Sunday 17 March 2024

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা // ই-কোরাস ১৬

 


পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা ১৬

জনপ্রিয় ও আশীর্বাদ সিনেমাহল - পাটনা, ডেবরা

শ্রীজিৎ জানা


পাটনা বাজার। মশাই, শুরুতেই চটবেন না। সাকিন পাটনা হলে কি হবে, এ-তো বিহার কা নেহি হ্যায়। অবিভক্ত মেদিনীপুরে পাটনা নামের জায়গার ছড়াছড়ি। যেমন শুরুতেই বললুম, ডেবরা থানার পাটনা। তারপরে আছে ঘাটাল থানার পাটনা ওরফে পান্না। আবার আছে পাঁশকুড়া থানার পাটনা - শ্যামসুন্দরপুর। গুচ্ছের পাটনার খোঁজ পেয়ে ভাবলুম, এই নামকরণের পিছনে নিশ্চয়ই কিছু কারণ আছে। একসময় এতদঅঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। ঘাটালের পান্না গ্রাম থেকে বৌদ্ধ যুগের অনেক প্রত্নতত্ত্ব পাওয়া গিয়েছে। সেইসূত্র ধরে বিহারের পাটনার সাথে এইসব পাটনার একটা মিল থাকতেই পারে। কিন্তু সিনেমাহলের কথার ভিতর এই স্থান মাহাত্ম্য নিয়ে বাকচাল করাটা বড্ড বেমানান লাগছে – তাই তো? আচ্ছা মগজে ঢুকেছে।  কিন্তু খামোখা তো আর পাটনা নিয়ে পড়িনি। কারণ আছে। দেখুন না কেমন দুয়ে দুয়ে চার করে দিই।আসল কারণটা হল পাটনা বাজারে একসময় ছিল তিনখানা মিনি সিনেমাহল। তার আগে বলি পাটনা


যাওয়ার পথ নির্দেশিকা। ডেবরা থেকে পাটনা বাজার যাওয়া যায়। ঘাটাল - পাঁশকুড়া রোডের বেলতলা থেকে যাওয়া যায়। আবার ঘাটাল- মেদিনীপুর সড়কের নাড়াজোল থেকেও যাওয়ার সুগম পথ আছে। পাটনা বাজার বেশ জমজমাটি একটা গঞ্জ। দোকানপাতি,স্কুল, ক্লাব, হাট নিয়ে বেশ একটা গমগমে জায়গা। ফি-হপ্তায় শনি - মঙ্গলবার  সেখানে হাট হয়। এমন জনসমাগমের জায়গায় বিনোদনের কোন কেন্দ্র না থাকলে চলে। বাজারে প্রথম শুরু হল 'ডোনা' নামের মিনি পর্দার ভিডিও হল। কাঁসাইপাড়ের পাটনা বাজার। কৃষিনির্ভর মানুষের জীবন। দিন শেষে মাঠ ফেরত লোকজন একটু বিনোদনের আশায় ভিড় করত 'ডোনা' ভিডিও হলে। বাজার এলাকায় সেই শুরু। এরপরই গড়ে ওঠে প্রায় তিনশ আসন বিশিষ্ট 'জনপ্রিয়' সিনেমাহল। তবে জনপ্রিয়কে পুরোপুরি সিনেমার তকমা দেন না এলাকার মানুষজন। তাঁদের কথায় 'জনপ্রিয়' হল মিনি-সিনেমা। খুব একটা বড় পর্দা ছিল না। আসনও ছিল সীমিত। মাটির দেয়াল আর টিনের ছাউনির কাঠামোতে 'জনপ্রিয়' এলাকার সিনেপ্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। পাটনা গ্রামের খোকন সামন্ত ছিলেন জনপ্রিয় সিনেমাহলের মালিক। ১৯৮০ সাল নাগাদ জনপ্রিয়র পথচলা শুরু হয়। বছর দশ-পনেরো বছরের মাথায় তা বন্ধ হয়ে যায়।


'জনপ্রিয়' সিনেমাহল বন্ধ হওয়ার পরেই গড়ে ওঠে 'আশীর্বাদ' সিনেমাহল। আশীর্বাদের শুভ মহরত হয় ১৯৯৫ সালে। পাটনা গ্রামের অক্ষয় সামন্ত এবং কার্তিকচন্দ্র জানা দুজনের যৌথ উদ্যোগে সিনেমাহলের পথ চলা শুরু হয়। কংক্রিটের দেয়াল আর টিনের ছাউনি দেওয়া পুবে -পশ্চিমে লম্বা প্রেক্ষাগৃহ। পাটনা বাজারে পশ্চিমে রাস্তার পাশেই ছিল আশীর্বাদের ঠিকানা। ব্যালকনি এবং তিনটে স্টল সহ দর্শক আসন ছিল পাঁচশ। আশীর্বাদের প্রথম দিকে প্রত্যেক শোতেই ভিড় উপচে পড়ত। শুরুতে শো টাইম ছিল- ১২ / ৩ / ৬ টা। পরে ৩ টা ও ৬ টার শো টাইম হয়। আগে ২ টাকা, ৩ টা এবং ৫ টাকা ছিল টিকিটের মূল্য। পরে ব্যালকনি হওয়ার পর টিকিটের দাম বাড়ানো হয়। পাঁচজন স্টাফ কাজ করত সিনেমাহলে। প্রচারের জন্য লোক আলাদা থাকত। মাইক এবং পোস্টারিং উভয় ভাবেই প্রচার চলত। চিফ অপারেটর ছিল চিত্তরঞ্জন জানা এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল সুশান্ত জানা। আশীর্বাদে টানা ছ'মাস চলেছে 'বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না' সিনেমা। এছাড়াও বিধাতার খেলা, আমার মা, স্নেহের প্রতিদান প্রভৃতি সিনেমা কয়েক সপ্তাহ ব্যাপী রমরমিয়ে ব্যাবসা করেছিল সেইসময়। কালক্রমে দিন বদলায়। হলমুখী দর্শকের ভীড় ক্রমে ফাঁকা হতে থাকে। শেষমেশ ২০০৮ সাল নাগাদ আশীর্বাদের দরজায় তালা পড়ে। আজও পাটনা বাজার গেলে চোখে পড়বে শক্তপোক্ত শরীরে দাঁড়িয়ে আছে পথের ধারে আশীর্বাদ। দেয়ালে লেখা নানা সতর্কবাণী, নির্দেশিকা ইকবযাদি আজও অবিকল থেকে গেছে হলুদ রঙের আঁচগে।



তথ্যঋণঃ—

শ্রী অক্ষয় জানা - পাটনা

শ্রী প্রসেনজিৎ মূলা–শান্তিপুর

..................................


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪


No comments:

Post a Comment

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা // ই-কোরাস ২০

  পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা ২০ রূপছায়া টকিজ – বালিচক শ্রীজিৎ জানা সিনেমাহলে প্রবেশের আগে, এক প্রস্থ অন্য কথা হোক। আরে মশাই!...