Thursday 1 March 2018

ফাগুন বসন্ত e-কোরাস 5

[PLEASE CLICK HERE]
                                                                 
                                                              কেবল কবিতা ভালোবেসে কবিতার জন্য রঙের দিনে কোরাসের ফেসবুক কবি বন্ধুদের মধ্য                                                                        থেকে কয়েকজনের কবিতা নিয়ে ফাগুন বসন্ত সংখ্যা 
                                                                                                                                           দুঃখানন্দ মণ্ডল
                                                                                                                                         সম্পাদক-কোরাস



ধান 
মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায় 

একদিন স্বপ্নের জাল বুনেছি একা একা
অথচ জীবনে যৌবনের বীজ বোনা হয়নি পেলব মাটিতে
ভালোবাসার ফসল ঘরে তুলবো বলেই
কৃষকের সহচর আমিও একজন জন্ম-প্রেমিক।
ক্ষুধার গল্প আছে বলেই অন্নের কথা সবাই বলে
কিন্তু প্রেমের অর্থ কেউ জানে না
অথচ ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির মন্ত্রগুপ্তিও জানতে হয়।
রোদ এখন বড়ো চঞ্চল ও দামাল
ছুরির ডগে দু’পা রেখে হাঁটছে অবলীলায়
সেই রোদ নদী হলে জলের অহংকার
ছুঁয়ে ফেবলে মরা-মাটি খরা-মন আধপোড়া যৌবন
নতুন জীবন ঢেউ তুলে তুলে শিল্প ও শস্যের কাছে পৌঁছাবে ।
এতদিন শুধু বানানো রূপকথাই শুনেছি
এখন মাঠের বুকে ধানের গান শুনবো
মহাপ্রলয়ের পরেও যে ধান প্রাণের শিকড়ে জলের বাঁশি বাজিয়ে
সুর তুলে
আমরা এখন সেই সুরে সুরে শত সুরের ঝরনায়
জীবনের মন্ত্র শুনতে পাই
                --------------------

বারো পঙক্তির অভয়ারণ্য
সুকান্ত সিংহ

কাঠিফাঁদ পেতে রেখে
ডাহুকের চলাফেরা দেখি
কিত্-কিত্ খেলার মাঠে
বিনম্র কত কাঁচ ছড়িয়ে রেখেছি
                    তোমরা জান না...
               -----------------

আমাদের ধুলোবালি সংসার
জয়া গুহ (তিস্তা)

এখানে চাঁদের রাতে অস্পষ্ট দুঃখ খুলে রাখা
যাবতীয় অনুযোগ শেষে একে অন্যের ছায়া পেতে বসি।
উনানে টগবগে ফুটন্ত সজনাডাঁটা-আলু-বড়ি-বেগুনের ঝোল,
নতুন চালের গন্ধে রসের পায়েস সাজানো।
দেবতা রয়েছে বেঁচে এভাবেই কোনো উৎসবে,
উপবাস সেরে ক্লান্ত সরবতের ঢোকে মিটিয়েছি পবিত্র পিপাসা এবার...
যে কথা শিখিনি আজ-ও, সে ভাষায় চাই বলে যেতে
ভালোবাসা,ভালোবেসে বিকিয়েছি চোখে ইঙ্গিতে
যে ঠোঁটে গাঁটছড়া!সিঁথি ভরা নিবেদন আঁকা
অসহায় ভুলে ভাবি,"সে" আমার ঈশ্বর একার।
            ----------------------

এলকোলাহল
বিশ্বজিৎ সাহু

আমার এলকোহল চোখে সমস্তই দৃষ্টিনন্দন ।
ইচ্ছে-ছবি রং চড়ে ক্যানভাসে
মনে জাগে ধূসর পাণ্ডুলিপির মতো সমস্ত
নিটোল সার্থক , হয়তো বা নিশ্চিত জেনে
শারীরিক মনে জেগে ওঠে নিছক পাগলামি
শুভারম্ভ সুর অসুরের মন-শরীরের লড়াই
নিশিযুদ্ধ ...
কিংবা জেগেও জাগরণ বৃথা
অথবা আমার কিছু ছিল অবশেষ ?
অথবা রাত্রি ছিল বাকি !
উপসংহারে নিশ্চিন্ত হই
মন তো কেবল শরীরের নয় , মনেরও !
              -------------------

ঋ-১
অনির্বাণ পাল

কাদের পশমের রুমালে চোখ মুছবো
রাতে র পাতারা রক্তস্নানের গান গায়
মনে হয়ে এই মৃত্যু উঠোনে আমরা হাজার বছর পিছিয়ে গেছি
বাংলাভাষা উচ্চারিত হলে আমরা
খড়ের ঘর নিয়ে ভালবাসতে ভুলে যাচ্ছি
এ এক মরণ ব্যাধি কপালে সেটে দিয়েছে-
    অন্ধ বুড়ো ঈশ্বর...
           --------------------

শিশুদের প্রতি
রিয়া চক্রবর্তী

পৃথিবী আজ রক্তাক্ত...!
জল্লাদ বন্দুকে গেঁথেছে
নিষ্পাপ শিশুদের করোটি,
সাজানো সাদা কাফনে
ঝলসানো পৃথিবীর আগামী -
"আয় আয় চাঁদ মামা টি দিয়ে যা
চাঁদের কপালে চাঁদ টি দিয়ে যা"...
আকাশে জ্বলজ্বল করছে
মৃত্যুর নক্ষত্র
চাঁদের গায়েও লেগেছে
নিষ্পাপ শিশুদের রক্ত।
ধীরে ধীরে মাটির গভীরে
নেমে যাচ্ছে একটি সভ্যতা
সমাধির ওপরে অবহেলায়
ঝলসানো গোলাপের স্তুপ,
রক্ত পিশাচেরা চেটে পুটে খাবে
শিশুদের রক্ত-মাংস-মজ্জা
আর পৃথিবী সকলকে শুনিয়ে যাবে
অর্থহীন প্রলাপ -
"হাঁটি হাঁটি পা পা
খুকু হাঁটে দেখে যা"...
গোলা আর বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধে
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার আজ উত্তপ্ত,
চৌকাঠ পেরলেই কর্কশ হুঙ্কার
স্বর্গের পাঁচিলেও নরকের অভিশাপ
অশনি সংকেত, বারুদের আঘাতে
ঢলে পড়ছে নিষ্পাপ ফুলগুলো
মৃত্যুর বিছানায়।
   ------------

আসামী
শাশ্বতী ভট্টাচার্য

এখানে সকালগুলো ভয় পায়, রাত মেখে থাকে,
এখানে চাঁদটা রোজ ধর্ষিতা হয় - 'বিনিময়' |
সেখানে গলিত লাভা সূর্যের উষ্ণতা ঢাকে,
সেখানে শ্রাবণ এলে নিয়মিত হয় — অভিনয় |
এখানে পারদ চড়ে, এ বসন্ত পুড়ে যায় রোজ
এখানে বারুদ জাগে চোখরাঙানিতে - শুধু নিতে,
সেখানে খবর রটে মৃতের মাংসে মহাভোজ,
সেখানে ধাবিত প্রেম অববাহিকাতে - দেহ দিতে |
এখানে খাবার চাই, পেটের শাসন কে না জানে ?
এখানে বাঘের ঘরে জীবিকার বাসা,ভালোবাসা |
সেখানে জ্যোৎস্না নামে হাড়গিলে চাঁদের সোপানে,
সেখানে গাধাও খেলে শকুনির পাশা — কত আশা |
যে দেশে শিশুর দুধ  কলম, কালির চেয়ে দামি,
সে দেশের কবিতাও অপরাধী, কবিরা আসামী ||
                  ----------------

খাদ্য
নিবেদিতা মজুমদার

শুধু শামুকের মত গুটিয়ে থাকি
মাঝে মাঝে খোলসের ভিতর
জলীয় অন্ধকারের মধ্যে ডুব দিই
চুল ভেজানো স্নান সেরে নেওয়ার অছিলায়
আসলে সারাগায়ে
অজস্র পোকারা কিলবিল করছে
খুটে খাচ্ছে রক্ত মাংসের ঢিপী
আমি আরো গুটিয়ে যাই..
তারপর খাঁচার দরজা খুলে যায়
আমার শামুকজন্ম
তুখোড় বাজের নখের আগায়
আহ্নিক সেরে নেয়!
এ বদরক্ত বড়ই সুস্বাদু
কিছু শিকারির কাছে।
      -------------

বিয়োগ কাহিনী 
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

ঝরণার শব্দ । কান পাতে হরিণ বিকাল
বাঘিনী এসেছে পাশে অন্তঃসত্বা
বন ভেঙে গেলে । হু হু শব্দে
ঢুকে পড়ে রাস্তা , বাড়ি আরো ধ্বনি প্রতিধ্বনি
পাহাড়ও কেটে যায় । কে নেবে কে নেবে বলতেই ভাগ বাঁটোয়ারা
চাঁদ নক্ষত্রের দেশেও ।আকাশের শোক মেঘ বুঝে দিন দিন কালো
এবং মৃত্যুর পরে । কোনো যোগ গুণ ভাগের অংক নেই
বিয়োগ আছে ......
            ----------------------

মাধবীলতার কাছে
সোমনাথ প্রধান

মাধবীলতার চারা পুঁতে
এক বৈশাখে চমকে উঠব ভেবেছিলাম।
শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দুপুর হওয়ার দিকে একটা স্বপ্ন ছিল,
হৃদয়ে একটা পাঁচিল আর দু'পাশে দুটো উত্তর ছিল,
পাঁচিল জুড়ে্ ছিল লাল-সাদা সোহাগের ঢল।
মাধবীলতার চারা পুঁতে ভেবেছিলাম, সে তরুণী হলে
ব্যবধানও নিসর্গ হয়ে যাবে, তার আঁচলের কাছে
সন্ধ্যেবেলাকে বৃষ্টি যখন আদর করবে, আমি কবিতা লিখব।
আজ চমকে ওঠার দিন এসেছে। মিলেমিশে এক হয়ে গেছে দুটো উত্তর !
সে আমায় শিখিয়েছে তীব্র পন্থা,
বারবার একটা অসম্পূর্ণ রঙ
কীভাবে হৃদয় মাতিয়ে দেয়...
কীভাবে শব্দব্রহ্ম আর ম্যাজিকের কোনও তফাত থাকে না !
      -----------------

সহজ
মনিশা চক্রবর্তী

আধপেটা 'বিপ্লব'
আর শূন্য পোশাকের 'দলীয়তা'
যতই মুখ উঁচু করে হাঁটুক না কেন
সহধর্মিনী ঠিক জানে ,নীতিকথার বর্বরতা
তবুও চাবুক গায়ে আগুনের উষ্ণতা
দায়বদ্ধতা তো রাখেই,
আর ফিরে আসা সেই পন্থারা
যখন সেজে বসে -
হাই স্কুলের মুক্ত-বেঞ্চে
সহজ শিক্ষার্থী সাথে
গায়েতে গায়েতে লোপাট হয় ধর্ম ,
অযথা সেই ভ্রান্ত দেশে ...
          --------------

নির্বান
দীপক জানা

স্বপ্ন দেখতে দেখতে আকাশে ইরেজার ঘষে কেউ
আলো থেকে ক্রমশ আলো মুছে গেলে
দ্বীপের ক্ষয় হয়
রঙেদের উত্তরের জিম্মায় রেখে
কি সহজেই আমার রাঙা শার্ট গেরুয়াতে ছাপাই
এর নাম জীবন  - এই কথা লক্ষ বার জপে
নিজেকেই স্বান্তনা দিই
মিছে
মিথ্যের জীবন সাজিয়ে মড়ারা কি স্বপ্ন দেখে
বসন্ত আসে কি ক্ষয়িষ্ণু হাড়ে
আমি আগুন দেখবোনা ভেবেই হোমকুণ্ড, কাঠ, ঘি ছুঁইনি কত কাল
যদিও দাবানল নেভানোর মন্ত্র জানি না মোটেই
তাইতো চাচর প্রস্তুতি দেখে একটু আবিরের তিলক কপালে নিতে সাধ জাগে
         --------------------


সম্পাদক: দুঃখানন্দ মণ্ডল    

সহ-সম্পাদক: শ্রীজিৎ জানা

ঠিকানা: সুরতপুর,দাসপুর,ঘাটাল,পশ্চিম মেদিনীপুর,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত।
যোগাযোগ: ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...