তর্ক না আলোচনা - অমৃত মাইতি
আগে ঠিক করে নিতে হবে তর্ক করব না আলোচনা করব। তর্ক করে সময় নষ্ট করব না আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসব। দুজন অভিজ্ঞ মানুষ কোন বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু সম্পর্কে উভয়ের সম্যক জ্ঞান থাকা চাই। ভালো তার্কিক হলে তর্ক করা যায়। তর্কের নিয়ম রীতি মেনে তর্ক করলে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সহজ। সাধারণত এ ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াকে তর্কযুদ্ধ বলা যায় না। আলোচনা বলা যেতে পারে। আমরা অনেক সময় তর্কে অবতরণ করি। কারুর না কারুর যদি জ্ঞানের ঘাটতি থাকে এবং যদি তার নিয়ম রীতি সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকে তাহলে সেই তর্ক কোনদিন থামবে না। দুজনে যদি বুদ্ধিমান মানুষ হন যদি প্রকৃতপক্ষে তাঁরা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার মানসিকতা নিয়ে বসেন তাহলে কোন একজন নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবার থামা উচিত। একটি কথা প্রচলন আছে"বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর"। প্রকৃত তার্কিক যারা কোথায় থামতে হবে সেটুকু জ্ঞান তাদের আছে। তর্কের মধ্য দিয়েও জ্ঞানের আদান প্রদান জ্ঞানের গভীরতা নির্ণয় হয়। আসলে সবকিছু নির্ভর করে তার্কিকদের মেনে নেওয়া এবং মানিয়ে নেওয়ার উপর। পাশাপাশি কোন এক পক্ষ যদি মূর্খ অবিবেচক হয় এবং একগুঁয়ে প্রকৃতির হয় তাহলে তার সঙ্গে তর্ক করা বা আলোচনা করা একেবারেই উচিত নয়। অনেকে তর্ক বা আলোচনার আগে থেকেই ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত করে নিয়ে বসেন। তাকে আপনি যতই সহজ সরল ভাষায় যুক্তি দেখান না কেন সে কিছুতেই মানবে না।
পরাজয় স্বীকার করতে তাঁর ইগোতে বাধে। সিদ্ধান্ত গ্রহণটা তাদের কাছে বড় নয়, তাদের কাছে বড় হলো নিজের ভুল চিন্তাকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং নিজের পক্ষে কথা বলা। হেরে গেলেও সঠিক যুক্তিপূর্ণ কথা বা সিদ্ধান্ত তিনি মানবেন না। অনেক সময় বিপত্তি ঘটে উভয়ের জ্ঞান মানসিকতা চিন্তাধারার যদি গরমিল হয়। আলোচনা বা তর্কে বসার আগে মনটাকে যুক্তিবাদী করে নিতে হয়। অনেক সময় গোঁড়া মতবাদের বা কোন প্রাচীন ভ্রান্ত ধারণার বিশ্বাসী মানুষ কিছুতেই তার মানসিক অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইবে না। যেমন কুসংস্কার একবার ঢুকে গেলে তার মাথা থেকে বের করা কঠিন। সে কোন যুক্তি মানে না তর্ক মানে না কোন আলোচনা মানে না। মান্ধাত্তার আমলের ভ্রান্ত ধারণাকে আঁকড়ে বসে থাকবে সে। সাপের কামড়ের তীব্র বিষ শরীর থেকে বের করা যাবে কিন্তু এদের মন থেকে কুসংস্কার বের করা যাবে না। মন্দিরের চারপাশে দন্ডি মাপা মেয়েদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করে দেখেছি সে আপনার কথা মন দিয়ে শুনছে কিন্তু তার মনের ধারণাকে কিছুতেই বিসর্জন দিতে পারছে না। তর্ক বা আলোচনা যাই করি না কেন অনেক সময় সামাজিক অবস্থানের উপর কিন্তু নির্ভর করে। সামাজিক কু -প্রথা ও মন্দ প্রভাব থেকে মনকে যদ মুক্ত করতে না পারা যায় তাহলে তাদের সঙ্গে তর্ক করে পারা যাবে না। এই সমস্ত মানুষরা এক জোট বেঁধে আপনাকে বিব্রত করে আপনাকেই মূর্খ বানিয়ে দিবে।
তর্কবিদ্যা না পড়েও অনেকে ভালো তর্ক করতে পারে।
সেক্ষেত্রে কিন্তু পদে পদে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা তর্কবিদ্যা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করার পরে তর্কে অবতরণ করেন তাদের ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে। একজন ভালো তার্কিক এবং আলোচক তার জ্ঞানের কারণেই নম্র বিনয়ী হয়। তাদের সঙ্গে যে কোন বিষয়ে তর্ক করা বা আলোচনা করা যুক্তিসঙ্গত। আপনারও জ্ঞান বাড়ে তাঁরও আপনার কাছ থেকে কিছু নেওয়ার থাকে। সর্বোপরি যুক্তি-তর্ক আলোচনা আমাদেরকেই সমৃদ্ধ করে। আমি দেখেছি অজ্ঞ মূর্খ গোঁয়ার লোকদের সঙ্গে এমনি সামাজিক সম্পর্ক রাখা ভালো কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনরূপ ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে কথা বলা ভালো নয়। কখন প্রয়োজন ছড়া সে আপনার সঙ্গে কথা বলবে না। সে আপনার কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। কারণ আপনি তার মনের মত কথা বলতে পারছেন না।বরং সামাজিক সম্পর্ক নিবিড় করার মধ্য দিয়ে যদি তাকে কাছে টানতে পারেন, আমার মতে হয়তো সফল হতে পারবেন কোন একদিন।
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪
No comments:
Post a Comment