Friday 1 June 2018

একটি গাছ:একটি শিশু e-কোরাস ৮



                                                            একটি কবিতা,একটি ভাবনা,একটি স্বপ্ন। এমনি একটি রূপ কলমের।  কবিতা পারে জীবনের কথা বলতে,মিলিয়ে দিতে পারে জীবনের সাথে কবিতার লাইন।  

                                                                                                                                               দুঃখানন্দ মণ্ডল

    কোরাস-সম্পাদক




বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় এর দুটি কবিতা-

অপেক্ষা দাঁড়িয়ে থাকে দক্ষিন দুয়ারে


আলো ফোটার আগেই ঝরে পড়ছে সকাল
তবু তুমি চোখ খুলে আছো
চোখ খুলে আছো নতুন দিনের জন্য
আমাদের কোন জাদুকাঠি নেই
আমাদের কোন আহ্লাদি পার্বণ নেই
স্বপ্ন নয় নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের পাহারায় আমাদের ক্লান্তি ছায়াপথ ধরে হেঁটে যায়

আলো না ফুটলেও  রাত একসময় দিন হবে
কবজির জোর থাক বা থাক
পৃথিবী ঘুরছে আমাদেরই জন্য।
অপেক্ষা দাঁড়িয়ে থাকে  দক্ষিন দুয়ারে।
             ......................

বিবাহমঙ্গল

ফুল ফুটলেই গন্ধ
তোমার মনের খবর জেনে গেছে ওই প্রিয় গাছ।
খেলা খেলা  খেলা
এক দুই তিন চার ......
হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়ার বিস্তৃত বাসনা
এই লিপ্সা অমরত্ব
এই লিপ্সা অমৃতের স্বাদ

সুমঙ্গল ইচ্ছের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে কেউ দূরবর্তী রেণুর শরীরে।
                  .................. 

সৌমিত্র রায় এর দুটি কবিতা-

আত্মকথনে মাতি

   ফিসফাস ৷ খুনসুটি ৷ আলাপন
                < স্ব-চ্যাট >
নিজে ৷ প্রকৃতির সাথে ৷ আনন্দধ্বনি
            .................

দু-চাকার কিশোরীবেলা

  কন্যাশ্রী ৷ সাইকেল ৷ রিং
                ) ঘুর্ণণ  (
সময় ৷ চূর্ণবিচূর্ণ ৷ চাকার শরীরে
           ................

শুভঙ্কর দাস এর দুটি কবিতা-

নিজস্বী

খারাপ খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো
পচা আনাজের মত
ফেলে দিতে হয়,বাইরে,ছাইয়ের গাদায়
অথচ সম্পর্ক-রান্নার বইখানি খুলে দেখ,প্রায় প্রতিটি পাতায় লেগে আছে বিস্বাদ!
মুখোশের সামনে পুজো আর পরবের সকল নিয়ম পালন করে মুখ খুঁজি রোজ,
নিজেকেই দাঁড়িপাল্লায় তুলি,নিজেকেই হারিয়ে দিই,
আয়না কোথায় রেখেছে,নিজেকেই দিতে হবে খোঁজ!
এত আয়োজন,এত পথ,এত মিলনের উৎসব
শুধু বুঝে নিতে হয়,দিনরাতের চাওয়া-পাওয়ায় কতটুকু দিতে হয় নিজেকে বাদ!
               ..................

ঈশ্বরের হাত

কনেদেখা আলোর মত মাঠভর্তি পাকা ধানের পর ধান,
গামছা কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকা চাষার মুখ দেখে মনে হয়,ঈশ্বরের মুখ এইরকম হয়তো দেখতে!
মুগ্ধতা লেগে থাকে চোখে,কী করে এমন ফলায়!
নীরবতার একটা আশ্চর্য তরঙ্গ আছে,উত্তরও একধরণের যেন ফলসের হাওয়া,
চাষাটা কাদামাটি তুলে মুখে ঘষে নেয়, তারপর শুধু জানায় এভাবে।
               .................

মৌমিতা ঘোষ এর দুটি কবিতা-

অন্তর্বর্তী


তারপর 
নিয়মের বাইরেও
এক রাত নামে বলে
কিছু কথা বলা হয়না
কিছু শোক ব্যক্তিগত
পুড়ে যায়
কিছু কথার উপরে
ধুলো জমে
গল্পরা পরিচয় হারায়
কিছু শব্দ নেহাত
ভিখিরি হয়ে কাঁদে
'তুমি কি রেখেছিলে হাত? বলো?
সন্ধে নামার আগে
তারারাও অগোছালো যখন?'
নতুন কোন গল্প
দিতে পারিনি তোমায়।
এই অগৌরবে
সস্তার পদ্য উড়িয়ে দিই
মেলে দিই ঘাসে ঘাসে...
তুমি কি কখনো
উপুড় করেছ মন
বর্ষার জলছবিতে?
বিনি সুতোর মালায় বৃষ্টির বিন্দু
অসীমের মহাকাব্য লেখে
আমাদের মাঝখানে...
            ...............

আকাঙ্খা

মুঠোতে ধরতে পারোনা সময়
ছড়িয়ে পড়ে সে স্বাভাবিক
জড়াতে পারোনা আজ ও হাতে হাত
সংযমে দূরে থাকাই সহবত।
অথচ কোন কোন  রাত আজ ও
স্পর্ধায় জেগে থাকে
চাঁদ মুঠো করে. ...
       ............. 

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ এর দুটি কবিতা-

চুলা


দু একটি শ্মশান  ঘাটে ঘুরে এলাম
নিজের জন্য উপযুক্ত চুলা খুঁজে পেলাম না আজো
দাউদাউ আগুনে কিছু শব্দের হাড় চিবিয়ে নেয়
সম্পাদিত জোৎস্নায়
ছাই মাখা মাংস আর কিছু গল্পের ভগ্নাংশ
সাংকেতিক ভাবনায় আয়োজন সেরে নেয় শেষ বেলায়।
             ................

পোষা কবি

ধার দেনা করে কিছু লাইক
আর কিছু পোষা কবি ফেইসবুকে
অহেতুক চেঁচাবে না আজ।
মদখোরের ভরাট পাতায় জেগে উঠবে না
পেন্ডুলামের উলঙ্গ নিশ্বাস।
শয়তান- ভগবান-কবি তিনে মিলে
অস্তিত্ব ময়দানে খেলায় মদমত্ত
প্রত্যেকেই নিজেদের লেজটুকু পেঁচিয়ে
কুতুকুতুতে গা এলিয়ে প্রতিশব্দ শুনতে চায়।
আলস্য রাতে তিন নারীর আচল
ভিজিয়ে ভদকা প্রেমী
কবিতা খাতায় শুকায় ছেড়া কন্ডোম।
                  ................


সৌতিক হাতী এর দুটি কবিতা-

দুর্নিবার রাত্রি


মেঘে মেঘ মিশে গেলে
পড়ে থাকে হা পিত্যেশ
আবেগের উষ্ণায়নে বরফ গলে না
হয়ত ফ্রয়েডই শেষ কথা
ছোট ছোট ইচ্ছে ডানায় ভর করে
এক একটা দুর্নিবার রাত্রি আসে
মখমলী স্পর্শে জেগে ওঠে জোনাকিরা
শুধু হিসেব মেলানোর সময় এলেই
অনাবৃত চাঁদে গ্রহণ লাগে
চন্দ্রাহত ফেরিওয়ালা
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে
আকাশের দিকে...
      ...............

   দিনযাপন


জানালার ফাঁকে উঁকি মারা
দাবদাহ সামলাতে
লাগিয়েছো সানগ্লাস,
ব্যস্ত রাস্তার ধূলো থেকে বাঁচতে
কালো মাস্ক!
তোমার আছে অনেক ঢাল ও বর্ম,
দিনমজুরের ওসব নেই,
রোদে পোড়ানো রোবট শরীর।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং কিংবা অগ্নুৎপাত
সব তুচ্ছ করে ওরা কাজ করে চলেছে...
অনাহারের ধারাপাতে
নামতা গুলো
লম্বা হচ্ছে ক্রমশ
আর তোমরা কিনা
তার ধারাভাষ্য দিতে
বসেছো বাতানুকুল কাচঘরে?
          ..............

বিকাশ চন্দ এর দুটি কবিতা-

অনুচ্চারিত শব্দের কোলাহল ৪


রাতের আঁধার ছেঁড়ে বারুদগন্ধি আলো নীল নেশাঘোর
রাস্তার দু'পাশের জঙ্গল ফুঁড়ে এদিক ওদিক জোনাকি দহন
হেঁড়ে গলায় বেহেড মাতাল খিস্তি--আবে হট---বাপের রাস্তা...
বোঝা মুস্কিল কে বাপ কে ছেলে কিংবা কে বা মেয়ে মা
নাচার সময় কাল জানে নড়বড়ে সম্পর্কের খিলান,
রোগে ভোগা গরিব মানুষ আটকাল বারোমাস ঝুলে থাকে
রহস্য মোড়া শ্রীময় মাকড়শা ফাঁদে ---
সকলেই বলে গেলো পৈত্রিক তিনকাঠা জমি বাড়ী ঘর
উধাও হলে কেউ কখনো কাঁদে।
কোন হাতকড়া নেই তবু বাঁধা অর্জিত অধিকার
এ নিয়ে কত না কমিশন আইন আদালত
বন্ধকী হৃদয়ে কিছু ও বা ছিল শত্রুমিত্র সব
এখন নীলকর লুঠেরাদের মহোৎসব সময়,
স্বাধিকার লোপাট হলে ভরে যায় সাদা থানের গাঁট
মানুষের বুকে মাথা রাখলে বিশ্বাসী শ্বাসের স্পন্দন
ঠিকরে আসে হৃদপিণ্ড গড়ায় নুড়ি পাথর
ঠোক্করে ঠোক্করে অন্ধকারে আগুনের অলক্ত চমক
প্রেতযোনি পথে রাজা রানি ব্যস্ত সাপলুডো খেলায়।
              .....................

অনুচ্চারিত শব্দের কোলাহল ৫ 


যীশুর বুকের বাম দিকের বিদ্ধ পেরেক
চুইয়ে নামলো রক্ত--
উচ্চারণহীন কোন উক্তি ছিল কি এ রক্ত
রোমান ক্যাথলিকদের জন্য,
বুকের ডান দিকের পেরেকের ক্ষত থেকে
চোয়ানো রক্তে অনুচ্চারিত কোন শব্দবন্ধ
হয় তো ছিল না----এই রক্ত প্রোটেস্টান্টদের জন্য,
যীশু জানতেন এ রক্তদান মানব মুক্তির।
ভোটের মেশিন ছিল---চাপ দেয়ার কথা ছিল বিষ আঙুলের
কথা ছিল অধিকার জেগে উঠবে নিরন্ন প্রজার শরীরে,
এখন তো আঙুল ছোঁয়ানো বারণ,
কোথাও তো তাও নেই--- হায় ভোটাধিকার !
বিবস্ত্র নারীর চোখের জলের হয় তো কিছু কথা
মাটি ছুঁয়ে ভেজায় দূর্বা শেকড়---
প্রজাতান্ত্রিক ধ্বজার বেদী নিলামে উঠবে বোধয়
লাল্কেল্লার মতো---ওই টুকু যা বাকি,
আমার আঙুল, আমার বৃদ্ধা-তর্জনী-মধ্যমা----
এখনো হাতড়ে বেড়ায় অক্ষর মহিমা----
কতটা ক্ষরণ দেখেছিল তক্ত ভেজা শব্দ গরিমা।
                      ......................

দেবাশিষ কুইল্যা র দুটি কবিতা-

  সম্পর্ক

মায়ের হাতে সুঁচ ফোটার ক্ষতরা গভীর।
দেওয়ালের সাথে কার্ণীশ, জানালা ছাদ।
উঠোন জুড়ে সব ভাবনা।
ভিতরের ফাটলে ঢুকছে শ্বাপদেরা।
আসলে কাটছে সম্পর্কের সেলাই।
             ................

মৃতপা


জানালা পেরিয়ে আকাশ কাছে এলে
  আয়নাকে বড় ভয় হয়।
  মুখোশ দেখে আর পড়তে পড়তে
   অভিঞ্জানের বৈঠা সাজিয়ে
    অতলস্পর্শী গভীরতা ডাকে।
  সব শূন্যতা নিয়ে বসে আছে
  চাঁদমাখা  বালুচর
  সূর্য স্নানে ভালবাসা উধাও।
   শব্দমালার ভিতর
         আর একটি দেশ ----
    আকাশী প্রদীপকে সাক্ষী রেখে
     চলে গেছে আশ্চর্য অন্ধকারে।
                ...................

ঈশানী বসাক এর দুটি কবিতা-

পূর্বপুরুষ


বসার জন্য পুরো একটা আলাদা ঘর
এটা কখনো দেখেনি অমল
ঠিক যেমন করে দেখেনি রান্নার কিচেন
পরিস্কার হাতে টুকটুক করে রান্না
এসব রূপকথা ভেবে সরিয়েছে চিরকাল।
মায়ের চুড়ি থেকে ভাতের পরিমাণ বুঝে
দিদি বেড়ে নিতো থালা
কখন যে বাবা বলতো খেয়ে এসেছে বাইরে থেকে
অথচ মুখটা শুকনো থেকে যেত প্রতিদিন
এখানে দেখছে পড়ার ও আলাদা স্পেস
যখন থালায় ভাত দিল স্যার
অমল বললো একটু দাঁড়ান কি করছেন:
খাবার আগে কাক কে দেবেন না ?
ঘাম না ঝরলে পূর্বপুরুষের কথা মনে পড়েনা।
                   ..................

মুখ ফিরিয়ে


হাওয়া যখন মাথা নুইয়ে দিতে চায় ঘাসের তখন ঘাস মুখ ফিরিয়ে নেয় মাটির থেকে।
 গাছের শেকড় মুখ ঘোরাতে চাইলে গাছ অনুরোধ করে না দাঁড়িয়ে থাকার।
 সমস্ত ঘরটা জল জমলে তুমি মুখ ফেরালে আমি বলবো না তোমাকে জাটিঙ্গার কথা।
 আগুনের সাথে আমার সম্পর্ক বহুদিন। 
সাধনার থেকে এক হাত দূরে বসে দেখি বহুদিন হলো মৃতদেহ আর নারীর শৃঙ্গারে তফাত নেই কোনো। 
ঘাম আর অশ্রু মেশানো মদিরা ছুঁয়ে বলি আমি সন্ন্যাসী হতে পারি তবু পূর্বাশ্রম ছাড়িনি কখনো।
               ..............

মঞ্জীরবাগ এর দুটি কবিতা-

ধানগাছ


ধানের মুগ্ধতায় জেগে থাকে আশ্রমিক ঘ্রাণ।
চারটিদেওয়াল,একটি ছাদের আড্ডায় গৃহস্থ ভূমি।
ভূমি মানে বীজধান,গান,বড়উদ্ভিদ মানুষ।
শেষরাতে নক্ষত্রও ঠিকানা হারিয়ে খোঁজে বিছানার তাপ।
খ্যাপাটে বাতাসে মাঝরাত,ভোরের ঠান্ডা শিশির।স্বপ্ন ভেসে আসে অন্তরা গ্রাম।
চোখ গেলো ,নামে পাখি কথামালা বুকে চেপেডাকে,নিষ্ফল স্বর লিপি ।
প্রাণপাখি জন্মসুতোর উৎস,পথরেখা ছুঁয়ে যায় নৈশব্দের ঘোর।
স্তব্ধতাও এক  আলো,নিঃশব্দ লাবণি।
নিভৃত হাওয়ায় দোলে ধান শিশু।
           ..................

পাখি


আকাশের গন্ধ মেখে ঘুরলেই গজায় না ডানা।
ডানার জন্য চাই পরিমন কিংবা পাখি।
পাখি গল্প শুনেছিলাম মেয়েবেলার গানে।
সিন্ডারেলা,সাদা গাউন,কাঁচের জুতো, জুড়িগাড়ি,
একটা কাঁচের জুতো পরার প্রবল চেষ্টা,
আমার পা কেটে যাচ্ছে লাল রক্ত প্রতি মাসে,
ডানানিয়ে জন্মের কথা আবছা মনে আছে।
ছোটো ডানা পিঠের ওপর,
ওড়ার স্বপ্ন,তারপর স্বপ্ন কেটে নিলো কাঁচি,আকাশ,
হায় আকাশ ডানা স্বপ্ন।
চোখের পাতা যেন শুষ্কখরা মাঠ।
হায় পাখি ,তোমারডানায় স্বপ্ন এঁকো,
আকাশের গন্ধমাখা ঘ্রাণ গরাদের মধ্যে থেকে শুঁকি।
                ..............


সম্পাদক: দুঃখানন্দ মণ্ডল    

সহ-সম্পাদক: শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ ভাবনা: বিকাশ চন্দ

ঠিকানা: সুরতপুর,দাসপুর,ঘাটাল,পশ্চিম মেদিনীপুর,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত।
যোগাযোগ: ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...