এস এম এস
রোহন নাম্বিয়ার
সুহাস, তপন, রাজ, মনোজ সবাই ক্লাস ইলেভেনে উঠেছে। তাদের এক পাড়া, এক সাথে হাফপ্যান্ট থেকে ফুলপ্যান্ট, একই সাথে সিগারেটও।
কি যে হল সুহাসের! এমন তো কখনো হয় নি খেলা কামাই করে টিউশান যাচ্ছে!- ঠোঁট থেকে সিগারেট নামিয়ে তপন বলল।
রাজ তপনের দিকে তাকিয়ে বলল- সুহাস ইদানিং খুব বাংলা পড়ছে, সকালের বদলে বিকেলে ব্যাচ,সময়ের আগেই হাজির। একা একা ঘুরছে ,নিরিবিলিতে বসছে, সবসময় মোবাইলে মন। সারারাত হোয়াটস অ্যাপে অন। বাত কুছ আলাগ হি হ্যায় ভাই…
টাউন হলের পাশের এই রাস্তাটা বেশ মায়ামাখানো। রাস্তার দুই পাশে মাঝে মাঝে ছাতিম-অশথ্ব-বত-কদম আরও কত কি গাছ। অনন্যা আজকেও মুচকি হাসল, বলল বাই। পাহাড়ি নদীর মত অনন্যার স্বর। সুহাস মনে মনে হাসতে হাসতে বাড়ির পথে। বাড়ি এসে বই খুললেই সাদা স্কুল চুড়িদার আকাশি ওড়না,শরতের মেঘ পাহাড়ি নদী সব কেমন এলোমেলো করে দেয় ওকে। অয়নদা এমন ভাবে ব্যাখ্যা করে যেন বৈষ্ণব পদাবলীর রাধার মুখটা অনন্যার মত মনে হয়।
সুহাসকে একদমই দেখা যাচ্ছে না যে ভাই! কি হল বল তো? – তপন বলে।
এক হপ্তা হল বাংলা পড়তেও যাচ্ছে না – রাজ গম্ভীরভাবে বলে।
সবাই একে ওপরের মুখ দেখে। চোখে বিস্ময়। মাঠে অন্ধকার নেমে এসেছে। সবাই বাড়ি চলে গেছে, শুধু তপন রাজ আর মনোজ বসে সিগারেট টানচ্ছিল। ডান দিকে চোখ যেতেই রাজ বলে- ওটা কি রে? সবাই ওদিকে তাকায়। মাঠে দূরে একটা লাল আলো নিঃশ্বাসের মত বাড়ছে কমছে। ব্যাট বল উইকেট নিয়ে ওরা ওদিকে যায়। তপন মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালালো। সুহাস হাঁপাচ্ছে , চোখ রক্তের মত লাল। কেমন একটা করছে যেন এখনই কেঁদে ফেলবে। হাতে গাঁজার কল্কে। রাজ কল্কেটা জোরে ছুঁড়ে দেয় দূরে।
মনোজ সুহাসকে জড়িয়ে ধরে বলে – কি হয়েছে ভাই ?
এক চড়ে জামিন চাটিয়ে দেব…কি হয়েছে তোর!- বলেই রাজ সুহাসকে এই মারে সেই মারে অবস্থা ।
তপন রাজকে বলল – আরে থামবি ?
ফোনের ফ্ল্যাশ জলছে, অল্প আলো। সুহাসের মাথা নিচু, মনোজ পাশে বসে সুহাসকে ধরে আছে ।
-কি হয়েছে বল সুহাস ? – শান্ত গলায় তপন জিজ্ঞেস করে ।
মিনিট পনেরো হয়ে গেছে সুহাস মুখ নিচু করে বসে আছে। রাজ, তপন,মনোজ একে ওপরের মুখ দেখছিল ।
সুহাস বল ভাই ? – চিন্তিত গলায় মনোজ বলে।
অনন্যার ফোন আমার হাতে ছিল।
তাতে কি হয়েছে ? রাজ বলল।
সুহাস আবার চুপ করে যায়। চোখের কোন ভেজা।
সিনেমা শেয়ার করছিলাম ওকে ।
সিনেমা দিয়েছিস তো কি হয়েছে ? – তপন বলল।
একটা Msg এলো… – বলেই কেঁদে ফেলে সুহাস ।
কে পাঠিয়েছে? নাম বল শালা শুয়োরের বাচ্চার পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেব- রাজ চিৎকার করে বলে।
কার msg ? কি লিখেছে ? – মনোজ জিজ্ঞেস করে।
অয়নদার…আই লাভ ইউ টু লিখেছে…
কেউ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। অয়নদা তাদের টিউশান টিচার …
…………………
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment