Saturday 30 July 2022

তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা // ই-কোরাস ৬৭

 



তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা    


রাজগৃহে বর্ষা


বর্ষা নেই  বর্ষা নেই  বর্ষা নেই

কে করেছে পাপ?

কবে বৃষ্টিতে ভিজবেন তথাগত?

রাজগৃহে বেনুবনে শুধুই উত্তাপ।

শিষ‍্যরা ক্লান্ত, ধ‍্যানের সময় পার হয়ে যায়!

তথাগতর জীভ জড়িয়ে যাচ্ছিল, বললেন প্রার্থনা করো, অন্তরাত্মায় অবগাহন করো, ভীত হয়ো না।


সৃর্যরশ্মি লেগে আছে পাখির ডানায়, তথাগতর ঠোঁটে।

নিরঞ্জনা নদী থেকে সুজাতার মত কেউ না কেউ  আসছে পায়েসান্ন রান্না করে। শান্ত হও, ঈশানে মেঘ জমেছে, বর্ষা নামলো বলে।

……………………



চেতনার ভিড়ে


স্মৃতি সততই সুখের এ কথা বলতে পারব না। বিস্মৃতির আঁধার  নিত‍্যসঙ্গী ছিল।


দিকভ্রান্ত পথিকের মত পথ হারিয়েছি বার বার, স্মরনীয় সুখ একবিন্দু বৃষ্টি মাত্র,  মরুভূমির উষ্ণ বালুতে পড়ে বাষ্প হয়ে উড়ে গেছল। 


শুধু তীব্র দাবদাহ, মায়াহীন বালুতট, শুধুই সাপের ছোবল, কে কার আত্মীয় কে কার ভালোবাসার জন বুঝতে বুঝতে  কতদিন চলে গেল!


এই অবেলায়  আর অগ্নিদাহ নেই , শুধু কিছু সাবধানবানী তর্কহীন সর্তকতা দিয়ে গেছে।


 এই সেদিন তুমি এলে চেতনার ভিড়ে, একা একা এলে 


দিন যায়, রাত যায়,কোন অতীত নয়, সোহাগী নক্ষত্রের পাহারায়।

……………………......


অক্ষর-প্রতিমা


নিজের মুখোমুখি  দাঁড়াতে নিজেকে বদলাতে হয়  


যতই প্রজ্বল বাসনা চিতার মত জ্বলুক,  অবিরাম খেলা হলে পতন অনিবার্য


হয়তো প্রত‍্যাখান বেশি ছিল , মোহাছন্ন আকাশ অন্ধকার ছিল, তবু  তারাদের কিছু কথা থেকে যায় 


নদী কখনো বন‍্য, কখনো ঝিরঝিরে জল, খন্ড খন্ড অথচ সংযুক্তা 


যে প্রকৃত প্রেমিকা সে পাহাড়ী নদীর মত খরস্রোতা, শালের মঞ্জরী-মাখা অপ্সরী, ঠিক রমণ-বিলাসী নয়, সহজাতা, কবির অক্ষর - প্রেমিকা

………………….........



ঘর-সংসার


একরাতে মহুয়া পান করে আমি মাতাল নই  ঈশ্বর হয়ে যাই, নক্ষত্রের ভালোবাসায় এক দলছুট হরিণীর সাথে রাত কাটাই


কুসুমের মত ভোরের হলুদ আলো গায়ে পড়লে আমি ভুবনডাঙার মাঠে ঘুরে বেড়াই, সাদা বক উড়ছে আকাশে, দুঃখ ছিল দুঃখবিলাস  


অগ্নিদাহ নেই, রাত ছিল স্মরনীয়, যে নারী  সামাজিক গন্ডি পেরিয়ে এসেছিল, তাকে পেতে মন চায়, তার সাথে আবার  রাত  কাটাতে চাই 


একটা মনের মত ঘর-সংসার চাই 

…………………........


ভ্রুণ 


তোমার নীলাভ অন্তঃপুরে পদ্ম ফুটে যখন  তখন তোমার কাছে যাওয়ার জন‍্য আমি কবিত্বও  প্রত‍্যাখান করতে পারি 


জীবনের সারৎসার জানা আছে, অরণ‍্যসংকুল গিরিপথ পেরিয়ে এক মহাকাল শুয়ে থাকে আকাশের নীচে 


আমি ক্ষুদ্র মানুষ, স্বার্থপুষ্ট , প্রেমে দুষ্ট ; ভালোবেসে ভালোবাসার  নারীর গর্ভে স্থাপিত করি ভ্রুণ, কবিতা অরণ‍্যের দাবদাহের মত জ্বলতে থাকে 


ভ্রুন যখন লাব ডুপ শব্দ করে, কবিতা আর চিতাকাঠে জ্বলতে চায় না, আবার কবিতা লেখা হয়,  কবি নাচেন  প্রবল উল্লাসে 

……………………......


অন্ধকারে যেও না


যেখানে শুধু অন্ধকার সে জগতে পা রেখো না তুমি, কৃষ্ণগহ্বর ভালো নয়,  লালসার রাজ‍্যে তুমি মহারানি হতে  চেয়ো না 


উজ্জ্বল আলো আনতে পারিনি, ব‍্যর্থতা নিত‍্যসঙ্গী, প্রিয় বর্ষাকালে বৃষ্টি দিতে পারিনি তোমায় , তুমি জানো,  অসাধারন আবেগ আমাকে ধীমান হতে দেয়নি কোনদিন


অক্ষরের ভালোবাসায় এতদিন বাঁধা ছিল মন, শরীর সচল ছিল, তবু ধূসর কুয়াশা পেরুতে পারিনি  এবং এও অসত‍্য নয়  আমার শিরায় শিরায় ছিল ভালোবাসার উদ্ভিদ- নির্ষাস


যেখানে  অন্ধকার, শুধু মাংসলোভী হায়নার দল, সেখানে যেওনা বিধুমুখি

…………………........




চাঁদের কলঙ্ক


জটিল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি, ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে যে আলো আসে তাও ফেরাতে পারে না আমাকে 


মধ‍্যবয়সী নারীরা ধীরে ধীরে হাঁটে , এপাশ ওপাশ চায়, কেউ  কি দেখছে তাকে? অকারনে চোখ জলে ভিজে যায়, সে কোন নূতন পুরুষ  শুধু তাকেই চায়!


শোকের পোষাক পরা দিকচক্রবাল  কুয়াশায় ঢাকা


অনাবিষ্কৃত নদী ডাকে, প্রবল স্রোতে নৌকা ওলট-পালট খায়, এ ওর হাত ধরে 


কবিদের চোখে পূর্নিমা চাঁদের কলঙ্ক শিল্প হয়ে ধরা দেয়

……………………



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614








No comments:

Post a Comment

তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা // ই-কোরাস ১৮০

  তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা ১. মহানির্বাণ   চুন্দ, চুন্দ, এখনি এই শূকর মাংস মাটির গভীরে পুঁতে ফেলো, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে এই মাংস পরিপাক করতে প...