আর একটি পয়লা বৈশাখ
মৌ অধিকারী
ছোট বেলায় প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের দিন ভোর বেলায় মা আমাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে আমাদের দাদুর বাড়িতে যেত। আমার দাদু ছিল আপাদমস্তক একজন পাকা ব্যাবসায়ী মানুষ। বাড়িতেই ছিল লেদ মেশিনের কারখানা। সেখানে নানারকম শাঁখে ঝিনুকের রমরমা! আমার দাদু ছিল এক ভীষন প্রতিভাধর মানুষ। তাই বিভিন্ন মানুষ আসতেন নানারকম ক্রিটিক্যাল কাজকর্ম নিয়ে। তাঁরা জানতেন খালি হাতে ফিরতে হবে না। সমাধান হবেই। যাইহোক দাদুর বাড়িতে তাই প্রত্যেক বছর পয়লা বৈশাখে ঘটা করে পুজো হতো আর আমরা এবং অন্য আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া করতাম। সে কি খাওয়া বাপরে বাপ! বাগদা চিংড়ির মালাইকারি, গাওয়া ঘিয়ে চপচপে পোলাও,পাঠার মাংস, কাতলা, ইলিশ, রসমালাই, মিষ্টি লাল দই! উফ্ জমে যেত বৈশাখী আড্ডা।
এমন বৈশাখ আর এখন আসেনা আমাদের একটাও, অনেক কিছুই খাওয়া দাওয়া হয়; কিন্তু সেই রকম আর হয়নি বহুকাল! দাদু আজ আর নেই। কালের নিয়মে গা ভাসিয়েছে সেও। আজ আবার একটা পয়লা বৈশাখ বেল ফুলের গন্ধ চারিদিকে ম ম করছে বাড়িটা! মাংস মিষ্টি আইসক্রিম সব আছে শুধু সেই গন্ধটা নেই। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে যেন।
………………….
নদীজন্ম
রাখী দে
একটি সময়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। পিছনে ফিরে তাকাতে দেখি তার সমূহ বিস্তৃতি নদীর জলের ওপর আখর হয়ে ফুটে আছে। টলমলে ঢেউয়ের সাথে পা মেলাই, চোখ কেঁপে ওঠে। কতোদূর তার যাওয়া আসা, কতো বাঁকের মুখোমুখি হয়ে নোঙর ফেলেছে তার স্মৃতি তার হিসেব রাখি। তলিয়ে যাওয়া মুখের কথাগুলি ভেসে আছে তরঙ্গের মতো। তাকে ছুঁতে যাই, আঙুলের ডগায় জেগে থাকে জলের ফোঁটা! এইভাবে কয়েকটি বিন্দু দিয়ে যদি গাঁথা যায় স্মৃতির গান, তাকে লালন করি বুকের ভেতর। মনে হয় বুঝি পূর্বজন্মের ভেতরেই জেগে আছি নতুন 'আমি'। কালের সন্ধিক্ষণ পেরিয়ে আগামীর পথে পা বাড়াই। সময়ের গুটি কেটে বেরিয়ে আসে প্রজাপতিরঙা নববর্ষ, বহুকাঙ্খিত পয়লা বৈশাখ!
……………..
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - অর্থিতা মণ্ডল
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment