তুষারকান্তি ঘোষ এর গুচ্ছ কবিতা
১.
ভূমিকন্যা
ভূমিকন্যা একটি ফুলে ভরা গাছ
সারারাত চোখ জ্বেলে বসে থাকি ফুলের ফোটা দেখব বলে
ভেতরের কাঙাল যেন বৃষ্টির ধারাপাত
সারাজীবন তৃষা ও শূন্যতা কুড়িয়ে এগিয়ে চলেছি
আকাশে নক্ষত্রের নাকছাবি ফুটলে ফুলও পাপড়ি মেলে
আমি তুলে আনি গন্ধরাজ
বিবাহবাসর সাজাই রজনীগন্ধা দিয়ে
একশআট পদ্ম নিয়ে ছুটে যাই ঠাকুর দালানে
ভূমিকন্যা আড়চোখে দেখে সব
গাছের সাথে, ফুলের সাথে,পাপড়ির সাথে আমার প্রনয়
গন্ধ নিই, ছুটে গিয়ে হাত ধরি
আমি ভূমিকন্যার সাথে হারিয়ে যাই অনন্ত অম্বরে!
২.
হারা নদীর তীরে
এরকমও হয় জীবনে
ভালোবাসা শর্তাধীন হলে আমি শর্তহীন নারী খুঁজে ফিরি
পায়ের কাছে গড়িয়ে পড়ে লাল বটফল
পাখি খেয়েছে অর্দ্ধেক বাকি অর্দ্ধেক আমার জন্য
হায়! সব নারীই নদী নিজের মনে বহে যায়
আমার চোখে মেঘের ছায়া, ছায়া নদীতে পড়ে
নদী আমার দিকে ফিরেও তাকায় না
বলো এরপরে বাঁচবার সবদিক বাঁচাবার পথ কোথায়!
৩.
মহাভাদর
ভাদ্র চিরকাল বিষন্ন মাস, কলেজে পড়ার সময় বাড়ি এলে খেতে হত নূতন আউস ধানের ভাত। মা বোনেদের অলঙ্কারহীন হাত দেখে বুঝতে পারতাম অবস্থাবির্পজয়ের কথা।
তবু দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি আমার। হত্যাকারী ঘরে এলে বাবা মা দুজনেই এসে দাঁড়াতো পাশে। তাদের চোখে লেগে থাকত চাঁদের মায়া। প্রবল প্রত্যাশায় তারা স্বপ্ন দেখত, আমাদেরও দেখতে শিখিয়েছিল।
আমরা শিউলি কুড়াতে যেতাম খুব ভোরে। প্রাকৃতিক ও সাংসারিক বির্পজয়ের পরেও আমরা পুকুর থেকে তুলে আনতাম গেঁড়ি গুগলি আর কলমীর ডাঁটা।
মা হাসিমুখে খেতে দিত আমাদের।
তারা জানত জীবন এক মহাজাগতিক গ্রন্থাগার, সেখানে বইএর পাতায় টিকা টিপ্পনি সহ লেখা আছে সব। সেখান থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু হয়।
কতদিন মা চলে গেছেন, বাবাও নেই। আমি ডাক্তার হবার পর প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হয়েছে। তবু ভাদ্রমাসে দেশের বাড়িতে গেলে আজো আমি আলমারি খুলে রোদে দি মা-বাবার জামাকাপড়, আমার আর বোনেদের সযত্নে রক্ষিত রঙওঠা ইজের ও ফ্রক।
এখন তাদের গা থেকে ন্যাপথিলিনের গন্ধ ভেসে আসে
আর আমার দুচোখ ভেসে যায় জলে।
৪.
বির্সজন
কোন বিরুদ্ধ-সংলাপ বলিনি
পছন্দ করি না পচা ফুলে ভনভনে মাছি
পাথরের চোখে জল দেখার আশায় এতদূর আসা
তবু কেন মেঘকে পাঠাও মুছে দিতে চায় সব আলো?
দূরে রাখার পরীক্ষায় দূরত্বই বাড়ে
প্রতিমা বির্সজন শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা
৫.
এক কোজাগরী রাতে
মনে হয় লবনাক্ত জীবনের শিকড়-বাকড় উপড়ে ফেলি
কেন শুধু বিষন্নতার দিকে টান এই পৃথিবীর!
কেন বলো ডুবে থাকব এই অধম-অন্ধকারে?
যুদ্ধ শেষ হয়নি এখনো
ক্লান্ত হতে পারি তবু এখনো নায়ক
সভ্যতার দীর্ঘশ্বাসের বেড়ি আর জলশূন্য নদীর ভয় দেখিও না আমাকে
যুদ্ধ জিতে তোমাকে নিয়ে এক কোজাগরী রাতে ভেসে যাব জ্যোৎস্নায়
………………………
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪
No comments:
Post a Comment