নিখিল
রোহন নাম্বিয়ার
চা দোকানেই কখন যে সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটে বেজে গেল বুঝতেই পারে নি নিখিল। মায়ের এগারোটা মিসড কল। ইদানিং কারো সাথে কথা বলছে না সে, মেজাজটাও সবসময় এমন চড়া যে কেউ কথা বলতেও আসে না।
নিখিলের সাতাশ বছর। গ্র্যাজুয়েশান কোন রকমে কমপ্লিট করে এখন সে একটি ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট। অন্য কেউ ডাকলেও বাজিয়ে দেয়, প্রতি শো হাজার টাকা।
নিখিলের বাবা নেই। মারা গেছেন দুই বছর আগে। তারপর থেকে সংসারের দায়িত্ব তার ওপর।
বাবু ঘরের মশলা, চাল সব শেষ হয়ে এসেছে। আর তিন চারদিন চলবে।-নিখিলের মা বলেন।
-হু
-কিছু হয়েছে ?
মিখিল মুখে না বললেও তার মা বুঝতে পারে ছেলের কিছু হয়েছে।
অন্য দিনের মত আজও সারাদিন ঘুরল একা একা, রাতে আচমকা উঠে বসল। নিখিলের ভাই কলেজে ভর্তি হয়েছে এবছর। ফোনে কি একটা করছিল তাকে যা না তাই করে উল্টোপাল্টা বলল নিখিল । আজকাল নিখিল ঘুমোলেই ভেসে ওঠে লালনীল আলো, স্টেজ, গিটার কাঁধে সে সাউন্ড চেক করছে, সামনে উচ্ছ্বসিত অডিয়েন্স। সাউণ্ড চেকের সময় সাধারণত হোটেল ক্যালিফোর্নিয়ার লিডটাই বাজায় সে।
কিছুক্ষণ জানলার দিয়ে তাকিয়ে থেকে বের করল গিটারটা। প্রসেসার থেকে কানে হেড ফোন লাগানো। আগুল স্ট্রিংস ছুঁতেই তার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। A মাইনরে সে অসম্ভব রকমের মায়া বুনে চলেছে। বাজিয়ে চলেছে তো বাজিয়েই চলেছে। ফোনে একটা নোটিফিকেশন এলো। বাজানো থামিয়ে নিখিল কেঁদে উঠলো গিটারটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে । কাঁদছে আর ফ্রেড বোর্ডে হাত বোলাচ্ছে। ডাক্তার যেদিন বাবাকে সময় দিয়ে দেয় মাঝরাতে হসপিটালের বাইরে এমনই কেঁদেছিল নিখিল।
দেড় বছর কোন শো নেই। বেহিসেবী জীবন যাপন করা নিখিলের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে কোভিড।পালসারটা বিক্রি করে তার চার মাস চলছিল। গিটার ছাড়া আর কোন কিছুই পারে না সে।
ক্লান্ত দুপুর। OLX থেকে মেসেজ করা ছেলেটি সোজা রাস্তায় দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। তার পিঠে ঝুলছে গিটারটা…
…………………….
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment