ভিজে-ভিজে সব
পিঙ্কি পাল
সারাবেলা একসা আজ, বৃষ্টি ভেজা সকাল। সন্ধ্যা আকাশের মুখ ভার! সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে; প্রকৃতি রানী পায়েল পরে নৃত্য করেছে খুব, রাত বলে সন্ধ্যে হতেই সব চুপ! দিনও বৃষ্টির নুপুরের শব্দ জব্দ করে কত কেজো লোককে। কত গৃহস্থ্যে রান্না ঘর উপছে খিচুড়ির সাথে গরম ভাজা ডিমের গন্ধ করেছে ম ম, পাড়া ময়।
বোস বাড়ির স্কুল পড়ুয়া ছোট্ট তিতলি আজ পেয়েছে ছুটি, রেইনি ডে যে আজ। অফিস কাট বোস কর্তা কাগজের নৌকা বানিয়েছে সানন্দে, বৃষ্টি যেন এক টুকরো ছোটবেলা উৎযাপনের সুযোগ দিয়েছে আজ।
কবিতাকে ভালোবেসে ঘোষ বাড়ীর বৌয়ের মাথা করেছে কত কত বক-বক, তবুও লেখা হয়নি খাতায়। মনের ভাবনা গুলো সময়ের অবসর পায়নি একদম। তবে আজ কিন্তু মন মানছে না কিছুতেই, স্বল্প ঘর-কন্না আজ তার পরেই ছুটি। তাই প্রিয় কলম হাতে আজ লিখে ফেলেছে অনেক টা, মন যা ভাবে সব। এমন দিনে বৃষ্টিকে ধন্যবাদ দিয়েছে বারে বারে মনে মনে বলেছে মাঝে মধ্যে এমন মেঘলা দিন থাক। পাল কর্তা বৃষ্টির কারণে ঝরা পাতার রোজকার আড্ডা তুলে এনেছে স্বগৃহে। মোড়ের মাথার দোকানের তেলে ভাজা আর জিলিপি বিকোচ্ছে দেদার।
চায়ের দোকানের আগুন আজ নেভেনি একবারও। সদ্য প্রেমে পড়া অষ্টাদশী নন্দিনী বর্ষার গর্জন শুনে হারমোনিয়ামে সুর তোলে -"হে গম্ভীর, হে গম্ভীর ۔۔۔۔۔۔।" কখনো ছুটে যায় উন্মুক্ত আকাশের নিচে হাজার হাজার বারি ধারা মেখে সেলফি তুলে গোপন প্রেমিকের মুঠো ফোনে বার্তা পাঠায়-এসেছে বর্ষার দিন-বড্ডো রঙিন।
এই সব, সব কিছুর মিলে মিশে গেছে আজ বৃষ্টির উৎসবে।
ছোট্ট চালা ঘরে বৃষ্টি যেমন পড়েছে অবিরত, সমান তালে উঁচু কংক্রিটের দেওয়াল ছাদ দিয়েছে ভিজিয়ে কারণ সে যে ভেদাভেদ জানে না,- জানে কেবল অঝোরে ঝরতে। যে বৃষ্টি ভেজা দিন উৎযাপন করে অনেকে, তেমনি প্লাবনে ভাসায় যেথায়, ভাসায় সুখী গৃহ সুখ, মাঠ ভর্তি জলের আলপনা মনে আনে না বৃষ্টির আনন্দ।
বৃষ্টি সেথায় শুধুই কাঁদায়
বৃষ্টির দিন তাদের কাছে বাঁধ ভাঙা ভয়।
সৃষ্টি কর্তার অপার আশীষ হয়ে ঝরে পড়ে বারিধারা। জীবন পায় জীব কূল, অন্য দিকে অসহায় হয় কিছু মানুষ। সেই মানুষ গুলো যারা ছাদহীন রাস্তার দু'ধারে পসরা সাজিয়ে বসে রোজ দিন, যে রোজকারের অর্থে বেঁচে থাকে তার পরিবার। সেই চাষি ভয়ংকর বর্ষা তার ধানের ক্ষেতে মই দেয় নতুন চাষের জন্য। ফুটপাতের সংসার গুলো বৃষ্টি ভিজে শব হয়ে ওঠে এক্কেবারে। একটানা বা প্রবল বর্ষণ তখন খানিক যন্ত্রণার তো বটেই।
বৃষ্টি ভেজা একটি দিন স্মৃতির ঘরের বারান্দার গালিচা জুড়ে ভালো খারাপ মিশিয়ে এক পাঁচমিশালি কতকথা আঁকে, তা কেবল মন জানে।
মনকথায় প্রত্যাশার কলম লিখে নেয় নিজেই -----
গা ভিজেছে, পা ভিজেছে
ভিজেছে হৃদয় খানি
কি আনন্দ, কি আনন্দ
এসেছে বর্ষারানী
বৃষ্টি তুমি সুন্দরী খুব
মন ভাবে তো তাই
ফুটপাতের ওই ভিজে তোষক
তবুও কেন কাঁদায়?
বৃষ্টি ভেজা শুভেচ্ছা…
…………………
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪
No comments:
Post a Comment