Sunday 17 July 2022

তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা // ই-কোরাস ৬৫

 



তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা    


একাকিনী


আমার আচরন ক্ষমা ক'রো, ভালো থেকো

আমি জানি পুরুষের ব‍্যর্থতা সবচেয়ে কষ্ট দেয় তাকেই 

বিষণ্ণতা জমে জমে পাথরের শিলা হয় মহাকালে


কত কথা ছবির মত ভাসে 

তোমার গা ঘেঁসে বসে ফুল-ফোঁটা দেখেছিলাম

ওষ্ঠ এঁটো করে দিলেও কিছুই বলতে না,

পূব আকাশে চাঁদ উঠত গভীর বিস্ময়ে 


আজ তপ্ত অভিমানে সাত সকালে অনেক কথা বলেছি তোমায়, ক্ষমা ক'রো,  তোমার প্রীতি ও ভালোবাসা আমার অজানা নয় 


 এখন একাকী ঘরে শুয়ে আকাশ দেখি,

দেখি বৃক্ষছায়া, বন, ট্রেনের হুইশেল শুনি, কান্না পায়,

কাকে বিশ্বাস করবো বলো, আমার জীবন নয় মধুবৃন্দাবন!

……………........


গীতবিতানের গান 


দ্বন্দ্বের ভেতরে দ্বন্দ্ব, আরো দ্বন্দ্ব,

অনেক বিস্তার তার শাখাপ্রশাখায়

ভালোবাসা ছিল, এখন কি সরে সরে যায়?


কঙ্কালের অমোঘ হাত স্পর্শ করে আছি , বড্ড একাকী,

তবু মাংস-লোভ গেল না আমার,

দিনদুপুরে মন চিলেকোঠার ঠিকানা চায় 


বিকেল যখন সন্ধ‍্যার কোলে ঢলে পড়ে 

আমার ভীষণ মন খারাপ হয়, কতটা সত‍্য আমার তোমার জীবন, ডিম্বাকার পৃথিবীর, শুধু দিকচক্ররেখা দেখা যায় 


এতদিন সব প্রত‍্যাখান সহ‍্য করেছি,

সমুদ্রগভীরে প্রবাল খুঁজেছি ,

দ্বন্দ্বের ভেতরে দ্বন্দ্ব পেরুতে গেলে,

সন্ধ‍্যাবেলা গীতবিতান নিয়ে বসার আগে,

জ‍্যোৎস্নারাতে খালি গলায় তোমার একটি দু'টি গান শুলতে চাই 

………………….......


আবার যদি দেখা হয়


অনেক অনেক বছর পরে আবার যদি দেখা হয় তুমি কি নীরব অভিমানে এমন করেই ওষ্ঠ ছোঁওয়াবে চায়ের কাপে? এমন করেই কান্না চেপে থাকবে?


আমারো তো অভিমান আছে। হাতে হাত রাখার আগে মেপে নিই সরোবরের গভীরতা।-- -- চিরকাল শরীরমুখি, অনিকেত প্রেম খোঁজে বালিশের অভ‍্যাস। যেটুকু দিয়েছিলে আমার চাওয়া ছিল তার থেকে বেশি!


কত বছর পরে দেখা! বাতাস প্ররোচনাময়।কি জানি কবিতায় প্রত‍্যাবর্তনমুখি হতে পারব কিনা!আবার লিখতে পারব কি রানী সিরিজের কবিতা?   আবার হতে পারব কি তোমাতেই একমুখি!


প্রেম ও ঈশ্বর একাকার হোক। দৃষ্টি হোক প্রসন্ন ও স্থির।

…………………........


অমলের মত


সংকট নিকটে এলে প্রেমও বহুবর্ণা হয়

কোন একদিন মানুষ স্বীকার করবে

সব স্নান রক্ত শীতল করতে পারে না


ভ্রান্তিগুলি ভাঙা রাস্তা, রাস্তা অরণ‍্যে মিশলে

শুশ্রুষায় চোখে জল চলে আসে 


পুরাতন ভালোবাসা  জীর্ণ হতে হতে

মাটির ভিতর পুঁতে যায় বীজ


 সব শুভেচ্ছাপত্র উলটে পালটে দেখি,  ছবি দেখি, দেখি ভালোবাসার রমনীর রঞ্জিত-নখ এখনো অনুপ্রেরনা কিনা


স্নানশেষে আয়নায় মুখ দেখা নিত‍্যদিনের অভ‍্যাস,

সব প্রেম বোধ হয় কিছুবা পরকীয়া 


মৃত‍্যুর নিথর হাত কাছে আসে, দূরে চলে যায়,

চিরকাল স্বপ্নপ্রেমী মানুষ  ডাকঘরের ছোট্ট অমলের মত

বেঁচে থাকে, বাঁচতে চায় চিঠির প্রতীক্ষায় 

………………........


বির্বতন


শেষ শয‍্যা মৃত‍্যু, আর সব অলীক ও অবহেলায় পড়ে থাকে,

কে কি নেবে তার ভাগ-বাটোয়ারা হয় , বাড়ি নয় নিঃশ্চুপ,

বিছানা বালিশ বদলে যায় দ্রুত, কেউ নয় প্রকৃত শোকার্ত 


এতদিন তোমার কাছেই আশ্রয় চেয়েছিলাম,

সংযম ও সহনশীলতা ছিল,

তবু মধ‍্যরাতে উদাসীন বাতাসে উন্মাদনা  হত,

তোমার সাথে লুকোচুরি খেলার শেষ ছিল না 


অপেক্ষা অনন্ত হলে অস্থির হতাম,

বির্বতনের মধ‍্য দিয়ে কবে তুমি ইভের মতন

একদিন সেচ্ছাচারী হবে,

কবে তুমি আমার বুকে মাথা রেখে

এক সার্থক সহজ সরল জীবন কাটাবে,

সেই ছিল একান্ত ভাবনা...

………………......


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614









No comments:

Post a Comment

তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা // ই-কোরাস ১৮০

  তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা ১. মহানির্বাণ   চুন্দ, চুন্দ, এখনি এই শূকর মাংস মাটির গভীরে পুঁতে ফেলো, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে এই মাংস পরিপাক করতে প...