Saturday 5 September 2020

e-কোরাস// ৩৮ মন খারাপের টিচার্স ডে

 





শিক্ষার উপকথা : যে জীবন আলো আগুনের

 সুনীল  মাজি



আসলে আমি জন্ম খুঁজেছি। আমি  যখনই মরে যেতে যেতে নিজের ক্ষয় গুলো অবলোকন করেছি, তখনই  সেই জায়গাটাকে ভাগাড়ের মতো ত্যাগ করতে চেয়েছি। তবে একে পলাতক বাদ বলব না। যেতে যেতে ঘুরে তাকিয়েছি। কিন্তু শ্মশানকে বাগান করলেও মানুষ সেখানে বেড়ে  ওঠে না। বড়ো হয়ে ওঠে না। তাই তাকে কেউ কেউ ভূত বাগান বলে। স্কুল মাস্টারি আমার চার নম্বর স্থায়ী ভূত বাগানে প্রবেশ। বিমান বাহিনী, আই আই টি, বাণিজ্য কর বিভাগ, এবং শিক্ষা বিভাগ। আর বছর  দেড়েক পরে এই দলিলগুলো ভাসিয়ে হয়তো জয় ভোলা নাথ বলে কেবল জল বইব।

যাই হোক, কোনও পেশার কাজের মধ্যে আমার  অহংকার নেই। এই পেশাগতভাবে শিক্ষক জীবনেও নেই । কেননা  পেশা শব্দটা ভীষণ লেনদেনের গল্প। ছক পূরণ শিখিয়েছি আর পৌরোহিত্য করেছি। ঋত্বিক হতে পারি নি। ইচ্ছা  থাকলেও সুযোগ ছিল না। যোগাভ্যাস নেই। মানসিক চারিত্রিক বিকাশ ঘটাতে পারি নি। অর্থাৎ যে আলোকিত মানুষ গড়ার দায়িত্ব নিয়ে আঠারো বছর আগে এসেছিলাম তাতে আমি ব্যর্থ। কতজন লেটার পেলো বড়কথা নয়, কতজন  চরিত্রবান সত্যবাদী হলো সেটাই ছিলো আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। যাই হোক,আমি খোঁড়া মানুষ। নিজেকে খুঁজে পাইনি। ফৌজে যে উচ্চতা ছিল আই আই টি তে যে উচ্চারণ ছিল এখন তা নেই।এখন আমি তোতলাই। আমার কথা ভেঙে যায়। এবং আমি খোনা  হযে গেছি। আমার অধুনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভূত বাগান ছাড়া কিছু মনে হয় না। কেন বললাম? ওখানে গিয়ে তাঁর মনুষ্যবোধ জাগ্রত হয় বলে আমার মনে হয় না। দয়া মায়া মমতা সততা প্রেম প্রতিবাদ সংগ্রাম শ্রদ্ধা তেমন কিছুই  শেখানো হয় না । কেবল কিতাবী শিক্ষা। খাও বমি করো। পরীক্ষার হ'লে চুরি করো। মার্কস ওরিয়েন্টেড এডুকেসন। যো জিতা ওহি সিকান্দার। শিক্ষকদের মধ্যে মারামারি, কেস কাছারি, ছাত্রছাত্রীদের পাশের দাবিতে শিক্ষকদের তালাবন্ধ, প্রাক্তন ছাত্রের শিক্ষকের গায়ে হাত অথচ কোনও ছাত্র প্রতিবাদ নেই । এরকম নানা দৃশ্য ও চিত্রনাট্য দেখে ও অংশ  নিয়ে আমার গলা শুকিয়ে যায় অথচ প্রাণের তৃষ্ণা নেই। তবে প্রতিষ্ঠানগত শিক্ষার বাইরে একটা শিক্ষার দীক্ষার জায়গা আছে। সেখানে আমি জীবন লিখি জীবন পড়াই। সাহিত্যের সেই খণ্ডিত অংশ একটা স্কুলিং আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সেখানে আত্ম খোঁজের কথা বলি। তার বেতন নেই,শিক্ষক দিবস নেই। তবে জীবনের চব্বিশ প্রহর আছে।

                   …………….......



যে ডাক শুনিনি কতদিন...

শ্রীজিৎ জানা


আদপেই মন খারাপ। ফাঁকা ক্লাসরুম। রেখাহীন ব্ল্যাকবোর্ড। ধূলোজমা চেয়ারটেবিল।অগোছালো স্কুলচত্বর। ব্যাধিগ্রস্ত সময়ে বদলে যাওয়া রূটিন।বেরঙিন উদযাপন। ক্যালেন্ডারের ওই তারিখটা কক্ষনো ভোলেনা ছেলেমেয়েরা। কতদিন আগে থেকেই শুরু হয় শলাপরামর্শ। টিফিনে সবুজমাঠে বসে বৈঠক। ক্লাসের রোজের বকুনি খাওয়া শুভ নামের ছেলেটাই তো দলের চাঁই। সব ঝক্কি তার মাথায়। তোড়জোড়ে সে একাই একশ। ক্লাসরুম সেজে ওঠে বেলুন রঙিন কাগজ আর সোনালি রিবনে। ব্ল্যাকবোর্ডে নক্সা কেটে লেখা " হ্যাপি টিচার্স ডে"। সাথী মোমিতা মনীষারা সেদিন শাড়িপরা ম্যাম। ক্লাস ফোরের শাসনে বাকিরা সেদিন তটস্থ।  

অংশুমান প্রিয়াংশু লঙ্কাগড় বাজার থেকে আনবে নন্দবাবুর প্রিয় মিষ্টি।  ঋজু রণজয় আনবে নারকোল নাড়ু। ছোট্ট সৌভিক একটা করে ডটপেন ধরিয়ে দিয়ে বলবে-' স্যার আপনাদের জন্য'। এদিন রাগত স্বভাবের নন্দবাবুর চোখে হঠাৎ হঠাৎ মেঘ জমবে। বিশ্বজিৎবাবু আয়োজনকে ক্যামেরা বন্দী করতে ব্যস্ত হবে। নাহ্ এবারের ৫ ই সেপ্টেম্বরে এসব কিচ্ছু হবে না। মনোজিৎবাবুর মুখ থেকে এবার রাধাকৃষ্ণাণের জীবনী  শুনে মুগ্ধ হবে না কেউ। 

কথাগুলো লিখতে বসে চোখের পাতা ভারি হয়ে যাচ্ছে কোরাস। ঘরবন্দী এই সব্বনেশে সময়ে ওদের থেকে ছমাস দূরে। নিষ্পাপ আলোমাখা মুখগুলো দেখিনি কতদিন। শুনশান স্কুল প্রাঙ্গন। একা একা বাতাসে দোল খায় বাগানের দোলনা। মনপবনে বিষাদসঙ্গীত। ওই তীর্থেই তো শিক্ষকের মুক্তি। ওই মন্দিরেই তো জীবনের পূজা। শিশুমুখের লাল নীল হাসির স্পর্শেই শিক্ষকের স্বর্গলাভ। অনুক্ষণ কানে বাজে ' স্যার' ডাক। প্রতিদিনকে ছাপিয়ে ওই একটা দিনে ওদের কুসুমকোমল হাত যখন পা ছুঁয়ে দেয় শিহরিত হই। বিস্মরণের অন্ধকারে নিমজ্জিত কর্তব্যবোধের দরজায় কড়া নেড়ে ক্যালেন্ডারের ওই তারিখটা মনে করিয়ে দেয় - আচার্য দেব ভবঃ। এবার নিঃশব্দে পেরিয়ে যাব তারিখটা। বুক ভারি হবে বৈকি।

                         ……………… 




একলা বসে

সোনালী জানা 


রীতা, অসীমা, অনন্যা, নন্দিতা, সকলেই কি ব্যস্ত! চক, ডাস্টার, রোল কলের খাতা নিয়ে ছুটোছুটি। কে কোন ক্লাসে যাবে রুটিন দেখছে। এরই মধ্যে কেউ ঠিক করে নিচ্ছে শাড়িটা, কেউ চুলটা, হাত ঘড়িটা। কেউ খাতা নিয়েছে তো চকটা নেয়নি, আবার ঘুরে আসছে। 


মুখে লাজুক হাসি, ভারিক্কি চাল, পছন্দের দিদিমনিকে অনুকরণ করার গোপন চেষ্টা। দূরে দাঁড়িয়ে দেখি, আর মনে মনে ভীষণ আনন্দ পাই।


ছোট্ট মেয়েগুলো রঙিন শাড়িতে হঠাৎ কেমন বড়ো হয়ে উঠেছে। শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছেগুলো দুচোখে  চিকচিক করছে। পড়ানোর ভঙ্গিতে, হাঁটাচলার ছন্দে ভবিষ্যতের এক অনুরণন দোলা দিচ্ছে।


আজ আমাদের ছুটি, দশম শ্রেণির ছাত্রীরা ছোটোদের ক্লাস নেবে, আমরা সেখানে পর্যবেক্ষক মাত্র। টিফিনের পরে হবে চমৎকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেখি আর বার বার ফিরে যাই, কিশোরীবেলার ফেলে আসা দিনগুলোয়।


এদের চোখেও সেই স্বপ্ন। সুন্দর ভাবে লালিত পালিত হয়ে একদিন সফল হোক, মনে মনে এই আশীর্বাদ করি।


    আজ শিক্ষক দিবসে এসব লিখছি একলা ঘরে বসে,করছি স্মৃতিচারণ। চোখ বন্ধ করলেই যেন ছাত্রীদের অনুভব করতে পারছি। শুধু স্নেহের হাতটুকু বাড়িয়ে কাছে টেনে নিতে পারছি না!

                            ………………… 




নীরবতার পাঠ

অসীম ভুঁইয়া 


কোনো এক অতীব সূক্ষ্ম  প্রাণকণা আজ সবকিছু হিসেবে বদলে দিল। এক বিতশ্রী হাওয়া যেন একা একা ঘুরে বেড়ায় স্কুলের আনাচে-কানাচে, কি যে খুঁজে মরছে সে, কীসের যে গন্ধ শুঁকছে কেউ জানে না! আর ওই হাওয়ার ভেতর অদৃশ্যভাবে যে যুদ্ধ মুহুর্মূহু ঘটে চলেছে তার বলি আজ  অসংখ্য প্রিয় ফুলেরা, শিশু ফুলেরা। সত্যিই ভীষণ মন খারাপের এই ৫ ই সেপ্টেম্বর। বছরের এই একটিমাত্র উৎসব একান্তই ছাত্র-ছাত্রীদের নিজস্ব, সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনেকটাই নীরব... কারণ শ্রদ্ধা ও স্নেহের এই অদ্ভুত বাক্যটা আজ কতটা মজবুত তারও যেন একটা অলিখিত পরীক্ষা হয়েই যায়। খুব খুব মনে পড়ে বিগত বছরগুলোর কথা, যখন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আগের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কুলের প্রতিটি  রুমের দরজা খোলা রাখার আরজি মেনে নিতে হতো। পরেরদিনও প্রায় সকাল থেকেই রুমগুলোর দরজা আবার খুলে দিতে হতো, কারণ তারা যে প্রতিটি কক্ষকে নব সাজে সজ্জিত করে বিচিত্র প্রাণের প্রতিষ্ঠা করবে। আর ঐ প্রাণের মূলমন্ত্র, বীজ-ভাষাটি যে আজ আমরাই শিক্ষক-শিক্ষিকারা, তা কি কম আনন্দের! অদৃশ্য একটা জয়ের গন্ধ বুকে জড়িয়ে সে যে কি পরম তৃপ্তি তার ইতিহাস কেই বা লিখে রাখে? কত কত উপহার, ব্যক্তিগত উপহার,  বিশেষ উপহার, নিজস্ব উপহারে মোড়া এই দিনটি এবছর শূন্যতার হাহাকারে ভরা। সত্যিই তো ভালবাসার গভীর সম্পর্কের মাঝে আজ যে "পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন"। এই অসুখের মাঝে একাকী নির্জন স্কুলটি, আজ যেন নীরবতার পাঠ নেবে…

                      ……………… 



অস্পৃশ্য শিক্ষক দিবস ২০২০

মলয় পাহাড়ি 


রোদ ওঠে,মেঘ করে। এই মুখ ভার তো এই খলখল। আমি এখন বাইকেই যাচ্ছি। কেউ ভাড়া গাড়িতে। গিয়ে বসি। দাঁড়াই। ঘন্টা পড়ে না। বাইরে লাইন সেসব দিন। জটলা। বাবা-মা রা আসেন। ছাত্র-ছাত্রীরা নয়। আলু-ছোলা-চাল- ডাল-সাবান বিতরণ হয়। আমি রেজিস্টারে সই করাই। প্যাকেট নিয়ে যে যার বাড়ি চলে যান। আবার সব শুনশান। জাল বিছিয়েছে মাকড়শা। অসংখ। অন্তহীন ফাঁদের মধ্যে আটকে আছে পুরোনো দিন। স্মৃতি।


মৌমিতা ফোন করেছিল।বলল, সব ভুলে যাচ্ছি স্যার।  সেকি ? তোদের তো টাক্স দেওয়া হচ্ছে। খাতা দেখাও। হোয়াটস অ্যাপ করছিস। পড়াশুনা হচ্ছে তো! না স্যার, প্রেয়ারের ঘন্টা, প্রেয়ার সঙ্গীত, কোনক্রমে নাকে মুখে গুজে দৌড়, বেঞ্চে বসার জায়গাটা, হাইবেঞ্চে পেনে আঁকা দু'টো বনি পাখির ছবি সব যেন ভুলে যাচ্ছি। আপনাদের মুখ ভুলে যাচ্ছি স্যার। চক্ ফুরিয়ে গেলে টুকরো গুলো চেয়ে নিতাম মনে আছে? ব্যাগের কোনে সেগুলো পড়ে আছে। দু-একটা। এটাই আমার ইস্কুল।


আজ ৫ ই সেপ্টেম্বর। শিক্ষক দিবস। ছাত্ররা পড়াত। আমরা শুনতাম। ফুল-মিষ্টি-উপহার আর কিচিরমিচির। টগবগ করে ফুটতো ওরা। আজ ভুতের বাড়ি থেকে সামনের আকাশে কোনো রঙ দেখিন। শূণ্য। অর্থহীন তবু চেয়ে থাকা। ব্যাথার স্মৃতিযাপন। শিক্ষক তো যন্ত্র। যন্ত্রী ওরা, ছাত্র-ছাত্রীরা। বাগানের রামধনু-রঙা ফুল।বসন্ত।


ওরা বন্দী। আমরাও। মাঝের বাতাস অতিকায় দৈত্য হয়ে উঠেছে। ওই দৈত্যটার চোখে চোখ রাখ... তোদের এটাই তো শিখিয়েছি এতদিন। হ্যাঁ কিনা বল?

                       ……………….. 




ভারাক্রান্ত মন

তাপস পোড়েল 


"জনাতিনেক ছাড়া", আমাদের রাষ্ট্রপতগণ শিক্ষা অনুরাগী, ছাত্রদরদী আদর্শ শিক্ষক, মানবিক তথা মানবতার পূজারী, শিক্ষাবিদ।নবপ্রজন্মের কাছে গীতার বাণী প্রায় পিছনের সারিতে , মিসাইলম্যানের প্রাঞ্জল উপদেশে। বিশ্ববন্দিত দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের মহানুভবতায়, তাঁর জন্মদিনে শিক্ষক দিবস। কোরাসের বিজ্ঞপ্তিতে ভারাক্রান্ত হল মন। তাইতো! এবার আর স্নেহের ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষক হয়ে ক্লাশে যাবে না, সানাইয়ের সুর মাখা সচন্দন গোলাপ হাতে দিয়ে আচার্য্য বরণ হবে না, হবে না সারাবছরে মাত্র একটি দিন সর্বপল্লীর দিকে চোখ তুলে দেখা। আমাদের ছাত্রাবস্থায় লজ্জা লজ্জা করে স্যারেদের দুপায়ের ধুলো নিতাম, সাত সেকেন্ডেই শেষ হয়ে যেত সারাদিনের অনুষ্ঠান।

          রাখঢাক না করেই বলি , শিক্ষকতায় আসার পর থেকেই,দু-এক দিন আগে থেকে ছেলেমেয়েদের তাতাতাম যাতে জমে যায় শিক্ষক দিবস।এই দিনটায় ছাত্র ছাত্রীদের হাসিখুশি মুখগুলো দেখে কেবলই মনে হয়, সারা সেশনে কত কষ্ট পায় ওরা(আমরা, শিক্ষকরা এক একজন জল্লাদ)। 

লিখতে বসে বিষন্নতা বাড়ছে। সকালে বাড়িতে ওনার ছবিতে মালা দেওয়াটা হবে বিগত বছরের মতো।তারপরেই চলতে হবে কোভিড- অন্ধকারে। সারা লকডাউনে যত না মনদহন হয়েছে, এই শিক্ষক দিবসের দিনেই তার শতগুণ পীড়ন অনুভূত হবে। পাড়ার প্রাক্তন শিক্ষকদের নিয়ে সান্ধ্য বৈঠকটাও করা যাবে না ভেবে সত্যিই কষ্ট পাচ্ছি।

   শুধু আমাদের বেদন গাইছি। ছাত্র ছাত্রীরা তো ভুলতে বসেছে বিদ্যামন্দিরের দরজা। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, কোন student এর মানসিক অসুস্থতা ,খবরের হেডলাইন হয়নি। সবচেয়ে কষ্ট পাচ্ছে রাজনগর ইউনিয়ন হাইস্কুলের দ্বাদশেরা,একে তো কোমাচ্ছন্ন হয়ে স্কুল জীবন শেষ হচ্ছে    (অন্য স্কুলেরও); তার উপর ভাইয়াদের ক্লাসের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ আর আসবে না। যাকগে ভোর হয়েছে, সোনামাখা সকাল সামনেই। সকল ছাত্র-ছাত্রীর কুশল কামনা করছি। ওরা মানুষ হোক, সাকার হোক,হোক সমাজ সচেতন। জয় রাধাকৃষ্ণান।

                        ………………. 




মন খারাপের ৫ই সেপ্টেম্বর 

তপনজ্যোতি মাজি 


 মনখারাপের মেঘ ক্রমশ অবয়বহীন শূন্যতায় ঢুকে পড়েছে  

কোনও সম্মতির তোয়াক্কা না করেই I এখন শুধু অপেক্ষার 

মন্থর প্রহর I ভালো নেই কেউ I ভালো কি থাকতে পারা   যায়? সংক্রমণের ক্রান্তিকাল I মহাকালের গতিযান স্থবির এবং সারথীহীন I শুধুই অপেক্ষা I শুধুই পর্যবেক্ষণ I আতঙ্ক প্রহর I মনোজগতের বিশ্লেষণ নিয়ে লেখা হবে দীর্ঘ প্রবন্ধ I কত রকম পর্যবেক্ষণে উঠে আসবে কত রকম তথ্য I এর মাঝে নিঃশব্দে ৫ ই সেপ্টেম্বর I অথচ অবরুদ্ধ গেটের ওপারে কেবল প্রাণহীন পরিকাঠামো I মন খারাপের বিস্তৃতি আক্ষরিক অর্থে বিশ্বময় I চিন্তন যেমন বল্গাহীন তেমনি ভাস্কর্যময় I শিক্ষক দিবস এর বিবর্তনময় পরিভাষা কি সম্ভব নয় ? যে শব্দে শিক্ষিকাদের  সংযুক্তকরণ সম্ভব I শিক্ষক দিবস শব্দটির ভ্রান্তি আর কতদিন বহন করা যায় ? শিক্ষিকাদের শব্দসংকীর্ণতায় ব্রাত্য রাখা বোধ করি যথার্থ নয় I কথা তো উড়ন্ত পাখি I স্বাধীন তার উড়ান পথ I হোক না একটু স্বাধীন চিন্তার প্রাসঙ্গিক বিনিময় I শ্রদ্ধার আবহে একটু আত্ম বিশ্লেষণ I অন্তর্জগৎ পর্যবেক্ষণ I হয়তো,কোনও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবেনা, সম্ভবও নয়, কিন্তু একটু উপলব্ধি যদি নাড়া দেয়,যদি শুধু ট্রান্সফার অফ ইনফরমেশন এর স্রোতে একটু দর্শন ও উদারতা, সৌজন্য সর্বোপরি মানবতার দীর্ঘ পরম্পরাকে অচল বলে অবহেলা না করে যাত্রা পথের সঙ্গী করা যায়, তবেই শ্রদ্ধায় সম্মানিত হবো  শিক্ষনের সঙ্গে সংযুক্ত সকলে এবং প্রবাদ প্রতিম 

ড:সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ এবং  ডিরোজিও সহ আলোদীপ্ত শিক্ষা জ্যোতিস্কগণ I 

                 …………………. 





মন খারাপের ৫-ই সেপ্টেম্বর 

গৌতম রায়


সেই কবে শীতের পোশাক গায়ে দিয়ে শ্রেণির কক্ষের হিমটুকু কাটানোর জন্য নলেন গুড়ের মতো মিঠেল রোদ নিয়ে 

সুস্থ লড়াই শুরু হয়ে ছিল শিক্ষাবর্ষ- ২০২০ নতুন বই নতুন খাতা নতুন ক্লাসের প্রসারিত অভিমুখের অভিনব মলাট গন্ধ ক্রমশ আবেশিত করছে বাল‍্য কৈশোর আর নবতারুণ‍্যকে,

ঠিক তখনই প্লেনে চেপে এলো এক দানব মাইকোস্ক্রোপিক কিন্তু যার ক্ষতির হাত সুদূর প্রসারিত, দ্রুত ঝাঁপ বন্ধ হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেখানে আমাদের ভবিষ্যৎদের শাখাপ্রশাখা ঝুরি বিকাশের আদান-প্রদান ডানামেলে করে খেলা। নির্মল বিদ‍্যালয়ের বন্ধু হিসেবে খাবার আগে পরে হাত ধোয়া পরিচ্ছদের নির্মাল‍্যতো দেখেই ছিলো শ্রেণিকক্ষ গুলি দিন যায় মাস যায় বেঞ্চে ধুলো জমে, মিডডে মিল শুকনো খাদ্য সামগ্রী ইত্যাদি সরবরাহ ছাড়া নির্জন অন্ধকারে ডুবে থাকে তমসো মা জ‍্যোতির্গময় পৃথিবী।


সামাজিক দূরত্ব মাস্কবন্দী পৃথিবী করোনা নামক দানব পুরীতে ঝুলে থাকে মাসের পর মাস সারা পৃথিবী জুড়ে মৃত্যু আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ সর্বত্র।

তাপদাহের গুমোট গন্ধের ভেতর পলাশের হাওয়ায় ফুরফুরে বিকাশের ডানা নববর্ষার আফরের চারাগুলি বর্ষার জলে

লকলক করে আমন কিশোর নবযৌবনে রূপান্তরে উচাটন ।


নতুন ফরম্যাট অনলাইন শ্রেণি পরিচালনায় কিছু কিশোর কিশোরীর হাসমুখ দোয়াব দেখা গেলেও গ্রাম বাংলার প্রান্তিক জেলার একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া যারা বেশির ভাগ দ্বিতীয় বা তৃতীয় বংশধর , তাদের অনেকেরই পড়ার ব‍্যাগ বহুকাল ঝুলে আছে করোনা কালের কিলকে।


গ্রাম বাংলার শিক্ষার হাল মোটেই ভালো নেই। কবে আসবে ভ‍্যাকসিন? কবে খুলবে সেপালের ছিপি? আবার প্রবাহের কলমুখরে ভরে উঠবে দোয়াব তার অপেক্ষায় দিন গুনছে প্রতিষ্ঠান।


আজ মনখারাপের ৫-ই সেপ্টেম্বর। প্রকৃতিতে সূর্যের এতো আলো তবু শিক্ষার্থীর আনাগোনা নেই নেই ভালোবাসার জ‍্যোতিষ্কগুলির বিকাশের আলোক বিচ্ছুরণ কেমন যেন একজায়গায় আত্মগোপন করে আছে স্নেহ ভালোবাসা শ্রদ্ধা ভক্তি আবেগের শিক্ষক দিবস ।

                     ………………….. 




মন খারাপের 5 ই সেপ্টেম্বর

অশোক গোস্বামী 


প্রকৃতির আকাশে কতবার কালো মেঘে এল আবার সরেও গেল। সেই মার্চ মাস থেকে মনের আকাশে জমে থাকা কালো মেঘ আজও সরল না! সত্যিই মনটা ভালো নেই। মিড-ডে মিলের পশরা নিয়ে প্রতিমাসে বিদ্যালয় বসে ভাবি; এবছর ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কি আর দেখা হবে না? শিক্ষাবর্ষের শেষ অনুষ্ঠান “শিক্ষক দিবস”।সারাবছর অপেক্ষায় থাকে স্নেহের ছাত্র-ছাত্রীরা। কত দরখাস্ত, মিটিং, রিহার্সাল, নতুন নতুন প্রতিভার পরিচয়। সন্দীপবাবু, তরুণবাবুর তদারকি সবকিছুই স্মৃতি। নেই কোন কোলাহল, সিঁড়িতে দাঁড়ানো, দু-দশ টাকা চাঁদা তোলা, লাইব্রেরী আর কম্পিউটার ল্যাবে শোনা যাচ্ছে না হারমোনিয়াম তবলা-গিটারের শব্দ। মেট্রন সিন্ধুদি এসে আর বলছে না “আমি একটা আবৃত্তি করব”। হেডস্যার, অরূপবাবু, নিতাইবাবুদের একসাথে দেখা যাচ্ছে না আলোচনার টেবিলে। এবছর এই দিনে কাদের হাতে তুলে দেবো লুচি-মিষ্টি! তারা যে আজ অনেক দূরে। মারণব্যাধি আতঙ্কে গৃহবন্দী। গৌরার অশোক পতির দোকানে এবছর কেউ অর্ডার দেবে না শিক্ষকদের জন্য স্পেশাল চা-টিফিন। সঞ্চিতা বুক স্টলে আর দেখা যাবে না গিফট্ কেনার ভিড়। চারিদিকে শুধুই শূন্যতা। সকাল থেকে মোবাইল ফোনে টিচার্স ডে-এর মেসেজ দেখে দেখে দেবাশিসবাবুর চোখ দুটি ছলছল। দশটা থেকে শাড়ি পরা ম্যামদের ব্যস্ততা আর চোখে পড়বে না। আজ মন খারাপের কথাগুলো লিখতে খুব কষ্ট হচ্ছে “কোরাস”। কতদিন ওদের নাম ধরে ডাকিনি। পশ্চিম আকাশে যখন সূয্যিমামা অস্তাচলে তখন সু-সজ্জিত মঞ্চে বাংলা ব্যান্ডের গান গাইতেন শীর্ষেন্দু বাবু আর মাঠে কানুদার বাঁশি বেজে উঠত। শিক্ষক-ছাত্রদের প্রীতিপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ-এর মধ্য দিয়ে ঘর্মাক্ত দেহে আর একরাশ আনন্দ বুকে নিয়ে ছাত্রদের প্রণাম গ্রহণ করে বাড়ি ফিরতে অনেকটা দেরি হয়ে যেত! তখনো কানে বাজত ছাত্রদের চিৎকার গো...ল। সিতাংশুদা আর সঞ্জয়-এর যুগলবন্দী ফুটবল দক্ষতা ভুলব কেমন করে।

                    ………………….. 




পৃথিবী আবার সুস্থ হবে


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - কোরাস
ঠিকানা - সুরতপুর, হরিরামপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614







ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...