আমার ছেলেবেলা; আমার হারিয়ে যাওয়া দিন
দুঃখানন্দ মণ্ডল
স্মৃতিরা বারবার মনে করিয়ে দেয় মাটির সোঁদা গন্ধের কথা। আমি এখন একজন যুবক। এক নবজাতকের পিতা। পেরিয়ে এসেছি দিনকাল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তোমার প্রাঙ্গণ ভরে উঠছে নতুন ফুলের গন্ধে। যে প্রাঙ্গণ সর্বদা আহ্বান করে নতুনকে। এ যেন প্রকৃতির সাথে ভালোবাসার খেলা। এক অকৃত্রিম মেলবন্ধন। হাজার স্মৃতি, হাজার চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ হওয়ার হাতছানি। রয়ে যায় ছেলেবেলার দিনগুলির কথা, রয়ে যায় এক গভীর টান। যা দেখা যায় না, শুধু অনুভবে ছুঁয়ে থাকে মনপ্রাণ।
"ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে,
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।"
ঠিক এমনিভাবেই শুরু হয় একটি শিশুর বড় হয়ে ওঠা। আমি কেন, আমার বন্ধুরা কেন, এমনকি আপনিও এমনিভাবেই বড় হয়েছেন বা পেরিয়ে এসেছেন শৈশব, কৈশোর, যৌবন। সবকিছুর ভিড়ে রয়ে গেছে হাজারও স্মৃতি, হাজারও ফেলে আসা দিনকাল। যে কথা লেখা হয়ে আছে মনে গহ্বরে। স্মৃতি উস্কে দিলেই ঠিক তখনি চোখের সামনে সেই ফেলে আসা দিনগুলি দৃশ্যমান হয়। হারিয়ে যায় মন। হারিয়ে এই বড়বেলা।
"ফেলে আসা কিছু স্মৃতি, কিছু প্রিয় মুখ
ভালোবাসার আবেশ জড়ানো কিছু চেনা সুখ।
কিছু কিছু সম্ভাবনা, আর কিছু কল্পনা
বিস্মৃতির অতলে হারানো কিছু প্রিয় ঠিকানা।"
আমরা হারিয়ে ফেলি না। হারিয়ে যায় আমাদের মন থেকে। দিনের আলোর গভীরে রাতের তারাদের লুকিয়ে থাকার মতোই আমাদের নিত্য দিনের কাজের মাঝে স্মৃতি কথা চাপ পড়ে থাকে মাত্র, মুছে যায়না, হারিয়েও যায় না কখনও। তাই হঠাৎ পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হওয়া.... উস্কে দেয় আমাদের স্মৃতি কে। চোখের সামনে এক লহমায় ভীড় করে ফেলে আসা দিনের কথা। কোথা থেকে এক গভীর আন্তরিকতার জন্ম নেয়, জন্ম নেয় এক গভীর ভালোবাসা। আর তখনই শুরু হয় হাজার ব্যস্ততার মাঝে স্মৃতি থেকে উঠে আসা আলাপচারিতা। হারিয়ে যায় সে মন, ফেলে আসা দিনগুলির ভিড়ে!
"ওগো প্রবীণ, চলো এবার সকল কাজের শেষে
নবীন হাসি মুখে নিয়ে চরম খেলার বেশে।"
এখন আর সেই তালগাছটা নেই! নেই বাবুইপাখির ঝুলন্ত বাসাটি! নেই মাটির স্কুল বাড়িটি! এমনকি খেলার মাঠের পাশ দিয়ে হেঁটে আসার পথটিও! নেই তালগাছটির পাশে চাপা জলের কলটি! নেই সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো বিলাতিসাক। নেই মাটির স্কুল দালানটি! নেই টিফিনে রোদ পোহানোর উঁচু ঢিবিটি! জেঠুর মুখে শুনতাম স্কুলবাড়ির চারপাশে নীল চাষ হতো আর আমরা যে উঁচু ঢিবিতে রোদ পোহাতাম সেইগুলি নাকি নীল কুঠী ছিল। তবে এতসব জেনে আমাদের কাজ ছিল না। আমরা আমাদের মতোই থাকতাম। তখন আমাদের নিদিষ্ট পোশাক ছিল না। তাই বেশ সুন্দর লাগত বাগানে হরেকরকম ফুলের মতো। অন্যদিকে সিং পাড়া থেকে কোদাল নিয়ে এসে তৈরী করা হতো ক্রিকেট খেলার পিচ। উফফ কি ব্যস্ততা! কেউ আবার মাঠের শেষ প্রান্তে হাডুডু খেলার ঘর কাটতে ব্যস্ত, কেউ আবার হাই জ্যাম্প দেওয়ার জন্য বালির খোঁজ চালাতো। সময়টা ছিল এক ঘন্টার। তারই মাঝে হাট বারে আনা কাঠিভাজার চিকচিকিতে মুড়ি খাওয়া শেষ করা আর সেই চিকচিকিতে কল থেকে জল ভরে জল খাওয়া। কী এক ভালোবাসার টান। আসলে এ আমার সোনার গ্রাম, এ আমার ভালোবাসার ছেলেবেলা। ও হো সব কাজ শেষ করতে হবে সময় মতো "চল কোদাল চালাই"। কিংবা বর্ষাকাল পা ছিপছিপানি জল রাস্তাময়। দু-একটি ছাতা ছাড়া তারপর সবার মাথায় পরশ সারের বস্তার প্যেখা। খুব সাবধানে স্কুলে আসা, খুব সাবধানে বই খাতা নিয়ে যাওয়া। কী আশ্চর্য ভাবে তাকিয়ে থেকেছি বল গ্রাউন্ডের দিকে। ঘাসের ডোগার উপর দিয়ে বৃষ্টির জল বয়ে চলেছে। ঠাঁয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে নবজাত বাছুর ছানাটি তার মায়ের সাথে, উদাসী চোখে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। বুঝতে পারিনি ফুটো চাল দিয়ে সম্মুখে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ছে ক্লাস রুমে। জল পড়তে পড়তে মাটির মেঝে ভিজে যাচ্ছে। কবিতার লাইনের মতো এই বাস্তব এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠে-
"এমন ঘরে জন্ম দিলি, কেন আমার মা!
সারাটা রাত জল পড়ছে; পাতা নড়ছে না।
অনেক শ্রাবণ পেরিয়ে গেল, উথালপাথাল ঝড়
গুড়িয়ে দিল বাঁশের বেড়া, উড়িয়ে নিল খড়।"
কী এক গভীর মায়া জড়িয়ে আছে। যেন মায়ের কোলে শিশু সন্তান। কতবার এমন হয়েছে বইয়ের পাতা ভিজেছে বৃষ্টির জলে, কতবার হয়েছে বইখাতা সমেত পা পিছলে জলে পড়েছি, কতবার হয়েছে সারা রাস্তা ভিজতে ভিজতে ঘরে ফিরেছি। আর ভিজে যাওয়া বইখাতা মজে যাওয়া উনুনের পাশে শুকনো করতে দিয়েছে মা। বইয়ের ভাঁজে রয়ে যাওয়া পেনসিলের টুকরো জলের স্পর্শ পেয়ে চুনো হয়েছে। কষ্ট হয়েছে নিজেদের জন্য নয় বইখাতার জন্য। আসলে এই স্কুল আমার, এই স্কুল আমাদের, এই স্কুল আমার আর এক জননী। কোকিল বাবু পড়িয়ে চলেছেন উত্তরমেরু কথা। পাশের রুম থেকে কানে ভেসে আসছে প্রহ্লাদ বাবুর বীজগনিতের সূত্র। তখন বৃষ্টি অবিরাম ঝরে চলেছে। কে বা কারা নবজাত বাছুর আর তার মাকে নিয়ে গেছে গোয়াল ঘরে। আমাদের কৈশোর মনে ছুঁয়ে থাকত পাত্র স্যারের(নন্দ বাবু) ইংরেজি শেখানোর কৌশল। ছুঁয়ে থাকতো ইংরেজি গল্পের প্রতিটি লাইনের বাংলা মানে কালিবাবুর মুখ থেকে। কখনো শীত, কখনো গ্রীষ্ম, কখনো বা গরমকালে এই মানুষগুলির ভালোবাসাতে আমার মতো কত শত অবোধ ছাত্রছাত্রী বোধের মানদণ্ডকে স্পর্শ করেছে।
স্কুলের একটি নিয়ম ছিল। সেই নিয়মের সাথে প্রতিটি ক্লাস যুক্ত ছিল। আমিও বাদ ছিলাম না। মাটির দালান পেরিয়ে সরু ছোট উঠোন। না আমার বাড়ির নয়! আমাদের স্কুল বাড়ির উঠোনের কথা বলছি। যেমন মনে হতো কোনো একটি গ্রাম্য পরিবারের উঠোন। যা জুড়ে আছে বাড়ির সদস্যদের কিচিরমিচির শব্দ দিয়ে। তেমনি ছিল গভীর টান আঁকড়ে রাখার। প্রার্থনার লাইনে সারিবদ্ধ ভাবে আমরা। সামনের নারিকেল গাছের ডালে বসে ডেকে চলেছে একটি কোকিল কুহু কুহু ডাক। স্কুল বাড়ির শেষপ্রান্তের তালগাছ আর মাঝ বরাবর থাকা তালগাছের ছায়া পড়েছে আমাদের প্রার্থনার লাইনের উপর। তারাও আমাদের ছায়া দেয়। পূব আকাশে সূর্য ধীরগতিতে মধ্য আকাশের দিকে এগিয়ে আসছে। দুর থেকে মনে হয় এই ছায়াপথ যেন সীমান্তরেখায় দাঁড়িয়ে থাকা সৈনিক দল। সবার বিষ্টু দা ঢঙ ঢঙ করে সকাল ১০.৪৫ মিনিটের ঘন্টা বাজিয়ে দিতেন। শুরু হতো। সমবেত প্রার্থনার সুর মুখরিত করতো কালিতলার বাতাস। কতবার ছাত্রদল পেয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখেছে দ্রুত গতিতে আসা পাত্র বাবুকে। দেখেছে সুর মেলাতে-
"জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয়, জয় হে।।"
এরপর লাইন ভেঙে সবাই খেলার মাঠে। না খেলতে নয়। পাত্র বাবুর শেখানো আদর্শকে পালন করার তাগিদে। সবাই মিলে শুরু করতো খেলার মাঠ পরিষ্কারের কাজ। মনে পড়ে যায় সহজপাঠের কথা;
"আজ মঙ্গলবার। পাড়ার জঙ্গল সাফ করবার দিন। সব ছেলেরা দঙ্গল বেঁধে যাবে। রঙ্গলাল-বাবুও এখনি আসবেন। আর আসবেন তাঁর দাদা বঙ্গ-বাবু। সিঙ্গি, তুমি দৌড়ে যাও তো। অঙ্গনদাদাকে ধরো, মোটর-গাড়িতে তাঁদের আনবেন। সঙ্গে নিতে হবে কুড়ুল, কোদাল, ঝাঁটা, ঝুড়ি।" হয়তো বা সেই আদর্শে উনি আমাদেরকে আদর্শিক করে তুলতে চেয়েছিলেন।
গতদিনের পড়ে থাকা টুকরো কাগজ থেকে শুরু করে যাবতীয় সমস্ত কিছু। একসময় সবাই হাতমুখ ধুয়ে ক্লাস রুমে। ক্লাস রুম থেকে দেখা যেত মাঠের সবুজ ঘাসের হাসি। আর কানে ভেসে আসতো প্রতিটি শ্রেণীকক্ষ থেকে উপস্থিত, প্রেজেন্ট স্যার, ইয়েস স্যার।
কথায় আছে; সময় সব থেকে বড় বন্ধু। তাই সময়ের হাতেই সব টা সঁপে দিতে হয়। সময়ই কথা বলবে; কে কার সাথে কতটা পথ চলবে। ক্লাস রুমের পাশে আলোচনা হচ্ছে বিদ্যালয়ের অফিস ঘরটি পাকার হবে। পাকা শুনে বেশ আনন্দ হচ্ছিল। আবার মনে মনে কষ্ট হচ্ছিল এই যে; মাটির বাড়িটি তাহলে কি ভেঙে দেওয়া হবে! মাটির সোঁদা গন্ধ আর কি পাবো না। টপটপ করে বৃষ্টি কি আর ক্লাস রুমে পড়বে না! ছেলেবেলার মন কেমন যেন উত্তাল হয়ে উঠছিল। কয়েকদিনের মধ্যেই ডি সি এম গাড়িতে এল ইট। সারিবদ্ধভাবে সাজানো হলো পোড়া মাটির ইট। কিন্তু মাটির গন্ধ নেই! নিয়ে আসা হলো সিমেন্ট আর বালি।
"আমি যে রোজ সকাল হ’লে
যাই শহরের দিকে চ’লে
তমিজ মিঞার গোরুর গাড়ি চ’ড়ে;
সকাল থেকে সারা দুপুর
ইঁট সাজিয়ে ইঁটের উপর
খেয়াল মত দেয়াল তুলে গড়ে।"
যেন মনে হতো মাটির সাথে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ মাটির বুক চিরে গাঁথা হতে লাগল পাকা বাড়ি। আমাদের স্কুলের অফিস ঘর। সেই প্রথম বেঞ্চের মধ্যে ধুলোর সাথে সিমেন্টের মিশ্রণ দেখলাম। অনুভব করলাম আর এক নতুন গন্ধ। যে গন্ধের মধ্যে প্রকৃতির কোনো টান নেই! আমার স্কুল বাড়ির ক্রমবিবর্তন শুরু হয়েছিল সেই দিন থেকে। সেই প্রথমবার শিক্ষক মহাশয়ের কাছ থেকে শিখেছিলাম কেমন করে Wastege জিনিস দিয়ে সুন্দর কিছু তৈরী করা যায়। আসলে মানুষের ইচ্ছে শক্তি মানুষকে প্রেরণা দেয়। আমরা সরস্বতী পূজার আগের রাত্রিতে পুরাতন অফিস ঘরের সিলিং এ লাগানো ছেঁড়া সাদা কাপড়কে খুলে তাতে নিজেদের মতো করে পাহাড় তৈরী করেছিলাম। হয়তো বা সেটিই ছিল আমাদের শেষ প্যান্ডেল তৈরী সরস্বতী পূজোতে-
"তোমার হল শুরু আমার হল সারা,
তোমায় আমায় মিলে
এমনি বহে ধারা।"
তবে একথা অকপটে বলতে পারি এখনো পূজার দিন নিয়ম করে বিদ্যালয়ে যাই। আর স্মৃতি উস্কে দেয় সেই ছাত্রবেলার কথা; ভোরে উঠে বাসী রুটির সাথে খেজুর গুড় আর ঠাণ্ডা দুধ এবং সব শেষে এক মুঠো মু্ড়ি। খাওয়ার পর কত গল্পগুজব ঠাকুরমার সাথে। আসলে সেই সময় প্রতিটি পরিবার ছিল একান্নবর্তী। সব বাচ্চারা এক সাথে। এখন আর একান্নবর্তী পরিবার নেই। নেই ভোরে উঠে পেট ভর্তি করার তাড়া। এখন আর নেই ফুল তুলে নিয়ে যাওয়ার পালা। গ্রামের মধ্যেও প্রবেশ করে গেছে শহরের কৃত্রিম ছায়া।
"দিন আসে দিন যায়,
সময় চলে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
মন পাখি ছুটে যায়,
স্মৃতি পটে বারবার দূরে বহু দূরে।
ঝরে পড়া মুহূর্তরা উদ্বেল হয়,
একি পিছুটান নাকি বেঁচে থাকা!
মুঠোয় বাঁধা হয় মায়ার প্রশ্রয়,
মুহূর্তের কাছে মুহূর্তের ঋণী থাকা!"
শিক্ষার্থীদের কাছে তার শিক্ষক বা শিক্ষিকা পিতামাতার সমান আবার বন্ধুর মতোও। মনের কথা যেমন বলা যায় তেমন জ্ঞান অর্জনের কথাও গল্পের ছলে বুঝিয়ে দেন। সেদিন গল্পের ছলে, সদ্য স্কুলে আসা মল্লিকা ম্যাডাম প্রশ্ন করেছিলেন; তোমরা কতক্ষণ ঘুমাও? বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে উত্তর দিয়েছিল। কেউ বলেছিল খাওয়ার পর, কেউ বলছিল বাবা ফেরার পর, কেউ বলেছিল লম্ফের তেল শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত, কেউ বলেছিল চোখে ঘুম আসার আগে পর্যন্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা আমাদের মতো করে বলছিলাম। কিন্তু সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অঙ্কটা। উনি শুরু করেছিলেন আমাদের বেঁচে থাকার সময়সীমা দিয়ে। যদি ষাট বছর আমরা বাঁচি আর প্রতিদিন আট নয় ঘন্টা ঘুমোই তাহলে একসপ্তাহে কত সময় ঘুমালাম, একমাসে কত সময় ঘুমালাম, এক বছরে কত সময় এবং ষাট বছরে কত সময়। সেদিন বুঝিনি অঙ্কের সূত্র। এখন বুঝি কেন একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা এতো আপন হয়ে থাকেন শিক্ষার্থীদের কাছে! এখন অনুভব করতে পারি কেন উচ্চ কণ্ঠে প্রতিটি লাইন পড়তে বলতেন নগেন বাবু। কখন যে আমাদেরকে খুব কাছে করে নিয়েছিলেন ভূপাল বাবু তার টের পাইনি। আসলে আমরা উষ্ণতা খুঁজতাম। যে উষ্ণতায় আগামী দিনের স্বপ্ন পূরণ করার অঙ্গীকার থাকত। এখন বুঝি জীবনের স্বর্ণালী দিন মানেই ছাত্রজীবন।
"আমরা রচি ভালোবাসার
আশার ভবিষ্যৎ
মোদের স্বর্গ-পথের আভাস দেখায়
আকাশ-ছায়াপথ!
মোদের চোখে বিশ্ববাসীর
স্বপ্ন দেখা হোক সফল।
আমরা ছাত্রদল।।"
আজ সেই মাটির স্কুল বাড়ি নেই! নেই তালগাছ! নেই নারিকেল গাছ! নেই স্কুল বাড়ির পিছনের বড় আম গাছটি! শোনা যায় না কোকিলের ডাক সারা দুপুর ধরে! নেই রং-বেরঙের জামা ছাত্রছাত্রীদের পোশাক হিসেবে! কিন্তু সবকিছুর ভিড়েই লুকিয়ে আছে সবকিছু। সুসজ্জিত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে পাকার স্কুল বাড়ি। ছায়া দিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের তুলতুলে হাতে লাগানো গাছের পাতারা। প্রার্থনার লাইনে নীল সাদা পোশাক চিনিয়ে দিচ্ছে আমরা ছাত্রদল-
"ঊষার দুয়ারে হানি' আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা টুটাব তিমির রাত,
বাধার বিন্ধ্যাচল।"
এমনিভাবেই প্রাক্তন-প্রাক্তনীদের স্মৃতি রয়ে যাবে মনের গহ্বরে। আর এই স্মৃতি তখনই উস্কে দেয়; যখন কাটিয়ে আসা নিজের ছাত্রবেলার সময়টি বর্তমান ছাত্রদল তাদের মতো করে তৈরী করছে। কি আশ্চর্য ভাবেই স্মৃতি আর বর্তমান এক হয়ে যায়। সেই ক্লাস রুম। সেই ছাত্র-ছাত্রী, সেই শিক্ষক-শিক্ষিকা।
"পথে চলা এই দেখাশোনা
ছিল যাহা ক্ষণচর
চেতনার প্রত্যন্ত প্রদেশে
চিত্তে আজ তাই জেগে ওঠে।"
চোখের সামনে ভেসে উঠছে; পড়া বলা, ব্ল্যাকবোর্ডে চক ভেঙে ফেলা, হাতের লেখা সই করানো, দশে দশ পাওয়ার ওয়াল দেওয়া কিংবা অঙ্কের সূত্র শিখতে শিখতে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে দিনকাল। তবে পরিবর্তন হয়নি এসব। পরিবর্তন হয়নি তোর জন্য গোপনে খাতার পাতায় চিঠি লেখাতে…
" রঙিন ছবির দৃশ্যরেখা
ঝাপসা চোখে যায় না দেখা,
আলোর চেয়ে ধোঁয়া উঠছে জমে।"
……………………..
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪
দুঃখানন্দ
ReplyDeleteকি করে কে জানে
আপনি
ডুবিয়ে দেন , ভুলিয়েও দেন
আনন্দে , দুঃখ-কেও
সাজিয়ে নেওয়ার
দায়
আমাদেরই 👌