম বিছানায়।
               ......................


বিকাশ চন্দ এর তিনটি কবিতা--

অনুচ্চারিত শব্দের কোলাহল ১

ডেকেছিল কোকিল বসন্ত বৌরি
খাঁ খাঁ মাঠ চিরে হাটের রাস্তা বাচ্চা কাঁখে মা
মা ছেলের চোখে খিদে আর তেষ্টা
সারা শরীরে পোষ্য অন্য ভারতবর্ষ
অথচ ডানে বামে ঝোপে ঝাড়ে
না চেনা পাখিদের সাথে
কুঁড়ি আর ফুলের নীরব উচ্ছ্বাস
যেমন নিঃশব্দ রাত্রি নামে
আলো আসে
মেঘ বর্ষা আসে অবিকল।
কিছু ক্রোধ কিছু ক্ষমা হায় শরীরী প্রতিমা
প্রত্যাশাহীন প্রান্তিক পাড়াগাঁ তেমনি চঞ্চল
বারোমাস অক্ষত হাসি মুখ সুখ দুখ জল কাদা মাটি
শস্য জন্ম কথা জেগে পরিপাটি।
          ...................

অনুচ্চারিত শব্দের কোলাহল ২

পড়ে আছে উদোম শরীর
হা মুখে ঘুরে বেড়ায় মাছি
উষ্ণ ঠোঁট ছুঁয়েছিল তবুও
এসিডে পোড়ে মুখ---
ভেতর শরীরের ধমনী ধারা
এখন বাইরে শুকনো আলকাতরা ছোপ,
পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ায় এখন ও ছায়া শরীর
ভাষা হারানো হা মুখ দেখে বলে না কেউ
কোথাও তো ছিল হৃদয়ের দাগ
সমস্ত অনুযোগ জানে পাঁজর কষ্টিপাথর।
অক্ষত সময় ছিল কি কখনো
ক্ষয়া শরীর কাল জানে নীরব অবক্ষয়
যা কিছু দুর্লভ পেলব অনুভব
জ্যোৎস্নার মায়ায় কিংবা জলে ভেজা শরীর
দিব্যি ফেলে যায় গোপন সঞ্চয়।
             ................

অনুচ্চারিত শব্দের কোলাহল ৩

ফিরে আসার জায়গায় ফিরে আসতে হয়
যা কিছু অভব্য দাঙ্গবাজি সে তো পথে ঘাটে---
শুনশান পথ ঘাট হলে ঈশ্বর কথা কয়
প্রসন্ন করুণা হাসি ধারে নয় ভারে কাটে।
কী কপালের ফের আছেন পরমানন্দে
অদল বদল মুখ চেনা ভার
সব মুখ যেন যীশু
            বলি শোন
             যা বলি বরং তাতে মন দে---
             অকথা কথায় কেবল ঘর বার
             জানে কি সদ্য শিশু !
যে কথাটা সহজে শেখার সেই কথা টা বলো
বললেই তবে শ্বাস পড়বে--- গাছের পাতা নড়ে----
বাঘের দেখা দরকার নেই থাবার গল্পে চলো,
কী খাদ্য অজানাই থাক উঠোনে পাত পড়ে।
               .................

বিশ্বজিৎ কর এর তিনটি কবিতা----

আমার বিপ্লব

অবচেতন মনে তোমাকে মনে করার ফাঁকে,
মহার্ঘ্যভাতা উঁকি মারে...
সাঁওতাল রমণীর খোঁপায় লাল পলাশে বিপ্লব খুঁজি,
ইনকিলাব জিন্দাবাদ!
দলবদলে সরগরম,
তুমি উপন্যাস পড়েই চলেছ!
সুনীলবাবুর 'মনের মানুষ'!
       -----------------

ধারাবিবরণী

দিনগুলো কখন যে চলে যায়,
ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে-
মাসিক উপার্জনের হিসাব,
একটু আড়চোখ-কিছু ভাবনা!
ফিসফাস হজম,স্রোতের ধাক্কায় এদিক-ওদিক,
কবিতার সাথে প্রেম,বাবুগণের লেকচার-
উপন্যাসের পাতা ওলটানো!
হৃদয় নিয়ন্ত্রণে ওষুধ গেলা,
নিয়মিত চুমু খাওয়া-ফেসবুকে!
মাঝে মাঝে জানতে চাওয়া-স্কোর কত?
উইকেট পড়ে,রানও হয়!
ভাষ্যকার ক্লান্তিহীন!
     -----------------

নীরবতার কথা

আমার অনুভূতির অশরীরী আত্মাই-
তোমার নীরবতা!
আকাশও তার বুক চিরে ফেলে-আলো দেখায়!
আঁচল-ভাঙ্গা গন্ধে সেই
ছেলেবেলাকার হাতছানি!
সিরিয়ালহীন সন্ধ্যেগুলোতে-
তেলমুড়ি-হাতেগড়া রুটি.....
নীরবতা তখন কথা বলতো!
অমল ছিল,সুধা ছিল,ডাকঘরও ছিল-
হ্যাঁ,নীরবতাও ছিল!
তবুও কত কথা,কত আবেগ!
আজকের নীরবতা অস্বস্তি,আশঙ্কার চাপে নুয়ে পড়েছে!
                ..................

মুনিরা আখতার এর তিনটি কবিতা----

অনুভবের পেছনে

হয়তো আবার পিছোতে পারি
খুনের গায়ে ঘেঁষতে পারি,
হাতের কাছে আঁকার রঙে প্রিয় রঙ মুছতে পারি ।
ব্যাথা নামক ছবি বদল--
আবার লুকোয় আশাবাদী
যুগের দাগে পিছন ফিরে
মুক্ত আমি, ভুক্ত জানি ।
      .................

আদিমকালের কবিতা

রাতের পথে জেগে আছে যারা,
রক্ত জমে বায়ুদূষণ,
শ্বাস নেই সেই বিষম লোভী
তোমার এবার পূর্ণ হলো জগৎছবি।
একসাথে সূর্যোদয়
একসাথে অস্ত যায়
নাটক জানি জীবনছবি
রক্তে আছে তরল সব-ই
পাতায় পাতায় ছায়ার মত
মনের মত আকাশ দেখি ।
উঠছে বায়ু ধোঁয়ায় ভরা
আদিম পশু আদিম আলো
আদিম কালেই লেখা হলো ।
            ..............

ইতি, আমার আবিষ্কার

টিক্ টিক্ শব্দটা প্রিয়।
মানুষের গালিগালাজের বাইরে
প্রাকৃতিক খুনের বাইরে রক্তটা প্রিয়।
বন্দিদশা চলছে বলেই জানালায় দাঁড়াতে হয়---
আকাশের দিকে তাকিয়ে রাতের তারায়
জোঁকের মত চুষে নিতে হয় পরিবেশের
হজম করা জঞ্জাল।
ফিরিয়ে দিতে হয় সেই একই যুক্তাক্ষর।
গোলাকারে সে কামনা করে,
বিসর্গ লাভে উৎসাহ জোগায় মাতাল হয়ে
প্রেমিকা তাকে ঘৃণা করে
প্রেম তাকে বোতল দেয়
অভিনয় তাকে ঘৃণা করে
কাশি তাকে প্রেরণা দেয়।
          .................


জয়া গুহ (তিস্তা) এর তিনটি কবিতা---

অনির্বাণ

ফুলির মা পুকুর ঘাটে লুকিয়ে দেখায় পিঠের কালশিটে,
তিনদিনে দগদগে ঘা
দিদিমণি আজ কলার দেওয়া ব্লাউজ পরেছিল
ঘাড়ের কাছে,দাঁতের  দাগটা দেখে ফেলেছিলাম আচমকাই
ইমদাদুল দাদা আসরে বল্ল,
মেয়েদের পড়তে জানলে নাকি এক খাতা ভর্তি কাব্যকথা হয়
কেউ পড়তে জানে না, তাই অমন সাদা পাতা বেবাক ফরফর করে
রাত গভীর হলে আমিও আড়াল করি খোকার দু-হাত আঁকড়ানো মাতৃস্তন
বিছানার সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্যে
ওটুকুই আমার আপত্তির বিষয় আজকাল
সারা দুপুর দোলনা দোলে আমার দু-দিক খোলা বারান্দার এমাথা-ওমাথা
চোখ লেগে আসে,তাও কাঁথার ফোঁড় তুলতে তুলতে হাই তুলতে তুলতে অবাক চোখে দেখি তার বেড়ে ওঠা
কেবল আমার সমস্তটুকু থমকে যায় তোমার চৌকাঠে, অনির্বাণ!
আমার পারা, না-পারার দোহাই
আমার অপারগতার দুর্দমনীয় বেড়াজাল সত্ত্বেও কিভাবে গোপনে
বেড়ে উঠছ তুমি ক্রমশ
আমার সিঁদুর-লাল-টিপ দেখে কিভাবে লিখে ফেলো
গোটা সংসারী-কথার আনাচকানাচ
না-হওয়া বাসরের আঁচ লেগে জ্বলেপুড়ে যায় আমার ভেতর-বাইরে
কিভাবে না-হওয়া উপন্যাসের নায়িকা করে তোলো এই চারদেওয়ালের আটপৌরে বেভুল পথের মেয়েমানুষকে?
এযাবৎ  যন্ত্রণার পরতে পরতে আজ উদ্বৃত্ত কান্নাজল শুধু তোমার কথা ভেবেই
শুধু তোমার কথা ভাবতে ভাবতেই শেষ ওং -তৎসৎ..
           ....................

প্রেম ও পুরুষ

আসলে আমি এখন যা ভাবছি, সে ও কি তাই ভাবছে
যেমন আমি ভাবছি উষ্কখুষ্ক  চুলে আঙুল চালাতে চালাতে অবাধ্য কিছু মশাদের অস্থিরত্ব শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না তোমায়
এই রাত, শুনশান ঝিঁ ঝিঁ র আওয়াজ গ্রাম ঠেলে, টিমটিমে কষ্ট করে জ্বলে থাকা আলো ঠেলে তোমাকে উগ্র করে তুলছে
খোলা হাত,বড় জোর টিকে থাকা স্যান্ডো গেঞ্জি, শর্টস
বিন্দু বিন্দু ঘামের মত ঘিরে থাকা ক্লান্তি, রাতপার করার কলেজ-যাবৎ বিদঘুটে অভ্যাস ডিঙিয়ে আমার কথাই কি ভাবছো?
যেমনটা আমি ভাবছি,স্বামীর বুকে মুখ গুঁজে কাটাতে কাটাতে,ছেলের মুখে পাকানো ভাতের দলা ঠুসে  দিতে দিতে
একলা রাস্তা হাঁটতে হাঁটতে
আয়নার সামনে আপাদমস্তক নিজেকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে
কোথায় কতটুকু মেদ-বাহুল্য ভাবতে ভাবতে
তোমাকেই ভেবে চলেছি বয়ঃসন্ধি ইস্তক
আর তুমি! ছাইদানিতে অবশিষ্ট সিগারেট ঠেসে ধরে আছ
নেভানোর আপ্রাণ চেষ্টা নিজেকেও
আটকে রাখার যাবতীয় সংগ্রাম পুহিয়ে ভালোবাসার গোপন কৌশল তোমার করায়ত্ত
শেষ রাতে নিয়ন্ত্রিত শ্বাস আমাদের বাধ্য করেনি অবশ্যম্ভাবী গর্ভসঞ্চারে
          ..................

আমাদের ধুলোবালি সংসার

এখানে রাখা আছে
মায়ের খুঁটিনাটি
ছড়ানো পান-সরা
দাদার খুনসুটি
এখানে ভোর হয়
মোরগঝুটি নাড়ে
মায়ের লাল টিপে
সিঁদুর ঝুরঝুরে
নাকের বরাবর
লুকোনো কত কথা
বাবার পাঞ্জাবী
গেঞ্জি ফুটিফাটা
দেওয়াল নোনা ঝরে
আলনা নড়বড়ে
তক্তা ক্যাঁচক্যাঁচ
বালিশ ও কম পড়ে
পাঁচালী-ব্রতকথা
সিংহাসনে আছে
মায়ের নাভি-ছাই
নদীর জলে ভাসে
পড়েছে মনে মনে
বছর পঁচিশ আগে
শাঁখে ফুঁ মা আমার
সন্ধ্যা প্রদীপ হাতে
আমিও ফ্রকে, খুকি
সহজপাঠে, সবে
দেখেছি ভালোবাসা
না খেয়ে গান হতে
দাদার সবেই বারো
আমার আট মতো
ভাতের সাথে আলু
সেদ্ধ -ডাল হত
সেদিন গুণগুণ
গানের কলি বেয়ে
ঝরতো জ্যোৎস্না
মায়ের কোল চুয়ে
আজকে বিছানায়
জানলা  কাচ ঘেষে
চলকে চাঁদ নেমে
বল্ল ''মা এসেছে''
  ..........

স্বপ্নময় এর তিনটি কবিতা---

অসংজ্ঞায়িত

যদি কোনো পাহাড়চুড়ার থেকে
দূরের কুয়াশায় জ্যোৎস্নার দিললগি
চাঁদের মেঘের হাতে একটু একটু অনাবৃতা হওয়া দেখে
তোমার মানসীর বিধিবদ্ধ পুরুষের হাত মনে পড়ে,
যদি তার শীৎকার অরণ্যের ফিসফিসানিতে 
তোমার আত্মহননের ইল্ তিজা বয়ে আনে,
তবে হে মুসাফির,
নিজেকে প্রেমিক জেনো,
জেনো তুমি সেই আসাগর তৃষ্ণাকে ছুঁয়েছো
লোকে যাকে ভুল করে ভালোবাসা বলে...
                .................

দূরের মানে

দূর মানে কি নেই আর পাশে, কাছে?
সর্ষক্ষেতে কুয়াশা লেগে আছে।
বসন্তদিন, তাও ঠান্ডা পড়ে
কেমন একটা শিরশিরে ভাব ধরে
তোমার ছোঁয়া নেই বলে ভয় লাগে
ফুটবে তো ফুল এই বসন্ত রাগে?
দূর মানে কি মনের ঘরে দাঁড়ি?
পালটে নেওয়া কাপড় তাড়াতাড়ি?
ভাল্লাগে না বলেই কাঁপা ঠোঁট
কি যে ভালো, কোথায় যে তার খোঁজ?
খুঁজতে খুঁজতে আলো ফুরিয়ে আসে
দূর বোঝা যায় নিশ্বাসে- প্রশ্বাসে।
দূর মানে কি? দূরত্ব প্রত্যাশা?
নাকি মনে বাবুই পাখির বাসা?
জোনাক ঠোঁটে আঁধারেও ঘর ফেরা
ভালোবাসার আগুনের ওম ঘেরা।
দূর আসলে ফাগুন হারিয়ে পাওয়া
ভয়ে ভয়ে জড়িয়ে ধরতে চাওয়া।
           ...................

চলতে চলতে

আমি যাকে মনে ভালোবাসি
যে আমাকে মনে মনে চায়
আমাদের লুকোচুরি খেলা
ঝাউপাতা সূর্য ঘোড়ায়।
দূরে দূরে ঢেউ ওঠা দেখি
ভেঙে পড়া ধুলো আয়নায়
কি একটা বাকি থেকে গেলো
অনাহত নাদই বোধায়।
যা যা কিছু অভ্যাসবশে
যাকে বাঁধি মুঠিগতপ্রায়
তারও দেখি ছায়া পড়ে আছে
ভুলে যাওয়া শিমূলতলায়।
প্রত্যাশা আর পুষি না
পাঁজরার খাঁচাখানা খুলে
যে যাওয়ার সে তো চলে যাবে
বিভাবের সলতেটা জ্বেলে।
শুধু যদি সেটুকুও জ্বলে
আড়চোখ আনমনা আছিলায়
অভিযোগে প্রেম সুদে বাড়ে
আসল তো কবেই দেনার দায়।
বাঁধা পড়ে থাকি,ভাবি মু্ক্তি
ফাগ আর ফাগুনের গোধূলি
নেমে আসে,পড়ে থাকে নোটবুক
সান্ত্বনা মেখে  রঙ-তুলি।
        ...............

মঞ্জীর বাগ এর তিনটি কবিতা----

চন্দ্রাবলী ৩

চাঁদ সেই রাতে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো।
আমরা সেই চাঁদ মেখে চাঁন্দ্রেয় আলো।
জীবন্ত জিভ তোমার আমার তীব্রতর উষ্ণতায় শুষে নেয় তিন জন্মের বিষাদ।
হে নীল চাঁদ এই নদীতীর্থে তীব্র অবগাহন সেরে সাগরিকা গান গায় বিরহহীন মিলনের।
কত দুরে আছ তুমি গান যৌগপদ্যের মতো!আজ চাঁদরাতে স্বপ্নের মতো আশ্লেষে তোমাকেই খুঁজি নীলজল।
আজন্মের বাসনা আগুন নয়, আলো হয়ে জ্বলে।
              ...................

অসময় সময়

আমাদের স্বপ্ন ছিল চাঁদের আলো কিংবা অন্ধকারে অক্ষরের স্বপ্ন এঁকে যাব।
আগুনে পুড়েছি, পুড়ে গেছে কথা ঘ্রাণ।সমাজিক প্রাচীর ভিন্ন করেছে আমাদের শ্বাস।
তবুও  তোমার বুকে আমার স্পন্দন,আমার শ্বাস তোমার অনন্ত বিশ্বাস,হে চাঁদ।
সে রাতে আমার শাড়ি হারিয়ে গেছে বৃন্দাবনে,আজ চাঁদ আমার শাড়ি,
কত আগুন শ্লেষ জ্বলে উঠল আমাদের মাঝে,নিবেও গেল! আমরা কেবল আলো খুঁজি অক্ষরে,
দুরন্ত দামোদর প্রাণ ছুঁয়ে আমায় সাগর বলে ডাকে,
আমার শ্রীফল ছুঁয়ে জেগে আছে কালো তিল আমার একান্তে,জেগে আছে আকাশের অরুন্ধতি,অবিনাশী আলো।
এ অসময়ে স্নান সারি অশান্ত দুরান্ত ঝরণায়,  
সূর্য দেখুক এক চাঁদ কিংবা কবির সাথে ভিজছি খুব সময়ে অসময়ে।
                 ..................

শ্রীফল

আকাক্ষায় লেখা থাকে আস্বাদ ঘ্রাণ।
জন্মলগ্নের প্রথম পলে ঠোঁট রাখি,
অমৃতের ফোঁটা বিন্দুবিন্দু ঝরে পড়ে,
এ আস্বাদ নিরাপত্তার নাম, নিরাপদ ঘ্রান  মা বলে ডাকি, 
শ্রীফল উষ্ণ জেনে ওম পাই,
কলাবউ ঘোমটার আড়ালে জমিয়ে রেখেছে প্রেম,
রাধা শ্রীফলে গীতগোবিন্দের শ্লোক আঁকে প্রেমিক নখর,
সাগর জলে ভেসে যায় মোহনা,
শ্রীফল ছুঁয়ে কালো তিল,
আকাশে একলা অরুন্ধতি,
প্রেম লিখছে কবি,একান্তে অঘ্রাণে ,
লিখছে ঈশ্বরীর পুর্নজন্ম কথা।
                ...................


সম্পাদক: দুঃখানন্দ মণ্ডল    

সহ-সম্পাদক: শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ ভাবনা: সুকান্ত সিংহ

ঠিকানা: সুরতপুর,দাসপুর,ঘাটাল,পশ্চিম মেদিনীপুর,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত।
যোগাযোগ: ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...