Sunday 24 July 2022

তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা // ই-কোরাস ৬৬

 



তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা    


মায়া চাঁদ আকাশে উঠলে


মায়া চাঁদ আকাশে উঠলে

তোর সাথে আবার কিভাবে কথা শুরু করি বল? 

দেশান্তরী হব বলেও হোস নি। অপেক্ষায় আছিস?

সব সুখ উদ্দামতা তোকে ঘিরেই ছিল

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরাজয় মেনে নিতাম হাসিমুখে 


প্রতিদিন খোঁজতাম অনাবিষ্কৃত নদী

মুছে দিতি সব আড়ষ্ঠতা

আনন্দঘন সময়ে সকল কাহিনী শিল্প উজাড় করা 


তারপর কতদিন কত রাত চলে গেল

হঠাৎ সাইক্লোন হল, আমাদের নির্বাক কুটিয়ে

বেদনাচিহ্ন এঁকে দিয়ে গেল রাতের ঈশ্বর 


ভূমিকম্পের স্মৃতি কি করে ভুলি বল? 

মায়াচাঁদ তোকে কাছে নিয়ে এলে  তোর সাথে কি কথা বলে শুরু করি আবার, বল, তুইই বল 

……………….......


প্রিয়তমাষসু



ভয় হয়, আতঙ্ক হয়, তবু তোমার কাছে যাবার জন‍্য কেটে ফেলি ট্রেনের টিকিট

অপরাহ্নবেলায় মন খারাপ, খেলতে মানা, তবু স্মৃতিগুলি পাখির ডানায় রোদ্দুর পড়ে বহুবর্ণা 

সব কিছু মেঘে ঢেকে যাবার আগে তোমার সাথে দেখা হওয়া  ভীষণ জরুরি ঊশ্রী নদীর বাঁকে 

সব ছাড়তে পারিনি,

সংসার সন্তানসহ সৌজন‍্যের খেলা চলে চলতেই থাকে 

 একমাত্র  মায়াবনবিহারিনীহরিনী জানে 

এ তৃণভূমিতে কী ভীষণ একা  আমি 


আষাঢ় শুরু হল কালিদাস লিখতে শুরু করেছেন মেঘদূত-কাব‍্য 

প্রিয়তমাসু রেলগাড়ি ঝমঝমিয়ে পেরিয়ে গেল  তোমার বাড়ির পাশের স্টেশন 


দরজা খোলা রেখো 

……………….......


বহুগামী 


নতুন বইএর প্রচ্ছদে তোমার মুখটি আঁকব

বহুমাত্রিক জীবনে তুমিও আছো প্রিয়তমাসু।


একমুখি প্রেম সোনার পাথরবাটি। কে নয় বহুগামী?

ভয়ংকর বজ্রপাতের শব্দ বিদ‍্যুতের আলো দিয়ে হারিয়ে যায়। বৃষ্টি পড়ে ঝম্ ঝম্।  তারপরে রোদ, তারপরে মেঘ। এরকমই হয়।


চিতাবাঘ টহল দিচ্ছে আমাদের এলাকা। আমাদের সবার মাঝে অনেক বৈরিতা।  কেউ তপস‍্যায় মগ্ন, কেউ  তীর্থে যেতে চায়।  কেউ  প্রেমে উন্মাদ, কেউ  উন্মাদিনী।


একদিন জ‍্যোৎস্নারাতে মহাকাব‍্যিক রমণীরা পুরুষের সংযমহীনতা ক্ষমা করে দেয়। কারন সব সুন্দরীই জানে শুধু পুরুষ নয় নারীরাও বহুগামী।

………………........


দ্রোহকাল পেরিয়ে 


অপমানে উপেক্ষায় বার বার ধুলোয় মিশেছি, নাগাঢ়ে আঁধার। তখনো তোমার সহাস‍্য মুখ পাতাল থেকে ঝর্ণা এনেছে।


পাথরের খাঁজে খাঁজে কলকল শব্দে জল বহে গেলে আমি ধুলিমাখা গায়ে উঠে দাঁড়িয়েছি স্নান করব বলে।


পরীরা যেমন পাখির ডানা লাগিয়ে মর্তে আসে তেমনই এসেছো তুমি  আলো নিয়ে অন্ধকার রাত্তিরে।


আমার জানা নেই কেন এসব ঘটে যায়, এই অসময়ে কেন ঘাসের উপর শিশিরবিন্দু এত  উজ্জ্বল দেখায়,

 কেন আমাদের ফুটো চাল দিয়ে চাঁদের আলো এসে  

ভরিয়ে দেয় বিছানা বালিশ!


কি জানি হয়তো সব দ্রোহকালে অপমান উপেক্ষার জবাবে  একটি  ভালোবাসার কাহিনি লেখা হতে থাকে আবহমান পৃথিবীতে।

………………......


বর্ষা



আমাদের ছোট শহরের উপর দিয়ে যখন মেঘ উড়ে যায়  আমি সোঁদামাটির গন্ধ পাই 


বর্ষার হাত ধরে অতল জলের মেয়েরা আসে, তাদের পায়ে নূপুর, তারা বিচিত্র রঙে ভরা 


শহরের ছোট নদীতে নৌকা তরতর ভেসে যায়,

শুধু কিছু ঘাটে  ঘোলাজলে  স্নান করে  বর্ষাসুন্দরীরা 


ব‍্যাঙ আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক একটি সুর খুঁজে আনে, কদম্ববনের ছায়া পড়ে পুকুরের জলে 


আমি গুহা থেকে বেরিয়ে আসি, এপথে সেপথে যাই, বৃষ্টি ভিজি, মেঘভাঙারোদে অমলতাসের নীচে হলুদআলো গায়ে মাখা তোমাকে দেখি বিস্ময়ে 


বর্ষায় মৌসুমী বায়ূর মত প্রেম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে, 

আমি খুঁজে পাই আমার উপহার, আমার বর্ষালক্ষীকে

………………….....


 বিদূষী প্রেমিকা


সারারাত তোমার কাছে ভিক্ষা চেয়েছি উত্তাপ

তবু তুমি নির্মোহ ছিলে, কেন বলো সংগৃহীত শস‍্যে রক্ত লাগিয়ে দিলে?


জীবন বহুমাত্রিক, কিছু অবহেলা হয়তো বা ছিল, হয়তো সব লেখা কবিতা তোমাকে শোনানো হয়নি, শেষ বইএর প্রচ্ছদে অন‍্য নারীর মুখ এঁকেছিলাম।


তবু মেঘলাদিনে যখন একা হয়ে যায় মন, প্রবাহের অনুকুলে তোমার কাছেই ফিরি, তুমি জানো তোমার সাহচর্য কতটা প্রয়োজন।


হেরে যাওয়া মানুষেরাই  ঘরে ফিরে আসে।


 মেঘ জানে, বৃষ্টি জানে, ভবিষ্যত পৃথিবী জানে গার্হস্থ‍্য জীবনে  নির্মোহ না হয়ে,রোগীর পাশে যেমন থাকে স্নিগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে একটি সেবিকা, তেমনই প্রয়োজন  মাঝরাতে জ‍্যোস্নাভেজা  বিছানায়  এক বিদূষী প্রেমিকা।

……………………...



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614






No comments:

Post a Comment

তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা // ই-কোরাস ১৮০

  তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা ১. মহানির্বাণ   চুন্দ, চুন্দ, এখনি এই শূকর মাংস মাটির গভীরে পুঁতে ফেলো, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে এই মাংস পরিপাক করতে প...