Sunday 28 August 2022

সন্দীপ দত্ত এর গল্প // ই-কোরাস ৭১



বাঘ ও সিংহের গল্প

 সন্দীপ দত্ত


"দাদা,আপনার ছেলে কি আমেরিকায় থাকে?"

পা দুলিয়ে নাক টেনে কথাগুলো বললেন লাটুপ্রসাদ। বললেন যাকে,সেই যুধিষ্ঠির তখন পেটটাকে পাতলা করবার জন‍্য নাগাড়ে বায়ু ছাড়ছেন।

"হ‍্যাঁ। কেন বলুন তো?" শরীরটার কসরত করতে করতে হাত ঝাঁকিয়ে,পা নাড়িয়ে,ঘাড় ঘুরিয়ে কিছুটা দূরে কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বসে যে দুজন যুবক যুবতী মর্নিংওয়াকের নামে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুম্বন করছে,যুধিষ্ঠির সেইদিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন লাটুপ্রসাদকে।

"ছেলে কি ডাক্তার?" জিজ্ঞেস করলেন লাটুপ্রসাদ।

"আশ্চর্য! ছেলে আমার ডাক্তার না ব‍্যারিষ্টার,আপনাকে বলব কেন? কে মশাই আপনি? আপনাকে আমি চিনিনা।" ঝাঁঝিয়ে উঠলেন যুধিষ্টির।

"আসলে শুনলাম বলেই বলছি।"

"কী শুনলেন?"

"ওই আর কী! আপনার ছেলে নাকি অনেক বড় ডাক্তার। এমবিবিএস। মাসে অনেকগুলো টাকা রোজগার করে। কুড়ি লাখের কাছাকাছি।"

"ঠিকই শুনেছেন। কিন্তু আপনি এখানে থাকেন কোথায়? কোনওদিন তো দেখিনি।"

"এতদিন থাকিনি। তবে এবার থাকব।"

"মানে? কোথায় থাকবেন?"

"কেন, আপনাদের পাড়ায়!"

"মশাই,আপনি কিন্তু বুকে কফ নিয়ে কথা বলছেন। একটু ঝেড়ে কাশুন তো! শরীর ঠিক আছে? হাঁটবেন একটু? চলুন হাঁটি।"

"বলছেন? ঠিক আছে চলুন।"

 হাঁটতে শুরু করলেন লাটুপ্রসাদ আর যুধিষ্ঠির। হাঁটতে হাঁটতে যুধিষ্ঠির বললেন,"এবার কাশুন।"

"কাশব মানে? আমার তো কাশি আসছে না! বুকে এতটুকুও কফ নেই।"

"আরে মশাই,বলছি যে এবার বলুন আপনার নাম কী? কী করেন? কোথায় থাকতেন এতদিন?"

"তাই বলুন! আমি ভাবছি...। দাদা, আমার নাম লাটুপ্রসাদ সিংহ। এতদিন থাকতাম হুগলিতে। কাল মাঝরাত্তিরে কলকাতায় এসেছি।"

"হঠাৎ মাঝরাত্তিরে কেন? দেখুন মশাই,আপনি সুবিধের লোক তো? তানাহলে আপনার সাথে কথা বলতে গিয়ে আমি কোনও বিপদে পড়ি আর কি!"

"না,না, তেমন কিছু নয়। আমি ছাপোষা সাধারণ একজন মানুষ। বউ ছেলে নিয়ে থাকি। শান্তিপ্রিয়। সংসারী। এতদিন জমির দালালি করে খেতাম। ছেলে বলল,'ওসব তোমায় আর করতে হবে না বাবা।জীবনে আমি যা রোজগার করব, তুমি আরামে থাকবে।' আসলে কলকাতায় ঢুকতাম আমরা কাল দুপুরেই। কিন্তু কপালের ফের থাকলে যা হয়! মাঝরাস্তায় মালবাহী ট্রাকটা হঠাৎ বিগড়ে গেল। ঠিক আর কিছুতেই হয় না। দুপুর পার হয়ে বিকেল নেমে গেল, বিকেল ডুবে সন্ধে। শেষে অনেক কষ্টে এলাম যখন এখানে, ঘড়িতে তখন রাত দেড়টা।"

"এখানে বুঝি নতুন বাড়ি কিনলেন?"

"হ‍্যাঁ। ওখানকার জমিজমা,বাড়ি সব বিক্রি করে এলাম এখানে। ছোট থেকেই আমার ছেলে স্বপ্ন দেখত, সে কলকাতায় থাকবে। আপনার ছেলে যেমন আমেরিকার স্বপ্ন দেখেছে।"

"আপনার ছেলে কি বড় কোনও চাকরি বাকরি...। মাসে কত লাখ পায়?"

"না দাদা,আমার ছেলে চাকরি করে না। তবে বড় একটা মুদিখানা করবার স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছে।"

"অ‍্যাঁ! বলেন কী? মানে পাতি?"

"পাতি মানে?"

"আরে মশাই,পাতি মানে সাধারণ এটুকুও জানেন না? না,না, আপনার সাথে আমার স্ট্যাটাস মিলবে না। আপনি একা হাঁটুন।"

"সেনাহয় হাঁটছি। কিন্তু আপনার নামটা তো জানা হল না?"

"আমি যুধিষ্ঠির বাঘ। বাগ নয় মশাই,বাঘ। পদবীটা আমার এমনই। একসময় দমকল বিভাগের আধিকারিক পদে ছিলাম।"

"সে আপনি যে-ই হন, আপনি দাদা ডাক্তারের অর্থই জানেন না।"

"মানে? আপনি আমাকে অপমান করছেন? জানেন, এখনও আমার কত ক্ষমতা?"

"তাহলে বলুন? ডাক্তারের অর্থটা বলুন আমায়?"

"ডাক্তার মানে তো চিকিৎসক। যারা চিকিৎসা পরিষেবা দেয়। এটা একটা সমাজসেবা। মরণাপন্ন মানুষের প্রাণ বাঁচানোটা চাট্টিখানি কথা নয় মশাই। লোকে ডাক্তারকে ভগবান বলে। এমনি এমনি কি বলে?"

"মানুষের প্রাণরক্ষাটা বুঝি চাট্টিখানি কথা যুধিষ্ঠিরবাবু? আপনার ছেলে দু'হাত ভর্তি টাকাগুলো নিয়ে কী করবে, যদি না দোকানদানি থাকে? সমাজে যে যতই বড়লোক হোক না কেন, দিনের শেষে তাকে মুদিখানাতেই আসতে হয়। ডাক্তার যদি ভগবান হয়, দোকানদার হবে না কেন? শোনেননি 'প্রাণ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনিই'? আসলে আপনারা যারা টাকার গরম দেখান, তাঁরা স্বীকার করতেই চান না, সমাজটা সবাইকে নিয়েই। কেউ কোনও অংশে কম নয়। আমাদের প্রত‍্যেকেরই একে অপরের দরকার। কেই পাতি নয়। সবাই নিজের নিজের কাজে দক্ষ। সবাই ভগবানের অংশ। আর খানিকক্ষণ আগে আপনি বলছিলেন না, আপনার সাথে আমার স্ট‍্যাটাস মিলবে না? কথাটা তো আমিও আপনাকে বলতে পারি।"

"আরে দূর মশাই, যান তো এখান থেকে! আপনি আমার প্রতিবেশী হতেই পারেন না। শুধুমাত্র পাড়ার লোক হয়েই থাকবেন। আপদ একটা!"

"আপনিও।" 

                          ............................


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614

Saturday 20 August 2022

মৌপর্ণা মুখোপাধ্যায় এর কবিতা // ই-কোরাস ৭০

 


মৌপর্ণা মুখোপাধ্যায় এর কবিতা

রঙ


চিবুকে শান্তিনিকেতনের দোল।

অচিনপাখি ডানা মিললে 

পালক সেজে ওঠে।

রোমকূপে গিঁট পড়ে,

বারান্দায় ওড়ে রঙিন কাপড়।

 আলপথে যেতে যেতে

গান ধরে বাউল

মন তখন উজান ভাটায়,

কচি ধানের শিষে।

  আবির ছড়িয়ে পড়ে ঝোলা থেকে

দোল মন্দিরে।

আকাশের গায়ে তখন

বসন্ত উৎসব।

...................


পাণ্ডুলিপির কঙ্কাল

 

শেষ মুহূর্তের কিছু আগে

বৃষ্টি নামলো।

পাণ্ডুলিপির পাতায় জল।

ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে

মিশে গেল অক্ষর পাখিরা।

দিন কয়েক পর

চারপাশ জুড়ে মিছিল

শাল মহুয়ার গা থেকে

গড়িয়ে পড়ছে জল,

শরীরে নোনা দাগ।

জঙ্গলের বুড়ো,বুড়ি,মেয়ে ,পুরুষ আর 

বাচ্চারা ঘরের ভেতর।

অশান্তি এখন গাছে গাছে,পশু পাখিতে।

ওরা সবাই চলে যাবে একদিন

থেকে যাবে পাণ্ডুলিপির কঙ্কাল।

............................


হিম ঢাকা শরীর


পর্বতের বুক চিরে বেরোতে চায় নদী।

হিমবাহ গলে যায়,

হিম হয় শরীর।

কুমেরু প্রশ্বাস নেয়,

শিরায় শিরায় মহাকর্ষ টান,

তবুও চোখের দৃষ্টি অর্জুনের লক্ষ্যভেদে।

মুখ চায় বোবা হতে,

তবুও উড়তে থাকে

মাথার ওপর শপথ পতাকা

এভারেস্ট , হিম ঢাকা শরীর।

..........................



শঙ্খচিল


 শঙ্খচিল আর এগিয়ো না,

বেশি গেলে উন্মুক্ত পাখা দুটো

মা হারা হবে।

 তুমি ফিরে এসো

গ্রামের জলায় স্নান করো

রাজহংসী সাথে।

 একটু ভরসা রাখো মাটির ওপর

গন্ধ গায়ে মাখো তার

শীর্ষদেশ ছুঁয়ে।

শঙ্খচিল নিয়ে চলো আমায়

যেখানে আকাশ মাটির চুম্বনে

গড়বো ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান।

......................


জাল


যখন কুয়াশাও বোনে জাল

কৃষ্ণের বাঁশির সুরে

ঘনীভূত রহস্য।

মেয়েটা উন্মত্ত হয়ে ছোটে

লকলকিয়ে ওঠে সর্পিল জিহ্বারা ।

আবছা আলোয় সবই অস্পষ্ট,

অনুরণন খোঁজে একটু জল

মাকড়সার দল তবু জালই বুনে চলে

...........................


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614










Saturday 13 August 2022

সন্দীপ দত্ত এর গল্প // ই-কোরাস ৬৯

 



সন্দীপ দত্ত এর গল্প

কপাল

আনাজের ব‍্যাগটা তখনও ঠিকঠাক ভর্তি হয়নি যাদবের। স্ত্রী ললিতার পইপই করে কান কামড়ে বলে দেওয়া কাঁচা কুমড়ো নেওয়া হয়নি। নিজের পছন্দের ঘিয়ে মৌরলা নেওয়াটাও বাকি। হঠাৎ ভরা বাজারের মাঝখানে নীলকান্তবাবুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।

নীলকান্তবাবু মানেই  পরিপাটি করে আঁচড়ানো কলপ লাগানো চুল,চেহারায় অদ্ভুত এক দ‍্যুতি আর পাটভাঙা পোশাক। এতদিন এমনটাই দেখে এসেছেন যাদব। এতদিন মানে গত আট বছর। আজ সেই মানুষটিকে দেখে প্রথমে চিনতেই পারলেন না তিনি। চুলে কলপের কালো রঙ আছে ঠিকই,তবে বড়ই অবিন‍্যস্ত। শরীর জুড়ে চিন্তার ছাপ। পরনের পোশাকও পাটভাঙা নয়,খানিক ময়লাটে। শত ভাঁজ পরা।

"কী ব‍্যাপার নীলকান্তবাবু,আপনাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন? শথীর টরীর ঠিক আছে তো?" জিজ্ঞেস করলেন যাদব।

"হ‍্যাঁ দাদা,শরীর ঠিক আছে। আসলে......"

"কী হয়েছে নীলকান্তবাবু?"

"আচ্ছা যাদবদা,আপনি অ‍্যাস্ট্রোলজিতে বিশ্বাস করেন? ঐ যারা হাত টাত দেখে? কপালে আতস কাচ ধরে ভাগ‍্য বলে দেয়?"

"না। সে তো আপনিও করেন না। কেন বলুন তো?"

"হ‍্যাঁ,এতদিন করতাম না। আসলে হয়েছে কি........-বলতে বলতে আবার থমকে গেলেন নীলকান্ত।

"কী হয়েছে বলবেন তো!"

"না মানে,গত সোমবার এই ধরুন সকাল সাড়ে দশটা এগারোটার দিকে একটা জরুরি কাজে মার্কেটের দিকে যাচ্ছি,হঠাৎ একজন মধ‍্যবয়েসি লোক,কপালে যার এত্তোখানি সিঁদুর আর গলায় রুদ্রাক্ষের মালা,এসে আমার পথ আটকে দাঁড়াল। বলল,আর দু'চারদিনের মধ‍্যেই আমার নাকি শনির দশা শুরু হবে। ঐ যে শনির সাড়ে সাতি না কী যেন বলে না,ওইটা। এখন সাড়ে সাত বছর ধরে আমার খারাপ সময় যাবে।আর্থিক ক্ষতি হতে পারে,দুর্ঘটনায় পড়তে পারি,আরও অনেক কিছু।"

"বলেন কী মশাই! এ তো ভারি মুশকিল! সাড়ে সাত বছর!"

"হ‍্যাঁ যাদবদা। ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। রাত্রে ঘুম হচ্ছে না। সারাক্ষণ খালি টেনশন।"

"লোকটা রেমিডি নিয়ে কিছু বলেনি? না,মানে সমস‍্যা থাকলে তার তো সমাধানও থাকে। তেমন কিছু.......।এই যেমন ধরুন,অমুক যজ্ঞ করলে ফাঁড়া কেটে যাবে। কিংবা ঘরোয়া কোনও টোটকা..........। কিছুই কি বলল না নীলকান্তবাবু?"

"হ‍্যাঁ,বলল উপায় একটা আছে। যদি ওটা মেনে চলি,কপালের ফের কেটে যাবে।"

"কী সেটা?"

"আমাদের এই সাড়ে সাত বছরের জন‍্য স্থান পরিবর্তন করতে হবে। দূরে কোথাও চলে যেতে হবে আমাদের।"

"সেকি! আর আমাদের  মানে? বাড়ির সবাইকে?"

"হ‍্যাঁ দাদা। লোকটা বলল,আমার কপাল মানেই বাড়ির সকলের কপাল। বউ,ছেলে,নাতি নিয়ে সংসার করি দাদা। ঝুঁকি কি নেওয়া যায়?"

"সবাই যাবেন? তাহলে বাড়িটা?"

"সাড়ে সাত বছর সময়টা তো কম নয় যাদবদা। এতগুলো বছর বাড়িটা তালাবন্দি করে রাখলে শেষে যদি ভূতের বাড়ি হয়ে যায়! তাই ভাবছি বাড়িটা বিক্রি করে দেব।"

"বাড়ি বিক্রি করে দেবেন!"

"তাছাড়া আর উপায় কী?"

"তা কোথায় যাবেন নীলকান্তবাবু? পাহাড়ে,না সমুদ্র? না মানে,কোথায় গেলে শনির প্রকোপ থেকে বাঁচবেন?"

"বুঝতে পারছি না দাদা। একদম বুঝতে পারছি না। দেখি।"

নীলকান্তবাবুর কথা শুনে গম্ভীর হলেন যাদব।

বাকি বাজারটা ঐ গাম্ভীর্য নিয়েই করতে হল যাদবকে। তবে খুব কষ্টে। কোনওরকমে বাড়ি ফিরে বাজারের ব‍্যাগটা স্ত্রীর হাতে দিয়েছেন কি দেননি,নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে হাসিতে ফেটে পড়লেন যাদব। হাসতে হাসতেই ললিতাকে বললেন,"এবার নীলকান্তবাবুও অভিনয় শুরু করেছেন গিন্নী। আর পালাবার পথ নেই। একেই

 বলে,কপালের নাম গোপাল।"

"আশ্চর্য! তুমি এত হাসছ কেন? আর আগডুম বাগডুম কী সব বকছ?" ললিতা বললেন।

"না গিন্নী,জামাই রোহিত আমাদের ঠিক তথ‍্যই দিয়েছে। অবশ‍্য ওর খবর যে সত‍্যি হবে,আমি জানতাম। বিডিও সাহেব বলে কথা। দিন কয়েক আগে ওর মুখেই শুনেছিলাম,রাজ‍্যজুড়ে অবৈধ শিক্ষকদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। যারা কোনও পরীক্ষায় না বসে শুধুমাত্র লাখ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি পেয়ে বছরের পর বছর বেতন নিয়েছে,কোর্ট রায় দিয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এবং শুধু চাকরিই তাদের যাবে না,ফিরিয়ে দিতে হবে এত বছর ধরে নেওয়া বেতনের পুরো টাকাটাও। রাজ‍্যের বিভিন্ন জায়গাতেই  এখন এইসব অজুহাতগুলোকে সম্বল করছে মানুষ। হয় গ্রহগত কারণ দেখিয়ে বিক্রি করছে বাড়ি,নয়তো কোনও ডাক্তারের পরামর্শকে কাজে লাগিয়ে বিক্রি করছে। যারা ওভাবে চাকরি পেয়েছে,তাদের বুক এখন কাঁপবে। প্ল‍্যান করে বাড়ি বিক্রি করে আগেভাগে তাই রেডি হয়ে থাকা। আর বাড়ি বিক্রি ছাড়া তো উপায়ও নেই। এতগুলো মাসের বেতন........। তিরিশ পঁয়ত্রিশ লাখ তো হবেই।"

"তুমি জানলে কী করে নীলকান্তবাবুর ছেলে পীযুষ টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছে?"

"তানাহলে হঠাৎ করে বাড়ি বিক্রি করতে যাবে কেন? অমন সুন্দর রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি।"

"ছিঃ! কী কেলেঙ্কারি বলো তো!" এবার মুচকি হাসলেন ললিতাও।

"সব চাইতে কষ্ট লাগছে এই সমাজটাকে দেখে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো এইসব দেখেশুনে কী শিখবে? শিক্ষকতার পেশাটাকে আর সম্মান করতে পারবে তারা?"

কথাগুলো বলতে বলতে স্নানে গেলেন যাদব। দশটার মধ‍্যে দোকানে যেতে হবে তাঁকে। কর্মচারি ছেলেটা আজ আসবে না। তার বোনের বিয়ে।

ঠোঁটে হাসির দাগ নিয়ে আয়েশ করে বাজার থেকে আনা কাঁচা কুমড়ো কাটতে বসলেন ললিতা।

...................


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614







Sunday 7 August 2022

মৌপর্ণা মুখোপাধ্যায় এর কবিতা // ই-কোরাস ৬৮

 




মৌপর্ণা মুখোপাধ্যায় এর কবিতা


জলঋণ


বুকে জল জমলে

শব্দগুলো ভেসে ওঠে।

বিন্যাসরীতি সুগঠিত হলে 

জলরঙ তৈরী হয়।

সেই রঙে ছবি আঁকি,

জলের দাগে বেড়ে যায় ঋণ।

ফোঁটা ফোঁটা জল কখনো

বৃষ্টি হয়ে ঝরে।

ডোরা কাটা জল দাগ

মনের ভেতর বাঘচোখ তৈরি করে।

—--------------



আবহমান


পাহাড়ের বুক ফোটে।

হিমবাহ গলে যায়।

বিশুদ্ধ শীতল বাঁকে

ঠান্ডা কথাগুলো শুয়ে থাকে।

পাশে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিটি

হঠাৎ করে জেগে উঠলে

আগুন কেঁদে ওঠে

একরাশ অভিমান নিয়ে।

তারপর হিমাগ্নি নদীতে নদীতে স্নান সারে

চমরী গাই এর দল।


জমে ওঠা, গলে যাওয়ার মাঝে

যে ব্যাবধায়ক

তার ওপরেই আমাদের ঘরবাড়ি,বাগান,

ধানজমিটির অবস্থান।

—-------------------



অস্থির সময়



দিনগুলো বড় ক্লান্ত।

বৃক্ষ ছায়াতলে বিশ্রামরত,

নির্মল আকাশে মেঘের মলাট।

বিকেলের দীর্ঘ ছায়াটি 

ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে,

অন্ধকারের বুকে বিলীন হয়।

পথঘাট খুব স্যাঁতস্যাঁতে,

কাদাকাদা জলে মিশে আছে

অসন্তোষের ঢেলা।

গুমোট পরিবেশে শ্বাস ভারী হয়ে আসে।

ছুটে যাই মায়ের কাছে

আঁচল নিঙড়ানো জলে

ধুয়ে নিই চোখ মুখ।

—------------------


এক গল্প



এসো, আগুনের গল্প বলি।

সহস্র কাঠ পিঁপড়ের ঝাঁক

ওই কাঠের কলমটা

নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল।

তুমি ইটগুঁড়ি রং দিয়ে

ক্ষতের ওপর প্রলেপ লাগিয়েছিলে।


আজ কলমটা আরোও শক্ত।

কাঁচামাটি পুড়ে গেলে

অন্তকঙ্কালের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

—------------------



তাপন



অনেকদিন পর 

জ্বর এলেও ভালো লাগে।

কপালের তাপ শুষে নেয়

তোমার করতল।

আঙুলের মধ্যিখানে জড়িয়ে জড়িয়ে থাকি,

লতানো গুল্মটির মতো।

প্রখর বিষণ্ণ দিনে

তুমি হয়ে ওঠো

বিশল্যকরণী কিংবা;

অন্য ঔষধি বৃক্ষ।

কুঁড়েঘরের চাল ফুঁড়ে

দেখা দেয় নিটোল হাসিমুখ।

যত্নে রাখা উনানশাল, কুড়িয়ে আনা জালন

একটা দিন সব অগোছালো করে দেয়,

তারই মাঝে বয়ে চলে অবিন্যস্ত সুখ।

—-------------------



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - সুকান্ত সিংহ

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614



ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...