রবীন্দ্র পরম্পরা
পর্ব - ৫০ (শেষ পর্ব)
নতুন নামে ডাকবে মোরে বাঁধবে
মহাশ্বেতা দাস
"চেয়ে দেখি হোথা তব জানালায়
স্তিমিত প্রদীপখানি
নিবিড় রাতের নিভৃত বীণায়
কী বাজায় কিবা জানি।।"
কবির শেষ ইচ্ছেপূরণ তো হলোই না। উন্মত্ত জনতার দরজা ভেঙে টানাহিজড়া করে "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি জয়, বিশ্ব কবির জয়" জয়ধ্বনি তুলে নিমতলা শ্মশানে কবির দেহ নিয়ে যাওয়া এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনার মাধ্যমে শেষ হল ২২শে শ্রাবণের শেষকৃত্য।
পরের দিন অর্থাৎ ২৩ শে শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ, কবির "মা-মণি" প্রতিমা দেবী এবং পুত্র রথীন্দ্রনাথ যাত্রা করেছেন অনেক আগেই। দুপুরের দিকে কবির দেহাবশেষ (চিতাভস্ম) নিয়ে শান্তিনিকেতনের উদ্যেশ্যে রওনা দিলেন শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রপরিকর স্থপতি সুরেন্দ্রনাথ কর, যাঁকে রবীন্দ্রনাথ "তুমি গুণী" বলে সম্বোধন করেছিলেন।
"তোমার আলোয় নাই তো ছায়া,
আমার মাঝে পায় সে কায়া,
হয় সে আমার অশ্রুজলে সুন্দর বিধুর - "
এতদিনের অনেক ঘটনার সাক্ষী, সহচর সুরেন্দ্রনাথ কর, যাঁকে এক বন্ধু শ্রীম্ভগবদ্গীতা পাঠ করতে বলায় তিনি বলেছিলেন "আমি গুরুদেব কে ছুঁয়েছি, তাঁর কবিতা পড়েছি, আমার অন্য কিছুর দরকার নেই।" সেই সুরেন্দ্রনাথ যখন কবির প্রিয় অজয় নদীর উপর দিয়ে শান্তিনিকেতনের পথে যাচ্ছেন তখন "সূর্য অস্তে পড়ে ঢুলি" পশ্চিমের আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে। বোলপুর স্টেশনে নেমে মাথায় নিলেন চিতাভস্মের কলস। "গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ" বেয়ে যখন শান্তিনিকেতন আশ্রমের দিকে যাচ্ছেন তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে, অনেক মানুষ অপেক্ষারত,..... গাছ গাছালির ফাঁক দিয়ে তারারা উঁকি দিচ্ছে, জোনাকিরা এগিয়ে এসেছে আলো দেখাতে। কবি আত্মা কি এখনো আসেনি! দূরে আছে! অন্য কোথা, অন্য কোন খানে!! ....হতেই পারে না। অনেক আগেই কবির প্রাণভ্রোমরা পাখা মেলে পৌঁছে গেছে তাঁর প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রী আর প্রানের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তির জায়গায়!
"তোমার জ্যোতিষ্ক তারে
যে পথ দেখায়
সে যে তার অন্তরের পথ,
সে যে চিরস্বচ্ছ,
সহজ বিশ্বাসে সে যে
করে তারে চিরসমুজ্জ্বল।"
……………………
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪
No comments:
Post a Comment