Saturday 30 September 2023

তুষারকান্তি ঘোষ এর গুচ্ছ কবিতা // ই-কোরাস ১৪৮

 



তুষারকান্তি ঘোষ এর গুচ্ছ কবিতা

১.

ভূমিকন‍্যা


ভূমিকন‍্যা একটি ফুলে ভরা গাছ

সারারাত চোখ জ্বেলে বসে থাকি ফুলের ফোটা দেখব বলে 

ভেতরের কাঙাল যেন বৃষ্টির ধারাপাত

সারাজীবন তৃষা ও শূন‍্যতা কুড়িয়ে এগিয়ে চলেছি

আকাশে নক্ষত্রের নাকছাবি ফুটলে ফুলও পাপড়ি মেলে 

আমি তুলে আনি গন্ধরাজ

বিবাহবাসর সাজাই রজনীগন্ধা দিয়ে 

একশআট পদ্ম নিয়ে ছুটে যাই ঠাকুর দালানে 


ভূমিকন‍্যা আড়চোখে দেখে সব

গাছের সাথে, ফুলের সাথে,পাপড়ির সাথে আমার প্রনয় 


গন্ধ নিই, ছুটে গিয়ে হাত ধরি 

আমি ভূমিকন‍্যার সাথে হারিয়ে যাই অনন্ত অম্বরে! 


২.

হারা নদীর তীরে


এরকমও হয় জীবনে

ভালোবাসা শর্তাধীন হলে আমি শর্তহীন নারী খুঁজে ফিরি

পায়ের কাছে গড়িয়ে পড়ে লাল বটফল

পাখি খেয়েছে অর্দ্ধেক বাকি অর্দ্ধেক আমার জন‍্য

হায়! সব নারীই নদী  নিজের মনে বহে যায় 

আমার চোখে মেঘের ছায়া, ছায়া নদীতে পড়ে

নদী আমার দিকে ফিরেও তাকায় না 


বলো এরপরে বাঁচবার  সবদিক বাঁচাবার পথ কোথায়!



৩.

মহাভাদর 


 ভাদ্র চিরকাল বিষন্ন মাস, কলেজে পড়ার সময় বাড়ি এলে খেতে হত নূতন আউস ধানের ভাত।  মা বোনেদের অলঙ্কারহীন হাত  দেখে বুঝতে পারতাম অবস্থাবির্পজয়ের কথা। 


তবু দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি আমার। হত‍্যাকারী ঘরে এলে  বাবা মা  দুজনেই  এসে দাঁড়াতো পাশে। তাদের  চোখে লেগে থাকত চাঁদের মায়া। প্রবল প্রত‍্যাশায় তারা স্বপ্ন দেখত, আমাদেরও দেখতে শিখিয়েছিল।


 আমরা শিউলি কুড়াতে যেতাম খুব ভোরে।  প্রাকৃতিক ও সাংসারিক  বির্পজয়ের পরেও আমরা পুকুর থেকে  তুলে আনতাম গেঁড়ি গুগলি আর কলমীর ডাঁটা।

মা হাসিমুখে খেতে দিত আমাদের।


তারা   জানত জীবন এক মহাজাগতিক গ্রন্থাগার,  সেখানে বইএর পাতায় টিকা টিপ্পনি সহ লেখা আছে সব। সেখান থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু  হয়।


কতদিন মা চলে গেছেন, বাবাও নেই।   আমি ডাক্তার হবার পর প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হয়েছে। তবু ভাদ্রমাসে দেশের বাড়িতে গেলে আজো আমি আলমারি খুলে রোদে দি মা-বাবার জামাকাপড়, আমার আর বোনেদের সযত্নে  রক্ষিত রঙওঠা ইজের ও ফ্রক।


এখন তাদের গা থেকে ন‍্যাপথিলিনের  গন্ধ  ভেসে আসে

 আর  আমার দুচোখ ভেসে যায় জলে।


৪.

বির্সজন


কোন বিরুদ্ধ-সংলাপ বলিনি

পছন্দ করি না পচা ফুলে ভনভনে মাছি 

পাথরের চোখে জল দেখার আশায় এতদূর আসা

 তবু কেন  মেঘকে পাঠাও  মুছে দিতে চায় সব আলো?

দূরে রাখার পরীক্ষায় দূরত্বই বাড়ে 

প্রতিমা বির্সজন শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা


৫.

এক কোজাগরী রাতে


মনে হয় লবনাক্ত জীবনের শিকড়-বাকড় উপড়ে ফেলি  

কেন শুধু বিষন্নতার দিকে টান এই পৃথিবীর!

কেন  বলো ডুবে থাকব এই অধম-অন্ধকারে?


যুদ্ধ শেষ হয়নি এখনো

ক্লান্ত হতে পারি তবু এখনো নায়ক

সভ‍্যতার দীর্ঘশ্বাসের বেড়ি আর জলশূন‍্য নদীর ভয় দেখিও না আমাকে 


যুদ্ধ জিতে তোমাকে নিয়ে এক কোজাগরী রাতে ভেসে যাব জ‍্যোৎস্নায় 

               ……………………… 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪


Friday 29 September 2023

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা // ই-কোরাস ৬

 




পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা ৬

শ্রীমা চিত্র মন্দির,  মলিঘাটী, ডেবরা

শ্রীজিৎ জানা 



মল্লিক হাটি থেকে নাম হয় মলিঘাটী। কংসাবতী নদীর দক্ষিণ পাড়ের নামকরা জমিদার। বর্তমানে ডেবরা থানার অন্তর্ভূক্ত। ইতিহাস বলে কলকাতার মল্লিকবাজার এই মলিঘাটীর মল্লিক জমিদারদের মালিকানার সাথে যুক্ত। পরবর্তী কালে রাধানগরের ছকুরাম চৌধুরী আত্মীয়তা সূত্রে মল্লিকহাটির জমিদারী লাভ করেন। শোনাযায় আশেপাশের অঞ্চল ছাড়িয়ে ওড়িশায়ও নাকি চৌধুরীদের এস্টেট ছিল। ছকুরাম চৌধুরীর পর জমিদার হন ঈশ্বর চৌধুরী এবং তাঁর পর জমিদারী সামলান বিষ্ণুপ্রিয়া চৌধুরী। এইখানে বলে রাখা যাক বর্তমান রাজনগর হাট এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জমি বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী দান করেন। একদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামও ছিল রাজনগর বিষ্ণুপ্রিয়া প্রথমিক বিদ্যালয়। আজ সেই নাম অতীত।

চৌধুরী জমিদারদের অবদান কম নয়। বালিপোতার খেয়াঘাট চালু করা তাঁদেরই অবদান। বুধবার এবং রবিবার যে হাট বসে সেটিও শুরু করেন চৌধুরীরা। কিন্তু সিনেমাহলের সঙ্গে কী তাঁদের কোন লতায়পাতায় যোগ আছে? উত্তর হবে কস্মিনকালেও নেই। তাহলে শোনাচ্ছেন কেন হে বাপু? ফেনিয়ে বলা আমার অভ্যেস। তাবাদে মলিঘাটীর সিনেমাহলের গল্প শুনবেন অথচ তার সম্পর্কে জানবেন না এটা কেমনতর বিচার মশাই। অতএব আমায় থামায় কেডা! মলিঘাটী পৌঁছতে আপনাকে নাড়াজোল- মেদিনীপুর গামী সড়কের বালিপোতা বাসস্টপে নেমে দক্ষিণে কাঁসাই ডিঙিয়ে যেতে পারেন। অথবা ডেবরা থেকে লোয়াদা হয়ে আসতে পারেন। অথবা বেলতলা থেকে কল্মীজোড়ে কাঁসাই ডিঙিয়ে ধান্যখাল হয়ে আসতে পারেন।

জমিদারী আমলে মলিঘাটী ছিল পাঁচ ভাগে বিভক্ত– মলিঘাটী পশ্চিম, চক মহেশ,বাজারপাড়া,গড়মলিঘাটী এবং মুনিশা। আজও চক মহেশের অদূরেই রয়েছে মুনিষা নামের একটি সুবিশাল জলাশয়। এই চকমহেশ মৌজায় আজকের আলোচ্য সিনেমাহলের অবস্থান। চক মহেশকে অনেকে বলেন মোষকাটান অথবা মোষপুর। মোষপুরের বোমা, বারুদে নয়, মশলাদার আলুর পুরে ঠাসা। যে না খেয়েছে তার জীবনের বার আনাই বৃথা। আরো শুনুন মলিঘাটীর হাটের পরে এই সিনেমাহলকে কেন্দ্র করেই আলুর বোমা জনপ্রিয়তা পায়। বেশ তো মলিঘাটী হল,বোমা ফাটানো হল কিন্তু সিনেমাহল কোথায়? কেন এই মলিঘাটীর চক মহেশে। আজ তার কোন চিহ্ন নেই। সেদিনের সিনেমাহলের জায়গা বর্তমানে জঙ্গলাকীর্ণ।  জমির বর্তমান মালিক যুগল মহাপাত্র এবং কমলাবালা মহাপাত্র (হরিনারায়ণ পুর,ডেবরা থানা(। পূর্বেও উক্ত জমি তাঁদেরই মালিকানাধীন ছিল। কিন্তু সিনেমাহল তৈরির জন্য তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে নিরানব্বই বছরের লিজ নেন প্রয়াত বিমলকৃষ্ণ মান্না। তিনিই ছিলেন মলিঘাটীর জনপ্রিয় সিনেমাহল 'শ্রীমা চিত্র মন্দির' - এর প্রতিষ্ঠাতা। 


শ্রীমা চিত্র মন্দির সিনেমাহলের পথ চলা শুরু ১৯৮৩ সালে। দশ নম্বর ওয়াটারলু স্ট্রীটের একটি পৌরাণিক ডাবিং ছবি দেখানো হয় প্রথম।  দ্বিতীয় ছবিটি ছিল হিন্দি –' নাগচম্পা'। শ্রীমা চিত্র মন্দির কেন নাম দিলেন বিমলকৃষ্ণ বাবু? বিক্রমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জীববিদ্যার তুখোড় স্যারের মাথায় কেন ঝোঁক চাপল সিনেমাহল করার? জানতে চান নাকি শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ করে ছেড়ে দেব। তাহা হইতেছে না। একবার যখন বাগে পেয়েছি কাতুকুতু বুড়োর মতো জোর করেই শোনাব। বিমলকৃষ্ণ বাবুর ছোটবেলার পড়াশুনা রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনে। উচ্চশিক্ষা মেদিনীপুরে। পরে রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষা লাভ করেন। মা সারদা দেবী ছিলেন তাঁর পরম আরাধ্যা।  সেই পূজনীয়া মায়ের নামেই সিনেমাহলের নাম রাখলেন 'শ্রীমা চিত্র মন্দির'। বিমলকৃষ্ণ বাবু ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।  আর্ট বিষয়ে কোনরকম প্রথাগত বিদ্যা তার ছিল না। কিন্তু মাটির ঠাকুর গড়তে পারতেন তিনি মাচির দূর্গা প্রতিমা গড়ে মলিঘাটী চকে দূর্গাপূজার সূচনা তাঁরই হাত ধরে। এমনকি সত্তরের দশকে অমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে থার্মোকলের দূর্গা,মোমের সরস্বতী গড়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেই বিমলকৃষ্ণ বাবু গ্রামীণ চলন্তিকা সিনেসাহলে সিনেমা দেখেই স্থায়ী প্রক্ষাগৃহ গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিনেমাহল গড়ার জন্য চক মহেশে জমি লিজে নেন। মাটির দেওয়াল আর খড়ের ছাউনি দেওয়া তৈরী করেন সিনেমাঘর। 'শ্রীমা চিত্র মন্দির'- এর দর্শক আসন সংখ্যা ছিল চারশ। কৃষিজীবী এলাকা মলিঘাটী।  লোয়াদা আর সিঙ্গাঘাই ছাড়া কাছেপিঠে কোন ছবি দেখার সিনেমাহল ছিল না। স্বভাবতই যথেষ্ট সংখক দর্শক হলমুখী থাকত। বিশেষত সব্জীর মরসুমে সিনেমাহলে ভিড় থিকথিক করত। 

শ্রীমা চিত্র মন্দিরে সাধারণত তিনটা ও ছ'টার শো হত। অনেকসময় জনপ্রিয় ছবির ক্ষেত্রে দর্শকদের ভিড় দেখে চারটা, সাতটা ও দশটার শো চালাতেন হল মালিকরা। সিনেমাহল শুরুর প্রথম দিকে ফার্স্ট ক্লাসে টিকিট মূল্য ছিল ১ টাকা,সেকেন্ড ক্লাসে ৭৫ পয়সা এবং থার্ড ক্লাসে ৫০ পয়সা। পরবর্তীকালে বন্ধের মুখে ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট মূল্য ৪. ৫০ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। শুরুর দিন থেকে সিনেমাহলের সঙ্গে যুক্ত শংকর প্যোড়া জানাচ্ছেন,  " অনুসন্ধান,বৌমা প্রভৃতি সিনেমার ক্ষেত্রে দর্শকের চাপ এত হয় য়ে তিনটা করে শো করতে বাধ্য হতে হয়।" শঙ্কর বাবু সেইসব দিনের কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে যান–" তখন বৃহস্পতিবার ছবি আনতে যেতাম কলকাতায়। শুক্রবার সেই ছবি হলে দেখানো হত। 'ছায়াবাণী', 'চন্ডী মাতা ফিল্মস ' থেকে ছবি আসত। ব্রোকার ছিলেন অমর রায়চৌধুরী। বেশ কয়েকটা ফিল্ম যেমন শহর থেকে দূরে,সাহেব,খেলার পুতুল।ফাটাফাটি চলে। ওড়িশার ডাবিং ছবি সতী অনসূয়া মারাত্মক ভাবে চলতে থাকে। কাঁসাইয়ের উত্তর পাড় পেরিয়ে চৌকা,মশরপুর ( ঘাটাল ব্লক),মনোহরপুর ( চন্দ্রকোণা ব্লক) থেকে পর্যন্ত দর্শক এসেছে এই হলে। ' 'শোলে' সিনেমা আমাদের এই সিনেমাহলে দু'সপ্তাহ করে তিনবার দেখানো হয়। আর প্রত্যেকবারে শো হাউসফুল হত"। এই সিনেমাহলের ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে আছে বিশেষ একটি দুঃখজনক ঘটনাও। বিমলকৃষ্ণ বাবুর পুত্র পার্থ মান্না জানালেন," তখন আমাদের হলে চলছে ডাবিং ছবি রামায়ণ। প্রতিটা শে'তে উপচে পড়া ভিড় হচ্ছে। সকাল থেকে অনেক দর্শা চলে আসত। একদিন এত ভিড় হয় যে টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই ভিড়ের মাঝে একটি বৃদ্ধা হঠাৎ 'হায় রাম তোমাকে আমি দেখতে পেলাম না' বলে অস্থুত হয়ে পড়েন। এমনকি মারা যান। এই ঘটনা সেই মুহুর্তে খুব বিচলিত করে সবাইকে"।


সিনেমাহল চলছিল আপন ছন্দেই। লাভ লোকসান মিলে মোটামুটি পুষিয়ে যাচ্ছিল মালিক পক্ষের। হঠাৎ সিনামাহলের মেসিনপত্র চুরি হয়ে যায়। তখন হলে চলছিল বিদ্রোহী সিনেমা। হল বন্ধ রাখতে বাধ্য হতে হয়। অনেক চেষ্টায় মেসিনপত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয় কিন্তু তার পর থেকেই হলের বাজার নিম্নগামী হতে থাকে।একসময় বালিচকের 'রূপছায়া' সিনেমাহলের মালিক সমর সিংহকে এই হল লিজে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরাও সেভাবে চালাতে পারে না। অবশেষে ১৯৯৩ সাল নাগাদ শ্রীমা চিত্র মন্দিরের পথ চলা থেমে যায়। বর্তমানে সিনামাহলের জন্য লিজ নেওয়া ৬২ ডেসিমাল জমি জমির মালিককে চুক্তি মোতাবেক ফিরিয়ে দেন মানা পরিবার। শ্রীমা চিত্র মন্দির একন অতীত ইতিহাস। মলিঘাটী বাজারে শুধুমাত্র সেইদিনের সিনেমাহলের গল্পগাথা কান পাতলে শুনতে পাবেন।


তথ্যঋণ : —

শ্রী শঙ্কর প্যোড়া, মলিঘাটী।

শ্রী পার্থ মান্না  মলিঘাটী

.................................




সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Tuesday 26 September 2023

রবীন্দ্র পরম্পরা - মহাশ্বেতা দাস // ই-কোরাস ৩৮





রবীন্দ্র পরম্পরা

পর্ব - ৩৮

নোবেল প্রাপ্তি

মহাশ্বেতা দাস 



"হায় গগন নহিলে তোমারে ধরিবে কে বা!

   ওগো তপন, তোমার স্বপন দেখি যে,

         করিতে পারি নে সেবা।"


   আমাদের  প্রতিদিনের মনের মর্মকথা যাঁর কাব্যে, লেখনীতে সহজ সাবলীল ভাবে প্রকাশিত হয় তিনি রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্র-প্রতিভা সূর্যেরই মতো বিশাল ও বিস্ময়কর। তিনি নিজের সৃষ্টিকে নিজেই অতিক্রম করে নব নব সৃষ্টির আনন্দে ছিলেন চিরমগ্ন। পিতার সাথে হিমালয় ভ্রমণে বেরিয়ে বোলপুরে রাতের আকাশে জ্যোতিষ্ক দেখে যাঁর কবিতা লেখা শুরু হয়েছিল! যাঁর কবিতা পাঠ করে "ভগ্ন হৃদয়" কাব্যগ্রন্থের জন্য ত্রিপুরার মহারাজা বীর চন্দ্র মানিক্য অনুভব করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের মধ্যে এক ভুবনজয়ী সম্ভাবনার কথা আর তাই কবিকে সম্মানিত করেছিলেন…. তিনি সত্যিই একদিন দেশ কালের সীমানা ছাড়িয়ে হয়ে উঠলেন বিশ্বকবি। 

    

     ছোট থেকে কাব্য কবিতা লেখা এবং বেশ কয়েকবার বিভিন্ন কাজে বিলেত ভ্রমণ কবির মনন ও চিন্তনে নূতন দিগন্ত উন্মোচনের সহায়ক হয়েছিল। সাহিত্য রচনা করতেন নিয়মিত এবং সেগুলি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিতও হতো নিয়ম মেনে। এছাড়া পিতা দেবেন্দ্রনাথ এবং ঠাকুর পরিবারের অন্যান্য অনেক সদস্যদের সমাজসেবা মূলক কার্যকলাপ কবিকে ভাবতে শিখিয়েছিল সাধারণের গন্ডি পেরিয়ে অন্যভাবে অন্যরূপে। তাই একসময়ে কবির মনে হলো দেশের সীমা ছাড়িয়ে আরো বৃহত্তর জগতে যাওয়া প্রয়োজন। ১৯০১ সালে বোলপুর শান্তিনিকেতনে   ব্রহ্মবিদ্যালয় ও আশ্রম প্রতিষ্ঠা তাঁর বিশ্বসংস্কৃতি চর্চার প্রথম সোপান হিসেবে ধরা যেতে পারে। এরপরে চিন্তা করলেন ভারতবর্ষের বাইরের জগতে যাওয়া প্রয়োজন। ১৯১২ সালের ২৪ শে মে পূত্র রথীন্দ্রনাথ ও পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে সঙ্গে নিয়ে বোম্বাইয়ের পথে তিনি লন্ডন যাত্রা করলেন। এর আগে এই পথে আরও দুবার ১৮৮১সাল এবং ১৮৯৩ সালে বিলেত যাত্রা করেছিলেন। এবারে রবীন্দ্রনাথ লন্ডনে পৌঁছলেন ১৯১২ সালের ১৬ জুন। ওখানে রোদেনস্টাইন রবীন্দ্রনাথের পরিবারের জন্য হ্যাম্পস্টেডের কাছে আবাসন ঠিক করে দিলেন।

 

    যৌবনে কবি বিলেত গিয়েছিলেন সেখান থেকে শিক্ষা সংস্কৃতি সংগ্রহের আশায়… এবারে গেলেন বিদেশ কে কিছু দেবেন বলে। দিলেন বইকি…. ইংরেজিতে অনুবাদ করা গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের কবিতা-সংকলনটি উপহার দিলেন। 


    বিলেতে কবির সঙ্গে তখনও তেমন কোন ব্যক্তির পরিচয় ছিল না। ঠিকানা জানা ছিল শুধু উইলিয়াম রোদেনস্টাইনের। রোদেনস্টাইন ছিলেন চিত্রশিল্পী এবং রয়েল কলেজ অব ফাইন আর্টসের অধ্যক্ষ। বয়সে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে কয়েক বছরের ছোট। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে রোদেনস্টাইনের প্রথম পরিচয় হয় কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। সেখানে তিনি যেতেন অবনীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথের সঙ্গে শিল্প-বিষয়ে আলোচনা করতে। জুহুরী যেমন জহর চেনে….  রবীন্দ্রনাথকে দেখে তেমনই তিনিও বুঝতে পেরেছিলেন যে ইনি একজন প্রতিভাধর মানুষ। কবির অনুমতি নিয়ে রোদেনস্টাইন পেন্সিলে তাঁর একটি স্কেচ আঁকলেন । এরপর উভয়ের পত্র বিনিময়ে অর্জিত হলো বন্ধুত্ব।


    রবীন্দ্র-প্রতিভার রবিকিরণ তাঁর কাছে আরো বিচ্ছুরিত হলো যখন রোদেনস্টাইন রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি কাব্যের তর্জমা-করা কবিতাগুলি পড়লেন। রোদেনস্টাইন ওই কবিতাগুলো টাইপ করে বিলেতের কয়েকজন বিশিষ্ট সাহিত্যিকের কাছে পাঠিয়ে দিলেন…. এঁদের মধ্যে একজন হলেন ডব্লু বি ইয়েটস্।


   রোদেনস্টাইন  ৩০শে জুন  তাঁর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাঠের জন্য একটি সাহিত্য বৈঠকের আয়োজন করলেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কবি ইয়েটস্ এবং এজরা পাউন্ড। ইয়েটস্ তখন কবি হিসেবে বিলেতে অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত।  এজরা পাউন্ড যদিও ছিলেন অল্পবয়স্ক, কিন্তু তাঁর মধ্যেও বিপুল সম্ভাবনা ছিল। রবীন্দ্রনাথ পাঠ করলেন "গীতাঞ্জলি" কাব্যের অনুবাদ। "গীতাঞ্জলি" খুবই ক্ষুদ্রাকৃতির একটি কাব্যগ্রন্থ। মাত্র ১০৩টি কবিতার সংকলন। যদিও রবীন্দ্রনাথ নিজে তাদেরকে গানই বলেছেন…. গান গুলিকে  নিজের হাতে তর্জমা করেছেন  তবুও  এর দ্যোতনা অনুবাদের তুলনায় বেশী মাত্রায় মনোগ্রাহী। গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের নাম দিলেন  "Song Offerings" । এই গানগুলি অভিভূত করেছিল তখনকার দিনে বিলেতের প্রতিষ্ঠিত কবি ডব্লু বি ইয়েটস্ কে। 

 

    যাইহোক এই বৈঠকের কয়েক দিন পরে ইস্ট ওয়েস্ট ক্লাব রবীন্দ্রনাথের জন্য একটি সংবর্ধনার আয়োজন করলো। পরের মাসে অর্থাৎ ১২ই জুলাই  ইন্ডিয়ান সোসাইটি একটি ভোজসভার ব্যবস্থা করে, যাতে ইয়েটস্ সভাপতিত্ব করেন এবং যেখানে প্রায় সত্তর জনের মতো অতিথি উপস্থিত ছিলেন। সভাপতির ভাষণে কবি ইয়েটস্ রবীন্দ্রনাথের কবিতার ভূয়সী প্রশংসা করে বললেন- 

   " আমার সমসাময়িক আর কোন ব্যক্তির এমন কোন ইংরেজি রচনার বিষয় আমি জানি নে যার সঙ্গে এই কবিতাগুলির তুলনা হতে পারে।"  


      স্থির হলো গীতাঞ্জলি বা Songs-Offerings কাব্যগ্রন্থ ইন্ডিয়া সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হবে। কবি ইয়েটস্ বইটির ভূমিকা লিখবেন। 


     বিলেতে চারমাস থেকে কবি পুত্র ও পুত্রবধূকে নিয়ে ২৮শে নভেম্বর চলে গেলেন আমেরিকায়। নিউইয়র্ক থেকে চলে এলেন ইলিনয় স্টেটের আর্বানা শহরে যেখানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছিলেন কবি পুত্র রথীন্দ্রনাথ। আর্বানার শান্ত পরিবেশ, খোলা আকাশ, মুক্ত প্রান্তর কবিকে মুগ্ধ করলো। রথীন্দ্রনাথ যুক্ত হলেন জীবতত্ত্ব গবেষণার কাজে। 

  

    আর্বানা থেকে শিকাগো কবি বিভিন্ন সভায় বক্তৃতা দেন…. আগ্রহ ভরে শুনতে থাকে বক্তৃতা বিলাসী আমেরিকাবাসী। নিউইয়র্কের কাছে রচেস্টার শহরে বসেছে নানা ধর্মের উদারমনা ব্যক্তিবর্গের সম্মেলন। কবির ডাক পড়লো সেখানে। জাতিসংঘাত সম্বন্ধে বক্তৃতা দিলেন কবি। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতে- সেদিনের সভামঞ্চে রবীন্দ্রনাথের থেকে সাহিত্যখ্যাতিসম্পন্ন বা গুঢ় ভাবপূর্ণ বক্তব্য রাখতে সক্ষম ব্যক্তি আর কেউ ছিলেন না।  

 

    রচেষ্টার থেকে বোস্টন…. কেমব্রিজ শহরে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়, শিকাগো… কোন দিক দিয়ে কেটে গেল ছ-মাস! আবার ফিরে আসতে চাইলেন কবি বিলেতে। রথীন্দ্রনাথের গবেষণা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হলো। কবিমন তখন প্রাচীন ভারতের অবাস্তবতা থেকে ক্রমশঃ মুক্তি পেয়ে আধুনিক হয়ে ওঠার চেষ্টায় লিপ্ত। ভারতের শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যাকে অনুভব করছেন আর সেই সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তিনিকেতনকে নব আঙ্গিকে গড়ে তুলবার কথা ভাবছেন। 


   আমেরিকাতে থাকা কালীন কবি খবর পেলেন গীতাঞ্জলি'র ইংরেজি অনুবাদ ইন্ডিয়া সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং বিলেতে যথেষ্ট সমাদর লাভ করেছে। বিলেতে ফিরেও দেখলেন ওখানের তৎকালীন পত্র পত্রিকায় গীতাঞ্জলির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। 

      

   গীতাঞ্জলি  লন্ডনের ইন্ডিয়ান সোসাইটির উদ্যোগে প্রথমে ছাপা হয়েছিল সাতশো পঞ্চাশ কপি, যার মধ্যে আড়াইশো কপি ছিল বিক্রির জন্য, বাকি পাঁচশো কপি বিতরণ করা হয়েছিল বিশিষ্টজনদের । দ্বিতীয় সংস্করণ বের করে ম্যাকমিলান কোম্পানি, যেটা ছিল বাণিজ্যিক প্রকাশনা।  এটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাঠক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এবং অতিদ্রুত  পুনর্মুদ্রিত করতে হয়। 


     দেখতে দেখতে দেশের বাইরে কেটে গেল এক বছর চার মাস। এরই মাঝে রথীন্দ্রনাথ ও প্রতিমা দেবী ইউরোপ ভ্রমণ করেছেন…. কবির অর্শরোগের অস্ত্রপ্রচার হয়েছে হাসপাতালে।   ১৯১৩ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর লিভারপুল থেকে "সিটি অব লাহোর" জাহাজে উঠলেন। জিব্রাল্টার ঘুরে নেপলস হয়ে ৪ঠা অক্টোবর জাহাজ বোম্বাই পৌঁছালো। 

    

    ১৯১৩ সালের ১৫ই নভেম্বর…. কবি তখন শান্তিনিকেতনে। রথীন্দ্রনাথ ও দিনেন্দ্রনাথ কে নিয়ে চৌপাহাড়ি শালবনে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খবর এলো সাহিত্যের জন্যে "নোবেল প্রাইজ" পেয়েছেন।

   

     এই পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল প্রায় একলক্ষ বিশ হাজার টাকা। অনুষ্ঠানটি হয়, ওই বছরেরই ১০ ডিসেম্বর। কবি তাই নিজে এই অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি। তাঁর হয়ে স্টকহোমে এই পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মিঃ ক্লাইভ। কবি ধন্যবাদ জানিয়ে যা লিখে দিয়েছিলেন তা পাঠ করেন তিনি – "I beg to convey to the Swedish Academy my grateful  appreciation of the breadth of understanding which has brought the distant near, and has made a stranger a brother" ।  পরের বছর অর্থাৎ ১৯১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি কলকাতার গভর্নর হাউসে এক অনুষ্ঠানে তদানীন্তন গভর্নর  কবির হাতে সোনার মেডেল ও অর্থমূল্য তুলে দেন। 


    বিশ্বের দরবারে দাঁড়িয়ে বিশ্বখেতাব অর্জন করে বিশ্বকবি হয়ে ওঠার নোবেল-প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের কাছেও একটি বড়ো ঘটনা। কিন্তু এই নোবেল নিয়ে দেশ বিদেশে অহেতুক জটিলতাও তৈরী হয়েছিল অনেক…. যা  কবিকে  ব্যথিত করেছিল খুব। কারও কারও মত ছিল,  কবি ইয়েটসের কারণেই রবীন্দ্রনাথের  নোবেলপ্রাপ্তি। অন্যান্য অনেকের মতে… সুইডেনের রাজ পরিবারের সুনজরের কারণেই কবির নোবেল প্রাপ্তি। 

   

   দেশ তখন কবি গৌরবের জোয়ারে ভাসছে। কলকাতার শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ ঠিক করলেন শান্তিনিকেতনে কবির আপনস্থানে গিয়ে কবিকে তাঁদের সম্মান ও প্রীতি জানিয়ে আসবেন। ২৩ শে নভেম্বর ১৯১৩ সাল,  শান্তিনিকেতনের আম্রকাননে উৎসবের আয়োজন করা হলো। কিন্তু কবির মনে কী যেন একটা ক্ষোভ জমা হয়েছিলো দীর্ঘদিন ধরে! নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না কবি। 


    কবির বিরক্তি ও ক্ষোভ স্পষ্টই প্রকাশ হয়ে পড়লো যখন তিনি শান্তিনিকেতনে প্রতিভাষণে বললেন, এই বৈদেশিক বন্যায় নৌকা ভাসিয়ে যাঁরা তাঁকে সম্মান জানাতে এসেছেন তা তিনি বাস্তব বলে মনে করছেন না। কারণ এই বন্যা কেটে গেলেই পড়ে থাকবে ভাঙাচোরা আবর্জনার অবশিষ্ট। বরং দেশের মানুষের কাছ থেকে যে-নিন্দা তিনি পেয়েছেন তাই সত্যি বলে গ্রহণ করেছেন। ফলে সম্বর্ধনার এই ফেনিল মদিরা তিনি ওষ্ঠে ঠেকালেন ঠিকই, কিন্তু অন্তরে গ্রহণ করতে পারছেন না।    


     কবির এই ধরণের ভাষণে সেদিন অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কলকাতা থেকে প্রায় সাতশো লোক এসেছিলেন বোলপুর শান্তিনিকেতনে। তাঁরা ব্যথিত হয়ে ফিরে এলেন। রবীন্দ্র জীবনীকার  প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, সেদিনটা ছিল কবির স্ত্রী মৃণালিনী দেবী ও ছোটো ছেলে শমীন্দ্র'র মৃত্যুদিন। হয়তো এই জন্যেই রক্ত মাংসে গড়া রবি তাঁর স্বভাবোচিত শান্তভঙ্গিটি  হারিয়ে ফেলেছিলেন। 

   

     দিন আসে দিন যায়। সময় প্রলেপ লাগিয়ে দেয় সমস্ত ক্ষতে। মানব হৃদয়ে নিঃসৃত হয় অনুশোচনার আগুন। ১লা ডিসেম্বর ১৯১৩ সাল,  শান্তিনিকেতনে বসেই কবি লিখলেন…. 


   " আমার সকল কাঁটা ধন্য করে 

           ফুটবে ফুল ফুটবে। 

   আমার  সকল ব্যথা রঙিন হয়ে 

          গোলাপ হয়ে উঠবে ॥" 

          ……………….. 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Saturday 23 September 2023

অঞ্জন দাস এর কবিতা // ই-কোরাস ১৪৭


 

আগুনের ধাতুরূপ

অঞ্জন দাস  


ষোল 


হয়তো এখনও কেউ  আচমকা পিছু নেয় তোর 

মরা পাতা নড়ে ওঠে 

বাতাসের গালে ঠোঁটে

ধূলো কান খুলে রাখে ভোলাদিক ঝাউ মোড়

হয়তো এখনও কেউ আচকা পিছু নেয় তোর 


চিল ছোঁ ছোঁয় ছানা সোঁ কাটে পুকুরের জল 

ঘোলা হয় খোলা ডাক

নাচে ছবি খাঁচা থাক

নীল দিকে সন্তুর সমুদ্র শোনালে অবিকল 

চিল ছোঁয় ছানা সোঁ কাটে পুকুরের জল 


পকেটে অগ্নিরেখা রকেট কেটেছিলো  ঘর

জ্বরওঠে ইস্কুলে

পিনাকী বাবুর টুলে

লিখেছিলে বাদাম আড়িয়া -টিফিনের পর    

পকেটে  অগ্নিরেখা রকেট কেটেছিল ঘর

                 ----------------------


সতেরো 


গোলাপি হাতলে ফল্ডিং মুখ ঢোকে

রাস্তা চোখের সময় ফুরিয়ে ষায়

ঢিলে হয় তার যাবতীয় প্রতিরোধ    

কেসি পাল ফোটে তোমার আল্পনায় 


কবে টিউশান কুড়ি মিনিটের হাঁটা  

মাঝে মাঝে একা প্রাচীনকালের গাছ

যতবার দেখি ততবার খুঁজি ফ্রকে   

গোলাপি হাতল ফল্ডিং খোলো আজ   


বর্ণনা ফেলে  বহুদূর  ঋতুমতী   

পাতা ফসলের  শিশির ছুঁয়েছি পায়

প্রজাপতি চোল রং ফেলেছিলে মুখে    

শিষছেঁড়া বুক এখনো যন্ত্রনায়    

            --------------------



আঠারো 


আলোর শরীর তমরোদ  খু্লে গেলো

এখনো তোমাকে রোদ নামে ডাকা যায়

বিনা  কারণে  কালো চাবুকের  ধ্বনি

খোলা ছাদ একা ঝোলে জামা আলনায়


ছাতিম মাসেই  কষ্টজনেরা আসে

যেচে নিও লাল ক্যালেন্ডারি বার 

মাঠময় কত হেমন্ত গান ছিলো   

মনখারাপের একতারা কাটি তার


কতো আর কাটি কাটা কি সহ হল

গোলাপি হাতলে ফল্ডিং মুখ ঢোকে

সুচিত্রা চোখ টিউশনি করে এলে

মাটির পগার খেজুরের বেড়া ডাকে      

              ----------------


ঊনিশ 


তরুণ সেকেন্ড  যখন তখন খেলে

কোন ঈশানী  কাটছো মেঘের ডানা

ফসলের ঘুম তুমি কাটলেই আসে

রকমারি রেখা ছিলনা বৃষ্টি গননা


বৃষ্টি এলেই ঘুম ভেঙে  যায় জলে

দানাঘরে ঢুকে সূর্য বসেছে তপে             

মেঘেরা এখন চৈত্র দোকানে আসে

সূর্যও ভাসে বৃষ্টি টেনেছো ঝোপে   


সেল কামিজে লুকিয়ে যাচ্ছো তুমি 

খালিপায়ে কতো কংক্রিট হাঁটা যায়  

তরুণ সেকেন্ড যখন তখন খেলে

ছাটমারী তোকে পগারীয় বেড়াগায়

               ------------------


কুড়ি 


কেমন  মন্ত্র কুমার টুলির ছাঁচে 

নিখুঁত গড়ছো তার ফিরিয়ে পথ   

আমি ইলেভেন রাধা পেয়ারি গাছে 

সেসব ভাবিনি মূর্খ জয়দ্রথ  


তোর লিপসটিক ভেঙেদিল গানী বীণা

স্কুল খাওয়ানোর ত্রিতল চোখ আনি

তেমন  সেসব হারানো রং এর ধাঁচ

কুমার টুলির অজানা অনেকখানি


গাছ খেজুরে  লুকোতে চাইলে কাঁটা 

জামকুল ছাতি টিপ্পনী কাটে ফেটে 

ছ্যাঁত করে ওঠে রাধা পেয়ারির ডাল

তরুণ সেকেন্ড  মট্ মট্ বোঁকা কাটে     

               -----------------

সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - অঞ্জন দাস

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪


ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...