তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা
উৎসর্গ
আজ বিকেলে জন্মজন্মের ছোঁয়া দিলি
প্রখর রোদ্দুরে জীবন ভেঙেচুরে নিরালম্ব হয়েছিল
অন্ন রোচে না মুখে
অন্ধকার সিঁড়িতে যখন বুকে মাথা রাখলি
জলবাতাসে থর থর কেঁপে উঠল গাছের সর্বাঙ্গ
তোর ছোঁয়া আকূল মায়া
এক বিকেলে আর কতটুকু দিতে পারি বল?
এক চিলতে সুখ নিয়ে বেঁচে থাক লতার কুটিরে
নিজের সর্বস্ব পুড়িয়ে তোর বৃষ্টিভেজা চুলের সুবাস
কিভাবে নিতে হয় জানি
জীবন তো এক ফর্মার কটি পাতা
কনুই অবধি ব্লাউজ, রঙবেরঙের শাড়ি,
দু-ভুরুর মাঝখানে ছোট্ট টিপ -পরা
তোকেই উৎসর্গ করলাম আজ বিকেলের কবিতাখানি
………………..
সমুদ্রলক্ষ্মী জানে
তোর জন্য আর কত দিতে পারি?
আমারো তো সীমিত সার্মথ্য
এ নদী সে নদী ঘুরে এসে দেখি
সবকিছু ওলটপালট
কাগজের নৌকা শুধু ভাসে, অস্থির স্থল
সব প্রশ্নের উত্তর নেই
জীবন পদ্মপাতায় জল
একসঙ্গে বসবাসে এ ওকে খায়
নিঃস্বতার হাসি রাত্রির তরঙ্গে ভেঙে ভেঙে যায়
ভালোবাসার বলুচরে যদি কখনো ঢেউ আছড়ে পড়ে
সমুদ্রলক্ষী জানে সত্যিই কে কাকে কত বেশি চায়!
……………….
দুই নদী
আমাকে পড়তে পারেনি কেউ
ছেঁড়া পাতা কেবল বিস্মৃতি
মৃত হলে ভালো হত, তবু মৃত নয়
ভরা কোটালের দিনে তুমি ছিলে নীরব পাঠক
নিঝুম নক্ষত্রের রাতে ভালোবাসাবাসি হয়েছিল একদিন
তবুও বিশ্বাসের বিপরীতে অবিশ্বাস এসে যায়, একটি নদী জলহীন হয়ে গেলে মানুষ অপর নদীর সন্ধান চায়
আর একটি নদীতে অবগাহন, আর একটি নারী, আর একটি ভালোবাসা রাতজাগা পাখির মত দোদুল্যমান হয়
একেই কি দ্বিচারিতা বলে? একজন্মে দুইবার ভালোবাসা,
ঘর ও বাহিরে সংসার?
কি জানি দু'নদীতে
একদিনে দুইবার স্নান করলে মানুষ অপবিত্র হয়ে যায় কিনা!
………………..
স্বপ্নে বাঁচা
সব সুখ স্বপ্নে বেঁচে থাকে
শব্দকে নাচাতে নাচাতে নদীর কাছে যাই
ভাঙা নৌকায় ওঠার সাহস নাই
অরণ্যের কাছে ফিরি
বর্বর অরণ্যে বড় হাওয়া, লতায় জড়ানো সাপ
আমি বাড়ি ফিরি নিজের বিছানায়
বর্ষারাতে সব নিঃস্বতার মাঝে একটু বাঁচার জন্য আমি সেই এক নারীর সাহচর্য খুঁজি, একটি বিপজ্জনক সাঁকো পেরোতে চাই
ঘুম আসে না, ক্লান্ত হয় স্নায়ূ। আধগ্লাস জল আর দুটি ঘুমের ট্যাবলেট।
স্বপ্ন দেখি। সব সুখ স্বপ্নে বেঁচে থাকে।
……………….
গরম ভাতের গন্ধ
ঢেউ জাগলে আমি অতীতের কথা ভুলে যাই
তুমি যদি ডোবাও ডুবে মরব, জাগালে জাগব
কত কথা হয়নি বলা, মেঘের ঘোমটা সরিয়ে
দেখা দিক পরিছন্ন আকাশ
আমাদের অন্তবিহীন তর্ক শেষ হয়নি কখনো
কখন যে শত্রু হও কখন মিত্র বুঝতে পারি না
ঢেউ জাগলে ধমনীর ভিতর গুড় গুড় শব্দ হয়
আমি তোমাকে দেখি, দেখি তোমার পোষাক, অবিনস্ত্য চুলের বাহার
অভিমান হয়, এ নীরস সংসারে কখন যে কাঠকুড়ানি হয়ে গেলে বলেও গেলে না, কাঠের আগুনে ভাত রান্না করলে আমি গরম ভাতের গন্ধ পাই, বুঝতে পারি তুমি ডাকছো আমায়
…………………
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - সুব্রত ঘোষ
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
পড়লাম দাদা । পাঁচটি কবিতা পড়লাম । অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ সব কবিতা পড়ছি আজকাল দাদা । একদিনে দুই নদীতে স্নান করলে মানুষ অশৌচ হয়ে যায় কিনা....... অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ। এগিয়ে চলুন দাদা
ReplyDelete