কবিতা সামন্ত এর কবিতা
আগাছা
শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে যায়
গোধূলির রঙ মাখা সমুদ্রের
বুকে ঝাঁপ দেয় জীবন।
কোনটা যে সূর্যাস্ত আর কোনটা
যে সূর্যোদয়
গুলিয়ে যায় সব কিছু!
মাথা নত করে সোনালী ধানের
ক্ষেত তার বিনম্রতার
প্রমাণ দেয়।
এখানে তরতরিয়ে বেড়ে
চলে আগাছার দল।
মেদ ঝরা জীবনের সাথে সাথে
শিরদাঁড়া বেঁকে বসে
আছে কুঁজি বুড়ি মন্থরার মতো।
……………………
জোছনার আঁশটে গন্ধে
জোছনা যখন
আঁশটে গন্ধ ছড়ায়
তুমি তখন ষোড়শী আর
আর আমি তখন একুশ।
রস থাকলেই যে পিঁপড়েতে চেটে খাবে
তুমি কি জানো না?
যদি নাই জানো তবে
জোছনা লাগতে দিওনা তোমার অঙ্গে।
ষোড়শী হয়ে উঠোনা শরীরের ঘ্রাণে
নরম পাহাড়ের মায়া ছড়াইও না
ফুল ফুটতে দিওনা
রক্ত জবায় নিজেকে রাঙিও না।
পারবে কি এতোগুলো
শর্তে নিজেকে বেঁধে রাখতে?
…………………..
শব্দের আয়নাবাজী
শব্দেরা যখন আয়নাবাজী করে
তখন দুষ্কর হয়ে ওঠে তাকে মিথ্যে মিথ্যে
সুন্দর করে তোলা।
গলাবাজী করে রূপ আর অবয়ব নিয়ে
কথা ভারি নাকি সৌন্দর্য!
অবয়ব চাও নাকি মরিচিকার মতো আলেয়া!
সত্যিটা মেনে নিয়ে দেখো
আসলে মরিচীকা ক্ষণিকের অতিথি।
আর অবয়ব আত্মার পরিধি।
……………………
হেমন্তের বৈষ্ণবী
শরতকে শেষ বিদায় জানিয়ে
হেমন্তের শিশিরভেজা ধানের গাল ভর্তি
দুধ তখন দামোদর মাসের বৈষ্ণবী
গান ধরে একলা হরির সামনে।
কদিন পরেই উথ্থান একাদশীর
প্রাক্কালে শ্রীহরি রাধিকার প্রেমে মজে
রাস রচনা করবে।
বৈষ্ণবী তখনও তিলক ধারণা করে
সাধন ভজনে ডুবিয়ে রাখবে নিজেকে।
রাসের প্রেমময় চাঁদের জোছনা তখনও
বৈষ্ণবীর মন ছোঁবেনা।
কারণ বৈষ্ণবীর ললাটে বিরহ যন্ত্রণা লেখা
ওদিকে ধানের গাল ভর্তি দুধের শিশুও
পোক্ত হয়ে উঠেছে।
সবাই মেতে যাবে লক্ষ্মীর
আগমনের উল্লাসে।
সেদিনও বৈষ্ণবী হরিনামের মালা জপবে।
দূরে কোথাও রাতের পেঁচার ডানা
ঝাপটানি শুনতে শুনতে হরিকে ডাকবে।
…………………..
গুচ্ছ কবিতা
১.
যখন আমি খিদের চোটে
পশু হয়ে উঠি...
সেসময় কখনো কখনো
মনে হয়
ওই যে অধরা
চাঁদটাকেও গিলে খাই।
...........
২.
মেঠো হাওয়ার পরশে
প্রেমের ছোঁয়া লাগলে...
আলপথের সুজনি
শাকের সঙ্গেও
ভালো লাগা তৈরি হয়ে যায়।
শূন্য মাঠের বুকেও
জোছনা রূপসী মনে হয়।
...........
৩.
নির্বিশেষে আমি তোমাকে ভালোবাসিনি
পরিশেষেও আমি তোমাকে ভালোবাসিনি।
ভালোবেসেছি শুধু তোমার কথা বলাকে...
ভালোবেসেছি তোমার চাওয়াটাকে...
ভালোবেসেছি তোমার গোটা পৃথিবীটাকে।
এর পরেও জানতে চাইবে
আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি?
......................
৪.
ও চাষী বৌ...
তোমার জন্য মেঠো শামুক
হতে ইচ্ছে করে।
তোমার জন্য ঘাসফুল
হতে ইচ্ছে করে।
তোমার জন্য ঘাসফড়িং
হতে ইচ্ছে করে।
তোমার জন্য সাদা বক
হতে ইচ্ছে করে।
তুমি যখন মাঠে কাদাজল মাখো
বুঝলে...
আমার তখন তোমার গায়ের
কাদা হতে ইচ্ছে করে।
……………………
গ্রাম সংখ্যার প্রকাশিত হয়েছে। আপনি সংগ্রহ করতে পারেন
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - কবিতা সামন্ত
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment