আর একটি পয়লা বৈশাখ
লিপি সেনগুপ্ত
বৈশাখ মাসের প্রথম দিনেই বাংলা নতুন বছরের সূচনা। এর পিছনেও একটা ইতিহাস আছে। আগে যখন জমিদারী প্রথা চালু ছিল তখন প্রজাদের জমিদারকে খাজনা দিতে হত। চৈত্র মাসের শেষ দিনটিতে সারা বছরের জমে থাকা খাজনা মিটিয়ে অর্থাৎ ধার, বাকি সব শোধ করে পরের দিন থেকে শুরু হত নতুন করে খাতা লেখা। যা আজও 'হালখাতা' বলেই পরিচিত। সেই সাথে এই দিনটিকে বিশেষ ভাবে উদযাপন করা হত নতুন জামা কাপড় পরে, ভালোমন্দ খাওয়া দাওয়া, বড়দের আশীর্বাদ নিয়ে আর ছোটদের স্নেহ প্রীতি ভালোবাসার হলুদ সুতোয় বেঁধে।
জমিদারী প্রথা গত হলেও বৈশাখের প্রথম দিনটি বাঙালির কাছে আজও উৎসবের আবহ নিয়ে আসে। পায়ে পায়ে আমরা চলে এসেছি ১৪৩০ বঙ্গাব্দে। নতুন বছর আমাদের কি উপহার দেবে জানা নেই, ফেলে আসা বছরের চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিতে যাওয়ার প্রসঙ্গেও যাচ্ছি না।তবে পরিবর্তনের চরমতম পরিবর্তন দেখলাম শিক্ষা, রাজনীতিতে।যা আমাদের কাছে লজ্জার এবং হতাশার।
আমরা কিছুটা হলেও অতীত বিলাসী। নিভৃত যাপনে এখনও ফেলে আসা সময়ের ছবি আঁকি।মনে পড়ে পয়লা বৈশাখের দিন সকালে স্নান করে মা আমাদের গায়ে নতুন পাখার বাতাস করত। হাতে হলুদ সুতো বেঁধে দিত। পড়ায় পাড়ায় কখনও ছোটোখাটো অনুষ্ঠানে যোগ দিতাম। বড়দের প্রণাম আর ছোটদের স্নেহ ভালোবাসায় শুরু হত নতুন বছর। সামান্য হলেও ঘরে ঘরে নতুন জামা কাপড় পরা হত সেদিন। আর ছিল খাওয়া দাওয়ার লোভনীয় আয়োজন। এখনও আমরা সেই পরম্পরা ধরে রেখেছি। তবে রং বদলেছে, জৌলুস বেড়েছে এইটুকুই যা।
আগে ছিল চিঠি লেখার চল। পোস্টকার্ড না হলে ইনল্যান্ডলেটারে পরিবারের সবাই নববর্ষের প্রণাম, শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি লিখত।এখন ফোন,হোয়াটস্ অ্যাপ এমনকি ফেসবুক সেই কাজ সহজ করে দিয়েছে।" এসো হে বৈশাখ এসো এসো"... বৈশাখকে আবাহনের সাথে সাথে প্রচন্ড গরম বিনা আমন্ত্রণে এবারও হাজির। প্রকৃতি ক্রমশই বিরূপ হচ্ছে।
তবু আমরা এই নতুন বছরকে নিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকব, নতুন আশায় 'নব রবি কিরণে' প্রতিটি দিনের শুভকামনা জানাব পরস্পরকে। শুভ চেতনা, শুভ বোধ জেগে থাকবে সবার মনে এটুকুই আশা…
শুভ নববর্ষ, ১৪৩০
………………….
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - সুব্রত ঘোষ
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment