১লা বৈশাখ ও ছোটবেলা
শ্যামলী দাস
১লা বৈশাখ মানেই বাংলা ও বাঙালী জীবনের এক উল্লেখযোগ্য দিন। সারাবছর বাংলা তারিখটা সেভাবে মনে না থাকলেও আপামর বাঙালী ১লা বৈশাখের আগমনের অপেক্ষা করে অধীরভাবে।
১লা বৈশাখ আসলেই মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। হালখাতা মতিচুরের লাড্ডু আর নতুন ক্যালেন্ডার। হালখাতা উপলক্ষে বিভিন্ন দোকান থেকে আসত লক্ষ্মী-গণেশ আর স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা রঙিন রঙিন কার্ড। কার্ডগুলোর মালিকানা থাকত আমাদের ছোটদের হাতে। আর সেই কার্ড দিয়ে আমরা বানাতাম ফিরকি। রামনবমীর মেলায় কেনা ছোট দা দিয়ে বাঁশবাগান থেকে কেটে আনতাম বাখারি। উনুন খোঁচানো লোহার বাঁকা শিক গরম করে বাখারির মাঝখানে করতাম ফুটো, তার দুপাশে কার্ডের দুটো টুকরো জিগজ্যাগ করে সাঁটিয়ে দিতাম; তারপর বাঁকা একটা শিক সেই ফুটোতে লাগিয়ে দিয়ে হাওয়ার সামনে দাঁড়ালেই ফিরকি ঘুরত বনবন করে।
আমাদের গ্রামদেবী শীতলা মায়ের পুজো হতো বৈশাখের শেষ শনি বা মঙ্গলবার থেকে। সেই পুজো এবং শীতলা মায়ের স্নানের জন্য মা-কাকিমারা যেত গঙ্গাস্নানে। দু'মাইল কাঁচা পথ খালি পায়ে হেঁটে। আমরা, মানে বাড়ির ছোটরাও পিছু নিতাম তাদের। তারপর গঙ্গার ঘাটে নেমে চলত ডুব দেওয়ার প্রতিযোগিতা। কে কতগুলো ডুব দিতে পারে। একবার চল্লিশটা ডুব দিয়ে হয়েছিলাম সেরার সেরা। স্নানের পর গঙ্গাতীরে গামছায় মুড়ি আর তেলেভাজা রেখে সবাই মিলে গোল হয়ে বসে খাওয়ার যে আনন্দ ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
নতুন বছর আসে। আসে ১লা বৈশাখও। কিন্তু সেই ছোটবেলার উন্মাদনা আর খুঁজে পাইনা কোনভাবেই।
………………….
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - কবিতা সামন্ত
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment