Tuesday 31 January 2023

রবীন্দ্র পরম্পরা // ই-কোরাস ৫

 


রবীন্দ্র পরম্পরা

পর্ব - ৫ 

শৈশব থেকে কৈশোরের পথে




ঠাকুরবাড়ির ছোট ছেলেটির চাকর বাকরদের কড়া শাসনাধীনে থাকার শৈশবের দিনগুলি ক্রমে কৈশোরের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছাল। চাকরদের শাসনও কিছুটা শিথিল হয়ে এল এবং পঞ্চম দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহের ফলে ঠাকুর পরিবারে আগমন ঘটল নয় বছরের নববধূ কাদম্বরী দেবীর, যাকে দেখে মাত্র কয়েক বছরের ছোট রবি যেন নতুন এক মায়ার স্পর্শ পেয়েছিলেন। নতুন বৌঠানকে ছোট্ট রবি পেয়েছিলেন অবকাশের সঙ্গী রূপে। 


ঠাকুরবাড়ির ছাদের চারদিক উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল যেটা ছোট রবির মাথা ছাড়িয়ে…ফলে বাইরের প্রকৃতি কে সেভাবে দেখার উপায় ছিল না। এক একদিন দুপুরে যখন সংসারের কাজে ছেদ পড়ত.... অন্তঃপুর বিশ্রামে ডুবে থাকত -- ছাদে এসে হাজির হতেন। প্রাচীরের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বাইরের প্রকৃতি কে দেখার চেষ্টা করতেন... আর প্রকৃতিও যেন সেই ফাঁক ফোঁকর দিয়ে কৈশোরের পথে পা বাড়ানো বালকটিকে চকিতে ছুঁয়ে যেত! ঈশারায় কতই না খেলা করত সে। জীবন স্মৃতি গ্রন্থে আমরা পাই- 

  "সে ছিল মুক্ত, আমি ছিলাম বদ্ধ -- মিলনের উপায় ছিল না, সেই জন্যে প্রণয়ের আকর্ষণ ছিল প্রবল।" 

    এ যেন খাঁচার পাখির সঙ্গে বনের পাখির একরকম পরিচয় চলত। পরবর্তী ক্ষেত্রে এই কল্পনা প্রবণতাই ভাষা পেয়েছিল -- 

        "খাঁচার পাখি ছিল

                 সোনার খাঁচাটিতে

          বনের পাখি ছিল বনে।

         একদা কী করিয়া

               মিলন হল দোঁহে

          কী ছিল বিধাতার মনে।" 


দূরে অজানা ঘর বাড়ি গুলিকে দেখে মনে করতেন ওখানে যেন কত খেলা কত স্বাধীনতা ভরা আছে! সেই প্রখর দুপুরে চিলের তীক্ষ্ণ ডাক কানে আসত। ফেরিওয়ালা হেঁকে যেত-- 

 "চাই চুড়ি চাই, খেলনা চাই" 

  ... কল্পনাপ্রবণ রবির মন উদাস হয়ে যেত। 


নর্মাল স্কুলে পড়ার সময় স্কুলের পাশে থানায় লাল পাগড়ি বাঁধা পুলিশের খবরদারি চোখের পড়েছিল। পরে একদিন খেলার সময় ভাগ্নে সত্যপ্রসাদ ছোট মামাটিকে ভয় দেখানোর ফন্দি করে "পুলিশ ম্যান, পুলিশ ম্যান" বলে ডাকলে রবি দৌড়ে ঘরের ভিতর মায়ের কাছে গিয়ে বিপদের আশঙ্কার কথা বলেন… কিন্তু তাতে মায়ের বিশেষ উদ্বেগ চোখে পড়ল না। এদিকে বাইরে যাওয়াও নিরাপদ নয় তাই মায়ের ঘরের দরজার সামনে বসে সম্পর্কিত দিদিমা শুভঙ্করী দেবীর ছেঁড়া মলাট দেওয়া কৃত্তিবাসী রামায়ণ টি নিয়ে পড়তে শুরু করে দিলেন। ... কোন এক করুণ ঘটনায় ছোট রবির চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে দেখে দিদিমা জোর করে বইটা কেড়ে নিয়ে চলে গেলেন। 


গৃহ শিক্ষক নীলকমল ঘোষাল মহাশয় যেদিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের "বোধোদয়" পড়ানোর সময় বললেন --

     " আকাশের ওই নীল গোলক টি কোন একটা বাধামাত্রই নহে।"  


...সেদিন অসম্ভব আশ্চর্যের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল এই শিশুমন। আরও আশ্চর্য লেগেছিল যখন তিনি বললেন -- 

  "সিঁড়ির উপর সিঁড়ি লাগাইয়া উপরে উঠিয়া যাও না, কোথাও মাথা ঠেকিবে না।" 

    …মনে হয়েছিল সিঁড়ি সম্পর্কে অনাবশ্যক কার্পণ্য করা হচ্ছে। শিশুমন সুর চড়িয়ে বলতে লাগলো --  

" আরও সিঁড়ি আরও সিঁড়ি..." 

   

যখন বোঝা গেল সিঁড়ির সংখ্যা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই!! ... স্তম্ভিত হয়ে ভাবলেন... এমন একটা আশ্চর্য খবর পৃথিবীতে কেবল মাত্র মাষ্টারমশায়রাই জানেন। আর কেউ এই খবরের হদিশ পায় না!!! 

                 ………………….. (চলবে)



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - অভিষেক নন্দী

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614








No comments:

Post a Comment

তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা // ই-কোরাস ১৮০

  তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা ১. মহানির্বাণ   চুন্দ, চুন্দ, এখনি এই শূকর মাংস মাটির গভীরে পুঁতে ফেলো, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে এই মাংস পরিপাক করতে প...