Saturday 30 July 2022

তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা // ই-কোরাস ৬৭

 



তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা    


রাজগৃহে বর্ষা


বর্ষা নেই  বর্ষা নেই  বর্ষা নেই

কে করেছে পাপ?

কবে বৃষ্টিতে ভিজবেন তথাগত?

রাজগৃহে বেনুবনে শুধুই উত্তাপ।

শিষ‍্যরা ক্লান্ত, ধ‍্যানের সময় পার হয়ে যায়!

তথাগতর জীভ জড়িয়ে যাচ্ছিল, বললেন প্রার্থনা করো, অন্তরাত্মায় অবগাহন করো, ভীত হয়ো না।


সৃর্যরশ্মি লেগে আছে পাখির ডানায়, তথাগতর ঠোঁটে।

নিরঞ্জনা নদী থেকে সুজাতার মত কেউ না কেউ  আসছে পায়েসান্ন রান্না করে। শান্ত হও, ঈশানে মেঘ জমেছে, বর্ষা নামলো বলে।

……………………



চেতনার ভিড়ে


স্মৃতি সততই সুখের এ কথা বলতে পারব না। বিস্মৃতির আঁধার  নিত‍্যসঙ্গী ছিল।


দিকভ্রান্ত পথিকের মত পথ হারিয়েছি বার বার, স্মরনীয় সুখ একবিন্দু বৃষ্টি মাত্র,  মরুভূমির উষ্ণ বালুতে পড়ে বাষ্প হয়ে উড়ে গেছল। 


শুধু তীব্র দাবদাহ, মায়াহীন বালুতট, শুধুই সাপের ছোবল, কে কার আত্মীয় কে কার ভালোবাসার জন বুঝতে বুঝতে  কতদিন চলে গেল!


এই অবেলায়  আর অগ্নিদাহ নেই , শুধু কিছু সাবধানবানী তর্কহীন সর্তকতা দিয়ে গেছে।


 এই সেদিন তুমি এলে চেতনার ভিড়ে, একা একা এলে 


দিন যায়, রাত যায়,কোন অতীত নয়, সোহাগী নক্ষত্রের পাহারায়।

……………………......


অক্ষর-প্রতিমা


নিজের মুখোমুখি  দাঁড়াতে নিজেকে বদলাতে হয়  


যতই প্রজ্বল বাসনা চিতার মত জ্বলুক,  অবিরাম খেলা হলে পতন অনিবার্য


হয়তো প্রত‍্যাখান বেশি ছিল , মোহাছন্ন আকাশ অন্ধকার ছিল, তবু  তারাদের কিছু কথা থেকে যায় 


নদী কখনো বন‍্য, কখনো ঝিরঝিরে জল, খন্ড খন্ড অথচ সংযুক্তা 


যে প্রকৃত প্রেমিকা সে পাহাড়ী নদীর মত খরস্রোতা, শালের মঞ্জরী-মাখা অপ্সরী, ঠিক রমণ-বিলাসী নয়, সহজাতা, কবির অক্ষর - প্রেমিকা

………………….........



ঘর-সংসার


একরাতে মহুয়া পান করে আমি মাতাল নই  ঈশ্বর হয়ে যাই, নক্ষত্রের ভালোবাসায় এক দলছুট হরিণীর সাথে রাত কাটাই


কুসুমের মত ভোরের হলুদ আলো গায়ে পড়লে আমি ভুবনডাঙার মাঠে ঘুরে বেড়াই, সাদা বক উড়ছে আকাশে, দুঃখ ছিল দুঃখবিলাস  


অগ্নিদাহ নেই, রাত ছিল স্মরনীয়, যে নারী  সামাজিক গন্ডি পেরিয়ে এসেছিল, তাকে পেতে মন চায়, তার সাথে আবার  রাত  কাটাতে চাই 


একটা মনের মত ঘর-সংসার চাই 

…………………........


ভ্রুণ 


তোমার নীলাভ অন্তঃপুরে পদ্ম ফুটে যখন  তখন তোমার কাছে যাওয়ার জন‍্য আমি কবিত্বও  প্রত‍্যাখান করতে পারি 


জীবনের সারৎসার জানা আছে, অরণ‍্যসংকুল গিরিপথ পেরিয়ে এক মহাকাল শুয়ে থাকে আকাশের নীচে 


আমি ক্ষুদ্র মানুষ, স্বার্থপুষ্ট , প্রেমে দুষ্ট ; ভালোবেসে ভালোবাসার  নারীর গর্ভে স্থাপিত করি ভ্রুণ, কবিতা অরণ‍্যের দাবদাহের মত জ্বলতে থাকে 


ভ্রুন যখন লাব ডুপ শব্দ করে, কবিতা আর চিতাকাঠে জ্বলতে চায় না, আবার কবিতা লেখা হয়,  কবি নাচেন  প্রবল উল্লাসে 

……………………......


অন্ধকারে যেও না


যেখানে শুধু অন্ধকার সে জগতে পা রেখো না তুমি, কৃষ্ণগহ্বর ভালো নয়,  লালসার রাজ‍্যে তুমি মহারানি হতে  চেয়ো না 


উজ্জ্বল আলো আনতে পারিনি, ব‍্যর্থতা নিত‍্যসঙ্গী, প্রিয় বর্ষাকালে বৃষ্টি দিতে পারিনি তোমায় , তুমি জানো,  অসাধারন আবেগ আমাকে ধীমান হতে দেয়নি কোনদিন


অক্ষরের ভালোবাসায় এতদিন বাঁধা ছিল মন, শরীর সচল ছিল, তবু ধূসর কুয়াশা পেরুতে পারিনি  এবং এও অসত‍্য নয়  আমার শিরায় শিরায় ছিল ভালোবাসার উদ্ভিদ- নির্ষাস


যেখানে  অন্ধকার, শুধু মাংসলোভী হায়নার দল, সেখানে যেওনা বিধুমুখি

…………………........




চাঁদের কলঙ্ক


জটিল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি, ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে যে আলো আসে তাও ফেরাতে পারে না আমাকে 


মধ‍্যবয়সী নারীরা ধীরে ধীরে হাঁটে , এপাশ ওপাশ চায়, কেউ  কি দেখছে তাকে? অকারনে চোখ জলে ভিজে যায়, সে কোন নূতন পুরুষ  শুধু তাকেই চায়!


শোকের পোষাক পরা দিকচক্রবাল  কুয়াশায় ঢাকা


অনাবিষ্কৃত নদী ডাকে, প্রবল স্রোতে নৌকা ওলট-পালট খায়, এ ওর হাত ধরে 


কবিদের চোখে পূর্নিমা চাঁদের কলঙ্ক শিল্প হয়ে ধরা দেয়

……………………



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614








Sunday 24 July 2022

তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা // ই-কোরাস ৬৬

 



তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা    


মায়া চাঁদ আকাশে উঠলে


মায়া চাঁদ আকাশে উঠলে

তোর সাথে আবার কিভাবে কথা শুরু করি বল? 

দেশান্তরী হব বলেও হোস নি। অপেক্ষায় আছিস?

সব সুখ উদ্দামতা তোকে ঘিরেই ছিল

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরাজয় মেনে নিতাম হাসিমুখে 


প্রতিদিন খোঁজতাম অনাবিষ্কৃত নদী

মুছে দিতি সব আড়ষ্ঠতা

আনন্দঘন সময়ে সকল কাহিনী শিল্প উজাড় করা 


তারপর কতদিন কত রাত চলে গেল

হঠাৎ সাইক্লোন হল, আমাদের নির্বাক কুটিয়ে

বেদনাচিহ্ন এঁকে দিয়ে গেল রাতের ঈশ্বর 


ভূমিকম্পের স্মৃতি কি করে ভুলি বল? 

মায়াচাঁদ তোকে কাছে নিয়ে এলে  তোর সাথে কি কথা বলে শুরু করি আবার, বল, তুইই বল 

……………….......


প্রিয়তমাষসু



ভয় হয়, আতঙ্ক হয়, তবু তোমার কাছে যাবার জন‍্য কেটে ফেলি ট্রেনের টিকিট

অপরাহ্নবেলায় মন খারাপ, খেলতে মানা, তবু স্মৃতিগুলি পাখির ডানায় রোদ্দুর পড়ে বহুবর্ণা 

সব কিছু মেঘে ঢেকে যাবার আগে তোমার সাথে দেখা হওয়া  ভীষণ জরুরি ঊশ্রী নদীর বাঁকে 

সব ছাড়তে পারিনি,

সংসার সন্তানসহ সৌজন‍্যের খেলা চলে চলতেই থাকে 

 একমাত্র  মায়াবনবিহারিনীহরিনী জানে 

এ তৃণভূমিতে কী ভীষণ একা  আমি 


আষাঢ় শুরু হল কালিদাস লিখতে শুরু করেছেন মেঘদূত-কাব‍্য 

প্রিয়তমাসু রেলগাড়ি ঝমঝমিয়ে পেরিয়ে গেল  তোমার বাড়ির পাশের স্টেশন 


দরজা খোলা রেখো 

……………….......


বহুগামী 


নতুন বইএর প্রচ্ছদে তোমার মুখটি আঁকব

বহুমাত্রিক জীবনে তুমিও আছো প্রিয়তমাসু।


একমুখি প্রেম সোনার পাথরবাটি। কে নয় বহুগামী?

ভয়ংকর বজ্রপাতের শব্দ বিদ‍্যুতের আলো দিয়ে হারিয়ে যায়। বৃষ্টি পড়ে ঝম্ ঝম্।  তারপরে রোদ, তারপরে মেঘ। এরকমই হয়।


চিতাবাঘ টহল দিচ্ছে আমাদের এলাকা। আমাদের সবার মাঝে অনেক বৈরিতা।  কেউ তপস‍্যায় মগ্ন, কেউ  তীর্থে যেতে চায়।  কেউ  প্রেমে উন্মাদ, কেউ  উন্মাদিনী।


একদিন জ‍্যোৎস্নারাতে মহাকাব‍্যিক রমণীরা পুরুষের সংযমহীনতা ক্ষমা করে দেয়। কারন সব সুন্দরীই জানে শুধু পুরুষ নয় নারীরাও বহুগামী।

………………........


দ্রোহকাল পেরিয়ে 


অপমানে উপেক্ষায় বার বার ধুলোয় মিশেছি, নাগাঢ়ে আঁধার। তখনো তোমার সহাস‍্য মুখ পাতাল থেকে ঝর্ণা এনেছে।


পাথরের খাঁজে খাঁজে কলকল শব্দে জল বহে গেলে আমি ধুলিমাখা গায়ে উঠে দাঁড়িয়েছি স্নান করব বলে।


পরীরা যেমন পাখির ডানা লাগিয়ে মর্তে আসে তেমনই এসেছো তুমি  আলো নিয়ে অন্ধকার রাত্তিরে।


আমার জানা নেই কেন এসব ঘটে যায়, এই অসময়ে কেন ঘাসের উপর শিশিরবিন্দু এত  উজ্জ্বল দেখায়,

 কেন আমাদের ফুটো চাল দিয়ে চাঁদের আলো এসে  

ভরিয়ে দেয় বিছানা বালিশ!


কি জানি হয়তো সব দ্রোহকালে অপমান উপেক্ষার জবাবে  একটি  ভালোবাসার কাহিনি লেখা হতে থাকে আবহমান পৃথিবীতে।

………………......


বর্ষা



আমাদের ছোট শহরের উপর দিয়ে যখন মেঘ উড়ে যায়  আমি সোঁদামাটির গন্ধ পাই 


বর্ষার হাত ধরে অতল জলের মেয়েরা আসে, তাদের পায়ে নূপুর, তারা বিচিত্র রঙে ভরা 


শহরের ছোট নদীতে নৌকা তরতর ভেসে যায়,

শুধু কিছু ঘাটে  ঘোলাজলে  স্নান করে  বর্ষাসুন্দরীরা 


ব‍্যাঙ আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক একটি সুর খুঁজে আনে, কদম্ববনের ছায়া পড়ে পুকুরের জলে 


আমি গুহা থেকে বেরিয়ে আসি, এপথে সেপথে যাই, বৃষ্টি ভিজি, মেঘভাঙারোদে অমলতাসের নীচে হলুদআলো গায়ে মাখা তোমাকে দেখি বিস্ময়ে 


বর্ষায় মৌসুমী বায়ূর মত প্রেম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে, 

আমি খুঁজে পাই আমার উপহার, আমার বর্ষালক্ষীকে

………………….....


 বিদূষী প্রেমিকা


সারারাত তোমার কাছে ভিক্ষা চেয়েছি উত্তাপ

তবু তুমি নির্মোহ ছিলে, কেন বলো সংগৃহীত শস‍্যে রক্ত লাগিয়ে দিলে?


জীবন বহুমাত্রিক, কিছু অবহেলা হয়তো বা ছিল, হয়তো সব লেখা কবিতা তোমাকে শোনানো হয়নি, শেষ বইএর প্রচ্ছদে অন‍্য নারীর মুখ এঁকেছিলাম।


তবু মেঘলাদিনে যখন একা হয়ে যায় মন, প্রবাহের অনুকুলে তোমার কাছেই ফিরি, তুমি জানো তোমার সাহচর্য কতটা প্রয়োজন।


হেরে যাওয়া মানুষেরাই  ঘরে ফিরে আসে।


 মেঘ জানে, বৃষ্টি জানে, ভবিষ্যত পৃথিবী জানে গার্হস্থ‍্য জীবনে  নির্মোহ না হয়ে,রোগীর পাশে যেমন থাকে স্নিগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে একটি সেবিকা, তেমনই প্রয়োজন  মাঝরাতে জ‍্যোস্নাভেজা  বিছানায়  এক বিদূষী প্রেমিকা।

……………………...



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614






Sunday 17 July 2022

তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা // ই-কোরাস ৬৫

 



তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা    


একাকিনী


আমার আচরন ক্ষমা ক'রো, ভালো থেকো

আমি জানি পুরুষের ব‍্যর্থতা সবচেয়ে কষ্ট দেয় তাকেই 

বিষণ্ণতা জমে জমে পাথরের শিলা হয় মহাকালে


কত কথা ছবির মত ভাসে 

তোমার গা ঘেঁসে বসে ফুল-ফোঁটা দেখেছিলাম

ওষ্ঠ এঁটো করে দিলেও কিছুই বলতে না,

পূব আকাশে চাঁদ উঠত গভীর বিস্ময়ে 


আজ তপ্ত অভিমানে সাত সকালে অনেক কথা বলেছি তোমায়, ক্ষমা ক'রো,  তোমার প্রীতি ও ভালোবাসা আমার অজানা নয় 


 এখন একাকী ঘরে শুয়ে আকাশ দেখি,

দেখি বৃক্ষছায়া, বন, ট্রেনের হুইশেল শুনি, কান্না পায়,

কাকে বিশ্বাস করবো বলো, আমার জীবন নয় মধুবৃন্দাবন!

……………........


গীতবিতানের গান 


দ্বন্দ্বের ভেতরে দ্বন্দ্ব, আরো দ্বন্দ্ব,

অনেক বিস্তার তার শাখাপ্রশাখায়

ভালোবাসা ছিল, এখন কি সরে সরে যায়?


কঙ্কালের অমোঘ হাত স্পর্শ করে আছি , বড্ড একাকী,

তবু মাংস-লোভ গেল না আমার,

দিনদুপুরে মন চিলেকোঠার ঠিকানা চায় 


বিকেল যখন সন্ধ‍্যার কোলে ঢলে পড়ে 

আমার ভীষণ মন খারাপ হয়, কতটা সত‍্য আমার তোমার জীবন, ডিম্বাকার পৃথিবীর, শুধু দিকচক্ররেখা দেখা যায় 


এতদিন সব প্রত‍্যাখান সহ‍্য করেছি,

সমুদ্রগভীরে প্রবাল খুঁজেছি ,

দ্বন্দ্বের ভেতরে দ্বন্দ্ব পেরুতে গেলে,

সন্ধ‍্যাবেলা গীতবিতান নিয়ে বসার আগে,

জ‍্যোৎস্নারাতে খালি গলায় তোমার একটি দু'টি গান শুলতে চাই 

………………….......


আবার যদি দেখা হয়


অনেক অনেক বছর পরে আবার যদি দেখা হয় তুমি কি নীরব অভিমানে এমন করেই ওষ্ঠ ছোঁওয়াবে চায়ের কাপে? এমন করেই কান্না চেপে থাকবে?


আমারো তো অভিমান আছে। হাতে হাত রাখার আগে মেপে নিই সরোবরের গভীরতা।-- -- চিরকাল শরীরমুখি, অনিকেত প্রেম খোঁজে বালিশের অভ‍্যাস। যেটুকু দিয়েছিলে আমার চাওয়া ছিল তার থেকে বেশি!


কত বছর পরে দেখা! বাতাস প্ররোচনাময়।কি জানি কবিতায় প্রত‍্যাবর্তনমুখি হতে পারব কিনা!আবার লিখতে পারব কি রানী সিরিজের কবিতা?   আবার হতে পারব কি তোমাতেই একমুখি!


প্রেম ও ঈশ্বর একাকার হোক। দৃষ্টি হোক প্রসন্ন ও স্থির।

…………………........


অমলের মত


সংকট নিকটে এলে প্রেমও বহুবর্ণা হয়

কোন একদিন মানুষ স্বীকার করবে

সব স্নান রক্ত শীতল করতে পারে না


ভ্রান্তিগুলি ভাঙা রাস্তা, রাস্তা অরণ‍্যে মিশলে

শুশ্রুষায় চোখে জল চলে আসে 


পুরাতন ভালোবাসা  জীর্ণ হতে হতে

মাটির ভিতর পুঁতে যায় বীজ


 সব শুভেচ্ছাপত্র উলটে পালটে দেখি,  ছবি দেখি, দেখি ভালোবাসার রমনীর রঞ্জিত-নখ এখনো অনুপ্রেরনা কিনা


স্নানশেষে আয়নায় মুখ দেখা নিত‍্যদিনের অভ‍্যাস,

সব প্রেম বোধ হয় কিছুবা পরকীয়া 


মৃত‍্যুর নিথর হাত কাছে আসে, দূরে চলে যায়,

চিরকাল স্বপ্নপ্রেমী মানুষ  ডাকঘরের ছোট্ট অমলের মত

বেঁচে থাকে, বাঁচতে চায় চিঠির প্রতীক্ষায় 

………………........


বির্বতন


শেষ শয‍্যা মৃত‍্যু, আর সব অলীক ও অবহেলায় পড়ে থাকে,

কে কি নেবে তার ভাগ-বাটোয়ারা হয় , বাড়ি নয় নিঃশ্চুপ,

বিছানা বালিশ বদলে যায় দ্রুত, কেউ নয় প্রকৃত শোকার্ত 


এতদিন তোমার কাছেই আশ্রয় চেয়েছিলাম,

সংযম ও সহনশীলতা ছিল,

তবু মধ‍্যরাতে উদাসীন বাতাসে উন্মাদনা  হত,

তোমার সাথে লুকোচুরি খেলার শেষ ছিল না 


অপেক্ষা অনন্ত হলে অস্থির হতাম,

বির্বতনের মধ‍্য দিয়ে কবে তুমি ইভের মতন

একদিন সেচ্ছাচারী হবে,

কবে তুমি আমার বুকে মাথা রেখে

এক সার্থক সহজ সরল জীবন কাটাবে,

সেই ছিল একান্ত ভাবনা...

………………......


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614









Saturday 9 July 2022

তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা // ই-কোরাস ৬৪

 



তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা    


উৎসর্গ


আজ বিকেলে জন্মজন্মের ছোঁয়া দিলি 

প্রখর রোদ্দুরে জীবন ভেঙেচুরে নিরালম্ব হয়েছিল 

অন্ন রোচে না মুখে 

অন্ধকার সিঁড়িতে যখন বুকে মাথা রাখলি 

জলবাতাসে থর থর কেঁপে উঠল গাছের সর্বাঙ্গ

তোর ছোঁয়া আকূল মায়া 

এক বিকেলে আর কতটুকু দিতে পারি বল?

এক চিলতে সুখ নিয়ে বেঁচে থাক লতার কুটিরে 

নিজের সর্বস্ব পুড়িয়ে  তোর বৃষ্টিভেজা চুলের সুবাস 

কিভাবে নিতে হয় জানি

জীবন তো এক ফর্মার কটি পাতা

কনুই অবধি ব্লাউজ, রঙবেরঙের শাড়ি,

দু-ভুরুর মাঝখানে ছোট্ট টিপ -পরা

তোকেই উৎসর্গ করলাম  আজ বিকেলের  কবিতাখানি 

………………..


সমুদ্রলক্ষ্মী জানে



তোর জন‍্য আর কত দিতে পারি?

আমারো তো সীমিত সার্মথ‍্য

এ নদী সে নদী ঘুরে এসে দেখি

সবকিছু ওলটপালট

কাগজের নৌকা শুধু ভাসে, অস্থির স্থল

সব প্রশ্নের উত্তর নেই 

জীবন পদ্মপাতায় জল 

একসঙ্গে বসবাসে এ ওকে খায় 

নিঃস্বতার হাসি রাত্রির তরঙ্গে ভেঙে ভেঙে যায়


ভালোবাসার বলুচরে যদি কখনো ঢেউ আছড়ে পড়ে

সমুদ্রলক্ষী জানে সত‍্যিই কে কাকে কত বেশি চায়! 

……………….



দুই নদী



আমাকে পড়তে পারেনি কেউ 

ছেঁড়া পাতা কেবল বিস্মৃতি

মৃত হলে ভালো হত, তবু মৃত নয়


ভরা কোটালের দিনে তুমি ছিলে নীরব পাঠক

নিঝুম নক্ষত্রের রাতে ভালোবাসাবাসি হয়েছিল একদিন


তবুও বিশ্বাসের বিপরীতে অবিশ্বাস এসে যায়, একটি নদী জলহীন হয়ে গেলে মানুষ অপর নদীর সন্ধান চায়


আর একটি নদীতে অবগাহন, আর একটি নারী, আর একটি ভালোবাসা  রাতজাগা পাখির মত দোদুল্যমান হয় 


একেই কি দ্বিচারিতা বলে?  একজন্মে দুইবার ভালোবাসা,

ঘর ও বাহিরে সংসার?


কি জানি দু'নদীতে

একদিনে দুইবার স্নান করলে মানুষ  অপবিত্র হয়ে যায়  কিনা!

………………..


স্বপ্নে বাঁচা



সব সুখ স্বপ্নে বেঁচে থাকে


শব্দকে নাচাতে নাচাতে নদীর কাছে যাই 

ভাঙা নৌকায় ওঠার সাহস নাই 


অরণ‍্যের কাছে ফিরি

বর্বর অরণ‍্যে বড় হাওয়া,  লতায় জড়ানো সাপ


আমি বাড়ি ফিরি নিজের বিছানায়


বর্ষারাতে সব নিঃস্বতার মাঝে একটু বাঁচার জন‍্য আমি সেই এক নারীর সাহচর্য খুঁজি, একটি বিপজ্জনক সাঁকো পেরোতে চাই 


ঘুম আসে না, ক্লান্ত হয় স্নায়ূ।  আধগ্লাস জল আর দুটি ঘুমের ট‍্যাবলেট। 


স্বপ্ন দেখি। সব সুখ স্বপ্নে বেঁচে থাকে।

……………….


গরম ভাতের গন্ধ 



ঢেউ জাগলে আমি অতীতের কথা ভুলে যাই 

তুমি যদি ডোবাও ডুবে মরব, জাগালে জাগব

কত কথা হয়নি বলা, মেঘের ঘোমটা সরিয়ে

দেখা দিক পরিছন্ন আকাশ


আমাদের অন্তবিহীন তর্ক শেষ হয়নি কখনো 

কখন যে শত্রু হও কখন মিত্র বুঝতে পারি না


ঢেউ জাগলে ধমনীর ভিতর গুড় গুড় শব্দ হয়

আমি তোমাকে দেখি, দেখি তোমার পোষাক, অবিনস্ত‍্য চুলের বাহার


অভিমান হয়, এ নীরস সংসারে কখন যে কাঠকুড়ানি হয়ে গেলে বলেও গেলে না, কাঠের আগুনে ভাত রান্না করলে আমি গরম ভাতের গন্ধ পাই, বুঝতে পারি তুমি ডাকছো আমায় 

…………………



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - সুব্রত ঘোষ

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614






ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...