ও মেঘ,ও শ্রাবন—কতকিছু মনে পড়ে…
মানবেন্দ্র পাত্র
১.
যে সন্ধ্যায় তোমার জন্য আমি আকুল। মাঠের শূন্যতায় বসে আছি।দুপা ছড়িয়ে। গান গাইতে গাইতে একটা হাওয়া এসে সাথে বসে।বারবার দেখা হয় তার সাথে। দেখা হয় । তার ঘরে যাই৷ সে আমায় টেনে নিয়ে যায় তুমুল বরষায়। কথা বলে। কত কথা। কি গভীর আলাপ।নদীর কাছে প্রিয় ডুলুঙয়ের পাশে গিয়ে দেখি— শুয়ে আছি৷ আমার পূর্বেকার শ্রুতিকবিতাগুলো জোনাকির আলো জ্বেলে রেখেছে এ রাতে।
আমি এক অদ্ভুত তোমাকে দেখে কুড়িয়ে নিচ্ছি জল। এরকম শ্রাবনমাসের কাছে আর কি কেউ যেতে পেরেছিলে?আরও অনেকেই বৃষ্টির, মেঘের নাভির কাছে চলে আসে। সারারাত হাঁটতে বেরিয়েছিলাম সেইসব বৃষ্টিলেখায়।
আমাদের অনুযোগ ছিল না।এই জন্ম থেকে হেঁটে এসেছিল কত জন্ম-কত জন্মান্তর-কত বৃষ্টি। কেউ কি আমায় চিনত– আমি কি তাকে?
বৃষ্টির মাসে যদি বলি—একজন এলোকেশি আমাকে টেনে নিয়ে যাক। পাশাপাশি আমিও যেন কতকাল বিরহযাপন করে আজ তাকে পেয়েছি বলে নিশ্চিত মরে যেতাম। অথবা- তার সেই আশ্চর্য মায়াগন্ধের পাশে অদ্ভুত ঘোর লাগা জলের গন্ধ জেগে থাকত।এই গল্পের কোনো সূত্র নেই৷ কোনো বিপ্লব নেই।
মানুষের জন্য কান্নাকাটি নেই।আমাদের ঘর ও আসবাব চুরমার করে দেওয়া প্রতিটি মুহুর্ত আছে।ভেঙে ফেলা একজন ভাঙচুর জানা লোক। এই বর্ষনের রাতে সাতসমুদ্র ঢেউএ নেচে উঠছে তার হত্যা। পাশাপাশি উত্তর আকাশের
কালপুরুষের উজ্বল চোখের ভেতর সেই অতল আবিস্কারের নেশায় ডুবে যাচ্ছেন মায়ালোভি।
জলের জন্য মরে যাওয়া যে সব অলিক ঘাস, তারাও বেঁচে উঠছে বিচিত্র অন্ধকারে। এমনই বৃষ্টির রাতে কার হৃদয়ের বাঁশি ফুঁকে ফুঁকে এক এক এক, দুই দুই দুই,তিন তিন তিন—অলীক মানুষ এসে বসে থাকো এত যুগ!
২.
আলো জ্বেলে কুড়োতে কুড়োতে থাকা সেই দেহ ও শরীরের সাতপাঁচ ঘেঁটে খাওয়া অসুখ—ঘুমের বিভিন্ন স্তরের ভেতর তার বিছানা। আর মনে পড়ে না। এই গল্পের চরিত্ররা সবাই জন্মলোভি। মনে পড়তে পড়তেই আবছা হয়ে ওঠে জানালা।
বৃষ্টির রাতে জেগে উঠে দেখি— আমাদের ঘর ভেসে গেছে৷ খড়ের চাল ফুটো হয়ে নামছে শ্রাবন।
আমার পূর্বজন্মের নৌকো নেই। নদী নেই। কালপুরুষের এই রাতের আমি আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
'সে যেন অনেক রাত্রি জেগে হয়েছে উন্মাদ
সে যেন আমার
হৃদি বরাবর রাখে তার পদপল্লব।
তুমুল— আত্মবিষাদ'...
৩.
আজ ছুটি। আজ শ্রাবন। বউয়ের বেনি করে দেওয়া প্রতিটি চুলের সংলাপে আমি ক্ষ্যাপা লোক। চুমু খাই৷ ছিঁড়ে দিই পাতলা ধাতব। তারপরও যেন তৃষ্ণা জেগে থাকে।
ময়ূর নাচবে। এই বর্ষা ঋতূ ভেসে যাবে ডুলুং এ।
আমি কি তখনও সাদা— মেঘ খুঁজে খুঁজে আনব
রোগের সিমটোম! আহা! বজ্রপাত, এসো।
জানালায় এসেছে ঋতুবতী হওয়ার চোয়াল
জানালায় মন্ত্রতন্ত্র জানা এসরাজ জেগে উঠেছে।
জানালায় নিতম্ব- হলুদরঙ, ময়ূরীর আত্মালাপ আমি দেখেছি বলেই— পোশাক আশাক খুলে রাখি। সে আমায় চিনতে পারে যদি৷ সে আমায় স্নানের ভেতর নিয়ে চলে যাক। জলের দেবীর কাছে আমি আমার গোপন আসন দেখাবো।
তাতে আর আশ্চর্য কি!
এরূপ বৃষ্টি কবে হবে?
আমি গান গাইবো — সাওন রাতে যদি….
.......................................
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - অভিষেক নন্দী
কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪
No comments:
Post a Comment