Saturday 25 June 2022

তপনজ্যোতি মাজি এর কবিতা // ই-কোরাস ৬২

 



তপনজ্যোতি মাজি এর গুচ্ছ কবিতা 



পালকের শার্ট



তার পতাকার রঙ চিনি। আমার কবিতা তাকে মনে করে শপথের নদী। পালকের শার্ট গায়ে

হেঁটে যায় অন্যমনস্ক প্রেমিক। সে আজ বাড়ি

নেই জেনেও দর্পণে তার প্রতিবিম্ব খুঁজি।


হিরন্ময় আগুনে পোড়ে মৃত্যু। তপস্বী জলে তর্পণ

করে অরণ্যের গভীরে পৌঁছে যায় বিবিধ সংবাদ।

শুধু তার বাষ্প ঢাকা মুখে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখে

লিখে রাখি অন্য প্রস্তাবনা। নাম মুছে, সংলাপ

মুছে,দেখি তার তন্ময় গায়কী।


আমার অধিকার নেই মৃত্তিকা ও আকাশে। তবু

শ্রেষ্ঠ রমণীর কাছে নিজেকে সম্রাট ভাবি, ভাবি

ভিক্ষুক কিংবা উন্মাদ। পালকের শার্টের পকেটে ভরে নিই জন্ম, মৃত্যু ও প্রথম চুম্বনের তারিখ। নক্ষত্র পুরুষের মতো রাত জেগে লিখি দিবস নিষিদ্ধ পংক্তি।

______________



রবিবার



আসবাবে অবসর চিন্হ। গ্রন্থে গ্রন্থে বন্দি অক্ষর।

বাচিক ক্লাসের দিদিমণির অন্তরে বৃষ্টির অনর্গল

উচ্ছ্বাস। আষাঢ় এলো। মেঘেদের চঞ্চলতা দেখে

বৃক্ষে বৃক্ষে স্নানের প্রস্তুতি।

স্নানঘরে রবিবার। জল বোঝে শরীরের অপঠিত

ভাষা। বিন্দুতে বিন্দুতে রূপতৃষা,কলিদাসী বর্ণনা।

মহাকাব্যিক রমণীরা বিপন্ন পুরুষ-তারল্যের কাছে সংযমহীন বিক্রম হত্যা করে নারীমন।

মুক্তির সংকেতে বৃষ্টি পড়ে জনপদে। সুবর্ণ সময়ের

গান পাঠিয়েছে প্রেমিক। মেঘলা দিনে একলা হয়ে

যায় মন। বৃষ্টি জানে ভূমিঢাল, প্রবাহের অনুকূল

পথ,মনের নাব্যতা।

মহান সম্ভাবনা দিয়ে দিন শুরু হয়। সূর্যোদয় এবং

সূর্যাস্ত ঘিরে ট্যুরিস্টদের অতি সক্রিয়তা। গৃহবন্দি

ঘুম খোঁজে বালিশের সাহচর্য। চর্যাপদ আচরণ

বিধি। তোমাকে জড়িয়ে ধরে লখিন্দর হবো।

________________



সংগৃহীত



তথাগত তাঁর প্রসন্নতা মুখময় ছড়িয়ে দিয়েছন।

জাগতিক হয়েও মহাজাগতিক। বিকীর্ণ এই দীপ্তি কি আমাদের উত্তরাধিকার?

শরীর সবসময় শরীর নয়। মহাকাশ। হৃদয়স্থলে

অযুত নক্ষত্রের নীল আলোর ধ্বনি কেউ শুনতে

পায়, কেউ পায়না।

গার্হস্থ্য জীবনের দেরাজে ভাঁজ করে রাখা তাত্ত্বিক

জীবনবোধ। মোড়কের নাম ধর্ম কিংবা দর্শন। বুঝে

নিলেই মহাজীবন।

গদ্য ও কবিতা পৃথক কিছু নয়। পর্যবেক্ষণ এবং

অনুভব। সংসার জীবনে কেউ কেউ কস্তুরীর মতো

সঙ্গে রাখেন অনিঃশেষ সুবাস।

ঈশ্বর এবং মহাজীবন। কার সঙ্গে দেখা হয় নিভৃত

নৈকট্যে? কার কাছে রাখো নীরব স্বীকারোক্তি? কে

মাখে আলো শরীরে ও মনে?

সব বোধই সংগৃহীত। কে আর বুঝতে পারে অব্যক্ত

কথা? যে বোঝে তার সঙ্গে তরঙ্গের মিল। প্রবুদ্ধ

প্রেমিক কিংবা বিদুষী প্রেমিকা।

_______________



কবিতা সংগ্রহ



সারারাত আকাশের কাছে ভিক্ষা করেছি নির্মোহ

উত্তাপ। সংগৃহীত শস্যে আমার কোনও অধিকার

নেই। ফিরে যায় বাউন্ডুলে বাতাস। আমি দেখছি

ভোরের সন্ধিক্ষণে তোমার ঘুম থেকে পরী শরীরে

উড়ে গেল স্বপ্ন।

সমস্ত প্রত্যাশার বীজে জল দিতে দিতে অবহেলা

করেছি সময়ের সংকেত। আগুনে ও জলে বিপুল

বৈরীতা দেখেও, ভেবেছি একদিন সর্বজনীন ইচ্ছা

মিলিয়ে দেবে অস্ত্র ও ক্ষমার দ্বন্দ্ব। তোমাকে পড়ে

শোনাব পৃথিবীর প্রথম কবিতা।

কবিতা সংগ্রহ থেকে নির্বাচন করেছি নির্বাণ এবং

নৈঃশব্দের কবিতা। এক ঋষি তপস্যা করছেন মন

বা মস্তিষ্কের কোথাও। জীবন অতিক্রান্ত এই ধ্যান

ঘিরে আবর্তিত হয় পার্থিব ব্যাখ্যা।

তুমি অনিশ্চিত মেখলা সরিয়ে উন্মোচিত করেছো

অন্তরতম রূপ। বহুমাত্রিক জীবনের ভাঁজে ভাঁজে

রঙিন সুতোর কারুকাজ। নির্বাচিত কবিতার মতো

গ্রন্থ প্রচ্ছদে তোমার ঘুমভাঙা মুখ।

_______________



অথ উন্মাদ উন্মাদিনী কথা



এক.

সরিষা ফুলের রঙ নিয়ে তর্ক হলো হাউসফুল।

পাগলী পাগলকে বললো উন্মাদ

পাগল পাগলীকে বললো উন্মাদিনী।

নিয়ন আলো নিভে গেলে দুজনেই হাসতে হাসতে

ঘুমিয়ে পড়ে বট পাতার বিছানায়।


দুই.

ঘুম ভেঙে যায় ভোরের ট্রেন শহরমুখী হওয়ার আগেই।

উন্মাদিনী কাগজের আগুনে চা তৈরি করে দুকাপ।

উন্মাদ সংগ্রহে রাখা বেকারীর এস বিস্কুট বার করে দুটি।

তারা স্বপ্নের কথা বলে।

তারা ব্যর্থতার কথা বলে।

দুজনেই সহমত হয় পয়সা জমিয়ে একদিন তারা

উড়োজাহাজে চড়বেই।


তিন.

সারাদিন উন্মাদ সংগ্রহ করে আগুন।

সারাদিন উন্মাদিনী সংগ্রহ করে জল।

বৈপরীত্য জমিয়ে তারা গড়বে ঘর।

অভিযোগ জমিয়ে তারা করবে প্রেম।

উন্মাদিনী উন্মাদকে বলে পাগল।

উন্মাদ উন্মাদিনীকে বলে পাগলী।


চার.

পার্থিব প্রেম আসলে সোনার পাথর বাটি।

পাগলী পাগলকে বলে উন্মাদ।

পাগল পাগলীকে বলে উন্মাদিনী।

___________



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ চিত্র - সঞ্চিতা দাস

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614

Monday 20 June 2022

তপনজ্যোতি মাজি এর কবিতা // ই- কোরাস ৬১

 



তপনজ্যোতি মাজি এর গুচ্ছ কবিতা 

সাঁতার



রৌদ্রস্নান নাকি রোদসাঁতার? হৃদয় শুভেচ্ছাপাত্র,

অথচ উন্নাসিকতা নিষিদ্ধ ধোঁয়ার মতো গোলাকার উড়ছে হাওয়ায়। যতটা তেজষ্ক্রিয় ভাবো তার থেকে ঢের লঘু এই রোদ।

ঠিক যেন হলুদ রমণীর পায়ের রঞ্জিত নখ।


উষ্ণতার মাত্রা জানে জল। সমস্ত সাঁতার কেবলমাত্র

জলক্রীড়া নয়। রোদের গনগনে আঁচে দূরগামী বাস

যাচ্ছে বান্দোয়ান। কাঁধে শিশু বাইকে যাত্রী সম্ভ্রান্ত

রমণী। সমস্ত গমন আসলে সাঁতার।

শহরের রাস্তা চলে গেছে জঙ্গলের বুক চিরে আরও

কোনও দূরতম শহরের দিকে। অবিচল অনুপ্রেরণার মতো সৌরস্পর্শ। বাতাসকে কে মনে হয় কবিতার

উদ্ধৃতি অংশ কিংবা প্যারোলে মুক্তি পাওয়া কোনও

সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী।

ভাঙো প্রথা। জীর্ণ ও পুরাতন মিথ। স্নানের তৃপ্তির

পর দর্পণ দর্শন। রোদের ভিতরে বৃষ্টির বীজ পুঁতে

দিচ্ছে রজস্বলা মেঘ। স্নান শুধু প্রতীকী প্রসাধন।

সব স্নান কি কেবল শরীরী?

________________


সাক্ষাৎকার


ভূগর্ভ জলস্তর কমে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ

করেছেন পরিবেশবিদ। শাওয়ারের তলায় ভিজে

যাচ্ছে নগ্ন নারী দীর্ঘক্ষণ। ধুয়ে যাচ্ছে শ্রান্তি ও মনোভার।

যে কথা বলেছে পুরুষ, যে প্রশ্ন উদ্ভিদের মতো

জন্মেছে মস্তিষ্ক মাটিতে তাকে পল্লবিত হতে দাও

ভেবে,বেড়েছে রক্তচাপ,মনোজ সরোবরে প্রবল তোলপাড়।


দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে বলেছে,স্বাধীনতা ও সন্দেহ

পরস্পর বিরোধী। সে বলেছে, মন ও শরীর কিন্তু

প্রশ্নাতীত। সে ভেবেছে আসলে প্রভূত্ববোধ মানুষের

সহজাত প্রেষণা।


ভৌম জলের ভাণ্ডার একদিন হয়তোবা শেষ হয়ে

যাবে। শেষ হবে মানুষের প্রভুত্ব ও সন্দেহ অসুখ। একদিন কোনও এক সাক্ষাৎকারে মানুষ স্বীকার করবে বহমান রক্তের তারল্য ও মনের ভ্রান্তিগুলি সমধর্মী নয়।

___________________


স্বেদবিন্দু



ভ্রুক্ষেপহীন মুহূর্ত পার করে দাঁড়িয়েছো মধ্যবর্তী

শূণ্যতায়। স্বেদবিন্দুগুলি উপমাহীন। গ্রীষ্ম যেন

নির্বিকার পুরুষ। অঙ্গে অগ্নিমশাল। নীরব স্বর

মন বললো, বৃষ্টি ডেকে আনি।


স্বেদবিন্দুগুলি কাঁচের দেওয়ালে অভিমানী জল,

বিপন্নতা শিরোধার্য ভেবেছে নিষ্ক্রিয় রুমাল।

মেঘের দেওয়ালে দাবিপত্র লিখেছে গর্ভবতী

আষাঢ়। শুকনো নদীবুকে স্তন্যদানের স্মৃতি।


সন্ধার নিষ্প্রভ আলোয় মনে হলো পুরানো বান্ধবী।

ব্যস্ত কি ছিলে? মনে মনে মুছে দিই স্বেদবিন্দু।

প্রদক্ষিণ করি জলের গভীরে সক্রিয় ঘূর্ণি।

__________________



জামরুলগাছের ছায়া



যে ছায়া নিষিদ্ধ নয়,তাকে দিই মেধা ও অধ্যয়ন।

মৃগশিশু চরে বেড়ায় ধ্যানবিন্দুর ওপারে।

আরও দূরে মায়াবী বিকলে গড়িয়ে যায়।

ইউনিভার্সিটি পড়া মেয়েটি নিশ্চিত হয়,

একা থাকা শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা।


স্রোত নেই তমালের বুকে। আড়াবাড়ি জঙ্গলের

দীর্ঘ গাছেদের ছবি সরে সরে যাচ্ছে আয়নায়,

স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে, একটু স্লো করে পার হই

স্পীডব্রেকার। স্কুল ছুটির পর বাসস্ট্যান্ডে

দাঁড়িয়ে গার্লস স্কুলের দিদিমনিরা। আমাদের

গন্তব্য চন্দ্রকোনারোড।


ছায়া কি নস্টালজিক করে? পাড় ভাঙার শব্দে

নৌকা থাকে নির্বিকার। আমিও কি জলমাটি

মেখে পৌঁছেছি নিবিড় ছায়ায়! ভুলে যাচ্ছি নাম,

জন্মতারিখ, মোবাইল নাম্বার ও পাসওয়ার্ড।

জামরুলগাছের ছায়ায় দীর্ঘ হয় প্রাপ্তবয়স্ক বিস্মৃতি।

__________________


বিশ্বাস


স্থির জলে ছায়া,সদর্থক এই অবস্থান থেকে কেন

সরে যায় নিভে যাওয়া আগুনের মতো নৈর্ব্যক্তিক প্রতীতি?

রমণীর সিঁথির পাশে জমে আছে দাম্পত্যের দুর্গম

বিষাদ। অথচ নাব্যতা মেপে মাছেদের সাঁতার দেখি ক্লান্তিহীন।

শতরূপ শরীরের দেরাজে দেরাজে অন্য প্রস্তাবনা। 

কে আর অচঞ্চল মহাবোধি শাক্যপুত্রের মতো?

নিষ্কাম আগুনে পোড়ে রূপ।

ছাতার নিচে ছায়ার পরিসর ছোট। বৃক্ষের উদারতা

বিষয়ে সহমত মানুষ বলেছে, একদিন সমস্ত অস্ত্র

পরাজিত হবে ভালোবাসার কাছে।

পরিসর ঘিরে আছে পরিধি। দেওয়ালের উচ্চতা তুচ্ছ

হয়ে যায়। তোমার কাছে প্রণত বিশ্বাস। নোঙরে কি

আটকে আছে অস্তগামী চাঁদ?

সময়ের মান্দাসে দম্পতি মাত্রেই বেহুলা ও লখিন্দর।

বিশ্বাসের কাছে শিথিল হয় তরবারি। দাম্পত্যে নষ্ট

হয় প্রেম।

সম্পর্কের সেতুর উপর ঝুলে আছে অবাধ্য পৌরুষ।

স্ত্রী জানে কার্নিশে বেড়ে ওঠা বটগাছের উৎস বীজ।

বাকি সব অকিঞ্চিৎ মার্জিন।

______________



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - লিপি সেনগুপ্ত

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614





Saturday 11 June 2022

তপনজ্যোতি মাজি এর কবিতা // ই-কোরাস ৬০

 



তপনজ্যোতি মাজি এর গুচ্ছ কবিতা 



সুন্দরের কাছে প্রণত


সুন্দরের কাছে প্রণত হলো মন। সিঁড়ির ধাপে ধাপে

ঝরে পড়েছে সুন্দরের রেনু। ঝাঁকি দিয়ে কেউ যেন

নাড়িয়ে দিয়েছে সোনাঝুরি গাছ।

এমন সুন্দরের স্পর্শ পেতে ভিক্ষু হতে পারি। 

জন্মান্তর জুড়ে বিস্তৃত বিশ্বাস সঙ্গে নিয়ে হেঁটে যেতে পারি।

তীর্থপক্ষীর মতো বসে আছি মন্দির প্রাচীরে।

দেবী আজ হলুদ চন্দনে স্বর্ণবর্ন, ওষ্ঠে দ্বিতীয়ার

চন্দ্রহাস। শরীরে সহস্র ঝর্নার গান। মহাকাশ থেকে

মৃত্তিকা পর্যন্ত বিছিয়ে দিয়েছে শিল্পচাদর।

শ্বেতবর্ণ।

সুন্দরের কাছে প্রণত হলো মন।

শুদ্ধরাগে কে বাজায় ভৈরবীরাগ?

সব তুচ্ছতার উর্ধ্বে উঠে দেখছি সুন্দর, ঈশ্বরী ও

তুমি সমার্থক।

আমি কেউ নয়।

হয়তোবা বৃষ্টিশেষের বাতাস।

হয়তোবা পাখির পালকে লেগে থাকা গৈরিক

রোদ্দুর। হয়তোবা অক্ষরে অক্ষরে ঘুমিয়ে থাকা

কবিতার অনিঃশেষ শ্বাস।

হয়তোবা,হয়তোবা অন্যকিছু,অন্যরকম।

__________________


বৃষ্টি থেমে গেলে



বৃষ্টি থেমে গেলে বিদ্যুৎ কুড়োতে কুড়োতে আমরা

বাড়ি ফিরে যাবো।

আমাদের গার্হস্থ্যজীবন জুড়ে বৈপরীত্যের ছোট

ছোট টিলা।

কালো কালো কফিনে সুখের মৃতদেহ।

উঠোনে দাঁড়িয়ে শববাহী শকট।


বৃষ্টি থেমে গেলে বিদ্যুৎ কুড়োতে কুড়োতে আমরা

বাড়ি ফিরে যাবো।

দর্পণে দর্পণে ঝুঁকে পড়া মেঘ।

উঠোনে রাশি রাশি বিশ্বাস ভঙ্গের পাতা।

সম্পর্কহীন তেপান্তরের মাঠ পার হয়ে ঘরে

ঢুকছে আগন্তুক বাতাস।

বর্ণহীন ফ্যাকাশে বিছানায় ঘুমিয়ে

আছে স্বপ্নরা।


বৃষ্টি থেমে গেলে বিদ্যুৎ কুড়োতে কুড়োতে আমরা

বাড়ি ফিরে যাবো।

স্নান সেরে সুগন্ধি ওডিকোলন মেখে আমরা চর্চা

করবো পরশ্রীকাতরতা ও মূল্যবোধহীন জীবন।

কেবল ঘুমোতে যাওয়ার আগে বিদ্যুতের আলোয়

আমরা সনাক্ত করবো আমাদের মৃতদেহ।

___________ 


ঝড় শেষের স্নান


ধুলোমাখা চুল জানে অস্বস্তি ধুয়ে দেবে জল।

অতএব ধারাস্নান।

শ্যাম্পু না সমূদ্রফেনা, ফুটে আছে ব্রহ্মকমল,

নাব্য নদীবক্ষে ফুল্লরার বারমাস্যা,গমরঙ

নাভি থেকে উড়ে গেল অন্ধকারঅবাধ্য পাখি।

ঝড়ের গমকে ছিঁড়ে গেছে সুর। উড়ে গেছে

গান। ধাতব আচ্ছাদনে ঢাকা ছাদে দোলনায়

দোল খায় উড়ে আসা পাতা।

প্রেমিক সুজন জানে নম্রতার অন্য নাম প্রেম।

লিকার চায়ের কাপে স্মৃতিগুলো বর্নময় মাছ

হয়ে যায়।

গল্পরা জীবনের খোঁজে চিরপদাতিক। শব্দগ্রন্থি

থেকে খসে যায় নিরাকার উপমা, দেবীদহে

লালনের গান গায় বিব্রত সময়।

______________


অতঃপর



অতঃপর ফিরে আসে গৃহত্যাগী হওয়া।

সন্ন্যাসীবর্ণ দিগন্ত পূর্বাশ্রমের মতো বিহ্বল করে

কবির বিরল আসবাব,

দৃষ্টি,অনুভব ও সংবেদী উচ্চারণ।


বহমানকাল কাল্পনিক নদীর মতো শাখা

বিছিয়েছে শাদা পাতায়।

অক্ষর গুণে,উচ্চারণ মেপে,

কবি লিখছেন অন্ধকার জয়ের পংক্তি।


শ্রেষ্ঠরমণীকে নিবেদিত কবিতাগুলির

একটি সংকলন প্রকাশিত হবে আগামী

দেবীপক্ষ, মহালয়ার তর্পণপ্রত্যুষে।


দেবী, শ্রেষ্ঠরমণী ও ঈশ্বরী

অন্তর্লোক আলো করা রমণীর কল্পনাম।

অতঃপর শূন্যকে বৃত্ত ভেবে কবি

অখণ্ড পৃথিবীর কবিতাগুলির

ভূমিকায় লিখলেন,

জ্যোতির্ময় উপলব্ধির স্বীকারোক্তি।

_______________


স্বেচ্ছামৃত্যু


আদ্যন্ত বিচ্ছিন্ন করেছি নিজেকে,

শবানুগমনে মুষ্টিমেয় কজন।

পার্থিব বাতাস দক্ষিণের ঝুলবারান্দা থেকে উড়িয়ে

নিল শুকোতে দেওয়া রুমাল।

খই ছড়িয়ে যারা ঈশ্বরধ্বনি দিচ্ছে তারা কেউ

শোকার্ত নয়।


জীবন খরচ করতে করতে শেষ সম্বল মৃত্যু।

পড়ে আছে অভ্যাসের স্পর্শ পাওয়া পোশাক,

আসবাব আর সম্পর্ক।

পড়ে আছে সাফল্য ও ব্যর্থতার দীর্ঘ তালিকা,

পড়ে আছে আ্যসট্রের গর্ভে সিগাটের ছাই।

সমুদ্র ঢেউয়ের মতো মৃত্যুও একদিন ফিরিয়ে

দেয় মুছে যাওয়া সুখ, হাসি ও লঘু মুহূর্ত।


মৃত আমি কি স্মৃতিভূক পর্ণমোচী গাছ?

নিস্পত্র শরীরে হওয়াবাসর বানাতে চাইছে

অন্তিম ইচ্ছা,

অথচ স্মৃতিফলক ভেঙে চুরমার।

স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষে দাঁড়িয়েও শিশিরের থেকেও

শীতল একবিন্দু জল গড়িয়ে পড়ল

ডান চোখের কোণে।

_______________


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - লিপি সেনগুপ্ত

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614






ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...