Tuesday, 30 April 2024

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা // ই-কোরাস ১৯

 



পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা ১৯

অজন্তা ও মণিহার টকিজ – ডেবরা

শ্রীজিৎ জানা


শুরুতে সিনেমার পোস্টারের কথা বলা যাক। অম্নি চোখের সামনে ভেসে উঠবে সাদা রঙের সঙ্গে নীল, লাল এবং বাদামী রঙের মিশ্রণে লেখা ছায়ছবির নাম। উপরে মাঝ বরাবর লেখা থাকত শো- টাইম। কোণায় লেখা থাকত সগৌরবে চলিতেছে। আর তলায় থাকত সিনেমাহলের নাম। আর নিচের কোণায় লেখা থাকত লিথো প্রেস,ডেবরা। স্মৃতি হাতড়ালে ঠিক মনে পড়বে সেদিনকার পোস্টারের লেখাজোকা। আসলে অজন্তা সিনেমাহলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওই লিথো প্রেসের কাহিনী। শুধু নিজেদের সিনেমাহলের পোস্টার নয়, জেলার বিভিন্ন সিনেমাহলের পোস্টার ছাপা হত ডেবরা বাজারের ওই লিথো প্রেসে। লিথোর মালিক ছিলেন কিশোরীমোহন দে। একইসাথে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অজন্তা সিনেমাহল। ডেবরা বাজারের চৌমাথা থেকে দেড়শ মিটার উত্তরে ছিল একসময়ের অজন্তা। এখন তার কোন চিহ্ন নেই। কংক্রিটের কাঠামো উধাও হয়ে বর্তমানে অজন্তার বুকের উপর গড়ে উঠছে গগনচুম্বী বহুতল।


  অজন্তা টকিজের আগে ডেবরা বাজারের মুখে রমরমিয়ে চলত মণিহার সিনেমাহল। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাধেশ্যাম মাইতি। ষাট- সত্তরের দশকে মণিহার ডেবরা অঞ্চলের সিনেপ্রেমীদের একমাত্র গন্তব্য ছিল। অজন্তার পথচলা শুরু ১৯৮২ সাল নাগাদ। স্থানীয় একটি ভিডিও হল কিনে নেন কিশোরীমোহন বাবু। আর সেই জায়গায় গড়ে তুলেন  অজন্তা।  বালিচক থেকে পাটনা, ট্যাবাগেড়া, পাঁশকুড়া, লোয়াদা, সবং, মাদপুর অব্দি অজন্তার পোস্টার পড়ত। প্রতি শো- ই থাকত হাউসফুল। প্রায় দিন ব্ল্যাক হত টিকিট। দর্শক আর ব্ল্যাকারদের ঝামেলার জন্য হামেশাই পুলিশ ডাকতে হত। অজন্তার শো টাইম ছিল - ১১.৪৫টা, ২.৩০টা এবং ৫.৩০টা। এমনকি নাইট শোও চলত। তবে প্রথম দুটো শো টাইমে উপচে পড়ত দর্শক। ফার্স্ট, সেকেন্ড আর ফ্রন্ট স্টল মিলে অজন্তার সিট সংখ্যা ছিল ৮০০। ব্যালকনিতে সেগুন কাঠের ঠেস চেয়ার ছিল একশর মত। 


কিশোরীমোহন বাবুর হাত ধরে অজন্তার শুরুটা হলেও তাকে এগিয়ে নিয়ে যান তাঁর পুত্র অমলকৃষ্ণ দে। তাঁর সময়ে অজন্তা চূড়ান্তভাবে ব্যাবসা করে। জয় সন্তোষী মা, শোলে,লাঠি, প্রতিবাদ প্রভৃতি সিনেমা টানা তিন মাস করে চলেছে অজন্তা টকিবজে। পনের জন স্টাফ যুক্ত ছিলেন এই সিনেমাহলের সঙ্গে।  বিমল বাবু ছিলেন অজন্তার চিফ অপারেটর। প্রথম দিকে প্রোজেক্টর ভাড়ায় এনে চালালেও পরে নিজস্ব প্রোজেক্টরের মাধ্যমেই ছবি প্রদর্শিত হত। দে পরিবারের বরাবরই সিনেমাহল ব্যাবসার প্রতি আগ্রহ ছিল বেশি। অজন্তার জন্মের আগে দে পরিবারের আরও একটি সিনেমাহল ছিল। তার নাম ছিল বর্ণালী টকিজ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট থানার অন্তর্গত মাছিনান গ্রামে অমলকৃষ্ণ বাবু বর্ণালী স্থাপন করেন। তবে সেই সিনেমাহল একক ভাবে চালাতেন না। শেয়ার ছিল আরো কয়েকজনের। বেশ কয়েক বছর চলার পর ২০০০ সাল নাগাদ বর্নালী বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে অজন্তারও ভীড় কমতে থাকে। আশেপাশে সিনেমাহল গড়ে উঠেছিল আগেই। তার উপর মিনি পর্দার ভিডিও হলে দর্শক ভীড় জমাতে থাকে। অজন্তা বন্ধ হয় ২০০৭ সাল নাগাদ। অমলকৃষ্ণ বাবুর পুত্র অভিজিৎ দে জানালেন অজন্তা টকিজের বিশেষ একটি বিষয়," সত্যিই আমাদের সিনেমাহল রীতিমতো ভাল চলছিল। এক এক সময় আমাদের পরিবারের লোকই দেখতে পেত না এত ভীড় হত কোন কোেন ছবিতে। আর ছোট থেকে যেই দৃশ্যটা চোখে আজও লেগে আছে, সেটা ১৫ ই আগষ্ট আর ২৬ শে জানুয়ারীর দিনগুলো। সেদিন সকাল ৮ টা থেকে  ছবি দেখানো হত। সব ছবিই থাকত দেশাত্মবোধক। আর স্টুডেন্টদের জন্য টিকিট মূল্য হাফ করে দেওয়া হত। ওই দিনগুলো আজও চোখে ভাসে"।


তথ্যঋণঃ–

শ্রী অভিজিৎ দে– ডেবরা, পশ্চিম মেদিনীপুর।





সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪



No comments:

Post a Comment

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...