রবীন্দ্র পরম্পরা
পর্ব- ২
রবীন্দ্র জন্মকথা
মহাশ্বেতা দাস
আদব-কায়দায়, পোশাক-পরিচ্ছদে ঠাকুর-পরিবারের পুরুষরা ছিলেন আধা-মোগলাই। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথের সময় থেকে ঠাকুর পরিবার ধনে, মানে, প্রতিপত্তিতে বেড়ে উঠেছিল। দ্বারকানাথ যেমন ধনী ও মানী ছিলেন তেমনি ছিলেন শৌখিন ও বিলাসী। যদিও তিনি রাজা রামমোহনের সমসাময়িক ও বন্ধু ছিলেন তবুও হিন্দু আচার অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন নি কখনও। রবীন্দ্র - পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কিন্তু যৌবনে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। সে যুগে কলকাতার ধনী ও অভিজাত বংশের এক যুবকের পক্ষে এই প্রাচীন সমাজ সংস্কার ভেঙে বেরিয়ে আসা ছিল এক নিদারুণ ও অকল্পনীয় অগ্নিপরীক্ষা।
"ধর্ম যবে শঙ্খ রবে করিবে আহ্বান,
নীরব হয়ে নম্র হয়ে পণ করিও প্রাণ।
মুক্ত করো ভয় -
আপনা মাঝে শক্তি ধর
নিজেরে করো জয়।"
পথ যতই কণ্টকাকীর্ণ হোক-সেই পথে হেঁটেই ঠাকুর পরিবারে যুগান্তর এনেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ। ঠাকুর বাড়িতে আগেই আমদানি হয়েছিল বিভিন্ন বিলাতি আসবাব-পত্র। এবার ঘরের মজলিশে আমদানি হল বিলাতি অর্গান, পিয়ানো, বেহালা প্রভৃতি। এই দেশী ও বিদেশী সংস্কৃতির সংমিশ্রণের মধ্যে শুরু হয়েছিল রবীন্দ্র-শৈশব।
এ তো গেল ঠাকুর পরিবারে পুরুষদের কথা। স্ত্রী-স্বাধীনতার জন্য ঠাকুর পরিবারে আন্দোলন শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি বাংলা তথা ভারতের প্রথম আই. সি. এস। ১৮৬৬ সালে কর্মস্থল বোম্বাই থেকে আসার সময় সহধর্মিণী জ্ঞানদা নন্দিনী দেবী কে মেম সাজিয়ে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সদরে গাড়ী থেকে নামানো ছিল সেই আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ। পরবর্তী ক্ষেত্রে এই আন্দোলনেরই প্রত্যক্ষ ফল জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর স্ত্রী কাদম্বরী দেবী কে ঘোড়ায় চড়িয়ে, আর একটা ঘোড়ায় নিজে চড়ে গড়ের মাঠে হাওয়া খেতে যাওয়া। যদিও সেদিন এসব কান্ডের দরুণ ঠাকুর বাড়ির অন্দর মহলে ছি ছি রব আর গেল গেল বলে শোকাভিনয়ের খামতি ছিলনা মোটেই! কেন না এমনও তো একটা সময় ছিল যেদিন এই ঠাকুর পরিবারের মেয়েরা গঙ্গাস্নানে গেলে ঘটাটোপ দেওয়া পাল্কিতে চড়িয়ে বন্ধ পাল্কি সমেত জলে চুবিয়ে আনা হত, পর্দানশীন মেয়েদের ঘাটে নেমে স্নান করার রেওয়াজ ছিল না। যাইহোক সেসব বিধি নিষেধের বেড়াজাল টপকে নূতন পরিবেশে নূতন আবহাওয়ায় মেজদা ও জ্যোতিদাদার সাথে রবীন্দ্রনাথের শৈশব ও কৈশোরের অনেকগুলো দিন কেটেছিল।
…………………...... (চলবে)
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - অভিষেক নন্দী
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment