Saturday, 14 September 2024

প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর // ই-কোরাস ১৯৫

 



১.

উত্তর 

অঞ্জন দাস


থৈ থৈ জলের শহর

 রাজপথে চন্দ্রিমা ভেসে গেল

 নাগরিক পাদুকায় শুকিয়ে যাচ্ছে তার সব অহংকার

মেঘ কালো মেঘ, ঘন হচ্ছে প্রতিবেশী 

ধরা পড়ছে ডাকাতের দল-


ও ডাক্তার ও ডাক্তার

ছিন্নমস্তা আর মগজের শয়তান 

উপড়ে দিলে, পায়ের তলাতে খেলে

সুপ্রীম ভয় ! তুমি জয়, নির্মল ভোরের বেহালা


সারথি ইঙ্গিত, বাকি শুধু অশ্বথামা রাবনের মৃত্যু

উত্তরায়ণের পথে বিশ্ব , মহামারী ধুয়ে দিও ডাক্তার

রাজ্যে পড়েছে শীত ক্রমশ ঠান্ডা হচ্ছে নবান্নের গলি

অর্জুন মাকে ডাকো আর একটু জল দিও ভীষ্মের মুখে

বোধনের ধ্বনি ধ্বংসাবশেষে 

 মুক্ত হবে বিশ্বের চোখ

অতি সাধারণ শান্তি চেয়েছে শুধু দৈনিক যাপনে

কেমন লাগবে বলো ডাক্তার।


২.

আগুনখাতার পৃষ্ঠা থেকে ৬

শ্রীজিৎ জানা


এখনই আমাকে ফিরতে বোলো না উৎসবে। 

সবেমাত্র মেয়েটাকে দাহ করে ফিরেছি!

একটু সামলে নিতে দাও নিজেদের।

আত্মজর লাশ পোড়া গন্ধ গায়ে মেখে 

এখনই কী ফেরা যায় উৎসবে?


সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো আর কোন বড় উৎসব হতে পারে না মা-বাবার কাছে। 

সন্তান হারানোর মতো আর কোন বড় শোক

হতে পারে না মা-বাবার কাছে। 

কী বীভৎস যন্ত্রণা দিয়ে ওরা মেরেছে মেয়েটাকে! 

কত না চিৎকার করেছে মেয়েটা! 

উৎসবের উল্লাসে ঢেকে দিও না কান্নার স্বর।

 ওর কান্না জাগিয়ে রাখুক উৎসবের সমস্ত রাত!

বিচারের শেষ রায় শোনা অব্দি

জেগে থাকতে চায়ছে সবার চেতনা।

অন্য কোন নির্লজ্জ আহ্লাদের কাছে 

সঁপে দিতে চায়ছে না যূথবদ্ধ পণ।


মন থেকে এতটুকু রাগ কমেনি এখনো!

এতটুকু জিঘাংসা!

এখনই ফিরতে বোলো না উৎসবে।

সন্তানের খুনিদের লাশ চিহ্নিত করে তারপর

সাড়া দেব তোমার আমন্ত্রণে।

সদর্পে ফিরবো উৎসবে!

এখনই নয়…


৩.

হে সর্বংসহা

শ্রীতনু চৌধুরী


সেই পলাশ নিংড়ানো রাতে 

তার হৃদযন্ত্র মাপক 

মাটির বুকে বসিয়ে 

মেয়েটি শেষবার হয়তো 

শুনতে চেয়েছিল 

তোমার প্রাণ স্পন্দন 


শ্বাপদ সংবাদ শেষে 

তার বিভগ্ন মাতৃচিহ্ন সম্মুখ 

মৃত পড়ে আছে দেখি 

সভ‍্যতার বীভৎস লাশ 


থামো সর্বংসহা,

প্রয়োজন নেই আর পরিক্রমার

লুন্ঠিত শব থেকে স্ব-হস্তে

টুকরো টুকরো করে কেটে 

যোনি ও স্তন 

তুলে দাও -

নিজেরই আদিম সরীসৃপ

সন্তানের হাতে ।



৪.

হাতে নিয়ে প্রাণ

আভা সরকার মণ্ডল 


কতকাল আর --      চোখে নিয়ে জল 

দেখে যাওয়া শুধু --  ক্ষমতার বল ?

সময় এসেছে --       উঠে দাঁড়ানোর 

এককের দিকে --    হাত বাড়ানোর ।


দুইয়ে দুইয়ে চার --- চারে চারে আট 

মিলে-ঝিলে গড়ে ---তুলি রাজপাট ।

জুলুমের সাথে ----- করতে লড়াই 

এখন তো আর ---   কেউ না ডরাই ।


পা মিলিয়ে পায়ে --- হাতে রেখে হাত 

সামলিয়ে চলি----- ‌ ঘাত প্রতিঘাত ।

জয় পরাজয় ----    একা কারও নয় 

প্রতিবাদী হতে ---   নেই তাই ভয় ।


মুছে ফেলে কালো ---জ্বালাব-ই আলো 

গুটি হাতে তুমি------ যত চাল-ই চালো ।

উলটিয়ে যাবে------  সে পাশার দান

দেখবে তা তুমি ----- হাতে নিয়ে প্রাণ!



৫.

কে যেন বলেছিলেন জ্ঞানের মশাল জ্বলুক

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

   

যদি সাদা কথায় রোধী এবং বিরোধীর তফাৎ বুঝতে চাই 

তবে আঁচল থেকে খরগোশটি লাফ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে, দৌড়ে যায় জনগন পেরিয়ে, বন জঙ্গল খুঁজতে খুঁজতে লুকিয়ে পড়ে ঝোপের মধ্যে, জ্ঞানী শেয়ালেরা বংশ বাড়ায় প্রহরে প্রহরে 

তখন জ্ঞান-বিজ্ঞান ছবি-গান-কবিতা সবেতেই অধিকার সাম্রাজ্ঞীর 


তবু যেখানে সেখানে কথায় কথায় আসেন স্তালিন লেলিন গান্ধী, এমন কি এসে পড়েন  হিটলার, নিজস্ব সেনার মৃতদেহ দিয়ে খাদ ভরিয়ে এসে পড়েন নেপোলিয়ানও 


রাস্তা কী খুঁজিয়া পাইয়াছেন হে ধ্বংসবাদ, রাস্তা কী তৈরি করিতে পারিয়াছেন হে নাৎসিবাদ 


তবে কি আমরা লির (বেহালা) বাজাবো না নিরোর মতন, 

তবে কি আমরা উৎসবের মার্কেটিং করবো না সিন্ডিকেট কমিশনের জন্য 


যতই ধর্ষণ করে খুন করো অথবা খুন করে ধর্ষণ 

না পারলে মাতৃজঠরে ইনজেক্ট করো ১৫০ মিলিগ্রাম ফ্লুইড 


মশাল জ্বলছে, আকাশ ছুঁয়েছে 


জ্ঞান হে, তোমার প্রুফরিডিং থেকে অজ্ঞান শব্দটি মুছে দাও 



৬.

আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা

 জয়শ্রী সরকার 


শিরদাঁড়াটাই নেই যে রে তোর, কোথায় ফেলে এলি?

মানুষ তোকে বলবে না কেউ এটাই ভুলে গেলি!

এ্যাদ্দিন তো সুখেই ছিলিস উন্নত মস্তকে 

কোন্ ড্যারাতে গিয়েছিলিস? ধরলো যে ভূত তোকে!


শিরদাঁড়াটা খুঁজে পেলে মুক্তি পাবি ওরে 

গোলামগিরি করতে করতে থাকবি ঘুমের ঘোরে !

লোভ-লালসায় থাকতে থাকতে হয় যে মাথা নত 

শিরদাঁড়াটাও বাঁকতে থাকে পরজীবীর মতো!


শিরদাঁড়াহীন মানুষগুলোর স্বরযন্ত্রই অচল 

সত্যি বলবে কেমন করে? চলবে থেকে সচল।

কোথায় রে তোর মায়ের স্নেহ, বাবার ভালোবাসা 

আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা, পাবি সুখের বাসা!


সুখের বাসা সত্যি খাসা, ছোট্ট সোনামণি 

তোর মাঝেতেই খুঁজে পাবে হীরে মাণিক খনি। 

তোর চোখেতে চশমা রঙিন, খোল তো রে আজ আগে 

দেখতে পাবি চোখের পাতায় শিরদাঁড়াটাই জাগে!



৭.

ওরা

ইতি মণ্ডল 


সূর্যের আঁতুড় ঘরে ওদের জন্ম।

একদিকে সরস্বতী অন্যদিকে 

বিবেকানন্দ, ক্ষুদিরাম…

গলায় মুহুর্মুহু স্টেথোর স্পন্দন।

দুহাতে কলিজার নয়া ইতিহাস। 

নিদ্রাহীন যাপন ওদের কুঁদে কুঁদে ইস্পাত করেছে।

ওরা গান্ডীব কাঁধে অর্জুন,

একটাই লক্ষ্য...

তুমি না, তোমার গভীর গহ্বরের শোধন...

ওরা পার্থসারথি, ধর্মের  রাশ টেনে।

আত্মজর আর্তনাদে আমরাও সারি সারি সমরে।

পূর্ণিমার চাঁদ ও আজ বর্ণহারা-টকটকে।

হাজার হাজার চোখের ভিতর ভিসুভিয়াস।

তুমিও তো একদিন জীবন ভিক্ষা পাত্র নিয়ে দাঁড়াবে ওদের দ্বারে, ভুলোনা...।

ওরাই গড়বে মাওলাইনং, বিশ্বখানা...

ওরাই টাঙাবে আগামী ইতিহাসে, সত্যের সামিয়ানা!



৮.

লখিন্দর গন্ধ 

খুকু ভূঞ্যা 


মৃতদেহ নিয়ে তুমি সারাদিন নাড়াচাড়া করো 

আমি মৃত্যুর ভেতর কিছুটা বেঁচে থাকি নিজের মত 

এখন বেঁচে থাকার সুখ কাউকে দেওয়া যাবে না 

সে যতই শ্বাসকষ্ট হোক দহন হোক 

নিজের ক্ষতগুলো অলৌকিক হয়ে উঠুক একা একা 


অনেক দিন থেকেই মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে 

হৃদয়ের ফল্গুতটে মৃত ঢেউ নিয়ে সে কেবল প্রতীক্ষা করেছে নিজস্ব উজান 

আমাদের পড়শী কামনা বালি থেকে আরো বালি হয়ে যায় 


খুব একা হয়ে গেছি, নিবিড় শ্মশান 

পাঁজরে লখিন্দর গন্ধ

বুকে কেউ আগুন জ্বালে না

মৃত্যুর প্রতিধ্বনি ফিরে ফিরে আসে প্রতিদিনের জন্মের ভেতর 


এবার সূর্য গলে যাক টুপটুপ 

তুমি বাধা দিও না হে আমার প্রিয় প্রশ্বাস 

...........................



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ (সংগৃহীত ফেসবুক) - দেবাদীপ ঘোষ

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪


No comments:

Post a Comment

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...