Tuesday, 9 May 2023

রবীন্দ্র পরম্পরা // ই-কোরাস ১৮

 



রবীন্দ্র পরম্পরা

পর্ব - ১৮

কল্পলোকে

মহাশ্বেতা দাস


 মানব হৃদয় কখন যে কোন পথে যেতে চায়! কী তার যথার্থ উদ্দ্যেশ্য! .... এসব বিশ্লেষণের পথ বড় জটিল। সহজ পথে সোজা হিসেব মেলে না। তাই বোধয় বিলেত থেকে ফিরে আসার কয়েক মাস পরেই রবি নিজেই চিঠি লিখলেন মহর্ষি কে - যেখানে আবার বিলেত গিয়ে ব্যারিস্টার হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে অনুমতি চাইলেন তিনি নিজেই। মহর্ষি অনুমতি পত্রে লিখলেন - "গতবারে সত্যেন্দ্র তোমার সঙ্গে ছিলেন, এবার মনে করবে আমি তোমার সঙ্গে আছি।" 


    তবে এইবার বিলেত যাওয়ার আগে তিনি "ভগ্ন হৃদয়" কাব্য এবং "রুদ্র চন্ড" নাট্যকাব্য লেখা সমাপ্ত করেন। "ভগ্ন হৃদয়" লেখার সময় রবি বয়সের দিক দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক সন্ধিক্ষণে- বাল্য ও নয় আবার যৌবন ও নয়। তাই সে সময় কবি মন বেশিরভাগই কল্পলোকে বিরাজমান। সত্যের আলো সেখানে বেশ অস্পষ্ট। এই সম্বন্ধে জীবনস্মৃতি গ্রন্থে তিনি নিজেই লিখেছেন - "সত্যকার পৃথিবী একটা আজগুবি পৃথিবী হয়ে উঠে। মজা এই তখন আমারই বয়স আঠারো ছিল তা নয় - আমার আশেপাশের সকলের বয়স যেন আঠারো ছিল। আমরা সকলে মিলে একটি ভিত্তিহীন কল্পলোকে বাস করতেম। সেই কল্পলোকের খুব তীব্র সুখদুঃখ ও স্বপ্নের সুখদুঃখের মত।" 


     সে সময়ের যুব মহলে "ভগ্নহৃদয়" গীতিকাব্য টি বেশ সমাদৃত হয়েছিল। ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য এই কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথকে বিশেষ ভাবে সম্মানিত করেছিলেন। "ভগ্নহৃদয়" গীতিকাব্য হলেও নাটকের আকারে লিখিত। কবি নিজে এই কাব্যগ্রন্থটিকে "ফুলের তোড়া" বলে অভিহিত করেছিলেন। 

   

      আর রবীন্দ্রনাথের নাটক রচনার প্রথম প্রয়াস হিসাবে ধরা যায় অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা "রুদ্র চন্ড" নাট্যকাব্যটিকে।  শৈশবে পিতার সাথে হিমালয় যাত্রার সময় কয়েকদিন যখন বোলপুরে ছিলেন তখন "পৃথ্বিরাজের পরাজয়" নামে একটি কাব্য রচনা করেছিলেন। "রুদ্র চন্ড" নাটকটিকে এই কাব্যেরই নাট্যরূপ বলে অনেকে মনে করেন। যাইহোক এই নাটকের জন্য কালীপ্রসন্ন ঘোষ মহাশয় তাঁর "বান্ধব" পত্রে এই উদীয়মান প্রতিভা কে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।


   এইবার বিলেত যাওয়ার আগে "ভগ্ন হৃদয়ে" কাব্যগ্রন্থ টি "শ্রীমতি হে" কে উৎসর্গ করেন। উপহার পত্রে লিখলেন - 

 "আজ সাগরের তীরে দাঁড়ায়ে তোমার কাছে; 

পরপারে মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার দেশ আছে।"


আর "রুদ্র চন্ড" গ্রন্থ টি "জ্যোতি দাদা" কে উৎসর্গ করেন। এখানেও উৎসর্গ পত্রে লিখলেন - 

 "সে স্নেহ- আশ্রয় ত্যাজি যেতে হবে পরবাসে

তাই বিদায়ের আগে এসেছি তোমার পাশে।" 


    এখন রবি যে তাঁর সমস্ত ভক্তি, নির্ভরতা উজাড় করে দিয়েছিলেন তাঁর নূতন বৌঠান কাদম্বরী দেবীকে, তিনিই যে ছিলেন রবির "জীবনের ধ্রুবতারা" এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সুতরাং  "শ্রীমতি হে" বলতে কাদম্বরী দেবীকে ই মনে করা হয় কিন্তু প্রশ্ন হল "হে" কেন! এই প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর আজও আমাদের কাছে নেই। তবে ইন্দিরা দেবীর কাছ থেকে এটুকু আভাস পাওয়া গেছে একান্ত অন্তরঙ্গ মহলে কাদম্বরী দেবীকে " হেকেটি" নামে ডাকা হতো। "হেকেটি" হলেন প্রাচীন গ্রীকদের ত্রিমুন্ডী দেবী। আর কাদম্বরী দেবীর নারী হৃদয়ে যেহেতু ছিল ত্রিবেণী সঙ্গম - অর্থাৎ তৎকালীন কবি বিহারীলাল কে শ্রদ্ধা, স্বামী জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে ভালোবাসা এবং রবিকে প্রাণভরা স্নেহ দিয়ে ভরিয়ে রাখতেন সেজন্যে অন্তরঙ্গ পরিজনেরা তাঁকে ত্রিমুন্ডী "হেকেটি" বলে ডাকতেন। আর সেই নামের আদ্যক্ষর "হে" যেটা রবির উৎসর্গ পত্রে লেখা ছিল। 

                   ………………… 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614



No comments:

Post a Comment

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...