Wednesday 1 November 2017

e কোরাস

মানুষ বই পড়তে ভুলে যাচ্ছেন; আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলছি।তাই মনে হিমেল হাওয়া লাগিয়ে আমাদের প্রথম প্রয়াস e-কোরাস প্রকাশ।বিগত ১৩ বছর ধরে কোরাস পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।আমরা মাসে একটি করে e-কোরাস সংখ্যা প্রকাশ হবে।আগামী কয়েক দিন পর কোরাসের 'গ্রাম' সংখ্যা প্রকাশিত হবে।সমস্ত বুক স্টলে পাওয়া যাবে। কোরাসের সাথে থাকুন। আসুন বই পড়ি।
                                          দুঃখানন্দ মণ্ডল
                                           সম্পাদক-কোরাস
কবিতা-----------
।।আরোগ্য।।
সুকান্ত সিংহ



এই জন্ম হয়েছে
হচ্ছে
হবে

জন্মের আয়োজন থেকে
বড় বেশি আনুষ্ঠানিক হয়ে আছি


তাহলে কি পরাভব সমগ্র খাবে?

ব্লাড ব্যাংক ফিরিয়ে দিয়েছে।

ডাক্তার, তুমি কেন অসামান্য চিৎকার 
করে যাচ্ছ রক্ত দে রক্ত দে ?

বোধিবৃক্ষের তলায় তথাগত তো একদিন
সুজাতার হাতে পায়েস খেয়েছিলেন!

সময় কি ফুরিয়ে আসছে, অসামান্য
মৌন সময়!

ডাক্তার?


যা কিছু মৌন আছে
তাকে তুমি কণ্ঠে তুলে বাজিয়ে দেখাও।
যা কিছু গড়িয়ে যায়, ধরো জল,
তাকে বেঁধে মানুষের যৌথ চিৎকার
জমা হয় সময়ের খাতে।

শব্দ অনাহত,
তুমি কণ্ঠে তুলে আহত করেছ!
          -------------
।।জনারণ্যে একা।।          
নিবেদিতা মজুমদার


"সত্যি চলে যাচ্ছি..."
শেষ কথা ছিল তোমার-

তারপর
কিঙ্কিণী শব্দের শব এ যাবৎ
ঢিল ছোড়া দূরত্ব পেরোতে পারেনি ;

অথচ পঞ্চমীর রোশনাই
মানুষের ঢল
জহুরী চোখের আলগোছ
পিছু ছাড়েনা প্রজন্মান্তরেও!-

স্তব্ধ হয়ে দেখি
আমিই এগিয়ে আসছি,
নিজের দিকে
মিশে যেতে এগিয়ে আসছি
আমিই...

ভীর ঠেলে পাশ কাটিয়ে
চলে যাওয়ারা
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে
আমার পাথর খোদাই শরীরের দিকে চেয়ে
ছেনী  হাতুড়ী তোমার হাত থেকে
খসে পড়ে -

সে যাওয়ার বুঝি শেষ দিন হয়না


পাশে থাকবে বলেও
যে বার বার চলে যায়।
      -------------------
।।অলৌকিক ফুটবল।।
  আশিস মিশ্র


একটি অলৌকিক ফুটবল শিলাবতীর পাড় দিয়ে গড়াতে গড়াতে 
আমাদের মাঠে এসে পড়ল।
আমরা একদল সেই অলৌকিক নিয়ে খেলতে শুরু করলাম।
ছেলেবেলার সেই দিন বেশ কাটছিল

এখন বুড়ো হচ্ছি
তাই আর খেলতে পারি না।
বটগাছের ছায়ায় বসে
নাতিদের খেলা দেখি...

পাশ দিয়ে নিঃশব্দে গড়িয়ে যায় শিলাবতী।
                   -------------
।।অস্থির সময়ের পাণ্ডুলিপি।।
 
   সৌতিক হাতী

উলুধ্বনি চুলোয় যাক
বরং শশ্মানমঙ্গল শোনাও...
আজানের ডেসিবেল ছাপিয়ে
আজ শুধুই শিরচ্ছেদের আর্তনাদ
ধর্মের জেহাদ !
না প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার ?
সনাতন ধর্ম !
না গো-মাতার ইস্তেহার ?
কাটামুন্ডু গড়াগড়ি দেয়  প্যারিস থেকে ঢাকায়,
প্রেমের নগরী থেকে সোনার বাংলা...
সিরিয়া থেকে খাগড়াগড়...
কাবুল ইস্তানবুল ধূলাগড়...
ধর্মের ষাঁড় গা ঝাড়া দেয় সর্বত্র ,
গো-মাতার সাথে র‍্যাডিক্যাল দূরত্ব সত্ত্বেও,
একটা চূড়ান্ত অমানবিক দ্বীপে
ধর্মের ষাঁড় রক্তঝরানো সঙ্গম করে,
সৃষ্টি হয় ধর্মের ধ্বজাধারী অপত্য সব ৷
ফিদা হুসেন , রুশদিকে ছাড়তে হয় দেশ,
দেশ জানেই না এনারা 
কবেই দেশ-কাল অতিক্রম করেছেন...
দিকে দিকে দাপিয়ে বেড়ায় মেফিস্টোফেলিসরা,
চেতনার শবদেহ নিয়ে মৌন মিছিল,
সমাজবদ্ধ জীবের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি
পেটেন্ট পায়নি বলে এখন বিলীয়মান প্রায় !
তাই  খুঁজে চলি পিঁপড়ের রীতিনীতি....
                -------------------
।।অনাদি।।
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল


মাটির চোখে চোখ রেখে কথা বললে
আলো পাহাড়ের ভাঁজে লতিয়ে ওঠে ঢেউ,
শব্দের সাদারঙে নিঃসঙ্গতা ডাক দেয় ইশারায়
হাওয়া ফুরানো ক্লান্তির কথা ভাবতে নেই-
বিষণ্ণ শিখার হৃদয়ে জন্মান্তরের যত ঋণ
উড়িয়ে দেয় আঁচল,
বাতাসে বাতাসে বিষাদ ভাসে
সেই সরোদ শুষে নিতে মাথার উপর রোদ
নিম্নদেহে গুল্মময় অপরাহ্ন পেরিয়ে কত দীর্ঘ---
নিজেকে উজাড় করে দেবার উড়ন্ত পাখির মহিমা
হারিয়ে যাওয়া শব্দ আলোয় পূর্ণ হয়ে ওঠে
বাঁশির শীতকাতর, খানাখন্দ ভরা মেঘের অভিযান
সব স্রোতের শব্দ জমিয়ে রাখে মানস বৃক্ষের আনন্দ--
             ----------------------
।।বন্ধুভাব।।
তাপস  বৈদ‍্য


সৌন্দর্য সময়ে তার সংজ্ঞা বদলে নেয়
হাওয়া প্রেমে পড়লে এক সময় যে ঝড় 
উঠতে পারে সে বিশ্বাস থাকায় ফলাফল 
বড়ো হয় না
কাজের মধ্যে একটা নদী কিংবা পাহাড় ঢুকে 
থাকে বলে আঁক-বাঁক ও চড়াই-উৎরাই
বন্ধুভাবাপন্ন দরজায় এসে দাঁড়ায়
উজিয়ে ওঠার লেখচিত্রে পরিবর্তন ধরা পড়েই
আর তা জীবনের ধর্ম বলে আমি আলাদা 
কোনো ধর্মে গাঁটছড়া বাঁধতে পারিনি শত বদলেও
শুধু যারা ধরে রাখে আলো নেভা পর্যন্ত
তাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
                   ---------------------
।।হে প্রেম।।
কেশব মেট্যা
স্নান ভুলে গেছে দিঘি
চোখে তার মেঘরঙ ছায়া
হারানো নূপুর বুকে নিয়ে
অতলে রাধিকার মায়া।

রাঙাপথে ধুলো নেই আজ
শ্রীচরণ ছাপ মনে ভাসে
ও বাঁশি বাজিও না সুর
কাঁদিও না পাতাঝরা মাসে।

এমন তো কথা ছিল না
ঘুমছলে দূরে চলে যাবে
দিঘিজল ঢেউ লিখে লিখে
সাঁকোটি জাগিয়ে রাখে।
           --------------
।।পুথিজীবী।।
মনোতোষ আচার্য


ছড়ানো করতলের মতো সংসার যাপন
জমে থাকা ক্ষোভ লেখা চিঠি
লুকোনো পুঁজির কথকতা 
চাহিদা দিলাম আজ ছুটি
   এ হৃদয় মুদ্রিত দখল
শতভিষা ভাসাও গোপনে
আত্মজ ভ্রষ্ট শপথ
রেবতী ডোবাও নুন জলে
পুথিজীবী আত্মউন্মন
জাগৃতি অতীত জপমালা
ফুতকারে ওড়াও মিছিল। 
        ------------
।।তোমার জন্য।।
    
সোমা প্রধান

তোমার জন্য হতে পারি
                অমাবস্যার রাত
মেঘলা চুলের কালো মেয়ে
            সোহাগ ভরা হাত।
তোমার জন্য কবোষ্ণ ঠোঁট
              চুমোয় মাখামাখি,
ডালিমরঙা প্রেমের আকাশ
               উড়তে চাও পাখি?
                  --------------
বনভূমি
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি


সবুজ শালবনের ভিতর পথ ধরে আমি হেঁটে চলেছি।
এখানে রূপের পশরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি
এক অনন্য ভালোবাসায় ডাকছে আমাকে।
আমি ফিরিয়ে দিতে পারিনি সে ভালোবাসার হাতছানি।
মানুষের সাথে অনেকদিন তো ঘর করলাম 
এবার প্রকৃতির সাথে না হয় কিছুকাল কাটানো যাক।
                  --------------------
।।হিসেব-নিকেশ।।
  
  স্বপ্নময়

যে যার দৌড় মতো দৌড়ুবে,
কেউ কেউ ইঁদুরির চোখ ছেনে
শষ্যের দানা ভরা কুলুঙ্গি,
কাগজের নৌকো ভাসিয়ে কেউ
ঢেউ লাগা জমাজল বৃষ্টির।

ব্যাঙেরা বোঝার ভুলে মকমক
ঐ বুঝি এলো বর্ষার ছাট,
বুকের মধ্যে কটা উড়োমাছ
শিকল নামিয়ে খোলো দরোজা।

বাতাসে ভাসবে ঘন ভুল ভুল
নামবে দৃষ্টি, কড়া রাগী চোখ,
পইপই করে বলা সত্ত্বেও
দরবারে আনাড়ির বিস্তার।

তারচেয়ে যদি অাশাবরী হয়
সিম্ফনি চকচকে বেহালার
আকাশ ভরতো তবে তিমিমাছ
বালুচরি পরা দুখি কবিতা।

মাঝখানে রাস্তার বাঁকা মোড়
গাদাগাদা সরু সিঁড়ি বাই লেন
নরুনটা নাকখানা কামিয়ে
যেকোনো দোকানে পাবে চাইলে।

তারপর একদিন ভোরঘাট
মেলে দেবে ডুবন্ত রোদ্দুর
পাখসাট চুরমার খেরো লাল
জীবনের গাণিতিক তত্ত্ব।
         ---------------
।।অস্থির  সময়ের গান।।
শ্রীজিৎ জানা


বাঙলা কার
গুরুং  নাকি গোর্খার
তিলক নাকি বোরখার
অভিন্নতার প্রশ্নে সবার
গর্জে ওঠা দরকার!

মদত কারা পশ্রয়
বিভেদ কারা দাঙ্গা
ভাইয়ের বুকে ভাইয়ের ছোরা
রাজার আসন চাঙ্গা!

ওদের বলো ঘৃণ্য
ওদের করো নিন্দা
রামরহিমের মাঝে থাকুক
মানবতাই  জিন্দা।
         -----------
দূগ্গা...দূগ্গা..
 
সুব্রত মণ্ডল

বিশ্ব মাঝে অসীম চাওয়া
চাকচিক্য সখের জীবন
বাঁচার আশা লক্ষ ফাঁসা
মাগো তোমার যখের ধন!
ভেসে গেছে স্বপ্ন-আশা
শূন্য বাঁশির চোখের জল
রিক্ত হাতে দাওগো হাত
ভাগ্যদেব আজ ত্রাণের দল।
ভয়ঙ্করীর ভীষণ জ্বালা
পান করেছি দু-চোখ ভরে
রক্ত পিয়াস পিশাচ লোভী
লোক দেখানো মন জঠরে।
জ্যোৎস্না রাতের ফিনকি আলো
বালুকাময় নদীর চর
কাশের বনে শরৎ হাওয়া
বাড়ির ভগ্ন কলেবর।
মাগো, তোমার অসীম কৃপা
রঙিন আলোর ঝাড়বাতি
ভগ্ন মনে তোমার সুরে
অরুণ-ঊষার রাগ প্রভাতী।
হাসবে আকাশ মাতবে বাতাস
ভাসবে খুশির জনজোয়ার
দুঃখ ভুলে ঢাকের সুরে
বঙ্গবাসী মাতোয়ার।
        ------------

অনুগল্প

।।মালাটা হাতে বেঁধে দে;আজ রাখী।।
    দুঃখানন্দ মণ্ডল

বেশ কয়েক বছর রাখি পরা হয়নি বোনের হাতে।
আসলে মানব জাতি কিছু না কিছুর জন্য ব্যস্ত হয়ে থাকে। যেমন টা অর্ণবের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে।
সুজাতা আজ বেশ আনন্দ অনুভব করছে; দাদার জন্য।
একটু অন্যরকমের মেজাজে আছে।
ছোটবেলাটা বেশ অর্থিক অনটনের মধ্যে চলছে সুজাতাদের।
: মা আচার্যী(গ্রহবিপ্র) কখন আসবে? আমার অনেক খিদে পেয়েছে!
: এই তো এসে পড়বে? একটু খিদেটাকে  সহ্য করে নে।
আসলে মাও জানে না  আচার্যী কখন আসবে আর মা এও জানে রাখী গ্রামের দোকানে কিনতেও পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা একটা জায়গাতেই অর্থের।
সেই বছর আর আচার্যীর দেখা মিলল না।সুজাতা ক্লান্ত।মায়ের চোখে জল।তখন পাশের বাড়িতে রাখী উৎসব পালন হচ্ছে বেশ ধুমধাম করে।
: বোন এই নে রাখী। আমি তৈরী করলাম টগর দিয়ে।
: এটা তো মালা।
: আরে বাবা ফুলের মালা তো আরো পবিত্র।তুই এটাই আমার হাতে বাঁধ না।এটাও রাখী।
ছোট সুজাতা সেদিন মালার রাখী দাদা হাতে পরিয়ে ছিল। সে বুঝে উঠতে পারে নি কেন মালার রাখী পারালো!
আজ সে বুঝে কি কারণে সেদিন ফুলের রাখী পরিয়ে ছিল।
সুজাতা এখন একটি স্কুলে পড়ায়।সকালে উঠেছে।বাগান থেকে ফুল তুলে সেই দিনের মতো মালা তৈরী করছে। শুধু অপেক্ষা,পুরানো স্মৃতি নাড়া দেয় জীবনকে....
                  -----------------



NEXT ISSUES PUBLISH -01.12.17

ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...