Saturday 26 March 2022

বসন্ত এনেছি রাই//শ্রীতনু চৌধুরী//ই-কোরাস ৪৮




শ্রীতনু চৌধুরী এর "বসন্ত এনেছি রাই" সিরিজের কবিতা


প্রথম যুগল

একটি পলাশ দেখব বলে

বিকেলের কাছে প্রণিপাত

দেবদৃষ্টির মত আলো

তোমার কপোল ছুঁয়ে

কুচকাওয়াজের মাঠে নেমে এলে

মৌরিফুলের ঘ্রানে খুলে যায়

অনাবিষ্কৃত সভ্যতা

ছন্দ বিভাজনে কপিলাবস্তু

কবিতা রমণীর হৃদয়ের কাছে

ভোরের মাধুকরি

বোধের অতীত পাখিগুলি

উড়ে এসে বসে লুম্বিনীনগরে

পলাশ শিমুলের দুরন্ত দ্বৈরথে

বুদ্ধ জন্ম হবে

মনে রেখো মহাকাল

পৃথিবীর প্রথম যুগল

জন্ম নিয়েছিল

তোমারই বোধিবৃক্ষের

মাথায় মাথায় ।


তবুও প্রণয়               

তবু মাছরাঙা এসে বসে শূন্য ডালে

এখন মৃগয়া নয়,বিরহ বিষন্ন কাল

কে কতটা ফিরিয়ে দিতে পারে,

মড়াকাঠ থেকে 

কে শুষে নিতে পারে বিভূতি বিরাগ

প্রথম মুকুল তারই পরীক্ষা সময়


গাছেরাও ভাগ করে নেয়

সংসার ও সন্ন্যাস

পুরোনো নির্মোক অবলীলায় ত্যাগ করে

সাজতে পারে যে নতুন গোঁসাই

তার আত্মপ্রেমের কাছে

গচ্ছিত রেখে জীবন ফসল

বাউলনি কিসের লোভে যেন

সে পথেই ফিরে আসে বারংবার ।


পলাশ পদাবলি

কেন্দ্রে তোমার আসনখানি পাতা

যাপন জুড়ে হৃদয় কথাকলি

বাঁধার কাজ তো মোটেই ছিল না সোজা

লিখিয়ে নিলে পলাশ পদাবলি ।

গহনে তার নিত্য আসা যাওয়া

ছিল অঢেল পরিযায়ী সুখ

তোমার আমার আকাশ ঠিকানা লেখা

চিঠি পেয়েছে প্রেমিক চন্দ্রভূক।

হেলায় ছেড়ে মেহগনি সম্মোহ

লালন করেছ পাড় ভাঙনের দুখ

লালসুতো হাতে একান্ত ক্যানভাসে

শিমুল হৃদয়ে রেখে দিলে কিংশুক।

পরিণত স্রোত পলির কথা জানে

বুকের চাদর সরিয়ে দিক কেউ

মোহনা পেরিয়ে সাগর সেঁচার খেলা

এমনভাবে খেলে না যেন কেউ।


সন্ন্যাস

বিকেল বাতাস ছিল 

মৌরিফুল শীত

কোমল গান্ধারে উঁকি 

উষসী স্ফটিক


বিমূর্ত সে নিশি গাছ 

উদ্গত শিমুল

নক্ষত্র সিঁথির কথা

ভুলেছে সিঁদুর


যেতে হবে জন্মান্তর

লক্ষ পৌষ রাত

ঊষার গৈরিক যদি

সাজায় সন্ন্যাস


জানিনা সে নীল গম

কোথা আছে মনে

তুমিই দেখাবে রাই

রাস নৃত্যাঙ্গনে ।


আহের

ভেষজ পাতার ফাঁকে

গোপন জিঘাংসা

ঘুম ভেঙে প্রথম যে অপ্রিয় মুখ 

তার চেয়ে অনেক বেশি বিষ 

স্তব্ধতায়

হিরণ‍্য প্রস্ফুট যাঁর ব্রহ্ম নির্দেশ

প্রতিটি উন্মীলনে রাই জাগো সুর তার

শরীরে শরীরে ঢালে হলুদ জীবন

তবুও শুভ্র বক

আহির ভৈরবে নিমগ্ন নিঠুর

ফিরে এসো প্রব্রাজন শেষে

তোমার চরণ প্রত্যাশায়

শুকনো পাতার উপর

থরে থরে সাজানো আছে

সোনাঝুরি নূপুর ।

.................


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - সুকান্ত সিংহ

ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614


Thursday 17 March 2022

বসন্ত ছুঁয়ে যায় মনে // ই- কোরাস ৪৭




দিও

লিপি সেনগুপ্ত 



আজ সব খুলে দিও,

 কোন ফুল রেখো না আড়ালে

ভূ-মধ্য সাগর যদি চাই, দিও

দু'হাত বাড়ালে। 

দ্বিপ্রহরে যদি চাই

গোধূলি বেলার রাঙা ঠোঁট

গোধূলিতে জ্যোৎস্না যদি চাই

কাঠের চেয়ারে বসে

যদি বলি হতে চাই 

কীর্তিনাশা নদী

সমস্ত কল্লোল দিও

কোনো ঢেউ রেখো না আড়ালে। 

ভূ-মধ্যসাগর যদি চাই, দিও

দু'হাত বাড়ালে।                           

                                         —পূর্ণেন্দু পত্রী

 

বসন্তের সন্ত' রূপটি  আমাকে বারবার টানে।সে তার সমস্ত সঞ্চয়টুকু অকাতরে যেন বিলিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির দ্বারে।নিজের সবটুকু বিলিয়ে সে নিঃস্ব,রিক্ত। গৈরিক মাধুর্য দু'হাতে ছড়িয়ে দিয়ে,রাঙিয়ে দিয়ে,মাতিয়ে দিয়ে আমাদের মন প্রাণ ভরে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।এই বসন্ত তাই উৎসবের।বসন্ত প্রেমের। বসন্ত উল্লাসের।সে দানের পাত্র উপুড় করে দিয়েছে। আমরা আকুল হয়ে চেয়েছি তার কাছে....

"ভূ-মধ্যসাগর যদি চাই, দিও

দু'হাত বাড়ালে। " 


আপন করে যার কাছে চাওয়া যায়, বিশ্বাসে যাকে কাছে পাওয়া যায়, প্রেমে যার আলিঙ্গন কামনা করি সে' তো এই বসন্তই।সে' সন্ত'ও।

তাই চারিপাশের নানারকম অশান্তি, অপ্রাপ্তি, হারানোর মাঝেও এক মিলনের ফল্গুধারা বয়ে যায় এই বসন্তেই।সে যে দু'হাত ভরে দিতেই এসেছে। নেবে না তো কিচ্ছুটি!

সে রূপে রসে বর্ণে গন্ধে মাতিয়ে দিয়ে বলছে কানে কানে…


আমার তো কিছু নেওয়ার ছিল না

কারো কাছে

মুঠি খুললাম তাই ,শুধুই ফিরাতে।


তাকে বরণ করি প্রেমে।আকাশ রাঙিয়ে দিয়ে সে'ও তো সেই ডাকেরই প্রতীক্ষায়। তাই তো তাকে এমন করে চিনি। গভীরে অনুভব করি...


"গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী, 

কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী। "


বসন্তের ছোঁয়ায় জেগে উঠুক প্রাণ, গেয়ে উঠুক পাখি, দোলা লাগুক মনে, রঙ লাগুক সম্পর্কে…

….................


বসন্ত এবং 

দেবশ্রী দে



শীতকালের জড়োসড়ো ভাবটা কাটতেই সবার মধ্যে বসন্ত বসন্ত বাই জাগে। স্পেসিফিক ফুরফুরে হাওয়াটা না এলেও কুছ পরোয়া নেহি। সামনে খোলা জানলা আর পেছনে স্ট্যান্ড ফ্যান। হাতে সঞ্চয়িতা কানে হেডফোন..বসন্ত এসে গেছে।

গ্রামের দিকে শিমুল-পলাশ মার্কা ল্যান্ডস্কেপ আর কু- কু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যাপারটাকে জমিয়ে দেয়। বেরঙা নদীতে দোলের দিন একগাদা রামধনু ছেড়ে দেয় কচি-মাঝারি-বুড়ো। 

শহরে সেসবের বালাই নেই। ফুল নেই। নদী নেই। নেই কোকিলও। শুধু কাক আর গুটিকয় চড়াই। একটা কাককে সেদিন প্রশ্ন করেছিলাম সে বসন্ত বলতে কী বোঝে। উত্তর দিল কিস্যু না, স্রেফ কোকিলের কারসাজি। চড়াইগুলো আরও প্র্যাকটিক্যাল। ওরা শুধুই খড়কুটো চেনে।


যে হলুদ পাতাগুলো নতুনকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে আকচার মাটিতে ধুলো খায়, তাদের সাথেও কথা বলে দেখেছি ওরা জাস্ট নিয়ম মেনে চলে, চলতে বাধ্য হয়। হলুদ আর সবুজকে পাশাপাশি তো দিব্যি মানায়। যে মেয়েটা লাভলেটার লেখার সময় এসেন্স মাখাত আর যে ছেলেটা হোয়াটসঅ্যাপ-এ রেডহার্ট স্টিকার পাঠায় , তফাত কোথায়। 

সবাইকেই তো কোথাও না কোথাও বসন্ত ছুঁয়ে যায়...

………...........


যখন বসন্ত উঠোনে

খুকু ভূঞ্যা



মনখারাপ ঠিক বুনো মেঘের মতো।যত বেশি প্রশ্রয় পাবে তছনছ করে দেবে মনের মাটি। তাই আগে উচিত অন্ধকারের নিড়ান। মনে যত বেশি কুয়াশা থাকবে তত ঘন হবে জীবনের অধ্যায়।

অনেক কিছু নেই ।শীত বসে থাকে খড়ের চালায়। ঘুমের ভেতর পাতা ঝরার শব্দ। আঁধারের ঘরদোর নিয়ে দিনরাত্রির যাপন।


তবুও শীত শেষে নতুন পাতা ফুটলে মন থেকে মুছে যায় বিবর্ণতা।আমের মুকুলে মৌমাছির গুনগুন, কোকিলের কুহু কানে শুনতে শুনতে মনে হয় কোথাও যেন বাঁশি বাজছে।সুর পেয়ে যাচ্ছে সমগ্র জীবন। নতুন পাতা আর সবুজ ধানমাঠে ডুবে গেলে চোখ, নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়না আর।


বসন্ত যৌবনের অক্সিজেন।

জরা জীর্ণতা ধুয়ে মুছে চোখে পরিয়ে দেয় প্রেমের কাজল। মৃদুমন্দ বাতাস প্রেমিকের পরশ হয়ে সারা শরীরে মাখিয়ে দেয় আরোগ্য শুশ্রূষা।

দুঃখ শরীরের আটপৌরে পোশাক।একে ত্যাগ করে কেউ চায়না নগ্ন হতে। অশ্রু থাক, থাক ঝড় প্লাবন খরা দহন। আসুক হেমন্তের সন্ধ্যা। শিশির ঝরুক। ঝরঝরিয়ে ঝরে পড়ুক পাতা। বিবস্ত্র সময়কে নববধূর মতো সাজাতে তুমি এসো হে প্রিয়, চির নবীন ভাস্বর স্বজনের বেশে--

……….......


বসন্তের চিঠি

কবিতা সামন্ত



অমোঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে যখন গাছেরা অমৃতবাণীর কথা বলে,আমি মাকে চিঠি লিখি। মা তোমার ওখানে বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে? এখানে শহরের ইট পাথরের মাঝে বসন্ত আসেনা। মা উঠোনের সজনে গাছটা এখনো আছে তো? বসন্ত এলে তুমি বুঝবে কীভাবে?

উঠোন ভর্তি সজনে ফুলেরা ধুলোয় গড়াগড়ি দিচ্ছে? তুমি কী গরম গরম ভাতের সঙ্গে সজনে ফুলের বড়া বানিয়েছো?

বাঁদিকের পুরানো নিম গাছটায় নতুন কচি পাতা এসেছে?

আলুভাতের সঙ্গে নিমপাতা ভাজা খুব ভালো লাগে জানো?

জানি তুমি বলবে আমি পছন্দই করিনি কোনদিন। তুমি জোর করে খাওয়াতে এই বসন্তে। বাবার হাতের সেই আম গাছটায় মুকুল এসেছে? রাস্তার মোড়ের কৃষ্ণচূড়া গাছটা ফুলে ফুলে ভরে গেছে নিশ্চয়ই? তোমার মনে আছে?আমরা ভাইবোনেরা কতো কাটাকাটির খেলা খেলতাম ওই ফুল নিয়ে? মা কোকিলের ডাক শুনতে পাও? শুনেছি বসন্তে পলাশ ফুল ফোটে। আমাদের ওখানে তো পলাশ গাছ নেই কিন্তু আমি দেখেছি পলাশে গাছ। সেবার ট্রেনে যেতে যেতে পলাশের বন দেখেছি। কতো লাল লাল পলাশ ফুল ফুটে আছে।

……….......


বসন্ত ছুঁয়ে যায়ঃ খোলা জানালায় গোলাপি প্রেম

তাহমিনা শিল্পী 



যদিও পল্লীকবি জসিম উদ্দিন বলেছেন,“ফুল  নেয়া ভাল নয় মেয়ে। ফুল নিলে ফুল দিতে হয়, – ফুলের মতন প্রাণ দিতে হয়। যারা ফুল  নিয়ে যায়, যারা ফুল দিয়ে যায়, তারা ভুল দিয়ে যায়, তারা কুল নিয়ে যায়।"

তবুও প্রেমিক মন ফুল চায়,ফুল দেয়।ফুলে-ফুলে ভালোবাসা বিনিময় করে।আর যদি ফুলের সাথে একাত্ম হয় কোকিলের কুউ,কুউ ডাক।তবে মন মেতে উঠে বসন্তের সব্বোনেশে খেলায়।

আমার এ খেলা নতুন নয়।এ খেলার শুরু সেই কিশোরীবেলায়...

আমাদের বাড়ির তিনতলার যে ঘরের সামনে দিয়ে রাস্তাটা এঁকেবেঁকে রেল লাইন অবধি গিয়েছে আমি থাকি সেই ঘরটাতে।জানালার পাশেই বুড়ো শিরিষ গাছ।প্রকৃতিতে বসন্ত এলে শিরিষ গাছটির কোন এক ডালে নিজেকে লুকিয়ে রেখে একটি কোকিল সারাদিন ডাকে।আকুল করা সে ডাকে আমি অংকের সুত্র ভুলে যাই,রসায়নের বিক্রিয়া ভুলে যাই।আনমনে কোকিলের সাথে সুর মেলাই, কুউ...কুউ....কুউ...কোকিলটিও আমার সাথে গলা মেলায় কুউ...কুউ...কুউ...

আনমনে জানালায় তাকিয়ে থাকি,কোকিল খুঁজে যাই। ওমা! কোকিল কোথায়! শিরিষ গাছের গায়ে হেলান দিয়ে রাখা একটি পুরনো সাইকেল!

সাইকেলের হাতলে ঝুলানো এক ঝুড়ি পলাশ ফুল! আমি চুপিচুপি গিয়ে কোচর ভরে ফুল নিয়ে আসি,সুঁতো দিয়ে মালা গাঁথি।গয়না বানিয়ে হাতে,গলায়,কানে পড়ি।জানালার ধারে দাঁড়িয়েও আনমনে গুনগুন করি- ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়...

সকাল-বিকেল পলাশবনের পাতারা নেচে ওঠে তার আড় বাঁশির সুরে।যে বাঁশি বাজায় দূর থেকে তার মুখটা অস্পষ্ট। তবুও বুঝতাম সে সাইকেল মালিক।তার মনযোগ এই খোলা জানালায়।

এভাবে চলে গেলো গোটা বসন্ত।তারপর একদিন খোলা জানালায় দাড়ালাম।বহুদূর অবধি দেখা যায়.... কোথাও কেউ নেই।

খুব প্রিয় কেউ চলে যাবার পর বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।চাপচাপ বেদনা ঘুরতে থাকে এ ঘর, সে ঘর।আজ তেমন একটা  সুর বাজছে মনে।কোন কারণ নেই।তবুও বাজছে,গভীরভাবে।

  …….................


বসন্ত ছুঁয়ে যায়

সোমা প্রধান



 মাধ্যমিক  শেষে বিস্তর অবসর।  আকাশে বাতাসে শিমুল পলাশ গন্ধ।  কিশোরী সতেরোর মনে নতুন আলোর ছোঁয়া। স্কুল পেরিয়ে শহরের বোডিং কলেজের হাতছানি। আরও খানিক দূরে বুক দুরুদুরু মনখারাপ। ছেড়ে যেতে হবে ঠাকুমার খিলি পান, দিদির হাতে বাঁধা বিনুনি আর  আর চিলেকোঠার খেলনাবাটি।

 পরদিন দোল।

 ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে যায় সতেরোর।পাড়ার কচিকাঁচাদের কলকানে চমকে ওঠে সে। জেঠুমনি খালিপায়ে বারান্দায় চেয়ারে বসে। কচি কচি হাতের আবির স্পর্শসুখের ঘরে আনন্দ প্রণাম সারে। কাকিমার রসুইখানা  গরম ঘুঘনির গন্ধে ম ম করে... উঠোন জুড়ে রংবেরঙের আলপনা। ঠাকুমা গোপালের নাড়ু নিয়ে হাতে দেন সবার। একটু পরে দাদার বন্ধুরা আসবে, ভাবতেই মুখ লাল হয়ে আসে সতেরোর।

দুপুরের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।সবাই যখন ব্যস্ত, কোন এক ফাঁকে ফিসফিসিয়ে কেউ বলে ভালোবাসো?

শুনেই বুক ধড়ফড় করে, লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসে, একছুট্টে চলে যায় চিলেকোঠায়, আলোআঁধারে প্রিয় টেডিটাকে জড়িয়ে চুপ করে বসে থাকে অপেক্ষায়...

তারপর ধীরে ধীরে সে কাছে এসে রাঙামুখ তুলে ধরে তার করপুটে,  বন্ধ চোখের পাতায় চুমু এঁকে দিয়ে জানতে চায়

"ভালোবাসো আমায়?"

সব দুঃখ ভুলে সেদিন  সতেরো হারিয়ে যায় একুশের গহীনে।

বসন্ত ছুঁয়ে যায় পাতায় পাতায় শিরায় শিরায়...

…..............


দোলা দিয়ে যাও

সোনালী মিত্র 



"ওগো দক্ষিণ হাওয়া ও পথিক হাওয়া, দোদুল দোলায়  দাও দুলিয়ে। নূতন পাতার পুলক ছাওয়া পরশখানি দাও বুলিয়ে"

শরীর জুড়ে কাব্যহীন যন্ত্রণার নীরব কান্না। শুষ্ক নিস্তেজ হৃদয় আজ অর্থহীন দীর্ঘশ্বাসের দোলায়।আমি চেয়ে থাকি তোমার অপেক্ষায় । তুমি কেমন ভাসাবে আমায় তোমার প্রেমের জোয়ারে? এই নিস্তেজ আবরণহীন শরীর মুখরিত করে তোলো তোমার রঙে, তোমার পরশ দিয়ে নতুন অলঙ্কারে ভরিয়ে দাও নবসাজে। দেখো, দেখো ঐ যে নীল আকাশ কেমন রঙিন আলোয় আলোয় আলোকিত। 

আমি  জানি, তুমি আজ এসে দাঁড়িয়েছো আমার দক্ষিণ দুয়ারে।সেই পদধ্বনির মধুর সুরে ঢেকেছি সর্বাঙ্গ আমার  লাল চেলীতে, স্বলজ্জ নয়নে তাকিয়ে দেখি ঋতুরাজ তোমাকে। এই রঙিন হয়ে ওঠা যে তোমাকে ঘিরেই রোমাঞ্চিত হই বারে বারে ।পুলকিত মনে মনে বাসন্তী পরাগ উড়িয়ে প্রজাপতির পাখায় এঁকে দিই সোহাগভরা চুম্বন। 

তোমার জন্য পাগল হাওয়া, তোমাতে আমাতে দুলবো দোলায়, গাইব দুজনে ভালো লাগার কথামালায়।

যেদিন তুমি চলে গেলে, আমার শরীর থেকে খসে খসে পড়লো সব আভরণ এক লহমায় মুছে গেলো সব রঙ। সংলাপ গেলো হারিয়ে। যে কুহুতানে মোহিত করে তুলতো  বার বার উজ্জীবিত হতাম ওরাও গেলো তোমার পথের সঙ্গী হয়ে। আমার জীর্ণ শরীরে ছায়া নেমে এলো সেদিন। 

ঋতুরাজ, আজ আবার আমি তোমাতেই করবো বাস তোমাতে বাঁধব ঘর এসো তুমি এসো আমার হৃদয় মাঝে। রাখো হাতে হাত ফুলো বন্ধনে।

……...............


বসন্তদিন

অন্তরা ঘোষ



শরীরে পুরুষ,অন্তরে নারী হওয়ার কারণে শ্রীমন্ত যখন সেমন্তী হবে বলে ডাক্তারের সাথে কথা এগোলো, তখনই তার বাবার মেল- ইগো ধাক্কা খেলো সজোরে। নিজেকে সরিয়ে নিলেন তিনি। ডিভোর্স দিলেন শ্রীমন্তর মাকে। শ্রীমন্ত সেমন্তীতে রূপান্তরিত হওয়ার সবটুকু সময় পাশে ছিলেন মা।সেমন্তী তারপর থেকে একলা হতে শুরু করলো।নিজের বন্ধু,আত্মীয়,কাছের মানুষেরা দূরত্ব বাড়ালো।শুধু মা আরো বেশি করে জড়িয়ে থাকলো তাকে। কিন্তু এক বসন্ত পূর্ণিমায় সেই আশ্রয়টুকুও হারালো সেমন্তী। তার জীবনের অন্ধকার দূর করেছিলেন যে মা, তিনি রাতের অন্ধকারে ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়ে চলে গেলেন।সেমন্তী এত কাছে থেকেও বুঝতে পারেনি ভেতরে ভেতরে মায়ের হৃদয় এমন জ্বলে-পুড়ে আংরা হয়ে গেছে।


তারপরেও কয়েকটা বসন্ত পেরিয়ে গেছে। কর্মজীবন ছাড়াও বেশকিছু সমাজসেবামূলক কাজে সারাবছর নিজেকে ডুবিয়ে রাখে সেমন্তী। কিন্তু প্রতি বসন্তে শান্তিনিকেতন তাকে ডাকে আগুনে ফাগুন রূপ নিয়ে। সে আসে, সে ভাসে, খোয়াই-এর তীর জুড়ে রুদ্র পলাশের রূপে। গতকাল রাতে সেমন্তী যে রিসর্টে এসে উঠেছে,সেখানে মাঝরাতে হঠাৎ একটা মরমী সুরে ঘুম ভেঙে যায় তার।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখে,সামনের একটা ব্যালকনিতে আধো অন্ধকারে আবছা অবয়ব। সুর তোলার চেষ্টা করছে মাউথ অর্গ্যানে। ভেঙে যাচ্ছে সুর। ফের চেষ্টা।উঠে দাঁড়াচ্ছে ছায়ামূর্তি। হন হন করে হেঁটে বেড়াচ্ছে।আবারও চেষ্টা।চেয়ারে বসে বসে সৃষ্টির নেপথ্যের এই আলো অন্ধকার মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থাকল সেমন্তী।

 কয়েক বছরে এখানে সেমন্তীর বেশকিছু বন্ধু হয়েছে,যাদের সাথে বসন্তোৎসবে আবির খেলে সে। নাচে-গানে হুল্লোড়ে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়।তারপর রঙ ধুয়ে ফেলতে যায় খানিকটা সময়।তবুও কী সব রঙ ধুয়ে ফেলা যায়? 

শেষ দুপুরে বেরিয়ে পড়ে সেমন্তী প্রতিবারের মতো। তার পরিচিত সেই নির্জন খোয়াইয়ের তীরে। এদিকটা নির্জন বলে সেমন্তীর বেশি পছন্দ।কিন্তু খোয়াইয়ের দিকে এগোতে এগোতে শুনতে পেল সে,গত রাতের সেই মাউথ অর্গ্যানের সুর। "ভ্রমর কইয়ো গিয়া/শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে অঙ্গ যায় জ্বলিয়ারে/ভ্রমর কইয়ো গিয়া..."।

 আশ্চর্য সুরের আলাপন।সুরের হিল্লোলে খোয়াই যেন নেচে চলেছে,রুদ্রপলাশ মাথা দুলিয়ে প্রকাশ করছে অন্তরের আনন্দ। মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসল সেমন্তী সুরের  যাদুকরের সামনে।এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে বেশকিছু রুদ্রপলাশ। দু চোখ ভেসে যাচ্ছে সেমন্তীর।বুক জুড়ে এতো কান্না কোথায় থমকে ছিল সে জানে না। হঠাৎ চোখ খুলল ছেলেটি।অদ্ভুত এক মায়াবী চোখ।একেবারে সামনে এমন এক সমর্পিতপ্রাণ শ্রোতার আবির্ভাব সে টেরও পায়নি। নিজেকে সামলে নেওয়ার কোনো ইচ্ছে সেমন্তীর ছিলনা।পড়ে থাকা একটা রুদ্রপলাশ ছেলেটার হাতে দিয়ে বলল,

" শুভ বসন্তদিন।"

আলোকিত সেই মুহূর্তে, খোয়াইয়ের তীরে, অশোক- কিংশুক-রুদ্রপলাশের মাঝে, বসন্ত ছুঁয়ে গেল দুজনের হৃদয়।

…….............


আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে

সুজাতা চক্রবর্তী 


শীতের শুষ্কতায় বিবর্ণ , রুক্ষ প্রকৃতির বুকে জেগে ওঠে প্রাণের হিল্লোল বসন্তের নিঃশব্দ আগমনে, দখিনা মলয় ইঙ্গিত দেয় বসন্ত আগমনের।ধূসর , বর্ণহীন পাতারা ঝরে পড়ে, নতুন আশায় ছেয়ে যায় গাছেদের শাখাপ্রশাখা কচিকচি পাতায়। কংক্রীটের জঙ্গল ছাড়িয়ে সবুজ বনানীর দিকে হেঁটে গেলে এক অপূর্ব গন্ধবিধুর বাতাসের সন্ধান পাওয়া যায় বসন্তের দিনে। বসন্তের রঙীন ফাগের স্পর্শে সেই কোন সুদূর অতীত কাল থেকে দোল উৎসব গোটা ভারতের একটি প্রাচীন প্রাণোচ্ছল উৎসবে পরিণত হয়েছে। রাজস্থানে রাজপুতদের কাছে হোলি খেলা কার্যত প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছিল। শুধু রঙেই নয়, হোলিখেলাকে কেন্দ্র করে রাজপুতদের জাতীয়তাবোধের পরিচয়েও বারবার দেখা গেছে। জাতির সম্মান পুনরুদ্ধারে ভূনাগ রাজার রানী  ' পত্র দিল পাঠান কেসর খাঁরে / কেতুন হতে ভূনাগ রাজার রানী / লড়াই করি আশ মিটেছে মিঞা ?/ বসন্ত যায় চোখের উপর দিয়া/ এসো তোমার পাঠান সৈন্য নিয়া/ হোরি খেলব আমরা রাজপুতানী '।কেসর খাঁ উৎফুল্ল হয়ে দলবল নিয়ে হোলি খেলতে এলেন।মুখের হাসি যেন ঝরনার জল, বয়েই চলেছে রঙের রঙীন উৎসবে রেঙে উঠতে চলেছেন যে! কিন্তু কেসর খাঁ রঙীন হলেন অন্যভাবে "শুরু হল হোরির মাতামাতি / উড়তেছে ফাগরাগ সন্ধ্যাকাশে / নববরণ ধরল বকুলফুলে / রক্তরেণু ঝরল তরুমূলে/ ভয়ে পাখি কূজন গেল ভুলে / রাজপুতানীর উচ্চ উপহাসে "। কেসর খাঁ আর সৈন্যদের দেহ রক্তের ফাগে রঙীন হল।বেদ,পুরাণ, শব্দপুরাণ, ভবিষ্যত পুরাণ , মহর্ষি জৈমিনির মীমাংসা সূত্র প্রভৃতিতে হোলি উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়‌।স্কন্দপুরাণ বলছে , হোলিকা রাক্ষসী হরিপ্রেমে মাতোয়ারা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য। প্রহ্লাদ পুড়লেন না এতটুকুও; বরং পুড়ে মারা গেল হোলিকা রাক্ষুসী স্বয়ং।এর থেকেই নাকি হোলি উৎসবের শুরু।পুরাণ থেকে জানা যায়, শ্রীকৃষ্ণ মেড়া তথা মেষাসুরকে বধ করার পর যে আনন্দ-উৎসব হয়েছিল সেই মেড়া তথা পরবর্তীকালের অপভ্রংশে  'নেড়া পোড়ানো' উৎসবের সেই ছিল সূচনা। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় তিনশো বছর আগের এক ভারতীয় গুহালিপিতে দোল উৎসবের কথা আছে‌।এই গুহালিপি রয়েছে মধ্যপ্রদেশের রামগড়ে। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে বাৎসায়ন রচিত কামসূত্রে পাওয়া যায় দোল খেলার কথা।দেবতাকে কেন্দ্র করে রঙের উৎসবে মেতে ওঠার গল্প। চতুর্থ শতকের শেষ দিকে এই হোলি উৎসবকে শবরস্বামী তাঁর দর্শনশাস্ত্রে বর্ণনা করে গেছেন 'হোলক উৎসব' বলে‌।

শুধু দোলের আনন্দঘন ছোঁয়াতে না বসন্ত আমাদের নতুনভাবে বাঁচতে সাহায্য করে, নতুন উৎসাহ জোগায় আমাদের অন্তরে। সে জন্যই হৃদয় বলে ওঠে কখনও ' হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে / ময়ূরের মতো নাচেরে '। জীবন সুখ ও দুঃখের ফুলে গাঁথা মালা। প্রাণফাটা কষ্ট, দুঃখ, দুর্দশা এগুলো জীবনের আকাশে ভীড় করে সময়ের পথ ধরে। জীবন,সময় দুই পরিবর্তনশীল। বসন্ত বার্তা দেয় দুঃখ,দৈন্য,তুচ্ছ হোক সমস্ত কালিমা মুছে যাক আনন্দরসে ভরে উঠুক জীবনের পাত্র‌। বসন্ত উৎসাহের  জাদুকাঠি নিয়ে মনকে ছুঁয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্রবধূ প্রতিমাদেবী ঠাকুরবাড়ির দোল উৎসব সম্পর্কে লিখেছেন , "দোলপূর্ণিমারও একটি বিশেষ সাজ ছিল।সে হল হালকা মসলিনের শাড়ি,ফুলের গয়না আর আতর গোলাপের গন্ধমাখা মালা। দোলের দিন সাদা মসলিন পড়ার উদ্দেশ্য ছিল যে, আবিরের লাল রং সাদা ফুরফুরে শাড়িতে রঙিন বুটি ছড়িয়ে দেবে।" কন্ঠ থেকে কন্ঠে সেদিন ধ্বনিত হত : 

                " ওরে আয়রে তবে 

            মাতরে সবে আনন্দে

             আজ নবীন প্রাণের বসন্তে

             পিছনপানের বাঁধন হতে 

              চল ছুটে আজ বন্যাস্রোতে 

               আপনাকে আজ দখিন হাওয়ায়

               ছড়িয়ে দে রে দিগন্তে ..."।

ইউরোপে বসন্ত উৎসবে দারুন জাঁকজমক। স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় বসন্ত সমাগমে শুরু হয়  'লাস ফাইয়াস '।স্পেন ছাড়াও আয়ারল্যান্ড,ক্রোয়েশিয়া , বসনিয়া, রোমানিয়া প্রভৃতি দেশেও হইহই করে উদযাপিত হয় বসন্ত উৎসব। মেক্সিকোতে বসন্ত ঋতুকে বলা হয় ' সান মার্কোস'। জাপানে বসন্তকালে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় চেরি গাছ।চেরিফুলকে জাপানিরা বলে   'সাকুরা'। এই ফুল তাদের কাছে বড় পবিত্র, সৌভাগ্যেরও প্রতীক। ইরানের প্রাচীন ' নওরোজ ' উৎসব আজ ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে‌। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ ২০১০ সালে দিনটিকে ' আন্তর্জাতিক নওরোজ দিবস ' এর স্বীকৃতি দিয়েছে।

   

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড বসন্তকে স্বাগত জানায় ' সংক্রান ' উৎসবের মধ্যে দিয়ে। বাংলার ' সংক্রান্তি' এখানে ' সংক্রান '। বেশ মজার এই উৎসব। আমরা যেমন দোলের দিন একে অন্যের গায়ে আবির ও রং মাখাই , সে দেশের মানুষ জলে নেমে পরস্পরকে জল ছিটিয়ে ভিজিয়ে দেয়। উদ্দেশ্য , বিগত বছরের রাগ-অভিমান-হিংসা সব ধুয়ে ফেলে শুদ্ধ হয়ে ওঠা। নতুন করে সব শুরু করা।


বসন্ত শুধু ঋতু পরিবর্তন নয়। যে দেশে যে রূপেই বসন্ত আসুক না কেন বসন্তের মর্মবাণী চিরন্তন।যা কিছু জীর্ণ, পুরোনো তাকে ত্যাগ করে সজীব ও নবীনকে বরণ করে নেওয়া।মারী জর্জর যুদ্ধের গন্ধ মাখা পৃথিবীর বুকে আবার জেগে উঠুক বসন্তের পাগল করা সুর , চেতনার রং ছুঁয়ে যাক বসন্ত মানবমনকে ....

…….


আজি দখিন-দুয়ার খোলা

অমৃতা খেটো



কেয়া বনে চুপটি করে বসে থাকা কোকিল যখন মিষ্টি সুরে ডেকে ওঠে আর আমের মঞ্জরীতে ও পেয়ারা ফুলে মৌমাছি, ভ্রমরের আনন্দময় আনাগোনা শুরু হয়ে যায় তখন হঠাৎই মন অকারণ  পুলকে নেচে ওঠে....সত্যিই তো! "বসন্ত এসে গেছে"।

শীতশেষের একটু ঠান্ডা ভাব, রোদেলা দিন,

 কচিপাতার উল্লাসে আর অশোক, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার

রক্তিম আহ্বানে দক্ষিণের বাগান হেসে উঠেছে।ঝাঁক

ঝাঁক রঙিন প্রজাপতিরা ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে।

উদাসী বাতাস কানে কানে মৃদুস্বরে বলছে–

"বসন্তে ফুল গাঁথলো আমার জয়ের মালা

বইলো প্রাণে দখিণ হাওয়া–আগুন জ্বালা"


গত দু বছর ধরে প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে, মন ছুঁতে পারেনি। অতিমারিতে  বিশ্ব জুড়ে মৃত্যুমিছিল চলেছে, আমরা হারিয়েছি প্রিয়জনদের। তাদের যন্ত্রণা, হাহাকারে আমরা কাতর হয়েছি। আবার এসেছে বসন্ত, শুরু হয়েছে হাড় হিম করা যুদ্ধ। রঙের ডালি নিয়ে প্রকৃতি সেজে উঠেছে, টগর, বেল, চাঁপা, গন্ধরাজ, কাঞ্চন ফুলের কুঁড়ি ফুটে ওঠার

আনন্দে আত্মহারা....হাজার হাজার মানুষের কান্না শুনতে পাচ্ছি... মন ছুঁতে পারছো না গো ঋতুরাজ....

………............

       


ভার্চুয়াল

অঙ্কিতা সেনাপতি



 

ভার্চুয়ালে যাদের কথার অন্ত নেই দিনরাত,মুখোমুখি দেখা হলে তারা তোতলায়,শব্দ হাতড়ায় ক্রমাগত,মনে মনে ভাবে হয়তো যে যদি ভার্চুয়ালের মতোই একটা smiley পাঠানো যেত !তোমার সবুজ বাতি জ্বলার সাথে সাথেই টিং করে যে হাত নাড়ে রোজ,মুখোমুখি হঠাৎ দেখা হলে তার মুখের কৃত্রিম হাসিটা বেশ ধরা পড়ে তার চোখে,কেউবা আবার ঘুরেও তাকায়না ….অথচ সেইদিনই বিকেলে টিং করে প্রশ্ন আসে “কেমন আছিস?” আজব দুনিয়ার আজব ব্যাপার! যে মানুষটা চোখে একরাশ কান্না নিয়ে ঝাপসা চোখে টাইপ করে “ভালো আছি” ,তার হাসি মুখের ইমোজি টা সেবারের মতো তাকে শত সহস্র সহানুভূতি থেকে বাঁচিয়ে দেয় সে যাত্রায়। কাল তুমি মারা গেলে, রিপ লেখায় ভরে যাবে তোমার ওয়াল,তোমার প্রিয় রজনীগন্ধা নিয়ে তোমার পাশে বসে চোখের জল ফেলবে কজন? বলতে পারো? মজার ব্যাপার এই যে,হয়তো যে রিপ লিখলো তোমার ওয়ালে সে ব্যাস্ত পার্টি করতে অথবা তার প্রেমিকার সাথে … বক্তব্য কিছুটা এরকম “বাবু একটু দাঁড়াও,রিপ(RIP) টা পোস্ট করেই আসছি,নইলে লোকে অসামাজিক বলবে” … দাদা বলছি একটু ভুল বললেন,ওটা অসামাজিক নয়,ওটা অভার্চুয়াল হবে !তোমার ছবিতে লাভ রিয়্যাক্ট করা মানুষগুলো আদৌ তোমায় ভালোবাসে কি? নাকি সেটাও লোক দেখানো? ভেবেছো কখনো? ভাই খুব বিপদে পড়েছি বললে ছুটে আসবে কজন? ভালোবাসা জাহির করার জিনিস নয়,সযত্নে আগলে রাখার আবেগ । প্রত্যেকটা লোক দেখানো লাভ রিয়্যাক্টে ভালোবাসা বড্ড মেকি,খেলো হয়ে যায় ! ভালোবেসে একটা ফোন করেও তো জিজ্ঞেস করা যায় “কেমন আছিস” ...যায়না? দেখা হলে একগাল হাসি যে ভালোবাসা মেশানো থাকে সেটা টের পেয়েছ কখনো? পারলে একটু অভার্চুয়াল হও,জীবন খুঁজে পাবে …!!লোক দেখানোর প্রতিযোগিতা চলছে অনবরত প্রতিদিন,তুমি আমি সবাই অজান্তেই তার অংশ হয়ে পড়ছি হয়তো ! কার অডি গাড়ি আছে,কার কততলা ফ্ল্যাট,কার প্রেমিকের কেটিএম আছে ...মায়ের হাতের রান্না স্ট্যাটাস দিই বা না দিই, ফাইভ স্টারে ডিনার করলে পোস্টের সাথে হোটেলের নাম দেয়া মাস্ট...আরে ভাই লেভেল আছে,দেখতে হবেনা !!ভার্চুয়ালর কৃত্রিমতায় হারিয়ে যাচ্ছে মনুষ্যত্ব,আমিত্ব … অবশ্যই ভার্চুয়ালের অংশ হোন,তবে লোক দেখানোর নয় ।

ভেতরের মশলা টা এখনও ম‍্যাটার করে … লোক দেখানো টা সাময়িক ।

……….............

বসন্ত' ছুঁয়ে যায় মন

রুবি সিংহরায়



ঋতু বৈচিত্রের সমারোহে ছয়টি ফুলে গাঁথা।   তার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার *বসন্ত*  হালকা হাওয়া কুহু কুহু কোকিলের ডাকে মিষ্টি ভোর, পলাশ গাছের মাথায় মুকুটে পলাশের থোঁকা  ফুল, মন উচাটন, পিয়ামন বলে *বসন্ত* এসে গেছে। বসন্তের সুফলে মন হারা,পাগল পারা, কত প্রেম, কত ভালবাসা, কত সুখ স্মৃতি বসন্তের ডালে বাসা বাঁধে। *বসন্ত* তার ডালি নিয়ে প্রতি বছর আসে, নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা আর কিছু ভালোবাসা নিয়ে মন পাগল করা প্রিয়  বসন্ত। বসন্তের কুফল সে অতি মারাত্মক। আঁচড় কাটে শরীরে, ছাপ রেখে যায়, আবার কখনো ছবিও হয়ে যায়। ঝরা পাতার মতো ঝরে যায় কত প্রেম নিঃশব্দে নীরবে একবুক কল্পনায়। বিষাদের সুর তখন কোকিলের কুহুতান মনে হয় কাল কলতান, এভাবেই বসন্ত আসে যায়।

তবুও মানব জাতির মনের এক অমোঘ আকর্ষণ সুন্দরভাবে বাঁচার স্লোগান বসন্ত এসে গেছে। রঙীন হয় মন, পলাশের রঙে,দোল,হোলি উৎসব এই বসন্তে,  তাইতো কবি বলেছেন - *ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত*


এসো, ছুঁয়ে থাকি

মহুয়া ব্যানার্জী



বুকের ভেতর অনেক আগুন

ফাগুন চলে যায়।

বইছে বাতাস হতাশ সুরে

মন কেমনের ছায়ে।


ছুঁয়ে ফেললাম, বললেই কি ছুঁয়ে ফেলা যায়?

এই যে আজীবন পৃথিবীর  সব বর্ণ,গন্ধ ছুঁয়ে ফেলার জন্য ছুটে চলা- অথবা ছোট ছোট সুখ দুঃখের মেঘছায়ায় দুলতে দুলতে পাঁক থেকে  পঙ্কজ হয়ে ওঠা - সোনা রোদের গান আর বাগান জোড়া প্রাণের আরাম প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায় এক জন্ম থেকে আরেক জন্মে। এভাবেই মায়া জড়িয়ে থাকে শীতের নরম কম্বলের মত । ওম ছড়ায়। শীত পেরোলেই পথের বাঁকে ওই যে দাঁড়িয়ে ঋজু পলাশ কৃষ্ণচূড়ার হাত ধরে, তারা একসাথে ডাকে- ফাগুন নেবে গোওওও- ফাগুন- অশোকের পৌরুষ শিমুলের বুকে মুখ লুকায়। হতাশ বাতাসে তখন নেশার ঘোর মনখারাপের কুয়াশা মুছে দেয়। আকাশে বসন্তের রঙ ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া কিশোরের মনের ক্যানভাসে স্বপ্ন আঁকে! বাস্তবের আগুনে পোড়া গদ‍্যেরা তখন প্রেমের কবিতা হয়ে উড়ে বেড়ায়। বস্তির কিশোরীর চুল ছুঁয়ে, কিন্নরীদের আকাঙ্খা ছুঁয়ে ,কর্পোরেটের রোবটপ্রায় মানুষদের ছুঁয়ে, ফুটপাতের অভাব ছুঁয়ে বৃদ্ধাশ্রমের দিকে উড়ে যায় সেই সব কবিতারা। 

ঠিক তখনই শালের বনে , কংক্রীটের দেওয়ালে,পাহাড়ে ,মরুতে অকারণ উচ্ছ্বাস জাগে। ঋতুরাজ প্রলোভিত করে ডাকে-

   

      মন তোমাকে ছুঁয়ে দিই

এসো, সব দ্বন্দের হোক অবসান।

     বিদ্রোহ জেগে উঠুক

চুম্বনের উষ্ণতায় আদরের ব্যারিকেডে।

   ভুলে যাওয়া যাক সব ভুল,

এসো, ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকি এ অনন্ত বিস্তারে।

………...........


বসন্ত

মিঠু মণ্ডল



এখন আকাশে অনেক আলো। বাতাস জুড়ে বড্ড বাঁশির সুর। হলদে চাঁদ ইচ্ছে হলেই ঝুলে থাকে কার্নিশের সমান্তরালে। হ্যাঁ, ফাগুন এসেছে। তাই ফুল থেকে পরাগ চুরি করে প্রজাপতি। তারপর সে পরাগ মাখিয়ে দেয় কোনো ফুলেরই স্তনবৃন্তে। ঠোঁটের কোনায়। বাসন্তী বিকেলের কোমল রোদ্দুর চিরকালই ডাক দিয়ে যায় এক অনিন্দ্য জীবনের প্রত্যাশায়। মন বলে--- এসো মুগ্ধ হও। এই মুগ্ধতার কোনো দায় বদ্ধতা নেই। একমুঠো ভালোবাসার রঙে রঙিন 

হওয়া মোটেই কোনো অপরাধ নয়। এসময় সকলেই মাতাল। হয়রানি পদচারণা মিশে থাকে প্রতি পদক্ষেপে। জীবন তো একটাই। অথছ  ফুলেল কাহিনী আজো লেখা হয় নি কোনো জীবনেই। তবুও মেঘের গায়ে, গাছের পাতায় ছিটে পড়েছে অস্ত রাগের । শিমুল পলাশের বনে বনে ছড়িয়ে থাকা আবীর গুলাল দেখে বলতে ইচ্ছে হয়--- এসো দেখি ফাগুন, সকলের অস্হায়ী মনে প্রেমের একটা স্হায়ী ঠিকানা গড়ে দাও। ফাল্গুনের নিষিদ্ধ কিশোরী জোছনা। সোহাগে গাঢ় হওয়া অন্ধকারে ফেলে দিতে সাধ হয় যাবতীয় উদ্বেগ, অস্হিরতাকে। সাধ হয় বাসন্তী ভালোবাসায় কৃষ্ণচূড়া রঙ বুকে বেঁধে নিয়ে এগিয়ে আসুক শাল বৃক্ষের মতো বলিষ্ঠ কৃষ্ণ পুরুষ। যার তপ্ত নিঃশ্বাসে নির্বেদ দিন আর রুদ্ধশ্বাস মূহুর্ত একাকার হবে উচ্ছ্বাস ও দূরন্ত পৌরুষে।

সোঁদা মাটির গন্ধে, বীজ বপনের স্তরে স্তরে যে প্রাণ সঞ্চার করে বৃষ্টির পুরুষ ফোঁটা। মাটির গর্ভ সঞ্চারে তখনই তো পৃথিবীর বসন্ত। আসলে , ফাগুন সবুজ পাতার ঋতু, ভালোলাগা, ভালোবাসার ঋতু। যেখানে খুব সহজেই আমিটা - আমাদের হয়ে যায় কোনো পূর্ব শর্ত ছাড়াই।

……..................


বসন্ত ছুঁয়ে যায় মন

আভা সরকার মণ্ডল




সাইকেলের ঘন্টি শুনে চমক ভাঙলো ।

চলতে চলতে কখন যেন পাকা রাস্তার ঠিক মাঝ খানটিতে চলে এসেছি । একপাশে সরে গেলাম দ্রুত ।

হাঁটা পথের লক্ষ্য ছিল পাড়ার মধ্যেই ,পাড় বাঁধানো এবং চারিদিক উঁচু গ্ৰিল দিয়ে ঘেরা একটি খুব বড়ো পুকুর, দীঘি হতে হতেও যেটা দিঘী নয়। তবে এতে জল থাকে সারাবছর । আমার ঘর থেকে পাকা রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যায় শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার ডালে রঙের ছড়াছড়ি। পুকুরের পাড় এবং গ্ৰিলগেটের মাঝে,চারিদিক ঘিরে ,সবুজে মোড়া অনেকটা জায়গা , মাঠও বলা যায় তাকে। সেখানে একটু দূরেই শান-বাঁধানো বেদি।

ঝরা শিমুল-পলাশ বিছানো সেই মাঠে বসে গোধূলি-আলোর ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা দেখতে দেখতে সন্ধ্যা পার করা আমার নেশা । জলে মাছের খেলা,আর আকাশে রঙের মেলা দেখতে দেখতে মাথায় থাকা সাংসারিক দুঃশ্চিন্তার বোঝা,হালকা হয়ে মেতে ওঠে বসন্ত যাপনে ।

সারাবছর শিমুল-পলাশ না থাকলেও এখানে থাকে নানারকম ফুল এবং পাখি। দুষ্টু ছেলের দল শান্ত হয়ে ছিপ হাতে  বসে থাকে স্বচ্ছ জলের দিকে তাকিয়ে । আধো আধো বুলি ঠোঁটে মেখে মা-ঠাকুমার হাত ধরে হেঁটে বেড়ায় শিশু । লাঠি ঠুকে ঠুকে বয়স্ক নারী পুরুষ চলে আসেন হিসেব-নিকেশ হীন জীবনের স্বাদ নিতে।

স্বপ্ন মাখা চোখে দু-চার জোড়া উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে বাদামের খোসা ভাঙতে ভাঙতে, না ফুরোনো কথাগুলো শেষ করার বৃথা চেষ্টা করে যায় আপ্রাণ ! আমি বিভোর হয়ে চেয়ে থাকি। মন কেমন করা হাওয়া এসে অগোছালো এই আমাকে আরও এলোমেলো করে দেয়। এখান এসে বসলে আমার হৃদয় সমৃদ্ধ হয়, পূর্ণ হয় সুখে ।

এখানে এলে বসন্ত ছুঁয়ে যায় মন --সব ঋতুতেই!

……….............



বসন্ত ছুঁয়ে যায় মনে

শ্বেতা সরকার



শূন্য মনের বিষাদ ঝরিয়ে দিয়ে থুরথুরে শীত বুড়ির উত্তুরে হাওয়ার নাকে ঝামা ঘষে আসে বসন্তের ছোঁয়া। সেই ছোঁয়ায় জেগে ওঠে নতুন পাতা আমের মুকুল শিমুল পলাশ আর কবির কলম। উদয় অস্ত  ইঁদুর দৌড়ে ক্লান্ত মন ভেসে যায় ফাগুন সাঁঝে বাসন্তী সাজে আবীর নেশায়।কংক্রিটের জঙ্গলেও ইতিউতি ভেসে আসা কুহু তানে মন কেমনের গান। এ সময়ে মন ভারি উড়ুউড়ু প্রেম শুরু তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।কবির কলমে প্রেম আখরে কত না ছন্দমালা। তবু আজ কলম থমকায় সবুজের আর্তনাদে আগামীর আশঙ্কায়। কলম থমকায় রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্রে মানবতার হাহাকারে। তাই আজ দাম্ভিক সভ্যতার পদতলে কবি জানায় তার কাতর প্রার্থনা।বেঁচে থাকুক প্রকৃতি, ফাগুনে আগুন সাজে বারবার বসন্ত ছুঁয়ে যাক মনে।‌ রক্তাক্ত বধ্যভূমিতে ঝরে পড়ুক কিছু শান্তির টিউলিপ। মানুষ জেগে উঠুক ভালোবাসার মায়ায়, ভালো রাখার প্রচেষ্টায়, মানবতার বন্ধনে।

……................



বসন্তের সাজ

 প্রিয়াঙ্কা মজুমদার



অরিত্রিকা বসন্ত উৎসব উদযাপনের জন্য তৈরী হচ্ছে,সব বন্ধুরা মিলে আবির খেলা হবে তাদের বাগানে।সব থেকে মজার বিষয় হলো সুবর্ণ আসছে আজ।সাজ টা ঠিক থাক না করলে সুবর্ণর চোখে সে আরো সুন্দরী হবে কেমন করে?শিমুল,পলাশে সেজে উঠেছে প্রকৃতি,কৃষ্ণচূড়ার আল্পনায় ভেসে গেছে প্রান্তিক শহর ,গ্রাম।

বন্ধুরা হৈ চৈ করে ডাকতে এলো সকলে। বন্ধুরা সকলে হাজির।একবছর পর আবার সূবর্ণর সাথে দেখা হবে।

ঋতুরাজ বসন্তের সব বৈশিষ্ট্যের রং গায়ে মেখে বসন্ত ছুঁয়ে যাওয়া মনে সাত রঙের আবির ঢেলে সে হলুদ শাড়ি পরে গান ধরলো।সাথে বন্ধুরাও তাল দিচ্ছে।

সাদা পাঞ্জাবী পরে ,কালো সানগ্লাস চোখে সুবর্ণ আসছে, দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে অরিত্রিকা।হৃদস্পন্দন তার বেড়ে যাচ্ছে।" একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ ,প্রাণ এসহে"।সুবর্ণ কাছে এসে দাঁড়াতেই উঠে দাঁড়িয়ে সকলেই গোল করে ঘিরে ধরলো।একমুঠো গোলাপী আবির অরিত্রিকার মাথায় দিল সুবর্ণ।কালো চশমাটা খুলে বলল যা ভেবেছিলাম তুমি তার থেকে আরো অনেক বেশী সুন্দর অন্তরে বাইরে।আমার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাওয়ার পেছনে তোমার অবদান অনসিকার্য। এযেনো এক অন্য বসন্ত।

………...........


এই ফাগুনে

যূথিকা দাস অধিকারী




বনের বসন্ত আর মনের বসন্ত এক না হলে অনুরাগের কস্তুরী  তিলক আবছা হয়ে যায়। মধুপ্রেম বিলাসী প্রজাপতির ডানা খসে পড়ে অভিসারী ফুলেদের পাপড়ির মত।

কাঁচা রদ্দুর মাখা একটি ফাগুন সকাল ঘুম ভাঙিয়ে বলে দেখো দেখো চেয়ে শাখায় শাখায় কেমন নতুন পাতা ,বাউলের একতারাতে কেমন বাজছে বসন্তের গান।কেমন করে আতর বিলাচ্ছে থোকা থোকা আমের মুকুল! কিন্তু  এ মনের দরজায় কেবল অপেক্ষার ভীড়। পাতার আড়াল থেকে কুহু-কুহু ডাক শুনলে বুকের ভেতর হু-হু করে। সে'পথ আজও পিছু ডাকে,ঝরে পড়ে কৃষ্ণচূড়ার সোহাগী লালিমা।কানুবিনে এ'হৃদয় ও'আবেশ মাখে কেমনে! কথাছিল বসন্তে এলে থাকবেনা দূরে। তবে কি রুক্মিণীর আঁচলে পড়েছে বাঁধা । সেই অনাদরে লাবণ্যময়ী বসন্ত  হারিয়েছে পলাশের রাঙা ঠোঁট , ফাগুনের মায়াবী ওড়নার মরমী দোল?

আঙুলের ফাক গলে ছড়িয়ে পড়লো মুঠো ভরা সুগন্ধি গুলাল। বিফলে গেল আরো একটা সোনালী বসন্ত ।আর অভিমানীর প্রতিক্ষার এই ফাগুন বেলা॥

……........


বসন্ত ছুঁয়ে যায় মন মানসী সাহু


শান্তিনিকেতন। বসন্ত উৎসব। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর মনোময় হয়ে উঠেছে বাসন্তী সুরে। সেসময় বাংলার রুপময় নিসর্গ ছুঁয়েছে বসন্ত। চারিদিকে ফুলের শোভা। অশান্ত বাতাসে পাগলপারা মন। স্নিগ্ধতায় ভরে উঠেছে রুপকথার রাজ্য। সবদিকে তারুন্ণ্যের জয়ধ্বনি। খোয়াই এর কিনারে ঝরাপাতার সারি। কোথাও কোথাও উঁকি দিচ্ছে কচি পাতা। সেই পত্র পল্লবে, ঘাসে ঘাসে,কুঞ্জবিথীকায় বসন্ত দিয়েছে নব যৌবনের ডাক।প্রাণে প্রাণে মিলবে প্রাণ। বসন্ত নর-নারীর মিলনের সময়। পলাশ শিমূলে মন রাঙিয়ে দেওয়ার দিন। মহুয়ার বুকে ভরা ফাগুনের আগুন। এ আগুন ছুঁয়ে বসন্ত আসে। ভরা পূর্ণিমায় শাল পিয়ালের সাথে মহুয়ার মদিরতা। 'আহির ভৈরব'এ ভাসে আম্রকুঞ্জ।তাতে বাউল সমাবেশ –এ যেন চাঁদের হাট। একদল বাসন্তীমন যুবতীর সাথে ওপার বাংলার মেয়েটি আসে একগাছা আগুন রঙা পলাশ হাতে।আমি তখন বাসন্তী পোশাকে।মেয়েটির চেহারায় বাসন্তী রং।অপূর্ব অনুভূতিতে কেঁপে উঠে হৃদয়– বসন্ত ছুঁয়ে যায় মন। ……………......






                   অঙ্কনঃ- রুম্পি দাস


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - সুকান্ত সিংহ

ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614









ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...