Sunday, 24 November 2024

লাল পাহাড়ির দেশে যা // ই-কোরাস ২০৪

 



নগরবাউল

অংশুমান কর

গত শতাব্দীর নয়ের দশকের শেষের দিক। পুরুলিয়া থেকে ট্রেনে করে একটি অনুষ্ঠানের পরে একসঙ্গে ফিরছি আমি আর অরুণ চক্রবর্তী। আসানসোল থেকে ওই ট্রেনে উঠল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগের আমার কিছু সহপাঠিনী। বসল আমাদের ঠিক উলটোদিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অরুণদা ওদের সঙ্গে নানারকম ঠাট্টা-ইয়ার্কি করতে শুরু করলেন। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। বারবার আশঙ্কা হচ্ছে, না জানি আমার বন্ধুনিরা কী মনে করবে অরুণদার এই ব্যবহারে। কিন্তু, ওরা কিছু মনে তো করলই না, বরং কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম ওরা বেশ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে প্রাণোচ্ছল অরুণদাকে। অরুণদা ওদের দিতে শুরু করেছেন চকলেট। এমনই ছিল এই নগরবাউলের স্বভাব। চকলেটের মোড়কে নিষ্পাপ বন্ধুত্ব বিলি করে বেড়িয়েছেন সারা জীবন। লিখেছেন এমন কিছু কবিতা যা বাংলা কাব্যজগতে রয়ে যাবে নিজেদের গুণেই। কোনো কিছুকেই ভয় করতে দেখিনি অরুণদাকে। এমনকি নেশাকেও ভয় করতেন না। কী অনায়াসে লিখেছিলেন, "নেশা আমার চাকরবাকর"! আমার নানা লেখায় মাঝে মাঝেই অরুণদার কবিতার বেশ কিছু পঙ্‌‌ক্তি ব্যবহার করেছি। খবরকাগজে প্রকাশিত সেই সমস্ত লেখা পড়লেই অরুণদা ঠিক ফোন করতেন। শেষ কয়েক বছরে মাত্র এক-দুবারই দেখা হয়েছিল। কিন্তু ফোনে কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার। অরুণদা ছিলেন, এটাই ছিল আমাদের এক বড়ো ভরসা। ভালো লাগত এটা ভেবে যে, কবিতার রাজনীতির ক্লেদের বাইরে একজন নাগরিক বাউল বাংলা কবিতায় বেঁচে রয়েছেন এখনও। তিনি আর নেই। এই শূন্যতা পূর্ণ হওয়া কঠিন।


হেসে অরুণদা আবার এক চুমুক

আশিস মিশ্র 

'পদ্যে অনেক কান্না ঝরায়, কান্না কি খুব সোজা',

' মদ্যপ ' শব্দটির বদলে ' পদ্যপ ' বললে তো দোষমুক্ত হওয়াই যায়। একগাল হেসে অরুণদা আবার এক চুমুক দিলেন। রাত কত হল, খেয়ালই নেই। সেবার ফারাক্কায় কবিসম্মেলনে গিয়ে সুনীল করণদার ফ্ল্যাটে দু'টি রাত কীভাবে যে কেটে গেল। আমি, অরুণদা, প্রদীপ আচার্য, গৌতমদা, সুনীলদা...। সে-সময় অরুণদার একটি ফটোগ্রাফ ( নটরাজ মূর্তির আঙ্গিকে)  তুলেছিলাম। ছবিটি আর পাচ্ছি না। গান, কবিতা, আড্ডার ফাঁকে তাঁরই লেখা আওড়ে যাই এখনও-- আমি কোনো ঝঞ্ঝাটে নেই / নেশা আমার চাকর বাকর... 

কিংবা --

স্তন নিংড়ে যতই ঢালো দুধ গঙ্গাজল / শিবলিঙ্গ কাত হয় না... 

বাংলা কবিতার এমন গৃহী বাউল কবির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে একটি যুগের অবসান হয়ে গেল। লক্ষ মানুষের ভিড়ে যাঁর স্বরূপ চিনতে কারুরই অসুবিধে হত না। সে জয়দেব কেঁদুলি মেলা হোক, শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা হোক।  আর পকেট থেকে কোনো কবিকে চকোলেট বের করে দিতে দেখবো না! 

অরুণদা বলতেন, বুড়ো ১০ টি কবিতাই লিখবো। ৯ টি লিখেছি। ১ টি বাকি। 

সত্যিই তো -- একজন কবির ১০ টি কবিতাই পৃথিবী কাঁপিয়ে দিতে পারে। অরুণদার ক্ষেত্রে তার কিছুটা তো হয়েছে গানের ভেতর দিয়ে। 

হলদিয়া, দাঁতন, ঔরাঙ্গাবাদ, রাণাঘাট, ঝাড়গ্রাম, মেচেদা, মালদা -- তাঁর সঙ্গে রাত্রিযাপনের অভিজ্ঞতা আমার আছে। কত কথা লিখবো? 

ট্রেন ছুটছে --দীপ মুখোপাধ্যায় আমাকে গেটের কাছে টেনে নিয়ে গেল। একটা জলের বোতল আমাকে ধরিয়ে বলল, টেনে দাও। সামনের স্টেশন চুঁচুড়া --বুড়ো উঠবে। একটু পরে দরজা দিয়ে সত্যি সত্যি 

 ' অউম ' পত্রিকার সম্পাদক উঠে পড়লেন। বাইরে ঘন অন্ধকার --হাওয়া -- দৌড় -- দৌড় --অরুণদাও আর একটি বোতল টেনে দিলেন। 

আমি বললাম -- নেশা যখন বাঘ হয়ে যায় / বাঘের গলায় ঘুঙুর বাঁধি / নেশা যখন সাপ হয়ে যায় / শ্যামের বাঁশি বাজায় রাধে...অরুণদা হেসে বললেন -- কী সাঙ্ঘাতিক! 


হাতে দিলেন একটি লজেন্স

সুকান্ত সিংহ 

তারিখটা মনে আছে। ২৭জুলাই ২০১৯। হিন্দমোটর স্টেশনে নেমেছি, দেখি ১নং প্ল্যাটফর্মে তিনি। অরুণকুমার চক্রবর্তী। আগে ছবি দেখেছি অনেকবার। সামনাসামনি এই এথম। আর ওই শেষবার। এগিয়ে গিয়ে বললুম, যা সাধারণত কাউকে বলি না, আপনার একটা ছবি তুলব? হাসি মুখ। তারপর ছবি তোলা। হাতে দিলেন একটি লজেন্স। আগেও শুনেছি লজেন্স তাঁর কাছে সব সময় থাকে। আমার এক আত্মীয়ের স্কুলে এসেছিলেন একবার। তিনি তো বহুদিন তাঁর দেওয়া লজেন্সটি রেখে দিয়েছিলেন। 

'লাল পাহাড়ির দেশে যা' লেখার পিছনের গল্প কোথাও পড়েছিলুম। এই হেমন্তের দিনে তিনি হয়তো সেই দেশেই এখন লজেন্স দিতে দিতে হেঁটে চলেছেন! 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪


Sunday, 17 November 2024

তাহমিনা শিল্পী এর গদ্য // ই-কোরাস ২০৩




অন্তরালে মায়ার খেলা
তাহমিনা শিল্পী

কারওয়ান বাজার মেট্রোস্টেশনের সিঁড়িতে তাকে দেখলাম। এটাই প্রথম দেখা,হয়ত এটাই শেষবার।উঁচু হিল জুতো পরে প্রথম হাঁটতে শেখা শিশুর মত গুটি গুটি পায়ে নামছে। মনে হল যেন সিঁড়ি গুণেগুণে নামছে। বাদামী রঙের ভেজিটেবল ডাইয়ের শাড়ির সাথে মানানসই সাজ। মাঝারি লম্বা খোলা চুল পিঠের উপর ছড়ানো। বয়স বড়জোড় কুড়ি কিংবা বাইশ। মুগ্ধনয়ন হৃদয়স্পর্শ করলো। কথা বলার ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখলাম না।

পাশ থেকে নামতে নামতে ডান কাঁধে আলতো স্পর্শ করতেই ঘুরে তাকালো। হরিণি চোখে অপার বিস্ময়! 
স্বল্প হাসিতে মুগ্ধতা প্রকাশ করে বললাম,

- অপূর্ব! প্রথম শাড়ি পরেছো?
- না,আগেও কয়েকবার পরেছি। (ইষৎ হাসিতে খুশির দোলা)
- শাড়ি উল্টো করে পরেছো তো। আঁচল উল্টো দিকে দিয়েছো।
- ওহ্, একা একা পরেছি তো। (একটু বোধহয় লজ্জা পেলো)
- ইউটিউব দেখে শিখেছো? 
-হ্যাঁ (লাজুক হাসিটা দারুণ ছিল) 
- শোন, শাড়ি সবসময় ডান দিকের কোমরে গুঁজবে। ডান হাতের দিকটা ফ্রি রাখবে। আঁচল এবং কুঁচির ভাঁজ ডান হাতের বিপরীত দিকে থাকবে। এই তিনটি পয়েন্ট মনে রাখবে। ব্যস, আর ভুল হবে না।
-কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো। কোনরকম সুযোগ না দিয়ে দ্রুত কার্ড পান্স করে বের হয়ে গেলাম।আর একটু জোরেশোরেই বললাম,তোমাকে কিন্তু দারুণ লাগছে! খুব সুন্দর! 

ফুট ওভার ব্রিজের অংশটি হেঁটে এগোতে এগোতে আমিও যেন অবচেতনে পা গুণেগুণে ব্যাকগিয়ারে এগিয়ে চললাম।

আহা আমার কৈশোরকাল! প্রথমবার মায়ের পাটভাঙা শাড়ি পরে বাড়ির তিনতলার ব্যালকনিতে দাড়িয়ে থাকা।বোকা এক সাইকেল সাওয়ারি,আর শেষ বিকেলের সেই জারুল মায়া!


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Sunday, 10 November 2024

কবির ছায়া - আশিস মিশ্র // ই-কোরাস ২০২



কবির ছায়া... 

আশিস মিশ্র 

তমলুক, মেচেদা, কোলাঘাট থেকে মেদিনীপুর, খড়গপুর। ওদিকে ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল, চন্দ্রকোণা, গড়বেতা, সবং, মোহাড়, কাঁথি, এগরা, রামনগর, দীঘা, বেলদা, দাঁতন --একসময় ছিল আমাদের অনেক কবি - সম্পাদক বন্ধুর আড্ডা দেওয়ার জায়গা। সেই সঙ্গে কবিসম্মেলনগুলিতে যাতায়াত। সেই সব আড্ডা ও কবিসম্মেলনগুলি সংখ্যায় বেড়েছে না কমেছে, সে-সম্পর্কে আমার অনেক কিছু অজানা। তবে আড্ডাগুলি কমেছে, কবিসভা বেড়েছে, আর বেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ। সর্বত্র এখনকার কবিসম্মেলনে ছুটোছুটি করতেও পারি না। তেমনি গত ৩৯ বছরে লেখালেখির জগতে অনেক তরুণ লেখক ও সম্পাদক এসে গেছেন। সব মিলিয়ে অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার সাহিত্য চর্চার সীমানা বেড়েছে বই কমেনি। এর মধ্যে আমরা অনেক খ্যাতিমান কবি - সম্পাদক - সাহিত্যিককে হারিয়েছি! বর্তমানে সাহিত্য জগতে এক একটি শিবিরও তৈরি হয়ে গেছে। 

মেচেদাতেই কয়েকটি শিবির। সব শিবিরে সবাইকে যেতে দেখি না। পাঁশকুড়ার পর হাউরে কালীপদ চৌধুরী সম্পাদিত ' মরশুমি ' পত্রিকাকে কেন্দ্র করে যে সাহিত্য সভা হতো, তা এখন কালীবাবুর গ্রন্থাগারের সভাগৃহে মাঝে মাঝে হচ্ছে। কয়েক বছর সেখানে যাইনি। তাঁরও বয়স বেড়েছে। ভাস্কর ডাকে। আগের সেই সব সভায় অনেক পরিচিত মুখ একেবারেই বিস্মৃতির অতলে চলে গেছেন! ক'জনই বা এখন সমীরণ মজুমদারকে মনে রেখেছি! অনিলদা( ঘড়াই)- কে বাঁচিয়ে রেখেছেন সর্বাণী ঘড়াই, সুনীলদা, রাখহরিদা, ভবেশদারা। অনুপম পালধি তাঁর মতো করে প্রকাশ করে চলেছেন 'কবি ও সাংবাদিক'।

মোহাড়ে, পশ্চিমবাড়ে ক্ষিতীশদা, লক্ষ্মী, অলক, খুকুরা। ওদিকে সবং- এ নারায়ণ সামাট,  রবীন্দ্রনাথ ভৌমিক, সুব্রত, নিমাই, বকুল, শান্তনুরা --মাঝে মাঝে তাঁদের সঙ্গে সভায় দেখা হয়। বালিচক থেকে কাশীদা চলে গেছেন গড়বেতা। বালিচকে কয়েকটি কবিসম্মেলনে যোগও দিয়েছি। প্রফুল্লদা, নিত্য, আভাদি, দীপক নিজেদের মতো এই চর্চাকে ধরে রেখেছেন। 

বেলদায় কত প্রিয় কবি। দেবাশিস কিছুটা ম্লান। মৃণাল চলে গেল! কালীপদ ঘোষ, কার্তিক, কৌশিক, চম্পক, যুগজিৎ বাবু সহ আরও অনেকেই সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওদিকে নারায়ণগড়, কাঁথি, রামনগর, দীঘা থেকে এগরা, বালিসাই - এর কবি বন্ধুরা তাঁদের মতো করে চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে মুগবেড়িয়া, হেঁড়িয়া, খেজুরির কবি - সম্পাদকদের মাঝে মাঝে অনুষ্ঠান করতে দেখছি। সুধীরদা, শিবানীদি, অরুণ,তরুণ প্রমুখ নারায়ণগড়ে শিল্প - সাহিত্য চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই। কাঁথিতে দেবাশিস প্রধান, এস মহিউদ্দিন, দেবাশিস মাঝি, অঞ্জন, মঞ্জির, বিপ্লব, মেহেবুব, মলয়, গৌতম পাত্র, বিকাশ চন্দ সহ আরও শতাধিক কবি কাঁথির সাহিত্য চর্চাকে ধরে রেখেছেন এখনও। 

অনেক স্বপ্ন নিয়ে গড়ে উঠেছিল মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন একাডেমি। তাও টিকলো না। মেদিনীপুর শহরেও কয়েকটি শিবির ভাগ হয়ে গেল। সকলেই বন্ধু সকলের, তবুও যেন একাকি কবির ছায়া একা একা কথা বলে। এই সংকট তৈরি হয়েছে খড়গপুর, ঘাটালের সাহিত্য চর্চায়ও। ওদিকে সাঁকরাইলে প্রদীপদা নিজের মতো চালিয়ে যাচ্ছেন।  'নয়ন'- কে আঁকড়ে বিদ্যুৎ পাল ৪০ বছর কাটিয়ে দিলেন! 

দাঁতনে বীরু, সন্তু, সূর্যদা, সুনীল...যে যার মতো কাজ করছেন। সেখানেও এক কবির ছায়ার সঙ্গে আর এক কবির ছায়ার কি দূরত্ব বেড়েছে? 

ঝাড়গ্রাম, জঙ্গলমহল, ঘাটাল, চন্দ্রকোণায় কবিবন্ধুরাও এখন ভীষণ অ্যাকটিভ। সারিধরমদা, মধুপদা, লক্ষ্মনদা, কেশব, দুঃখানন্দ, বঙ্কিম, শ্রীজিৎ, সুকান্তদা, মঙ্গলদা, শ্রীতনু, কৃষ্ণ, কৌশিক, উপালী, লক্ষ্মীন্দর, শিখাদি, সন্ধ্যাদি, মানবেন্দ্র, সৈকত, প্রমীশ, অমিত, ফটিকদা, সুরেন, অনিমেষ প্রমুখ --বই, পত্রিকা প্রকাশ, কবিসম্মেলনে কোনো ভাটা পড়তে দেননি। ওদিকে --সন্তু, গুরুপদদা, গনেশ, মৌপর্ণা। একটু এগোলেই তারাশঙ্করদা, তুলসীদাস মাইতি। এর মধ্যে অনেক মহিলা কবি ও সম্পাদক রয়েছেন। যেমন মধুমিতা বেতাল, দীপালি, সোমা, অর্থিতা, মানসী ও আরও অনেকে। একটি গদ্যে অখণ্ড মেদিনীপুরের মহিলা কবি ও সম্পাদকদের নিয়ে আমি লিখেছি। লক্ষ্মণ কর্মকার আমাকে তা লিখতে বলেছিলেন 'সৃজন' এর বিশেষ সংখ্যার জন্য। 

কেবল কোলাঘাটের তাপস বৈদ্য, প্রশান্ত শেখর ভৌমিক, অনিলদা, আবদুল মান্নান,মনোরঞ্জনদা, ডাক্তার রমেশচন্দ্র বেরা, সুজাতা বেরা, বিধান ঘোড়ই, বৈদ্যনাথ ধাড়া প্রমুখ মেচেদা- কোলাঘাটকে কেন্দ্র করে সাহিত্য চর্চার বৃত্তটি বাড়িয়ে চলেছেন। আরও অনেক বন্ধু আছেন এই চর্চার মধ্যে। যেমন তমলুকের কবি বন্ধুরা। শুধু তমলুক, ময়নাকে নিয়ে একটি বিশাল গদ্য লেখা যায়। অখণ্ড মেদিনীপুরের কয়েক’শ নাম এসে যায় সেখানে। 

যাই হোক -- মেদিনীপুরের সাহিত্য চর্চায় মহিলাদের ভূমিকা এখন আগের থেকে কয়েক'শ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি কবি - সম্পাদক যূথিকা দাস অধিকারীর ডাকে খড়্গপুর কলেজ অডিটোরিয়ামে গেছিলাম। তাঁর এবং সুনীল ভূঞ্যা সম্পাদিত 'খোলা জানালা' প্রকাশ ও কবিসম্মেলনে এই প্রথম আমার যাওয়া। শ্বেতা সরকার সহ সৃজন সারথী সাহিত্য পরিবারের আতিথেয়তা মুগ্ধ করেছে। প্রায় ৬০ জন কবি সম্পাদক জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উপস্থিত ছিলেন। দুই খ্যাতিমান কবি অম্বর কান্তি কুমার ও দেবব্রত ভট্টাচার্যকে কবি সম্মাননা জানানো হয়। প্রিয় অনেক কবি ছিলেন। রাখহরি পাল, বিদ্যুৎ পাল, কাশীনাথ সাহা, জাহির চৌধুরী, সিদ্ধার্থ সাঁতরা, সন্ত জানা, কাশীনাথ সাহা, তাপস মুখোপাধ্যায়, প্রদীপ মাইতি, অতনুনন্দন মাইতি,  মিঠু মণ্ডল, জয়শ্রী সরকার, নরেশ জানা, তপন তরফদার, ইতি মণ্ডল ,শাজাহান কবির, মনোজ মোহন চক্রবর্তী প্রমুখ। কবিতা পাঠ, আলোচনা, সংগীত, বইপ্রকাশ ইত্যাদির মধ্যে কয়েক ঘন্টা কেটে গেল আমাদের। তবে যে কথাটি বলার, তা হলো যূথিকাদি প্রায় এক দশক ধরে একটি পত্রিকাকে যেভাবে সম্পাদনা করছেন নানা সমস্যা নিয়ে, তা কম কী! এখন সুনীল ভূঞ্যা সহ সৌমেন্দ্রনাথ মাহাত, মহুয়া ব্যানার্জী, মৃদুলা বিশ্বাস, জয়ন্তী রায় সরকার প্রমুখের প্রেরণায় সৃজন পরিবার আরও নিরন্তর চর্চার মধ্যে  এগিয়ে চলুক, এই আশা করাই যায়।


সংক্ষেপে এই প্রতিবেদন। এতে অনেক গুণী মানুষ, বন্ধুর নাম; অখণ্ড মেদিনীপুরের সমস্ত মহকুমা, ব্লক, পঞ্চায়েত, পুরসভার কবি, সম্পাদক, সাহিত্যিকের নাম, পরিচয় এখানে লেখা সম্ভব হয়নি। কয়েক বছর আগে অখণ্ড মেদিনীপুরের সাহিত্য চর্চা নিয়ে 'আপনজন' এর বিশেষ সংখ্যা হয়েছিল। প্রায় ৫০/৬০ জন লেখকের গদ্য সেখানে ছাপা হয়েছে। এই সংখ্যাটির নতুন সংস্করণ করার কথা ভাবছি আমরা। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সংখ্যা যে কোনো সাহিত্যের গবেষণার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। শুধু অখণ্ড মেদিনীপুর কেন, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলা ভিত্তিক সাহিত্যের ইতিহাস লেখা জরুরি। এক একটি জেলা র সাহিত্য চর্চার আদি, মধ্য, আধুনিক, উত্তর আধুনিক যুগ ধরে উপযুক্ত লেখকদের দিয়ে গদ্য লিখিয়ে এক একটি লিটল ম্যাগাজিন হতে পারে। সেই সংখ্যাগুলি একত্রে করলে মহাভারতের কয়েক গুণ বেশি ভল্যুম হয়ে যাবে। জেলা ভিত্তিক কেউ কেউ সেই কাজ করেছেন হয়তো। পুরোটা আমারও অজানা। শুধু অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার সাহিত্য চর্চার ইতিহাস নিয়ে কয়েক খন্ডে বই প্রকাশ করা যায়। এবং তা অনেক সময় ও ব্যয়বহুল কাজ। বিনে পয়সায় বই প্রকাশ করে দেওয়ার মতো প্রকাশক পেলে সেই কাজে আমি অংশ নিতে পারি। আপনাদের মতো বন্ধুদের ( বিশেষ করে যাঁরা জেলার সাহিত্য চর্চা নিয়ে ভালো গদ্য লিখতে পারেন)  পাশে পেলে এই কাজ করা সহজ হবে। আসুন না, সকলে মিলে নিজেদের এলাকার সাহিত্য চর্চার ইতিহাস লিখে যাই। শুধু আমার ওপর ভালোবেসে, মান-অভিমান - রাগ করে কমেন্ট লিখে ছেড়ে দিলে কিস্যু হবে না। কবিতা লিখতে এসেছেন, পত্রিকার সম্পাদক হচ্ছেন,অথচ এলাকার সাহিত্য চর্চার কিছুই জানবেন না, এমন ফাঁকি দিয়ে কিছুই হওয়া যায় না। কবির ছায়া মানে একটা বড় শান্তির আশ্রয় হতে পারে, ছাতাও হতে পারে, অবয়ব হীন হতে পারে, বেদনাও হতে পারে, অতএব...


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Sunday, 3 November 2024

তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা // ই-কোরাস ২০১





বোনফোঁটার মন্ত্র 
তৃষ্ণা বসাক 

(অমৃত আর গরল মথিয়া 
এসে গেছে আজ ভগিনীদ্বিতীয়া)

নতুন যুগের নতুন সুর।
বোন না যেও দূর।।
বোনের কপালে দিলাম ফোঁটা ।
ভায়েরা প্লিজ দিও না খোঁটা।।
যমুনাকেও দিলাম ফোঁটা ।
যম দেখে ভয়ে কাঁটা! 
তুমি আমার  বোন হয়ো।
বছর বছর ফোঁটা নিও।।

একশ আশি বছরে আমার বাড়ি তোমার নেমন্তন্ন রইলো !!!!


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...