জল ও নৌকোর নিস্তব্ধতা থেকে
সঞ্চিতা দাস
যা কিছুই মনের খুব কাছের সেসব হারিয়ে যেতে দেখেছি, এই দেখার সাধ আমি চাই না! তবু ফিরে আসে, জমে ওঠে কত বরফের বক। তারা ডানা জাপটায়, ওড়ে, শিকার করে, খায় , ধীরে ধীরে বড় হয় , খেলা করে , আদর করে স্বচ্ছ জীবনের জোনাকিকে। তারপর ঘাসের উপর ওইসব জোনাকিরা কত আনন্দের সাথে বেঁচে থাকাকে উপলব্ধি করে...কখনও আকাশের নীল মেঘ পেঁজা তুলোর মতো ভাসে, কাশ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে পৃথিবীর আলো-বাতাস। কখনও কুয়াশার ভেতর পাক খায় ঘন কালো মেঘ-বৃষ্টির সংসার। বলা নেই কথা নেই হঠাৎই এমন প্রতিক্রিয়ার জগতের সৃষ্টি হয় যে বর্ষার হিমেল বৃষ্টি চলতে থাকে দিনের পর দিন রাতের পর রাত। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে পাখির ডাকে বর্ষা রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙে। দূর থেকে দেখা যায় মানুষের নিষ্ঠুরতায় অরণ্যের সৌরভ কীভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে! বহুযুগ আগে রামায়ণে পড়েছি রাবণ কীভাবে জটায়ু পাখিকে বধ করেছিলেন। আজকের সময়ে শহরে গ্রামে কতসব রাবণদের ক্রিয়াকলাপে বহু পশুপাখি তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে!
নদীর স্রোতের মতো সময় এগিয়ে যায়। আকাশ অন্ধকার করে মেঘ ডাকে, বৃষ্টি আসে সবুজ মাঠের ভেতর, চতুর্দিক জলে ভরে ওঠে, জল ও ব্যাঙের শব্দে ছেয়ে যায় চরাচর, ঝিঁঝিঁ পোকারা তাদের ছন্দ হারায় না, কাদাপায়ে কৃষক এসে দাঁড়ায় ঘরের দুয়ারে। এখানে চেহারা, রং, রূপ, চরিত্র, শিক্ষা, আচার-আচরণে নয়, তার সারাদিনের প্রচন্ড পরিশ্রম ও তীব্র খিদের তেজ মেটাতে এক মুঠো অন্নের স্বাদ মিলেমিশে এক হয়ে যায়। কে গ্রাম, কে শহর, কে নদী, কে সমুদ্র, কে মধ্যবিত্ত, কে নিম্নবিত্ত সবকিছু যেন একটা মিহি সুরে সব সীমার বাঁধন ছিঁড়ে এক নৌকায় উঠে পড়ে। বৃষ্টির গতি বাড়তে থাকলে নৌকা পাখনা মেলে পাল তুলে চুপটি করে বসে বসে শিউলি জুঁইয়ের গন্ধে মাতাল হয়ে ওঠে। নৌকোকে দু'হাত দিয়ে আগলে ধরে রাখে শালুক ও পদ্ম। কোনো পার্থক্য থাকে না মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে। এইভাবে কবে থেকে পৃথিবীর চাতালে খিলখিল করে হেসে ওঠে চাঁদ... জলের ওপর অবহেলায় ভাসতে থাকে কতগুলো স্থির মুখ, উঠোনের একপাশে কিছু ভাত ও মাছের কাঁটা ফেলে যায় মানুষেরা, রাত গভীর হলে কারা যেন সুখে সেসব হাঁড়-পাজর চিবিয়ে খিদে নিবারণে মেতে থাকে !
‐---------------------------
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - ভগীরথ সর্দার
কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪
No comments:
Post a Comment