Tuesday, 17 January 2023

রবীন্দ্র পরম্পরা // ই-কোরাস ৩

 



 রবীন্দ্র পরম্পরা 


 পর্ব - ৩

শৈশব কথা

মহাশ্বেতা দাস

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্নপ্রাশন ও নামকরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল ব্রাহ্মধর্ম অনুযায়ী অপৌত্তলিক রীতিতে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে সেদিন "শুভ কর্মের দান" করা হয়েছিল। 

    

বুনিয়াদি ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের শৈশব কাটে অন্যান্য পাঁচটি শিশুর মতোই। সেকালের সম্ভ্রান্ত পরিবারের রেওয়াজ অনুযায়ী ছোটদের অন্দর মহলে যাওয়া বারণ ছিল। তাই শিশু রবির ও শৈশবের দিনগুলি কাটে ভৃত্য মহলে অযত্নে, অনাদরে। চাকরেরা তাদের কর্তব্য কর্ম ছোট করে নেওয়ার জন্য শিশুর নড়াচড়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিত। ঘরে আটক থেকে জানালার নীচে পুকুর এবং তার পুব ধারে বড়ো একটা বট গাছ, নারিকেল গাছের সারি- ছবির মত এইসব দৃশ্য দেখে শিশু রবির সময় কাটতে থাকে। 


ঠাকুর বাড়ির নানা মহল। অনেক ঘর, আঁকা বাঁকা আঙিনা ও অনেক। রবির শিশুমনে এই সব জানা - অজানা কুঠুরি, রহস্যে পূর্ন ছাদ - সমস্ত বাড়িটাই যেন একটা গোলক ধাঁধা। সেই সময় ছোট্ট রবির খেলার সঙ্গী বয়সে একটু বড় ভাগ্নে সত্যপ্রসাদ এবং এক বছরের ছোট ভাগ্নী ইরাবতী। এই দুজনে মিলে অদ্ভুত কথা আর রহস্যপূর্ন ইঙ্গিতে রবিকে বিহ্বল করে তুলতো। পরে এই প্রসঙ্গে তিনি লিখেছিলেন -- 

     

       "আমার রাজার বাড়ি কোথায়

             কেউ জানে না সে তো -- 

         সে বাড়ি কি থাকত যদি 

              লোকে জানতে পেত।" 


জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ছিল সেই সময়কার কলকাতার শ্রেষ্ঠ সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। তবে বড়দের মজলিস বা জলসায় ছোটদের প্রবেশাধিকার ছিল না। সেখানে একটা বিরাট ব্যবধান ছিল। যদিও তার ঢেউ ছোটদের কানে ও মনে এসে আছড়ে পড়ত। বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথ সেসময় "স্বপ্ন প্রয়াণ" কাব্য লিখে বন্ধুদের পড়ে শোনাতেন। ছোট রবির দরজার পাশে দাঁড়িয়ে শুনে শুনে অনেকখানি মুখস্থ হয়ে যায়।


বালক রবির হাতেখড়ি হলো 'বর্ণপরিচয়' দিয়ে। 'কর -খল' ইত্যাদি বানান শেখার পালা শেষ করে প্রথমভাগের পাতায় প্রথম যেদিন পড়লেন  "জল পড়ে পাতা নড়ে" সেদিন মনে হলো যেন আদিকবির কবিতা শুনলেন ।পড়ার বই বন্ধ করার পরে ও মনের মধ্যে অনুরণিত হলো -"জল পড়ে পাতা নড়ে"।

         

একদিন বড়ো ছেলেদের বিশেষত ভাগ্নে সত্যপ্রসাদ কে স্কুলে যেতে দেখে বালক রবির কান্না ,তিনি ও স্কুলে যাবেন ।গৃহশিক্ষক মাধব পণ্ডিত এক চড়্ কষিয়ে বললেন -"এখন ইস্কুলে যাবার জন্যে যেমন কাঁদছ ,না -যাবার জন্য এর চেয়ে অনেক বেশি কাঁদতে হবে।"

পরে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন - "এতো বড়ো অব্যর্থ ভবিষৎ বাণী জীবনে আর কোনদিন কর্ণগোচর হয় নাই।" 

                      …………………….......



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - অভিষেক নন্দী

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614









No comments:

Post a Comment

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...