সুমিতাদি
রোহন নাম্বিয়ার
আগের সপ্তাহে লকডাউন উঠেছে। স্বপ্ন রঙের সন্ধে। রাস্তা চলে গেছে। রাস্তার পেছনে বিশাল ছাতিম গাছের নীচে পাড়ার চা দোকানে এইমাত্র আলো জ্বলল। মফস্বল। ভীষণ চেনা মুখগুলো গল্পে মত্ত। শুধু পথিকৃৎ’দা আসছে না।
সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়েও আজ রেশন পাওয়া গেল না! – তপন বাবু মুখে বিরক্তি নিয়ে বললেন।
এ তো জানা কথা! এদের সবকিছুই পরিকল্পনাহীন। - কৌশিক ফোন থেকে মুখ না তুলেই বলে।
কৌশিক কলেজের ছাত্র নেতা। লকডাউনে কলেজ ফিস দেবে না বলে তারা বাড়ি বসে সোশ্যাল মিডিয়াতে আন্দোলন করছে। তার মাথায় এখন সমাজ পাল্টে দেবার নেশা। একবার অলরেডি ব্যাক এসে গেছে।
অনি কৌশিকের সাথেই পড়ত । সেও ছাত্র সংগঠন করে। কিন্তু সে প্রতি বছর ভালো নম্বরে পাস করে এখন ফাইনাল ইয়ারে।
সুমিতাদি। পথিকৃৎ’দার বউ। শান্ত, মুখে একটা লক্ষ্মীশ্রী লেগে থাকে। অন্যদিন কৌশিকের সাথে দেখা হলে হাসে, কথা বলে। আজ কেমন যেন অন্যমনস্কভাবে হেঁটে গেল ।
পথিকৃৎ’দা প্রচুর কথা বলে। কি একটা যেন বিদেশি কোম্পানির রিপ্রেসেনটেটিভ। কৌশিকের সাথে তার প্রতিদিন তর্ক লাগবেই। তার সব ব্যবহার্য জিনিসই বিদেশি। পকেটে আইফোন। দামি বাইক, ঘড়ি। বিশাল ঝকঝকে ফ্ল্যাট।
অমিত’দা এম.এস.সি করে সরকারি চাকরীর পরীক্ষা দিচ্ছে আর টিউশান পড়ায়। তার সাথে পাড়ার বড়-ছোট সবার খুব ভাব। গুছিয়ে কথা বলে। সবসময় হাসি খুশি। একমাত্র অমিত’দার কাছেই কৌশিক মুখ বুজে বকা খায়। কৌশিক দু একবার দেখেছে অমিত’দার চোখগুলো মাঝে মাঝে কেমন যেন হতাশ …
টিউশানি শেষ করে চা দোকানে অমিতদা চুপ করে বসে আছে রাস্তার দিকে তাকিয়ে । কৌশিক আর তপনবাবুর জোর কথাবার্তা চলছে লকদাউনে সরকারী ব্যর্থতা প্রসঙ্গে। বাকি সবাই বাড়ি চলে গেছে। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। হরি দোকান গতান শুরু করেছে। অনি হাঁসফাঁস করে দৌড়ে এসেই বলল– পথিকৃ্ৎ…দা …
মাস তিনেক আগে না কি পথিকৃৎ’দার চাকরী গেছে। লেটেস্ট আইফোনটা, বাইক, চারচাকা, ফ্ল্যাটের ই.এম.আই বাকি। এই বছরের লক ডাউনে কোন ই.এম.আই স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় নি সরকার। এখন সবার মনে পড়ল সত্যিই তো পথিকৃৎ কিছুদিন একদমই বাড়ি থেকে বেরোয় নি।
এখন মাঝরাত। অনি, কৌশিক, অমিত’দা, তপন বাবু, তাপস বাবু, বিমল কাকা, চা দোকানের হরি সবাই মর্গের বাইরে বসে আছে। হসপিটাল ক্যাম্পাসে ল্যাম্পপোস্টের আলো খুব ক্ষীণ মনে হচ্ছে। নিঃঝুম গাছেদের পাতা নড়ছে না। কালো আকাশে ভেসে আছে নিঃসঙ্গ চাঁদ। সবাই নির্বাক। কারো মুখে কোন কথা নেই। কৌশিকের মনে পড়ছিল বছর পঁচিশের সুমিতাদি কেঁদে কেঁদে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল …
…………………
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment