Friday, 14 April 2023

আমার একলা বৈশাখ : মহাশ্বেতা দাস // ই-কোরাস ১১২

 



আমার একলা বৈশাখ

মহাশ্বেতা দাস

কোন এক সকালে বারান্দায় বসে রচনা বই খুলে পড়ে চলেছি জোরে জোরে.... " একলা বৈশাখ (১লা বৈশাখ) হালখাতা দিয়ে শুরু হয় বাঙালির...."। মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে... "ওরে ওটা একলা বৈশাখ নয় পয়লা বৈশাখ হবে।" 


       আমাদের ছোটবেলাটা এমনই ছিল। বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে পড়তে বসতাম। মা বলতো, "জোরে জোরে পড় আমি যেন রান্নাঘর থেকে শুনতে পাই।" কোন এক সময় ভুল ত্রুটি সংশোধন করে দিতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে হলুদ মাখা হাতে ধরতো বই গুলি। সাদা পাতায় হলুদের ছোপ লেগে গেলে বিরক্ত হতাম। এখন বুঝি সেই হলুদ মাখা হাতে লেগে থাকতো আশ্চর্য এক নরম আদর। 


       আমাদের প্রজন্মের পয়লা বৈশাখ টা শুরু হয়ে যেত বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। মানে আমাদের শৈশব ছিল উৎসব আনন্দে ভরপুর.... যাকে বলে একদম চেটে পুটে খাওয়া। অনেক অভাব ছিল কিন্তু সেজন্য কোন অভিযোগ ছিল না আমাদের। যখন থেকে হালখাতার জন্য একটি একটি করে নিমন্ত্রণ পত্র আসতে শুরু করত আর বিকেল হলে পাড়ার মাঠে আমরা কবিতীর্থ ক্লাবের ক্ষুদেরা জড়ো হতাম বিভিন্ন বৈশাখী অনুষ্ঠানের রিহার্সালে । বাবা গানের তালিকা করে দিত কয়েকজন কাকু, পিসি আর আমার মা কে নিয়ে.... 


        "তাপস নিঃশ্বাস বায়ে 

         মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,

বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।" 


      গানের সুরে গলা মেলাতে মেলাতে কবেই এসে হাজির হয়ে যেত আমার "একলা বৈশাখ"। সকালবেলা চারিদিক থেকে ভেসে আসত শাঁখের আওয়াজ, ঘণ্টাধ্বনি... ধূনার গন্ধ। বছর শুরুর সকালবেলা রবিঠাকুরের ছবিটা বেলি ফুলের মালা দিয়ে সাজিয়ে বাবার সাথে গাইতাম.... 

  

    "ওরে নূতন যুগের ভোরে

       দিস নে সময় কাটিয়ে বৃথা

       সময় বিচার করে....." 


    ছোট থেকেই বাবা শিখিয়েছিল বৈশাখ মাস মানেই রবি মাস। দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে এলে নতুন জামা পরে দাদার (ঠাকুমা) হাত ধরে সামনের ঠাকুরের দোকান থেকেই প্রথম আনতাম লাড্ডুর প্যাকেট টা। তখন হালখাতার মিষ্টি মানেই লাড্ডু আর খাস্তা গজা। খুব সাধারণ ছিল আমাদের জীবন কিন্তু ছিল নানা রঙে ভরপুর। তাই.... "কী রবে আর কী রবে না/ কী হবে আর কী হবে না"  এর হিসেব নিকেশ ভাবনা মনের সংশয়ে মেশানোর আগেই কালবৈশাখীর ঝড়ে জলে ভিজে একশা হয়ে আম কুড়াতে কুড়াতেই চলে আসত ২৫ শে বৈশাখ.... চির নূতনের ডাক। ভোর পাঁচটায় গাইতে গাইতে আমরা বেরিয়ে পড়তাম.... 

     "হে নূতন দেখা দিক আরবার " 


   মনের জরা, গ্লানি কে সরিয়ে রেখে আজও সেই সুর অগ্নিস্নানে শুচি করে আমার মন। 

                   ………………… 


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - দেবশ্রী দে

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614

No comments:

Post a Comment

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...