অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে খোলা চিঠি
তৃষ্ণা বসাক
“শ্রীচরণেষু মা,
মাগো আমার, তুমি কাঁদবে না। আমি কষ্ট পাবো তাহলে।…আমার মা-কে যদি কেউ আমার চোখের সামনে অত্যাচার করে, কেটে টুকরো টুকরো করতে চায় এবং আমি যদি পাগলের মতো না লাফিয়ে, বিচার করতে বসি, যে এতে আদৌ সুরাহা হবে কি না, আইন এর মান্যতা দেয় কিনা, এ নিয়ে খবরের কাগজে তীব্র প্রবন্ধ লেখা যায় কি না – তবে আমি হয়তো অনেকের কাছে ধীর মস্তিষ্ক ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবো ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে তোমার মাতৃহৃদয়টা কি ছিঃ ছিঃ করে জ্বলে উঠবে না মা? তোমার অন্তরাত্মা কি বলবে না মা – যে ছোটোবেলায় বুকের দুধের সাথে বিষ মিশিয়ে কেনো এই ক্লেদের পিন্ডটাকে মেরে ফেলিনি?…
…তোমার কোলের ছেলে কচি কিন্তু চিরকাল তোমারই থাকবে।…আজ একটা আদর্শের জন্য প্রাণ বিসর্জন করছি। তাতে আনন্দ আমার মনের কানায় কানায় ভরে উঠেছে। ফাঁসির কাঠটা আমার কাছে ইংরেজদের রসিকতা বলে মনে হচ্ছে।
আমার এই অন্তরের কথা তোমারই অন্তরের প্রতিধ্বনি।
আমি চিরদিনই জানি যে, আমি বাঙালী তথা ভারতবাসী, আর তুমি আমার বাংলা তথা ভারতবর্ষ – একই পদার্থ। একথা আমাকে শিখিয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল। যুগ যুগ ধরে তুমি যে অপমান, লাঞ্ছনা ও নির্যাতন সহ্য করে এসেছো, মাটিতে মুখ থুবড়ে বোবা গরুর মতো মার খেয়েছো, তারই বিরুদ্ধে তোমার মনে যে বিদ্রোহ অন্তঃসলিলা ফল্গুর মতো বয়ে যাচ্ছিল, সেই পুঞ্জীভূত বিদ্রোহ–ই আমি। বিপ্লব জিনিসটা শুধু আমাদের নয়, মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য যুগে যুগে এটার প্রয়োজন হয়েছে। যাদের প্রতিটি রক্তবিন্দু দাসত্বের কলঙ্কে কলঙ্কিত হয়ে গেছে, তাদের কথা ভাবি না।…কিন্তু যারা মধ্যপন্থী, আপস মীমাংসায় এখনো বিশ্বাসবান, তাদের জন্য দুঃখ হয়…।”
1933 সালের 12 জানুয়ারি মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসির কদিন আগে মাকে লুকিয়ে লেখা শহিদ প্রদ্যোত ভট্টাচার্যর চিঠি।
একজন লেখক নয়, একজন মা হিসেবে অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের বলছি - তোমরা অনশন প্রত্যাহার করো। লড়াইয়ের অন্য পন্থা আছে।
বেঁচে থাকো, বেঁচে থেকে লড়াই করো। মনে রেখো, সুজাতার পায়েস খাবার পরেই বুদ্ধদেব নিজের অভীষ্ঠ লাভ করেছিলেন।
এই বাংলার সব মায়েদের ভীষণ ভয় করছে। আর একটিও প্রাণ যেন অসংবেদনার বলি না হয়।
সুস্থ থাকো, লড়াইয়ে থাকো।
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪
No comments:
Post a Comment