ফেলে আসা পয়লা বৈশাখ
তপতী ঘোষ
অনেকগুলো বৈশাখ পার হয়ে আসা আমি। কিন্তু মনের আয়নায় সেই ফেলে আসা পয়লা বৈশাখ। আমার ফ্রক-বেলা। সকালে বাবার কথামতো গানের রেওয়াজ তারপর পড়তে বসা। নাহলে সারাবছর পড়াশোনা হবেনা। তারপর নতুন জামার পরশ মেখে মায়ের সাথে মন্দিরে পুজো দেওয়া বড়দের প্রণাম আর দুপুরে মায়ের হাতের লোভনীয় সব খাবার। আর সবথেকে আকর্ষণীয় ছিলো বিকেলে হালখাতার মিষ্টির প্যাকেটের লাড্ডু আর ক্যালেন্ডার। যার জন্য আমি অধীর অপেক্ষায় থাকতাম। আরো কিছু পরে যখন বুঝতে শিখলাম বৈশাখ মানে রবীন্দ্রমাস, বসন্তের বিলম্বিত অধ্যায় মানে বৈশাখ।
তখন পাল্টে গেল পয়লা বৈশাখের রূপ ও রঙ। তখন নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি কিছুদিন আগেই শুরু হয়ে যেতো।
ওই দিন ভোর ভোর উঠে মা জ্যেঠিমার ট্রাঙ্ক থেকে ন্যাপথলিনের গন্ধমাখা সাদা-লালপাড় শাড়ি সংগ্রহ করে শাড়ি পড়ার রোমাঞ্চকর পর্ব শেষ করে চুলে টগর ফুলের গোড়ে মালা লাগিয়ে তখন জুঁইয়ের মালা সহজে পাওয়া যেতনা তাই, আর বুকের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে মানে সঞ্চয়িতা নিয়ে আমরা দলবেঁধে হাজির হতাম পাড়ার দুর্গামন্ডপে। শতরঞ্জি বিছিয়ে আমরা সারি দিয়ে বসতাম। সামনে রাখা থাকতো ধূপের ধোঁয়ায় আর সাদা ফুলের মালায় শোভিত আমাদের প্রানের রবীন্দ্রনাথ। আড়ম্বরের বাহুল্য ছিলনা। বিলাসিতা বলতে ছিলো মাইক। আমরা নিজেদের পুরোপুরি সমর্পণ করে দিতাম প্রানের মানুষটির কাছে। একে একে শুরু হতো আমাদের গীতিআলেখ্য, রবীন্দ্রনৃত্য, আবৃত্তি, সংগীত এককথায় আমার পয়লা বৈশাখ মানে রবীন্দ্রময় হয়ে থাকা।
এখনো এতো বছর পরেও চোখ বন্ধ করলেই শুনতে পায় সমবেত কণ্ঠে গাওয়া.....
"মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা"।।
…………………….
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - অভিষেক নন্দী
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment