রবীন্দ্র পরম্পরা
পর্ব - ৪
বিদ্যালয় কথা
মহাশ্বেতা দাস
পরিণত বয়সে বিশ্বকবি হয়ে বিশ্ব বাসীর মনের মণিকোঠায় একদিন স্থান করে নিয়েছিলেন যিনি তাঁর কাব্যিক রস বোধের বীজবপন হয়েছিল শৈশবেই। অক্ষর পরিচয়ের আগেই ছড়া এবং রূপকথার গল্পের অপরূপ রাজ্যে যে শিশু শিক্ষা হয়.... সেই রসবোধকেই কবি বাল্যরস আখ্যা দিয়েছিলেন। জীবন স্মৃতি গ্রন্থ থেকে আমরা যা পাই, শৈশবের "জল পড়ে পাতা নড়ে" কবিতা পড়ার আনন্দের অনুরণন অনুরণিত হয়েছিল পরবর্তী জীবনেও। সেদিন তিনি অনুভব করেছিলেন কবিতার মধ্যে মিল আছে বলেই কথা সেখানে শেষ হয়ে ও শেষ হয় না। কবিতার লাইন গুলির মধ্যে মিলের যে ঝঙ্কার... তাকে নিয়ে কানের সাথে মনের খেলা চলতে থাকে নিরন্তর।
ঠাকুর বাড়ির পুরানো খাজাঞ্চি কৈলাশ মুখুজ্যে দ্রুত লয়ে একটা ছড়া বলে শিশু রবির মন জয় করতেন। সেই ছড়ার মধ্যে গল্পের নায়ক ছোট্ট রবি আর একটি নায়িকার কথা উল্লিখিত হত। তবে বালক রবির মন ভরে উঠত দ্রুত উচ্চারিত অনর্গল শব্দচ্ছটা আর ছন্দের দোলায়। জীবন স্মৃতি গ্রন্থেই তিনি বলেছেন - "বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান" ছড়াটি ছিল শৈশবের মেঘদূত।
গত পর্বে (পর্ব- ৩) মাধব পন্ডিতের যে অব্যর্থ ভবিষ্যৎ বানীর কথা বলেছিলাম তা কিভাবে ফলপ্রসূ হল এবার দেখা যাক।
ওরিয়েন্টাল স্কুলে ভর্তি হয়ে শিক্ষালাভের থেকে ও আজীবন দাগ রেখে গেল সেখানকার কঠোর শাসন প্রণালীর কথা। পড়া না পারার শাস্তি স্বরূপ এক ছাত্র কে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে তার প্রসারিত দুই বাহুর উপর বেশ কয়েকটি ভারি স্লেট চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষালাভের জন্য কতখানি উপযোগী তা পরবর্তী ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিকের ভাবনায় অর্পণ করেছিলেন তিনি।
সাত আট বছর বয়সে ভর্তি হলেন নর্মাল স্কুলে। নর্মাল স্কুলের পঠনপাঠনরীতি ছিল বিলাতি শিক্ষাপ্রণালীর ধাঁচে। যার সমালোচিত রূপ পরবর্তী ক্ষেত্রে আমরা "তোতা কাহিনী" রচনার মধ্যে পাই।
এছাডাও নর্মাল স্কুলে হরনাথ পন্ডিতের ক্লাসে ছাত্রদের প্রতি কুৎসিৎ ভাষার প্রয়োগ শিশু মন কে বিদ্রোহী করে তুলতো।
এরপর আসি নর্মাল স্কুলে সহপাঠীদের প্রসঙ্গে। সেই সময় ঠাকুর পরিবারের ছেলেরা স্কুলে আসতো ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে চাকর বাকর এবং দারোয়ান সঙ্গে নিয়ে। সাধারণ ঘরের ছেলে মেয়েদের কাছে যেটা মনে হত বড়োলোকের দেমাকি চাল। তার উপর ঠাকুরবাড়ির ছেলেদের পরিপাটি বেশভূষা তো চোখে পড়ার মতোই ছিল। তাদের কথ্য ভাষায় ও ছিল মার্জিত রুচিবোধ যা শুধুমাত্র অর্জিত শিক্ষার দ্বারাই অর্জন করা সম্ভব। এই সমস্ত কারণে সাধারণ ছাত্রদের আক্রোশের কারণ হতেন ঠাকুর বাড়ির শিশুপুত্রটি।
……………………..
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - অভিষেক নন্দী
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment