সুদেষ্ণা ঘটক অধিকারী এর কবিতা
১.
অভিমান
ঘুম ভাঙা সকাল; চোখে নতুন সূর্যোদয়
তুই খবর নিলি না কেমন আছি আমি,
জানতে চাইলি না
কোন চিত্রকল্প থেকে শব্দ পেলাম এতো?
ভালোবাসার বুকে পা তুলে;
আড়মোড়া ভাঙার ভনিতায় বুঝতে চাইলি না
শীতের প্রাক্কালে ডেঁপো বখাটে মেয়েটার
এতো প্রেম এলো কোথা থেকে?
নষ্ট মেয়ে; থলথলে যৌবন; স্বভাবতই
শীত পাখি রা এসেছিলো খবর নিতে,
রহস্যের যোনিতে স্নান সারবে বলে
অনুমতি দিইনি তাদের...
এখনও অপেক্ষায় আছি তোর,
পাশের রেস্তোরাঁর ফাঁকা চেয়ারগুলো
মিটিমিটি হাসে রোজ।
এখনও টবের ফুলে চকচকে পরাগ রেণু
এখনও আঁচলা ভরে আবেগ দিচ্ছি
ব্যতিব্যস্ত সংকল্পে,
কীবোর্ড এর সাথে বেড়ে উঠেছে সখ্যতা।
তোকে বলা পংক্তিগুলো...
ভাবছি
ভাসিয়ে দেবো মাঝ গঙ্গায়,
আরও দ্রুত পায়ে এগিয়ে যাবো
চোরাশিকারীর মতো সুযোগ সন্ধানে,
সাথে; কালি-কলম-মুহূর্ত আর ক্যানভাস।
**************
২.
অদৃশ্য ভাইরাস
সেদিন সমস্ত শরীরে যখন-
পোড়া কামের গন্ধ,
দুই অধর ছেয়ে-
তখনও ছিলো; রাঙা সজীবতা!
উষ্ণতার খোঁজে; রক্তের তেজে
বিচ্ছুরিত ছিলো তারা,
ছিলো কম্পন...
ছিলো মিলনের দোলাচল।
আমি তো মানুষী; তাই
কখনও বা সাধ হয়...
রাতজাগা অপেক্ষারা
ভিড় করে-
তক্তপোশের পায়ায় পায়ায়,
এই বুঝি-ছুঁয়ে দেয়; ছুঁয়ে দেয়।
একটা বাজে; দুটো বাজে;
ভোরের প্রথম বাসটাও-
সাইরেন দিয়ে চলে যায়!
ঢুলু চোখ ছেয়ে-
একরাশ ক্লান্তির রেশ!
নেমে আসে; চারিপাশে...
তখন বা শেষ; রাত শেষ।
স্বপ্ন আসেনা আর!
তারপর ঠিক-
সাধও যায়না; স্বপ্ন দেখার।
সকাল আসে
চারিদিকে;
তখনও অনুভূত ভ্যাপসা
হৃদয় পোড়ার গন্ধ!
দগ্ধ; ঝলসানো-শরীর মন টেনে,
উঠে বসার আপ্রাণ অভিনয়।
ব্যথাহীন এক স্পন্দনের আনুকূল্য!
কেমন যেন....
গা সওয়া সওয়া ভাব।
মিরাকল ঘটে; মিরাকল..
ফুঁৎকারে উবে যায়
গভীরের ক্ষত,
তবু অপূর্ণ মনোরথ!
একি ভ্রম!নাকি...
রাতেই জীবিত থাকে তারা
বারোমাস!
হৃদয় পোড়ানো যতো
অদৃশ্য ভাইরাস?
**********
৩.
দীর্ঘশ্বাস
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস
অনেক কিছু বলে যায়...
বলে যায়-তুমি বিষন্ন; বিপন্ন,
বলে যায়-তুমি নিরন্ন,
বলে যায়-তুমি প্রত্যাখ্যাত,
বলে যায় তোমার মৃত্যু আসন্ন।
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস
অনেক কিছু নড়িয়ে দেয়...
নড়িয়ে দেয়-হরমোনাল গ্রন্থিগুলো,
নড়িয়ে দেয়-বিশ্বাসের স্তম্ভগুলো,
নড়িয়ে দেয়-স্বপ্নঘোর,
নড়িয়ে দেয় হাহাকারের ছিদ্রগুলো।
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস
অনেক কিছু ঝরিয়ে দেয়...
ঝরিয়ে দেয়-চোখের জল,
ঝরিয়ে দেয়-মনের বল,
ঝরিয়ে দেয় সারল্য; সাহস,
ঝড়িয়ে দেয় সব কোলাহল।
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস...
নড়িয়ে দেয়;ঝরিয়ে দেয়;
পুড়িয়ে ছারখার করে সব,
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস একলাই কাফি
মানুষকে বানাতে
একটা নির্বাক-স্পন্দিত শব।
************
৪.
আমি অভিমন্যু নই
ধরে নিলাম...
আমি চক্রব্যূহে ঢোকার
কৌশল অর্জন করেছি-
মাতৃ জঠরেই,
ধরে নিলাম...
আমি একটার পর একটা
চক্র; অতিক্রম করতে পারি-
বীরাঙ্গনার মতো,
তবু; বলে রাখি-
আমি কিন্তু অভিমন্যু নই।
নই পুরাণের প্রচ্ছদে লেখা
কোনো পৌরাণিক চরিত্রও,
যে...
তোমরা আমার উপর
কূটনীতি ফলাবে-
ধরে রেখে; বেঁধে রেখে।
নিয়মমাফিক বাধা-নিষেধ আর
সন্দেহের অপর্যাপ্ত ব্যূহপথে-
সপ্তরথীর শঠতার বীরত্বে,
ভূপতিত করতে চাইবে
আমার আত্মসংজ্ঞা।
আবারও বলি,
আমি কিন্তু অভিমন্যু নই।
নই কৃত্তিবাসী সীতা-
কিম্বা;
কাশীদাসী অপমানিতা পাঞ্চালী।
আমি লক্ষণ রেখা মুছতে জানি,
আমি আগুন নেভানো পন্থা জানি,
প্রয়োজনে অস্ত্র করি বরণ।
আমি মানবী,
জীবনকাব্যের চরিত্র,
আমি...
সীতা-দ্রৌপদী-সাবিত্রী-বেহুলার
প্রযোজ্য আধুনিকীকরণ।।
****************
৫.
ঘুম-নির্ঘুম
ঢুলুঢুলু চোখ ঘুম ধরা রাত
এপাশ ওপাশ নিঝ্...ঝুম,
বল্ চোখ বল্ এতদিন তবে
কেনো তুই ছিলি নির্ঘুম?
ছলাৎছলাৎ স্বপ্ন আসতো
আজ তারা কই; কই সব!
বল্ দিন বল্-হারালি কোথায়
কোথা ফেলে এলি শৈশব?
এপাং ওপাং ঝপাং শব্দে
গমগম করা মাঠ ঘাট,
কোনখানে ওড়ে ধুলিঝড়;আর
কোথায় হারালো চেনা বাট?
গুনগুন সুরে গেয়ে ওঠা গান
তাল-লয় হীন সুরটা,
বল্ মন বল্ সাথে থেকে কেন
নিকট করলি দূরটা?
চুপ চুপ চুপ ঠোঁটে তর্জনী
আগল দেওয়ার কৌশল,
বল্-বল্-বল্ কে দেবে জবাব
কার এতো আছে বুক বল?
লাগ্-লাগ্-লাগ্ ভেলকির মতো
লাগাম ধরার চেষ্টা,
বল্ শুধু বল্,মিছে খেলাঘরে
মিটাবি কি হৃদি তেষ্টা?
চল্-চল্-চল্ চোখে ভরা জল
চারিদিকে মন লুণ্ঠন,
বল্;বলে যা না কোথায় লুকাই
কোথা তুলি অবগুণ্ঠন?
*********
গ্রাম সংখ্যার প্রকাশিত হয়েছে। আপনি সংগ্রহ করতে পারেন।
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ আলোকচিত্র - শামসুদ্দিন হীরা
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment