Friday, 14 April 2023

ফেলে আসা পয়লা বৈশাখ :শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় // ই-কোরাস ১১০

 



ফেলে আসা পয়লা বৈশাখ

শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়

স্বপ্নাদি গৃহস্থ বাড়ি তে কাজ করে সংসারে স্বামীকে সাহায্য করে। সভ্য সমাজের চোখে সে  প্রতিবেশী দেশ থেকে এদেশে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু রিফিউজি। যখন এখানে আসে, না ছিল চাল, না চুলো। কোনক্রমে একটা দরমার দেওয়াল দেওয়া ঘর, তার ওপরে টিনের চাল। এই তার ঠিকানা।  স্বামী ছোট্ট মফস্বলের এক মাছের আড়তে সামান্য কাজ করে । কি একটা কঠিন অসুখে কর্মক্ষমতা বর্তমানে প্রায় হারিয়ে ফেলেছে সে। এই মহিলার গায়ে গতরের পরিশ্রমই পরিবারটির গ্রাসাচ্ছাদনের মূল ভরসা। 


যেটা আছে এই স্বপ্নাদির, সেটা হল অদম্য পরিশ্রম ক্ষমতা, সততা এবং আত্মসম্মানবোধ।বুক ফেটে গেলেও মুখ ফুটে কারো কাছে হাত পাতে না সে।বাড়ির গৃহিনী, নিজের সংসার সামলে, অসুস্থ স্বামী, সন্তান, মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করেও সে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে লোকের বাড়ির ঘর ঝাঁট দিয়ে, বাসন মেজে, ঘর মুছে সামান্য টাকা রোজগার করে।


সে বছর করোনার প্রকোপে দুই মাস তার রোজগারে এমনিতেই টান পরেছিল ভীষণ রকম।বেশিভাগ গৃহস্থেরাই কাজে আসতে বারণ করে দিয়েছিলেন।পাছে সংক্রমণ ছড়ায়, সেই ভয়ে।কাজে না গেলে বাড়ি বয়ে সামান্য মাইনের টাকা আর কেই বা দিয়ে আসবে তাকে।তাই মাস দেড়েক সহ্য করে পেটের দায়ে লক ডাউনের মধ্যেই বাধ্য হয়ে দুই একটি সহৃদয় গৃহস্থ বাড়িতে মুখে মাস্ক পড়ে কাজ করা আবার সবে শুরু করেছিল সে।


মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা দিয়ে এক রাত্রে এল বিভৎস সাইক্লোন ঝড়।সেই রাত্রে নিজের ছোট সন্তান দের পাশের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে নড়বড়ে ভিটে কামড়ে বিনিদ্র রজনী কাটালো সে। প্রচন্ড বিভৎস শব্দের ওই পাঁচ -ছয় ঘন্টার প্রলয় একে একে উড়িয়ে নিয়ে গেল তার কাঁচা ঘরের টিনের চাল।রান্না করার জায়গাটিকে দিল ধূলিসাৎ করে। তবুও ঘর ছেড়ে নড়বে না সে।কোনো রকমে কম্বল মুড়ি দিয়ে খাটের আড়ালে বসে রাত কাটল তাদের।জলমগ্ন ছাদবিহীন ঘরেই।


পরের দিন কাজে যেতে দেখা গেল না তাকে। তাদের খোঁজ নিতে ফোনে বার বার চেষ্টা করেও বিফল হলেন গৃহস্থ বাড়ির সহৃদয় ব্যক্তিরা। কামাই তো সচরাচর করে না স্বপ্না দি। তার পরের দিন অবশ্য যথাসময়ে সে কাজে আবার হাজির। খবর নিতে তবেই মৃদু স্বরের পূর্ববঙ্গীয় টানে জানাল তার দুর্দশার কাহিনী।


ওই দিন বিকেলের কাজ সারতে আবার গৃহস্থ বাড়ির পথে দেখা গেল তাকে। সঙ্গে বৃদ্ধা মা।যে বাড়িতে সে কাজ করে সেই বাড়ির একটি অব্যবহৃত প্লাইঊডের বড় পাটাতন তাঁরা তাকেনিয়ে যেতে দিয়েছেন যদি কোনো কাজে লাগে।তাই বৃদ্ধা মাকে নিয়ে পাটাতন মাথায় করে রাস্তা দিয়ে বাড়ির পথে চলেছে স্বপ্না দি।যেন তার পৃথিবীর ভার বহন হবে তাতে। ভেঙে পরা রান্না ঘরের ছাউনির কাজে লাগবে।


রেল লাইন পেরিয়ে মাথার ওপর প্লাইয়ের পাটাতন চাপিয়ে হেঁটে চলা দুই রমণীর অবয়ব ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। ক্যালেন্ডারের পাতায় ওই দিন টাও ছিল কোন এক পয়লা বৈশাখ। 

                  ………………….. 



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - সুকান্ত সিংহ

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614

No comments:

Post a Comment

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...