তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা
১.
মহানির্বাণ
চুন্দ, চুন্দ, এখনি এই শূকর মাংস
মাটির গভীরে পুঁতে ফেলো,
পৃথিবীতে এমন কেউ নেই
যে এই মাংস পরিপাক করতে পারে,
আঃ আনন্দ, শালবৃক্ষের অন্তরালে
বড় সুন্দর শয্যাটি পেতেছ,
শাল আমার বড় প্রিয় -
শাল, শ্বেতহস্তী, হস্তীর মাথায় চাঁদ •••
এই শয্যায় সিংহভঙ্গিমায় শুয়ে শুয়ে বলে যাই
এই জীবনের শ্রেষ্ঠ তিন সুখাদ্যের কথা -
চুন্দের দেওয়া শূকরমাংস,
হ্যাঁ আনন্দ, তুমি সবাইকে বোলো
চুন্দর মাংসটি বড় উপাদেয় হয়েছিল;
আর সুজাতার পরমান্ন।
আনন্দ এসো আমার নিকটে এসো,
আমার স্বর বড় দুর্বল,
অত দূর থেকে শুনতে পাবে না,
তৃতীয়, তৃতীয়টি যশোধরা দিয়েছিল,
না না সেটিই প্রথম,
আনন্দ কাউকে বোলো না,
তোমাকে শুধু তোমাকেই বলে গেলাম
যশোধরা আমাকে অমৃত পান করিয়েছিল,
তার সুবর্ণকলসের মতো স্তনের অমৃত…
আঃ আনন্দ শালবনে অন্ধকার নামছে,
এখন নিজেকে জ্বালো,
নিজের প্রদীপ হয়ে ওঠো ।
২.
সিঁড়ি
আমি একটা মানুষকে চিনি,
যার কাজ মন্দিরের সিঁড়ি ধোয়া,
পাহাড়ের ওপরে সে মন্দির,
যেখানে সবাই ছোট ছোট ঘণ্টা বেঁধে আসে,
হাওয়ায় ঘণ্টা নড়ে
আর এ পাহাড় থেকে ও পাহাড়ে ছড়িয়ে যায় টুং টাং টুং....
গুণে দেখেছি
মোট ৭৭৭ টা সিঁড়ি ভেঙে সে মন্দিরে উঠতে হয়,
প্রতিদিন মানুষটা সেই ৭৭৭ টা সিঁড়ি ধোয়,
এটাই তার দিনের প্রথম কাজ,
তারপর তার হয়তো অনেক কাজ থাকে,
খেতিবাড়ি, চৌকিদারি, ড্রাইভারি,
কিংবা চুপচাপ নদীর ধারে একটা পাথরের ওপর বসে থাকা-
আমি শুধু তাকে সিঁড়ি ধুতে দেখেছি,
আমরা যখন হাঁপাতে হাঁপাতে
সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরে উঠছিলাম,
আর মাঝে মাঝেই দাঁড়িয়ে পড়ে
মোবাইলের টাওয়ার খোঁজার চেষ্টা করছিলাম,
আর না পেয়ে একটার পর একটা সেলফি তুলছিলাম,
তখন লোকটা কোনদিকে না তাকিয়ে সিঁড়ির পাথর ধুয়ে চলছিল,
আর তার মুখে ফুটে উঠছিল বিশুদ্ধ আনন্দ!
কত কাজ পড়ে,
তবু তার কোন তাড়া ছিল না,
তাকে দেখে মনে হচ্ছিল
পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো কাজটা সে করছে!
আমাদের প্রত্যেকের ভেতরেই
৭৭৭ কিংবা তার বেশি সিঁড়ি আছে,
আমরা সবাই তা বেয়ে
কোথাও না কোথাও ওঠার চেষ্টা করি,
কিন্তু কি আশ্চর্য, সেই সিঁড়ির ধাপগুলো
এত ভালবেসে ধোয়ার কথা কেউ ভাবি না....
.....................................
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - অভিষেক নন্দী
কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪
No comments:
Post a Comment