Tuesday 23 May 2023

রবীন্দ্র পরম্পরা// ই-কোরাস ২০

 


রবীন্দ্র পরম্পরা

পর্ব - ২০

মুক্তি

মহাশ্বেতা দাস


  "হে ভৈরবী, ওগো বৈরাগিনী,

    চলেছ যে নিরুদ্দেশ সেই চলা

           তোমার রাগিণী।" 

    

   জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির নিঃসঙ্গ তেতালার ছাদ, শূন্য ঘর গুলির নির্জন একাকীত্বের দিনগুলি ঠাকুর বাড়ির বিশ বছরের ছোট ছেলেটির মননে, চিন্তনে যে মুক্তির ধারা এনেছিল সেই ধারা আরও বেগবান হল যেদিন রবি এসে পড়লেন জ্যোতি দাদা ও নূতন বৌঠানের চন্দন নগরের গঙ্গা তীরের ছোট্ট বাড়িটিতে। জীবন স্মৃতি গ্রন্থ থেকেই আমরা পাই - রাজকীয় আলস্যে এই যে গঙ্গা প্রবাহ এবং বাংলাদেশের নীল আকাশ, সবুজ গাছপালা.... এককথায় রমণীয় প্রকৃতির মাঝে সমস্ত শরীর ও মনের আত্মসমর্পণ, কবি অনুভব করলেন - " বাংলাদেশের নদীই বাংলাদেশের ভিতরকার বাণী বহন করে।" 


      এই বাড়িটি মোরান সাহেবের বাগান বাড়ি বলেই পরিচিত ছিল। এখানে খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে জ্যোতি দাদা ও বৌঠান কে রবি পেয়েছিলেন আরও নিবিড় করে। তাঁদেরও নিঃসন্তান সংসারে রবির উপস্থিতি ভরিয়ে দিত অনেকখানি। 


 "বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ়  

    এল আমার মনে

কোন সে কবির ছন্দ বাজে

   ঝরঝর বরিষণে।" 


আকাশে মেঘ করে এলে, ঘোর বর্ষার জলের ছাটে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলে হারমোনিয়াম যোগে বিদ্যাপতির  "ভরা বাদর মাহ ভাদর" পদটিতে মনের মত সুর বসানো হয়। কখনও বা সূর্যাস্তের বেলায় নৌকা ছেড়ে গঙ্গার বুকে ভাসতে ভাসতে জ্যোতি দাদার বেহালার সুরে কথা বসিয়ে গান গাওয়া..... কখন যে বনান্তের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে চাঁদ জ্যোৎস্না ছড়িয়ে আবেশ মুগ্ধ করত! পূরবী রাগিণী তখন সুর মূর্ছনায় পৌঁছে যেত বেহাগে। নদীর জলে চাঁদের ভাঙা আলো তখন টুং টাং করে যেন জলতরঙ্গ বাজাচ্ছে। 


    এই বাগান বাড়ির দোতলায় চারদিক খোলা একটি গোল ঘর ছিল - যেটা কবিতা লেখার জায়গা হিসেবে বেছে নেওয়া হলেও এখানে বসে রবি রচনা করেছিলেন অনেক গদ্য। মুক্ত পরিবেশে রবির যে মানসিক মুক্তি ঘটেছিল মুক্ত আস্বাদিত অন্তর থেকেই অবিরাম ধারায় উৎসারিত হল যে নূতন লেখনী.… তারই ফলশ্রুতিতে আমরা পেলাম বাংলা উপন্যাস "বৌঠাকুরাণীর হাট" । 


     এসবের মাঝেই বাউল গানের মত লোকসঙ্গীত ও ছড়ার গান বিষয়ে ভাবনা চিন্তা, বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশের ভাবনা এবং সেজন্যে পরিভাষা অনুসন্ধান .... এসব বিভিন্ন ভাবনায় বিশ বছরের রবি নব কর্মোদ্যমে উদ্যোগ নিলেন একাডেমী জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। উপদেষ্টা হিসেবে পেলেন বিদ্যাসাগর মহাশয় কে। এছাড়াও রাজেন্দ্রলাল মিত্র, কৃষ্ণ বিহারী সেন প্রমুখ ব্যক্তিদের সাহচর্য এবং অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রতিষ্ঠিত হল অনেক সাধনার ফল - বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষদ। 

              …………………. 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - সুকান্ত সিংহ

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614

No comments:

Post a Comment

তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা // ই-কোরাস ১৮০

  তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা ১. মহানির্বাণ   চুন্দ, চুন্দ, এখনি এই শূকর মাংস মাটির গভীরে পুঁতে ফেলো, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে এই মাংস পরিপাক করতে প...